আয়লা বুলবুল ফণী এই তালিকায় শেষতম সংযোজন উম্পুন। এর আগে নাম না জানা বহু ঘূর্ণিঝড় এসে আছড়ে পড়েছে সাগর উপকূলে। ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি। ভেঙে গেছে নদীবাঁধ। সাগরের লোনা জল ঢুকে গেছে চাষের ক্ষেতে। লোনা জলে মিশে গেছে পুকুর খালবিল আর পানীয় জল। চোখের লবণাক্ত জল আর সাগরের জল এক হয়ে গড়িয়ে গেছে বছর সাল যুগ। সরকার কেবলমাত্র খরচ করার জন্যই খরচ করেছে বলা যায়। দায়সারা বাঁধ মেরামত। বাঁশ আর টিন দিয়ে বাড়ি বাঁধা। এবার একপাশে করোনা মহামারীর আক্রমণে লক ডাউনে কর্মহীন গৃহবন্দী মানুষ সব হারিয়ে বসে আছে জলের কিনারায় অন্যপাশে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে মুছে গেছে তাদের শস্যের ক্ষেত। লক ডাউন আর প্রলয় ঝড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ – এদের পালাবার উপায়ও নেই।
এদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বেশ কিছু সংস্থা। তার মধ্যে ‘শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ’ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। আয়লা থেকে উম্পুন– কেরালা থেকে মালদহ – উড়িষ্যা সর্বত্র একটি সংস্থা ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে। সেটা এই শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ। নামটা হয়তো চেনা। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি ছত্তিশগড়ের এক শ্রমিক নেতা শঙ্কর গুহ নিয়োগীর স্বপ্ন ছিল শ্রমিক কৃষকের সুস্বাস্থ্য। আন্দোলন চলাকালীন তিনি খুন হয়ে গেছিলেন। সেই ঐতিহ্য আর স্বপ্ন বয়ে নিয়ে চলেছেন ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ আর তাঁর সহকর্মীরা। এবার সঙ্গে আছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর’স ফোরাম, অগ্নিভ ফাউন্ডেশন (তরুণ চিকিৎসকদের সংস্থা), রাসবিহারী শৈলুষিক (নাটকের দল ), ডক্টর ভাস্কর রাও জনস্বাস্থ্য কমিটি আর স্বাস্থ্য শিক্ষা নির্মাণ (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে এঁরা কাজ করেন উত্তর ২৪ পরগণার বিভিন্ন শ্রমিক অঞ্চলে)। উম্পুন রিলিফ নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যে হাসনাবাদ গোসাবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে মানুষের কাছে ন্যূনতম স্বাস্থ্য খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে সামিল হয়েছেন তরুণতম চিকিৎসক থেকে পক্ককেশ মানবতাবাদী– সকলেই। যদিও এক্ষেত্রে টাকার কথাটা বাহুল্য। তবুও এঁরা এঁদের সর্বস্ব দিয়ে ত্রাণের কাজ শুরু করেছেন। প্রথম দিনেই এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার ত্রাণ বিলি হয়েছে। এনাদের স্বপ্ন অন্ততঃ একটা গ্রামের বাসিন্দাদের পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করা। সে সব স্বপ্ন এখন বহুদূর। আপাততঃ ওখানে চলছে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই। এই মানবিক সংস্থাগুলো সেই বাঁচার লড়াইয়ে ওদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে গেছে।
এই দল পৌঁছে গেছে হাসনাবাদ হিঙ্গলগঞ্জ ছাড়িয়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম যোগেশগঞ্জ, হেমনগরে। এই দ্বীপের সরদার পাড়ায় বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের জল ঢুকেছে। কুলতলি, পারুলগ্রাম, পারুল আশ্রম, মীনাখাঁ সর্বত্র একই চিত্র।
সব খানেই এক অবস্থা। পুকুরের জল লবণাক্ত। মরা মাছ গবাদি পশু ভেসে উঠেছে পুকুরে খালেবিলে। পানীয় জল নেই। একজন ভারতীয় নাগরিকের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় কোনও কিছুই নেই। রূপমারি গ্রামেও অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
করোনার ভয়াল ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করে এরই মধ্যে আরও বহু সংবেদী মানুষের সঙ্গে কাজ করে চলেছে উম্পুন রিলিফ নেটওয়ার্ক ও তার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলো।