ছবি চাই ছবি। একটা জম্পেশ ছবি না দিলে মালটা বাজারে কাটবে না-তা সে পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপনই হোক বা ভক্তিরসের সিনেমায় সিক্ত নায়িকার অঞ্জলি দেওয়ার- ছবি হট হলেই ছবি হিট।
আরেকটা ছবি এখন পাবলিক ভাল খাচ্ছে-মাস্ক পরা ছবি। তবে এটা বেশিদিন চলবে না, খুব শীঘ্রই দেখতে পাবেন কালো বিন ব্যাগে মুখ ঢেকে চোখের কাছে দুটো গর্ত, শরীরটা রেনকোট দিয়ে ঢাকা, পায়ে আবার দুটো ছোট ছোট ব্যাগ। অথবা ৫ লিটার জলের ক্যানের মধ্যে মুখ ঢোকানো।
ওহ! এই ছবি ইন্টারনেটে দেখে ফেলেছেন। ঠিক আছে, কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? লাইভ দেখতে পাবেন, দুদিন অপেক্ষা করুন। টিকিট কাটতে হবে না, হাসপাতালে গেলেই হবে। আর পুজো অবধি টিকে গেলে থিমের পুজোর অসুরের শরীরে। তখন পারলে আবার হাততালি দিন।
দাদারা আইপিএল, ইপিএল নিয়ে তো অনেক গলা ফাটালেন, এইবার পিপিই (PPE) নিয়ে একটু গলার জোর দেখান না। ওটা কী? ওটা পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট। ওটা পরে ডাক্তার বা নার্সরা সংক্রমণ হয়েছে এমন রুগী দেখেন এবং তাদের পরিচর্যা করেন। তা না হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াবে। আর সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে- সেই ভূত ছাড়াবে কে? সত্যি বলছি আমরা ভীষণ ভীতু। সাহস থাকলে তো সেনাবাহিনীতে যোগ দিতাম। ঘরের খেয়ে দিনের পর দিন বই মুখস্থ করতাম না। আপনারা যখন লেখেন ‘স্টে সেফ’, ‘ভালো থাকিস’, ‘স্যালুট’ তখন একটা করে লাইক মারি। কিন্তু প্রত্যেকটা লাইক মারার সঙ্গে সঙ্গে নিজের হার্টবিটটা শুনতে পাই। একটু গলা শুকিয়ে যায়।
ঘুমন্ত ছেলেটার মাথায় হাত বুলাতে গেলে মনে হয় নিঃশ্বাসটা বন্ধ করে ফেলি-তাহলে ভাইরাসটা ছড়াবে না। খিদে কমে গেছে, টিভিতে কার্টুন চ্যানেলটা চালিয়ে রাখি। আপনি বলতেই পারেন, ‘এত ভয় তো ডাক্তারি পড়লে কেন’? আসলে কী বন্ধু, তুমি আমি একইভাবে, একই সঙ্গে বড় হয়েছি। তুমি যখন ব্যাটিং করতে আমি ফিল্ডিং, তুমি যখন সাইকেল চালাতে আমি পিছনে বসতাম। তুমি যখন সিগারেট খেতে আমি কাউন্টারের জন্য হাত বাড়াতাম। তাই আমি তোমার মতোই সাহসী, তোমার মতোই ভীতু। ভয়টা ঠিক কী, তা বোঝানো মুশকিল- স্বজন হারানোর ভয়, যুদ্ধে হারার ভয় বা শত্রুকে না জানার ভয়। হাতে অস্ত্র না থাকার ভয়। কোভিড-১৯ নতুন ভাইরাস। এর সম্বন্ধে আমরা খুব কমই জানি। তার ওপর যদি পিপিই না থাকে তাহলে যুদ্ধে জিতবে কী করে? সাহস আর বিমার কাগজ যদি যুদ্ধ জেতার চাবিকাঠি হত তাহলে এতদিন প্রতিরক্ষা খাতে এত খরচ হত কেন?
আজ সকালে যখন কাজে বেরলাম, তখনও মনে ভয় লাগছিল। কিন্তু যখন হাসপাতালে ছোট ভাই, বোনেরা বা বন্ধুরা যেভাবে রুগী দেখছিল তার ছবি দেখলাম, তখন মনে আরও জোর পেলাম। কিন্তু আমরা কেউ অভিমন্যু হতে চাই না। আমাদের চাহিদা সামান্য। এন ৯৫ মাস্ক আর পিপিই। চোখ খুলুন। সত্যিকারের ছবিগুলো দেখুন। জীবনে কিছু জিনিস ফাঁকা রাখা ভাল-যেমন ওই দেওয়ালে টাঙানো ফোটোফ্রেম।
বাড়িতে থাকুন। ঘরে মাস্ক না। আর স্বাস্থ্যকর্মীদের PPE দেবার দাবিতে সোচ্চার হোন।আমরা বাঁচতে চাই। আপনার পরিবারের জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য।
(বর্ষাতি, হ্যান্ড গ্লাভস ও যে মাস্কের যে ছবিগুলো নিচে আছে তা মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হয়েছে পিপিই হিসেবে।)
চিকিৎসাকর্মীদের PPE না দিলে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও সংক্রমণ রোখা যাবে না।
যারা এই ড্রেস suggest আর approve করেছে তাদের নামগুলো পোস্ট করুন দয়া করে।আমরা থালা বাটি বাজিয়ে সম্বর্ধনা দেব।আর তাদের ই প্রথম সপ্তাহটা isolation ওয়ার্ড এ এই ড্রেস পরে ডিউটি দিতে পাঠাতে হবে।ডেঙ্গু তেও এর থেকে বেশী protections নেওয়া হয়।
যেই খাতে সবথেকে বেশি খরচ করা আর সচেতনতা জরুরী ছিল সেটাতেই সবথেকে অবহেলা করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষকে আর দোষ দিয়ে লাভ কি lockdown মানছে না বলে।