আবার পিক আপ নিয়ে ফিরলাম। নেশাড়ুদের বাড়ি থেকে তুলে নেশা ছাড়ানোর সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার এই প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে অনেক ভাবার আছে। বাহ্যত মজার ঘটনা, কিন্তু এর গভীরে অনেক দুঃখ, হতাশা, বিষাদ লুকিয়ে আছে। রুগী এবং তার বাড়ির লোকের দিক দিয়ে।
যাই হোক আমি শুধু বাইরের দিক দিয়ে যা দেখা যায় সেগুলোই বলব।
১.
একটি ছেলে প্রচুর মদ খেয়ে টলমল পায়ে বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়েছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখে চার পাঁচজন তাকে ঘিরে ধরে বাঁধার চেষ্টা করছে। তারপর তার ভাষায় বলি…আমি তো শালা মাল ফাল খেয়ে শুয়ে পড়িছি। হটাৎ চাপাচাপিতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি, মামার যে বন্ধুর সঙ্গে একটু আগে মাল খেয়ে এলাম, সেই বো… চো.. এখন আমাকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছে সেন্টারে নিয়ে যাবে বলে।এমন বাপ মা তুলে খিস্তি দিলাম সে পালিয়ে গেল।
তারপর সেন্টারের ছেলেদের ভার্সান… ওকে বাড়ির লোক মমি নিয়ে আসার মত পা থেকে মাথা পর্যন্ত দড়ি জড়িয়ে বেঁধে নিয়ে এসেছে। এনে দমাস করে আমাদের সামনে ফেলে দিল। আর সেই অবস্থায় আবার মারছে!
২.
পিক আপের লোকেরা গেছে, গাঁজাড়ুকে ধরে আনতে। বাড়ির লোক বলে দিয়েছে যে লাস্ট দেখা গেছে পুকুর ঘাটের দিকে যেতে।পিক আপ টিম তো সিধে পুকুর পাড়ে। দূর থেকে দেখেছে পুকুরের অন্য পাড়ে ছেলেটি সাঁতার কাটছে। টিম লিডার সকলকে বলল ঘাটের থেকে সরে গিয়ে ছোট ছোট ঝোপ ঝাড়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে। ওতো ঘাটে এসে উঠবে। তখন ধরবে।
এদিকে সেই ছেলেটিও অনেকবার এরকম ধরা খেয়েছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে কিছু বলে, সেও ঘাটে না উঠে আড়াআড়ি সাঁতরে পুকুরের অন্যদিকে উঠল। তারপর ঘাটের দিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। কারণ এরা তো তখন ঝোপঝাড়ে গেরিলা কায়দায় পজিশান নিয়েছে!
ছেলেটা ভাবল তাহলে আগে দেখা ঘাটের লোকগুলো হয়ত গ্রামের কেউ ছিল ।দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওর বাড়ি যাবার রাস্তাটা ঘাটের পাশ দিয়েই। দেখেশুনে নিশ্চিন্ত মনে হেঁটে যেই ঘাটের পাশে এসেছে পুরো টিম একেবারে শিকারের উপর বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল।
চল!!
৩.
এক জন বাড়িতে ভীষণ তান্ডব চালাচ্ছে। নেশা, সঙ্গে মানসিক রোগ, বাইপোলার ওয়ান। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে।
তবে ব্যাংক লোন চাই।
পিক আপ ভ্যান হাজির। তারা বলল যে, ব্যাংক থেকে আসছে ব্যবসার লোন দেবেন বলে। শুনেই সেই ছেলেটি তো লাফ মেরে বেরিয়ে এল, কখন দেবে বলে।
পিক আপ ম্যানদের লিডার বলল তাদের সাথে যেতে হবে ব্যাংকে বসে কয়েকটা সই সাবুদ করে হাতে হাতে দুই কোটি টাকা।
তাই শুনে সে তো কোনোরকমে লুঙ্গির উপরে একটা প্যান্ট চাপিয়ে বেরিয়ে এল। গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে সেই সেন্টারের সামনে নামানো হোলো তাকে।
ঘটনা চক্রে সেই সেন্টারটির একই বিল্ডিংয়ে একটা ব্যাংকও আছে। তাই কোনো সন্দেহ ছাড়াই ছেলেটি গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে পড়ল।
তারপর আর কি, ব্যাংক ম্যানেজার উপর তলায় আছে বলে সেন্টারে ঢুকিয়ে তালা।
৪.
