ডাক্তার মাশাই, পরশ পাথর সত্যিই হয়। অ্যাই দ্যাকো, বিশ্বেস হচ্চে না তো। আচে আচে, আর কী বলব মাশাই, সে আবার এমনি পাথরের মত নয়। জ্যান্তো…। ব্যাপার কী জানো,পাথর তোমাকে ছেড়ে গেলে সব সোনা ফের লোহা হয়ে যাবে।
বুঝলাম ইশকুল শিক্ষিত বৃন্দাবন রবি ঠাকুরের পরশ পাথর কবিতার দার্শনিকতা পাইল করছে তার নেশারু গপ্পে।
আমি মোবাইলে ফেসবুক ছানবিন করতে করতে ওর প্রলাপ শুনি। সন্ধ্যেয় তাড়ি গিলে এইসব গালগল্প করে বৃন্দাবন মাইতি।
এক কাঁড়ি অ্যালকোহল তখন তার রক্তে দৌড়োদৌড়ি করছে। তা আমার মন্দ লাগে না, তার এই প্রবচন অস্যার্থে নেশা-বচন শুনতে।
আমি কোনও কথা বলি না।
বেন্দা মাইতি এককালে মাঝ ধরত ট্রলারে। সেই সময়ের কথা বলে সে।- বুজলে ডাক্তার, মোহানায় আমি কুড়িয়ে পেইচিলাম সেই পাথর। একেবারেই এমনি পাথরের মত দেখতে।
– সত্যিই সোনা হয়েছিল লোহা? আমি শুধোই।
ও বলে,- সোনাটোনা নয়। তবে ওইটি ছুঁয়ে ট্রলারে উটবার পর সেই অফ সিজিনে ইলিশের যা ঝাঁক পল্লো, ট্রলার ডুবে যাবার উপক্রম। তকন ভাবতে খেয়াল হল আরে পাথরটা গেল কোতা? আর গেল কোতা! সেই জ্যান্ত নুড়ি ততক্কনে মিশে গেছে বালিতে হাজার নুড়ির মদ্যে। বুইলে তো, তাপ্পর ভাগ্য আবার যে কে সেই।
আমি ওকে বাধা দিই না। পরশপাথর সত্যিই আছে। আমি জানি। ঠিক পাথরই যে হতে হবে তাকে তা না। যা কিছুই পরশ পাথর হতে পারে, যেমন মানুষও।
নইলে কন্যাহীন বাবা আমি, নেটে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে ছুঁয়ে জীবনটা সোনার বরণ হয়ে যায় আমার আর আমার গিন্নির?
তার পর?
পরশপাথর তো জ্যান্ত! ভার্চুয়াল মেয়ে নিজের খেয়ালে বার্তা বিনিময় বন্ধ করেছে। আমাদের পরশপাথর হারিয়ে গেছে।
বুক ফেটে যায়। কিন্তু সেই কটা দিন যে সোনার ছিল ভুলে যাব?
– ডাক্তার মাশাই, আমি রোজ ওই বালির মধ্যে থাকা হাজার হাজার পাথরকে ছুঁয়ে দেকি। ভাগ্য ফেরে কি না!
বৃন্দাবন নিজের মনে বকে যায়।
আমি ওকে বলি না। আমিও ভার্চুয়ালে এই রাশি রাশি অচেনা নামের মধ্যে খুঁজি সেই পাথর। যার ছোঁয়ায় সোনার বরণ হয়েছিল আমার ফেসবুকের পাতা। অনন্ত এই ভার্চুয়ালে সেই আত্মজাকে খুঁজি আমি।
★