১
তিন তলার ব্যালকনি থেকে কবিমাসি গলা বাড়িয়ে গোধূলি বেলায় ডাক ছাড়লেন “ছোট্টু ! ছোট্টু।কোথায় তুই।স্কুলের ড্রেস টা তো ছেড়ে যা” এই মাসি কবিতা পড়েন না ,কবিতা লেখেন না তাই কোনো ভাবেই কবি নন । না পরিচয়ে, না হাবে ভাবে। শুধু পিতৃদত্ত নামের উল্লেখ পূর্বক কোথাও কোথাও কবিতা কথাটা লিখতে হয়।নাম কবিতা সংক্ষেপে কবি। নস্কর ভিলার সবচেয়ে ছোট, একমাত্র বংশপ্রদীপ বা শিবরাত্রির সলতে যাই বলুন তিনি হচ্ছেন ছোট্টু শুভ নাম সায়ন।স্কুল থেকে ফেরার পর ব্যাগ টাকে সটান সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে ধা। অনেক ডাকাডাকি হাকাহাকির পর অবশেষে এই কিছু আগে তেনার পদধূলি পড়েছে দুকামরা র ড্রইং রুমে। “কোথায় ছিলি এতক্ষণ ! হাতে পায়ের একি অবস্থা।ধুলো কাদা।” কপালে সাড়ে পাঁচটা ভাজ ফেলে মাসি গজগজ করতে করতে বলে চলেছেন “জীবন টা আমার কয়লা হয়ে গেলো।যাদের গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা তাদের ঘরে এমন হয়না। একটা বাঁদর কপালে সারাক্ষণ নাচছে।বাবা আসুক।আর নয়।অনেক হয়েছে।এবার হোস্টেল এ পাঠাতে হবে” ছোট বেলা থেকে এই সংলাপ বহুবার অবিকৃত শোনা গেছে। ক্লাস নাইন এ উঠে তাই বিশেষ হেলদোল নেই ছোট্টুর।মুচকি হেসে ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে বলল “তুমি কি জানতে চাও কোথায় ছিলাম এতক্ষণ ?নাকি গজগজং সংলাপন চলতে থাকবে!আমি বাথরুম থেকে ঘুরে আসি?” “না।তুমি বাথরুম যাবে না।বলো কি রাজকার্য করছিলে এতক্ষণ।” “গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। আজ তাই জমা জল ফেলতে গেছিলাম।ভাঙা টব।ভাঙা বালতি।দই এর ভাঁড় …কি কি সব ফেলে রেখেছে চারদিকে।ডেঙ্গুর মরসুম চলছে কারোর খেয়াল নেই! জানো পাশের বাড়ির আদিত্যর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে?” “তো তোমার এই আদিখ্যেতার মানে কি?পৌরসভার কাজ করতে তোমাকে কি ঠেকা দিয়েছে!আর বাড়ির আশপাশে জল পরিষ্কার করলেই কি ডেঙ্গু গায়েব হয় যাবে!” “সে কথা কে বলেছে।তবে প্রতিরোধ কিছুটা নিশ্চয়ই করা যাবে। ডেঙ্গুর মশা একশ মিটারের বেশি উড়তে পারেনা।ঘরের আশপাশের জমা জলেই জন্মানো মশা রোগ ছড়ায়। তাই আমাদের কারুর ডেঙ্গু হলে তার দায়ী থাকবো আমরাই।সপ্তাহে একদিন জমা জল পরিষ্কার করলেই কেল্লাফতে!! আর কি জানি হয়ত আদিত্যর ডেঙ্গু হবার জন্য আমরাই দায়ী!” “থাক থাক।অনেক হয়েছে। তো হঠাৎ তোমার এই সুমতির কারণ।ঘরের কুটো টা যে সরায় না তার এতো সমাজ সেবার হিড়িক?” “আজ স্কুলে রেহান স্যার সোশাল সাইন্স এর ক্লাসে বলেছিলেন।তাই ভাবলাম আর কি!” “বেশ।সমাজ সেবা অনেক হয়েছে এবার ফ্রেশ হওয়ে টিফিন করে আমাকে উদ্ধার করো!” “…আর হ্যাঁ।ডেঙ্গুর মশা কিন্তু দিনে কামড়ায়। জানো মা এসিড মশা কে টাইগার মশকুইটো বলে।. কেন জানো? ওদের গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে।বাকিরা রাতের অন্ধকারে কামড়ায়। কিন্তু এডিস বাঘের মতো সাহস।তাই দিনের বেলায় শিকার করে।