আমরা সবাই জানি, প্রেগন্যান্সি বা গর্ভাবস্থা স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থা হলেও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন পড়ে। গর্ভবতী মহিলারা সবরকম যত্ন নিলেও মুখের স্বাস্থ্যের যত্নটা সেভাবে অনেকসময় নিয়ে উঠতে পারেন না। তার কারণ, ভারতে নিয়মিত ডেন্টাল সার্জনের মাধ্যমে চেক-আপের চলটা প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে সেসময়ে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হন। বেশ কিছু সমস্যা যা প্রেগন্যান্সি চলাকালীন বাড়তে পারে, আবার কিছু সমস্যা যা এমনিতে রেগুলার ও স্থায়ী চিকিৎসাও আছে, কিন্তু প্রেগন্যান্সির সময়ে ঘটলে তাকে শুধুমাত্র ঠেকিয়ে রাখা ছাড়া উপায় বিশেষ থাকে না। এসব নিয়েই আজকের আলোচনা।
সমস্যা-
১. গর্ভাবস্থায় মুখের যে সমস্যাটা সবথেকে বেশি দেখা যায়, তা হল মাড়ির ইনফেকশন(Gingivitis)। কিন্তু একটা কথা এখানে বলে রাখি, প্রেগন্যান্সি মাড়ির অসুখ তৈরী করে না, কিন্তু যদি আগে থেকেই সেই সমস্যা থেকে থাকে(দাঁতে প্লাক ও ক্যালকুলাসের অস্তিত্ব), তাহলে তাকে আরো গুরুতর করে দিতে পারে। মূলত হরমোনের তারতম্যের জন্যই এটা হয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থাকালীন Diabetes এই সমস্যাকে বাড়াতে পারে।
২. এই রোগের ক্ষেত্রে মূলত ব্রাশিং করার সময় রক্তপাত বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. মাত্র ১% গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে মাড়ির কোন কোন অঞ্চলে ছোট টিউমর সদৃশ গ্রোথ হতে পারে এই Pregnancy Gingivitis থেকে। খুব বেশি রক্তপাত, চিবানোর সময় অসুবিধা না করলে একে অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
৪. সাধারণত এসব সমস্যা প্রেগন্যান্সির পরেই কমতে শুরু করে। তবে স্কেলিং করিয়ে নিলে তা দ্রুত সমাধান হয়ে যায়।
৫. আগে থেকেই থাকা মাড়ির অসুখের কারণে দাঁতের নড়ার সমস্যা থাকতে পারে। এর সাথে প্রেগন্যান্সির সরাসরি যোগ নেই। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেলেও সাধারণত দেখা যায় যে, স্থানীয় সমস্যা(প্লাক ও ক্যালকুলাস) দূর করলে, গাইনিকোলজিস্টের পরামর্শ মতো মাল্টিভিটামিন নিয়মিত গ্রহণ করলে, এবং শিশুর জন্ম হয়ে গেলে তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদি না হয়, তাহলে তার কারণ প্রেগন্যান্সি নয়, বরং আগে থেকেই থাকা মাড়ির সমস্যা সেটা।
৬. প্রেগন্যান্সি চলাকালীন অনেকের বমি হওয়া বাড়তে পারে, যাকে Morning Sickness বা Hyperemesis gravidarum বলা হয়। এর ফলে মুখে পাকস্থলীর অ্যাসিড উঠে আসতে পারে, যা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে ও দাঁতকে ক্ষয় করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে জল/বেকিং সোডার দ্রবণ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মুখ কুলকুচি করে নিতে হবে, যাতে অ্যাসিড প্রশমিত হয়ে যায়।
৭. একটা মিথ ভাঙা যাক। অনেকে মনে করেন, A tooth for a preganancy. তাঁরা মনে করেন, গর্ভস্থ শিশুর শরীরের ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে মায়ের দাঁত থেকে ক্যালসিয়াম চলে যায়, এবং সেটার জন্য ডেন্টাল সার্জনের কাছে অনেকেই ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট চান। এটা সর্বৈব ভ্রান্ত ধারণা। দাঁতে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত স্টেবল ভাবে ক্রিস্টাল আকারে থাকে এবং সেই ক্যালসিয়ামের সাথে রক্তসঞ্চালনের কোন যোগ নেই। কিন্তু গর্ভস্থ শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের জন্য মায়ের শরীরের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম যেতে পারে, কারণ তার সাথে রক্ত সঞ্চালনের যোগ আছে। তাই প্রয়োজন বোধ করলে গাইনিকোলজিস্ট ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দিয়ে দেবেন।
এগুলো গেল প্রেগন্যান্সির চলাকালীন বিশেষ সমস্যাগুলোর কথা। এছাড়াও সাধারণ ভাবে দাঁতে ক্যাভিটি হওয়া, তার দরুণ ব্যথা হওয়া, পুঁজ জমা, আক্কেল দাঁতের সমস্যা এসবও প্রেগন্যান্সির চলাকালীন ঘটতে পারে। কিন্তু এসবের সাথে প্রেগন্যান্সির কোন যোগ নেই। এ শুধু দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনা একইসময়ে একসাথে ঘটে যাওয়ামাত্র। কিন্তু এসব হলে কী করবেন, বা এইসব সমস্যাকে এড়িয়ে চলতে হলে কী করবেন, তা পরের পর্বে আলোচনা করব।
ছবি প্রতীকী
তথ্যসূত্র : Dental Management of the Medically Compromised Patient, 7th edition – Little, Falace, Miller, Rhodus