আজকের দিনে ফেসবুকের দুনিয়ায় অনেকেই নিজের স্ট্যাটাস দেয়- মাম্মা’স ডল/ড্যাডি’স প্রিন্সেস। আমরা ফেসবুক আসার আগেও দেখেছি- কোন সন্তান মায়ের, কেউ আবার বাবার অনুসারী হয়। সব সন্তানের বাবা অথবা মায়ের দিকে ঝুঁকে থাকার একটা প্রবণতা থাকে। এমনকি অনেকেরই শারীরিক ও মানসিক গঠনেও বাবা অথবা মায়ের স্পষ্ট ছাপ দেখা যায়।
বাপের মত বা মায়ের মত হবার কারণ বিজ্ঞান বলে দিয়েছে। কারণ – সোজা। জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল- বাবা ও মায়ের থেকে সমানভাবে এসেছে।
বাবা ও মায়ের মানসিক গঠন ও সন্তানের মধ্যে আসে- কারণ, বাবা মায়ের পরিবেশেই শিশু বেড়ে ওঠে।
এই গল্পে বলার তেমন কিছু নেই। কিন্তু গল্পটা যদি একটু বাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে কেমন হয়?
অনেকেই ফেসবুকের দৌলতে পড়ে থাকবেন – ইসরায়েলে কোন মা গর্ভবতী হলে সে বসে বসে অঙ্ক কষে। তাতে নাকি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়।
হোক। কিন্তু অতদূর যেতে হবে না। এই আমাদের সমাজেই গর্ভবতী মায়ের খাওয়া দাওয়া, আচার আচরণ নিয়ে নানা ধরনের প্রথা চালু আছে। কোনটার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে সবটাই ক্ষতিকর, তেমনও নয়।
কিন্তু গর্ভবতী মা, এই অজুহাতে নানাভাবে তার উপর বিধিনিষেধ চাপানোর খেলা ঠিক চলতে থাকে। এক ধরনের পুরুষালি মানসিকতাও কাজ করে এর পিছনে।
আবার অদ্ভুত কাণ্ড হলো- শত শত বছর ধরে এইসব ভুলভাল বিষয়গুলো এমন ভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে যে, মহিলারাই এগুলো মেনে চলার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত রকমের গোঁড়ামি দেখান। একটু সিনিয়র মহিলা হলেই জুনিয়রদের উপর প্রায় নৃশংস ragging করেন এসব নিয়ে। এটা করো না, ওটা করো না – এইসব।
ছুতো – তুমি যা করবে, বাচ্চার উপর সেটার প্রভাব পড়বে। এমনকি অনেকে তো বাচ্চা জন্মের পর কোন সমস্যা দেখা দিলেও মাকে দোষ দেয়। বদ হাওয়া লাগা, এটা ওটা দেখা- এরকম নানা অজুহাত দাঁড় করায়।
প্রসঙ্গত- এই ক’দিন আগেই একজন বলেছিলেন- বাচ্চার খাদ্যনালী সরু হয়েছে- কারণ মা নাকি গর্ভাবস্থায় তেমন কিছু খায়নি। তাই বাচ্চার খাদ্যনালী শুকিয়ে গেছে!! বিজ্ঞানের শ্রাদ্ধ করে ছেড়ে দিয়েছেন।
তো এই নিয়ে শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম ভুলভাল কুসংস্কার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- গর্ভবতী মা গর্ভাবস্থায় যদি কোন রকম আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন, তাহলে তার ছাপ পড়বে সন্তানের শরীরে!!
যেমন ধরা যাক- গর্ভবতী মা টিকটিকির ভয় পেলো। বাচ্চা টিকটিকির মতো হয়ে যাবে! হাতির ভয় পেলো, হাতির মতো হয়ে জন্মাবে! এমন ও থিওরি দেওয়া হলো- গর্ভবতী মা যদি কোন কারণে মনমরা হয়ে থাকেন, তাহলে বাচ্চা ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে!! এমনকি এও বলা হলো – স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মত অসুখও নাকি মায়ের কোন ব্যবহারের ইমপ্রিন্ট বা ছাপ! এমনকি, Pliny the Elder, বিখ্যাত রোমান লেখক, আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে এসব নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন!!
একটাই উদাহরণ ব্যবহার করবো এসব বিজ্ঞানীদের জন্য- Wolfman Syndrome বলে একটি অসুখ আছে, যেটাতে বাচ্চা অবস্থায় বা বড় হবার পর সারা শরীরে চুল গজায়। এক্ষেত্রে কি ব্যাখ্যা দেবেন, জানার আগ্রহ রইলো।
একটু চোখ কান খোলা রাখলেই শুনবেন দেখবেন- এরকম তত্ত্বের জন্য প্রবক্তার কোন অভাব নেই। তারা কোন কিছু না জেনে, গর্ভবতী মাকে এটা ওটা করতে দেবেন না, খেতে দেবেন না বলে।
কেউ কেউ আবার ধর্মগ্রন্থ পড়ার উপদেশ দেন।
আসল কথা হলো – কোন না কোন ভাবে ভয় দেখিয়ে অযৌক্তিক থিওরিকে সমাজে বাঁচিয়ে রাখবেন। আর বিজ্ঞান এর আলো না পৌঁছানো সমাজে গেড়ে বসবেন নিজেদের মৌরসীপাট্টা। বিজ্ঞান এসব থিওরিকে এক এক করে ধরে ছুঁড়ে মেরেছে।
না, মায়ের শারীরিক/মানসিক ব্যবহারের কোন ছাপ শিশুর দেহে পড়ে না।
আবারও বলছি – জিন ও পরিবেশের প্রভাবকে এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না কেউ।
অসুখ হলে বিজ্ঞানের কাছে আসুন। এসব বহুদিন আগেই বিজ্ঞান প্রমাণ করে বসে রয়েছে।
একটি সত্যি ঘটনা বলে শেষ করবো। আগে ও দেখেছি। আজ আবার একই ঘটনা ঘটলো।
ইউএসজি করছিলাম। হঠাৎ গর্ভবতী মহিলা টেবিল ছেড়ে যাবার পরে দেখলাম- সেখানে পড়ে আছে রসুন! জিজ্ঞেস করে জানলাম – এসব নাকি নিয়ম। গর্ভবতী হলে বাড়ির বাইরে বেরোলেই নাকি সাথে রসুন দিয়ে দেওয়া হয়!! তাতে পেটের বাচ্চার নাকি কোন ক্ষতি হয় না।
মোদ্দাকথা হলো – যে করে হোক, অনাগত শিশুর মঙ্গল করতেই হবে!!
খুব ভালো কথা। কিন্তু যে নারী সন্তানকে জন্ম দেবে, তাকে ভয় দেখানো কেন?? সেকি বাইরে বেরিয়ে কোন কিছু দেখে ভয় পেতে পারে না? মনমরা হতে পারে না? উচ্ছাস প্রকাশ করতে পারে না??
এসবের পশ্চাৎ দেশের উদ্দেশ্য পরিষ্কার! একটাই অনুরোধ – দয়া করে একটু বিজ্ঞান সম্মত চিন্তা ভাবনা করুন।
শুনেছি- রসুন নাকি ভিজিয়ে রাখলে তার খোসা সহজেই খুলে যায়। চেষ্টা করে দেখবেন নাকি বিজ্ঞান দিয়ে মগজ ভিজিয়ে?