“আপনার অ্যালার্জি, চ্যাটার্জি, ব্যানার্জি, মুখার্জি যাই থাকুক সেটা সামলে নেওয়া যাবে, কোভিড অনেক বড় সমস্যা, দয়া করে ভ্যাকসিনটা নিন!”
এই ফোনগুলো রোজ পাই! হাসপাতালে চেম্বারে বা অনলাইনেও সেই এক প্রশ্ন- ডাক্তার বাবু আমার কিছু ওষুধে অ্যালার্জি আছে, আমি কি ভ্যাকসিন নিতে পারবো? অথবা,
– আমার ডিম, চিংড়িমাছ, বেগুন সব কিছুতে অ্যালার্জি আছে, আমি কি ভ্যাকসিন নিতে পারবো?
উত্তরটা এক, হ্যাঁ পারবেন বা অবশ্যই নেবেন!
সবাইকে মজা করে বলি, আপনার অ্যালার্জি, চ্যাটার্জি, ব্যানার্জি, মুখার্জি যাই থাকুক সেটা সামলে নেওয়া যাবে, কোভিড অনেক বড় সমস্যা, দয়া করে ভ্যাকসিনটা নিন!
একটা কথা পরিষ্কার ভাবে জেনে রাখা ভালো যে, অতীতে স্কিনের ওপরে কোনো ওষুধের (সালফোনামাইডস, পেনিসিলিন, অ্যাম্পিসিলিন, অ্যামোক্সিসিলিন, ব্যথা কমার এনএসএআইডি, টেট্রাসাইক্লিন, মেট্রোজিল বা কুইনোলোনস) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হয়ে থাকা কোনো রকম চুলকানি দানা, ফুসকুড়ি বা আমবাতের সঙ্গে এই টীকার কোনো সম্পর্ক নেই!
ডিম, চিংড়িমাছ, বেগুন, পাকা কলা ইত্যাদি কোনো খাবার থেকে হওয়া কোনও সমস্যা থাকলেও আপনি টীকা নিতে পারেন!
আপনার অ্যালার্জি টেস্টের রিপোর্টে যদি ডজন তিনেক জিনিস আপনাকে এড়িয়ে চলতে বলা হয়, তবুও নিশ্চিন্তে টীকা নিতে পারেন!
কেবলমাত্র কারো যদি আগে কোনো খাবার ওষুধে বা ইঞ্জেকশন নেবার পর নির্দিষ্টভাবে অ্যানাফিল্যাক্সিস (হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হয়ে, গায়ে রাশ বেরিয়ে, বমির ভাব হয়ে, ব্লাড প্রেশার হঠাৎ কমে গিয়ে শকে চলে যাওয়া) জাতীয় প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, বা আগে কখনো SJS/TEN বা এই রকম ভয়ঙ্কর drug rash হয়ে থাকে তবে সেই সব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাউসিং কমপ্লেক্স বা পুরসভা বোরো অফিসে না নিয়ে হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মানে যেখানে এমার্জেন্সি সামলানোর ব্যবস্থা আছে ! ভ্যাকসিন নেবার আগে তাঁরা যেন কর্তব্যরত চিকিৎসককে এই ব্যাপারটা বলে রাখেন।
ভ্যাকসিন নেবার পর যদি কেউ কোনও চুলকানি দানা, ফুসকুড়ি বা আমবাত অনুভব করেনতবে তিনি ফেক্সোফেনাডিন 180 মিগ্রা (প্রয়োজনে 360 মিগ্রা) বা বিলাস্টাইন 20 মিগ্রা (প্রয়োজনে দুটি ) বা লেভোসেটিরিজিন 5 মিগ্রা(প্রয়োজনে দুটি) খেতে পারেন।
আর একটা প্রশ্ন
-আমার কিছু চর্মরোগ আছে, যার জন্য আমাকে মিথোট্রিক্সেট, স্টেরয়েড, সাইক্লোস্পোরিন বা অ্যাজাথায়োপ্রিন জাতীয় ওষুধ খেতে হয়, আমি কি টীকা নিতে পারবো না?
-কেনো পারবেন না! অবশ্যই পারবেন, এগুলি ইম্যুনোমডিউলেটর বা প্রতিরোধ-পরিবর্তনকারী ওষুধ! এগুলো খেতে খেতে ভ্যাকসিন নিলে আপনার কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই, শুধু প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ গড়ে উঠতে একটু সময় লাগতে পারে। ভ্যাকসিনের সপ্তাহে মিথোট্রিক্সেট বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে সে কারণেই।
এই প্রশ্নও শুনতে হয়ঃ
ডাক্তারবাবু, আমার বাবার বয়েস হয়েছে, প্রেশার, শ্যুগার আছে, উনি কি এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন? নিলে কোনটি? কোভিশিল্ড না কোভ্যাক্সিন?
-অবশ্যই নিতে পারবেন! যে কোনো একটি ভ্যাকসিন! সব কটিই নিরাপদ এবং কার্যকরী! বয়স্কদের তো টীকাকরণ শুরু হয়েছে সেই মার্চ মাসে, এতোদিন তো ওনার টীকা হয়ে যাবার কথা! যিনি বয়োবৃদ্ধ এবং যাঁর হাই ব্লাডপ্রেশার, ব্লাড শ্যুগার বা অন্য কোমর্বিডিটি আছে তাঁর কিন্তু আগে টীকা নেওয়া উচিৎ! কারণ, কোভিড হলে বিপদের সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে তাঁর বেশি!
তাই ঝেড়ে ফেলুন টীকা নিয়ে অকারণ ভয়-ভাবনা-দুশ্চিন্তা!
নির্ভয়ে টীকা নিন, মেনে চলুন কোভিড-বিধি আর সপরিবারে সুরক্ষিত থাকুন।
আপনি আর আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকলে সমাজ সুরক্ষিত থাকবে।