একটা ছেলে ট্রিটমেন্ট নিয়ে মাস তিনেক বাদে সেন্টার থেকে বাড়ি গেছে। কিন্তু যেমন হয়, নেশার ক্ষেত্রে, এত বেশী পুনরায় ফিরে আসে সমস্যাটা, ছেলেটা আবার গাঁজা খাওয়া ধরে ফেলেছে।
বাড়ির লোক বারণ করা সত্ত্বেও কিছুই হচ্ছে না। এরা যখন সেন্টার থেকে বাড়ি যায় এদেরকে বলে দেওয়া হয় রেগুলার সেন্টারে আসতে। কারণ একা বাড়িতে ভালো থাকা যাবে না। সেন্টারে মিটিংগুলোতে অংশগ্রহণ করলে ভালো থাকার সম্ভাবনা বেশী।
যাইহোক ছেলেটি বেশী চালাকি করতে গেল। যেন নেশা করেনি, প্রোগ্রাম অ্যাটেন্ড করার জন্যে সেন্টারে হাজির হলো। ওকে দেখেই অভিজ্ঞ চোখে অন্যরা বুঝতে পারল ও নেশা করছে। ছেলেটি যথারীতি অস্বীকার করছে। কিন্তু বাড়ির লোক না বললে তো ভর্তি করতে পারেনা।
যাই হোক জোর প্রকৃতির ডাক আসায় বাথরুমে ঢুকেছে, আর সেই মাহেন্দ্রক্ষণেই বাড়ির ফোন যে ওকে ভর্তি করতে হবে।
তারপর ছেলেটির ভাষায়,”আমি তো সেরে টেরে বাথরুম থেকে বেরোলাম। দেখি তিন চারটে ছেলে ঘিরে ধরেছে। আমাকে বলল,তুই জমা হয়ে গেলি!”
৫.
এবার এক অ্যান্টিহিরোর গল্প। এ হাওড়ার এক বিশেষ এলাকার মানুষ। নামের থেকে বদনামটাই বেশী। এলাকার লোকজন তার নামে বেশ চমকায়।
কিন্তু ব্যাটা গাঁজা মদ সব খায়। তো বাড়ির লোক অনেক কষ্টে ধরে বেঁধে এক সেন্টারে দিয়ে এল। চিকিৎসা চলছে। কিন্ত ঢেঁকি তো স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। সেই সেন্টারে সেই সময় এক বড় ব্যবসায়ীর ছেলেও ভর্তি ছিল। সে এসে সাইকিয়াট্রিস্টকে অভিযোগ করছে, এ কাকে ভর্তি রেখেছেন? আমার ছেলেকে চমকেছে বাবার থেকে টাকা আনার জন্যে!
যাiহোক মোটামুটি কয়েক মাস রেখে তাকে বাড়ি পাঠান হোলো। তারা তাকে শহরেই না রেখে একদম দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দিল।কিন্তু সেখানে গিয়ে তো আবার হিরোগিরি। কাকে ছুরি মেরে হাফ মার্ডার করে জেল।
বাড়ির লোক ঠিক করল জেল থেকে বেরলে আর বাড়ি নয়, ওখান থেকেই সিধে সেন্টারে ভর্তি করে দেবে।
খবর অনুযায়ী পিকআপ ম্যানেরা জয় ভীরুকে নিতে যাওয়া ঠাকুরসাবের মত জেলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এর জেল থেকে বেরোনোটা ঠিক জয় ভীরুর মত নিরুত্তেজক হোলো না।
জেলের গেটে চেনা লোক দেখে সে তো একেবারে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে এল। দু হাতে দুটো পুলিশকে ধাক্কা মেরে আর একজন পুলিশকে কোমরে লাথি মেরে ছুটে এসে গাড়িতে উঠে পড়ল!