হা হা….” ২ সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো আজ। বাড়িতে আসলে আমার ঘরে সকাল হয় একটু দেরিতে।সত্যি কথা বলতে সকাল হয় আমার মর্জিতে। সকালের সূর্য বাবাজীবনের আলো পর্দা টেনে যথাসম্ভব আড়াল করে রাখেন আমার মা-জননী। কাজের সুবাদে বাইরে থাকার কিছু তো অ্যাডভান্টেজ দিতে হবে নাকি।তাই নো ডিস্টার্ব। তবে আজ একটু আলাদা। ছোটো মাসি জরুরি তলব করেছেন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে হসপিটাল যেতে হবে।জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ছোটে মিঞা মানে আমাদের ছোট্টু। সাসপেক্টেড ডেঙ্গু।প্লেটলেট কমে গেছে। হাউ হাউ করে মাসি নাকি বলেছে “এই সেদিন নিজে হাতে জমা জল পরিষ্কার করছিলো আর তারই কিনা শেষে ডেঙ্গু ! ভগবান বলে কি কিছু আছে।দিন দিন পুজা করে এই ছিল পোড়া কপালে…?” যাক গে। দোমড়ানো সকাল টাকে টেনেটুনে সোজা করার চেষ্টা বৃথা।অগত্যা ফাস্টিং ব্রেক করে বাদুঁড়ঝোলা লোকাল ট্রেনে যাদবপুর পর্যন্ত পৌঁছলাম। নিপাট জামা ইন থেকে আউট হয়ে গেছে। ডেলি প্যাসেঞ্জার দের মাথার ঘাম জামার গায়ে লেপ্টে অসম্ভব ম ম গন্ধ বিজ্ঞাপনী সুগন্ধি কে ছাপিয়ে গেছে বলা বাহুল্য।অতএব কোম্পানির “একবার লাগলেই চব্বিশ ঘণ্টার গ্যারান্টি” কে ঠিক কি বিশেষণে নিবেদন করা যায় ভাবতে ভাবতে হসপিটাল পৌঁছে গেলাম। এই হসপিটাল আর ধর্ম স্থানের বেশ একটা আত্মিক যোগাযোগ আছে বলে আমি মনে করি। শেষ সময়ে এই দুই জায়গায় যাতায়াত বেড়ে যায়। বিশ্বাস অবিশ্বাসের সেই ধূসর করিডোর দিয়ে যাতায়াত করে কালো টাকার কারবারি। সরকারি হসপিটাল বাদ দিলে বেসরকারি হসপিটাল আর মন্দিরের যে দিকটা আমার সবচেয়ে পছন্দের তা হলো “পিনপতন চুপকথন” মানে পিন ড্রপ সাইলেন্স যাকে বলে । থমথমে মুখে রোগীর পরিবার।গম্ভীর মুখে ডাক্তার স্বাস্থ্য কর্মীরা। যার অন্যথা এবারেও হয়নি। “আমার কি হলো,আমার কি হবে” গোছের প্যানপ্যানানি ওয়াক ওভার করে তিনতলার ওয়ার্ড এ পৌঁছলাম। ছোট্টু মুখটাকে বেজার করে কিছু একটা চিবাচ্ছে।কাছে গিয়ে দেখলাম কচি পেঁপে পাতা। ডেঙ্গুর সুবাদে মোটামুটি সবাই জেনে গেছে পেঁপে পাতার রসে আছে সেই বিশল্যকরনী যার জাদুতে রক্তে প্লেটলেট হুড়হুড় দাবাং দাবাং করে বাড়ে।আমাকে দেখে ও বেশ একটু সাহস পেয়েছে।বলেই ফেললো “দাদা এসে গেছে !মা তুমি এবার একটু বাইরে থেকে ঘুরে এসো।” আমার জিম্মায় পেঁপে পাতার বাটি রেখে পাতা চিবানো সুপারভাইজর করে কবি মাসি এইমাত্র নেমে গেছে। “দাদা! বাঁচালে তুমি।এই পাতা গুলো তুমি পকেটে পুরে নিয়ে যাও।তুমি ভালো করে জানো আমি তেতো খেতে কিরকম অপছন্দ করি।গত তিনদিন পাতা চিবোতে চিবোতে চোয়াল ব্যথা, মুখ তেতো । আমি আর নিতে পারছিনা।তুমি ডক্টর আঙ্কেল এর সাথে কথা বলো। আমি বাড়ি যাবো । আমি একদম সুস্থ।” ডক্টর দাশগুপ্তর সাথে কিছক্ষণ কথা বললাম।যার সারমর্মে কিছু অভিযোগ আর রোগের কিছু জানকারি পেলাম।গত কয়েকদিন যাবৎ কবি মাসির অভিযোগ তেমন কিছু ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না।ডক্টর দাশগুপ্ত বললেন এটা একটা ভাইরাল ফিভার।