পৃথিবী আজ হতাশার আর ভীতির ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত।আমরা বন্দী চার দেওয়ালের মাঝে। এমন সময় কালো আকাশের মাঝে আলোকবর্তিকা মত ফোনে ভেসে আসছে কিছু সুখবর। কেউ হচ্ছেন নতুন মা আবার কেউ মা হতে চলেছেন এই খবর টা জানতে পারলেন। কিন্তু এমন এক পরিস্থিতিতেও সেই আনন্দগুলো যেন বড় ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ভাবী মাদের তাড়া করে বেড়া়চ্ছে হাজারও প্রশ্ন নিজের আর নিজের গর্ভে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে।
কোভিড-১৯ মানব সভ্যতার কাছেই বড় নতুন রোগ।তাই খুব বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ এখন ও হয়ে ওঠেনি তবুও যেটুকু জানা গেছে এখন ও পর্যন্ত,সেগুলো হল-
- আলাদা করে করোনা ভাইরাস গর্ভবতীদের বেশি কিছু ক্ষতি করেনা। আর পাঁচটা মানুষের মতই এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে জ্বর,হাঁচি,কাশি,গলাব্যথা , নিউমোনিয়া হতে পারে।
- মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ (ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন)হয় কিনা ঠিক ভাবে জানা যায়নি।অন্তত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তাই বলছে।
- WHO আরও জানাচ্ছে, বুকের দুধের মধ্যে দিয়ে এই ভাইরাস সন্তানের শরীরে যায় না।
গর্ভাবস্থয় করোনার প্রভাব
“খুব ভরসা যোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্যের অভাব থাকলেও কিছু কিছু মেডিক্যাল জার্নাল বলছে অনেক সময়ই প্রত্যাশিত দিনের আগেই ডেলিভারি হয়ে যেতে পারে এই রোগের সংক্রমণে। তা ছাড়াও মিসক্যারেজ, গর্ভস্থ সন্তানের নড়া চড়া কমে যাওয়া, মায়ের শ্বাস কষ্ট শুরু হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।” বললেন স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সঞ্জয় বিশ্বাস।
শরীরের পাশাপাশি মনকেও যে ছেড়ে কথা বলেনা তা স্পষ্ট হল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তীর কথায়। “গত এক সপ্তাহে আপাত ভাবে সুস্থ তিন জনের কাছ থেকে জানতে পারি তাদের মিসক্যারেজের কথা। এর একটা কারণ হতে পারে অত্যাধিক মানসিক চাপ, হতাশা বা মৃত্যু ভয়।”
কি কি করণীয়?
- আর পাঁচ জনের মতই হ্যান্ড হাইজিন বা কাফ এতিকেট খুব ভাল করে মানা।
- হাঁচি, কাশি, জ্বর হয়েছে এমন মানুষের থেকে দূরে থাকা।
- পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসব্জি, প্রোটিন বেশি করে খাওয়া।
- ঠিক ভাবে দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানো
- অযথা দুশ্চিন্তা না করা। যে জিনিসটা করলে ভালো থাকা যায় সেই জিনিসের সঙ্গে অনেকটা টাইম কাটান। সেটা বই পড়া,গান শোনা,সিনেমা দেখা বা একটু ঘরটাকে গুছিয়ে রাখাও হতে পারে।
- হালকা ঘরের কাজ অবশ্যই করবেন। উবু হয়ে বসে করতে হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।
মেডিক্যাল কেয়ার
এই লক ডাউন এর ফলে যারা নতুন মা হওয়ার খবর নিয়ে এলেন তাঁরা যেতে পারছেন না ডাক্তার বাবুদের সাথে পরামর্শ করতে যেতে। আর সব সময় তো একটা ভয় থেকেই যায় যে হসপিটাল যেতে গিয়ে করানোর সংক্রমণ হয়ে যাবে না তো? এমন এক পরিস্থিতিতে এই সব সাবধানতাগুলো মেনে চলুন।
- সবে সবে যাঁরা গর্ভবতী হলেন তাঁরা আগে ডাক্তার বাবুর সাথে ফোনে কথা বলে, খুব দরকার পড়লে তবেই ক্লিনিকে যান।
- গর্ভাবস্থায় ব্লাড প্রেসার দেখা খুব জরুরি,সেক্ষেত্রে নিজেরাই ডিজিটাল মেশিনের সাহায্যে দেখে ডাক্তার বাবুর সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
- ইউ এস জি স্ক্যান আর কিছু ব্লাড টেস্ট করে নিতে তো হবেই। সেটা একটু ফাঁকায় ফাঁকায় গিয়ে করাই ভাল।
- করোনা ইনফেকশন আছে এমন মহিলাদের নর্মাল ডেলিভারিতে খুব কিছু অসুবিধে নেই তা পরিষ্কার ভাবেই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
- “করোনা সংক্রমিত কোনো রোগীর যদি কোন কারণে সিজারিয়ান সেকশান করতেই হয় তবে সে ক্ষেত্রে স্পাইনাল এনেস্থেসিয়াতেই করা উচিত। কারণ জেনারেল এনেস্থেশিয়ার ফলে অনেক ড্রপলেট তৈরি হয় যা পুরো অপারেশন থিয়েটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।” বললেন ডাক্তার বিশ্বাস।
- করোনায় আক্রান্ত মা জন্মের পরে যদি বুকের দুধ খাওয়ানোর অবস্থায় থাকেন,সাবধানতা নিয়ে খাওয়াতেই পারেন। কিন্তু একটু বেশি অসুস্থ থাকলে বুকের দুধ এক্সপ্রেস করেও অন্য কেউ শিশুটিকে খাওয়াতে পারে। ফর্মুলা ফিড দেওয়ার চেয়ে এটাই ভাল। এটি শিশুর শরীরে ইমিউনিটি বাড়িয়ে করোনা প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
- সন্তান সম্ভবা অবস্থায় করোনার লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তার বাবুর সাথে যোগাযোগ করবেন।
- এখন ও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী করোনায় গর্ভবতীদের মৃত্যুর সংখ্যা হতে গোনা। কাজেই অযথা দুশ্চিন্তা না করাই বাঞ্ছনীয় বিশেষ করে এই সময়টায়।