এর স্পেসিফিক কোনো ট্রিটমেন্ট নেই।যা কিছু আছে পুরোটাই রোগের উপসর্গ অনুযায়ী মানে sypmtomatic ট্রিটমেন্ট যাকে বলে।শরীরে যাতে জলের ঘাটতি না হয়,জ্বর এলে জ্বরের ওষুধ,আর প্লেটলেট নিয়মিত চেক করা।রক্তক্ষরণ হলে প্লেটলেট সাপ্লিমেন্ট মানে গোদা বাংলায় সাদা রক্ত দিতে হবে(পেঁপে পাতার কোন কেরামতি নেই)।সুতরাং ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ ছাড়া বিশেষ কিছু করণীয় নেই।ভাই এর প্লেটলেট ৫৯ হাজার এসেছে আজকের সকালের রিপোর্ট এ।এমনিতে তেমন কিছু ভয় আপাতত নেই বলে আশ্বস্ত করলেন।মোদ্দা কথা বাড়ির বাকি লোকজনদের বোঝাতে হবে এই কথাগুলো। ডক্টর দাশগুপ্তর সাথে সাক্ষাৎ সমাপনেষু নিচে নামতেই হাউমাউ করে সবাই হামলে পড়লো আমার ওপর।অতএব বাকি কিয়দক্ষণ সদ্য প্রাপ্ত জ্ঞানের সম্প্রচার করতে হলো বলাই বাহুল্য।উফফ!আজকের মতো আমার ডিউটি শেষ।বাড়ি ফিরতে হবে ভাবতেই সকালের লোকাল ট্রেনের দুর্বিষহ জার্নির কথা মনে করে মুখটার যে বিকৃতি হয়েছে ছোট্টুর পেঁপে পাতা চিবানো মুখটা আরো একবার মনে পড়ে গেলো।পকেট থেকে ফেলার সময় একটা পাতা কৌতূহলের বসে মুখে দিয়েছিলাম!বাকিটা কি হলো সে ইতিহাস গোপন থাকা ভালো।আপাতত লোকাল ট্রেন, বাদুড় ঝোলা বগি আর আমার ইস্ত্রি করা জামার কথা ভেবে চোয়াল যথাসম্ভব ঝুলে গেলো। ৩ আসানসোল যাবার ট্রেনে আপাতত বসে।বসের কাছে তিনদিনের ছুটি ভিক্ষে করে বহু মেহনতে একদিন মঞ্জুর হয়েছিলো।আপাতত ছোটে মিঞা অনেকটা সুস্থ।প্লেটলেট বাড়তে শুরু করেছে।জ্বর নেই। পেঁপে পাতা বদলে পেঁপের ঝোল বরাদ্দ হয়েচে দুবেলা।রক্ষে এযাত্রায়।শুধু আসার সময় বাড়ির চারপাশের জমা জল ফেলতে গিয়ে ছোটের কাছে মনে মনে মাথা হেঁট করলাম।আমরা জানি, আমরা বুঝি শুধু প্রাক্টিস টা না করার জন্য ডেঙ্গু প্রতিবছর কত জনকে কাবু করে।অথচ একটু মোটিভেশন এর অভাবে আমরা আমাদের দায়িত্ব কেমন এড়িয়ে চলি।আর ভুল হবেনা! সপ্তাহে একবার আশপাশের জমা জল পরিষ্কার করতেই হবে!নাহলে পেঁপে পাতা কপালে নাচছে ,সে তাতে প্লেটলেট বাড়ুক বা না বাড়ুক।
এই পোর্টাল এর শেষে,ডট com না লিখে ডট in বা ডট org লেখা উচিত,কারণ এটা বানিজ্যকরার জন্য নহে।অশাকরি অ্যাডমিন এটা পরিমার্জন করে ঠিক পথেই চলবে ।শুভউদ্যোগ নেবার কারনে ধন্যবাদ। Dr. N C Ghatak. Ex- Librarian, Medical College, 88, College Street, Kolkata-700073.
মনে হয় এই মুহূর্তে. Com করা যাবেনা… কারণ. Com দিয়েই domain বুকিং হয়ে গ্যাছে… তবে উদ্যোক্তাদের এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিৎ ছিল…এটা একটা non commercial ওয়েবসাইট… তাই .org বা. Edu হলে ভালো হতো
মনে হয় এই মুহূর্তে. Com করা যাবেনা… কারণ. Com দিয়েই domain বুকিং হয়ে গ্যাছে… তবে উদ্যোক্তাদের এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিৎ ছিল…এটা একটা non commercial ওয়েবসাইট… তাই .org বা. Edu হলে ভালো হতো…
বিষয় যাই হোক ,ডঃ বাবুদের ছন্দোবদ্ধো রচনা গুলি যারা সাহিত্যিক আছেন তাঁদের ও হার মানায়।খুব ভাল লাগে পড়তে।