বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে চতুর্থ স্থানে আছে জরায়ু মুখের ক্যান্সার বা সারভাইকাল ক্যান্সার। এর প্রধান কারণ স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা। আর এ বিষয়ে উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই। কাজেই এখনই এই অসুখ সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। এই অসুখ প্রতিরোধ করার জন্য টিকাও বেরিয়েছে। সময়মতো মেয়েদের এই টিকা দিলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার বা সারভাইকাল ক্যান্সারের কারণ কী?
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী হল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা সংক্ষেপে এইচপিভি। এই ভাইরাস নানা ধরনের হলেও বিশেষ কিছু ভাইরাস থেকে এই অসুখ হয়। আর তা সাধারণত ছড়ায় যৌন সংসর্গ থেকে। অনেক সময় এই সংক্রমণ নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কখনো কখনো তা ক্যান্সারের জন্য দায়ী হয়।
এই অসুখের লক্ষণ কী?
• শারীরিক মিলনের পর অথবা দুটো পিরিয়ডের মাঝে বা মেনোপজের পর রক্তপাত হওয়া
• পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত
• কোমর ও তলপেটে ধারাবাহিক ভাবে ব্যথা হওয়া
• শারীরিক মিলনের সময় যন্ত্রণা হওয়া
• যোনি থেকে অস্বাভাবিক কিছু বেরনো
কোন বয়সে এই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে?
সাধারণত ৩৮ থেকে ৪২ বছরের মধ্যে এই অসুখ বেশি ধরা পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে ৬০ বছরের পরেও এই রোগ ধরা পড়তে পারে। আগে থেকে টিকা নিলে এই রোগ যেমন প্রতিরোধ করা যায় তেমনি প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসায় পুরোপুরি রোগমুক্তি সম্ভব।
ঝুঁকি কাদের বেশি?
• নিজের বা সঙ্গীর একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে
• কম বয়সে শারীরিক সম্পর্ক শুরু হলে
• অন্য কোনো সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ যেমন, ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস অথবা এইচ আই ভি/এডস থাকলে
• শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে
• ধূমপান করলে
অসুখ নির্ণয়ের উপায় কী?
জরায়ু মুখের ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য প্যাপস্মিয়ার (PAP smear) নামে বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করা হয়। সার্ভিক্স-এর মুখ ও যোনির ভিতরের কোষের নমুনা সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা করা হয়। এতে ক্যানসারের কোনো লক্ষণ ধরা পড়লে তখন অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এইচ পি ভি ডি এন এ(HPV DNA) পরীক্ষাও করা হয়। প্রয়োজনে বায়োপসিও করা হতে পারে। আর এই পরীক্ষা কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করা দরকার। ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৩ বছর অন্তর এই পরীক্ষা করা উচিত। আর ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সে প্রতি ৫ বছর অন্তর। এই ভাইরাস শরীরে বাসা বাধলেও অনেক দিন পর্যন্ত তার কোনো লক্ষণ থাকে না। ফলে যখন রোগ ধরা পড়ে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল মেলে না।
এই অসুখ কীভাবে ছড়ায়?
মূলত যৌন সংসর্গের ফলে এই ভাইরাস ছড়ায়। খুব অল্প বয়স থেকে শারীরিক মিলনে অভ্যস্ত হলে বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলন হলে সেই মহিলাদের এই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকাও কিছু সময় দায়ী এই রোগের জন্য। তবে এই রোগের থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার উপায় হল টিকা নেওয়া।
কোন বয়সে এই টিকা দেওয়া হয়?
সাধারণত শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার আগে এই টিকা নিলে সবচেয়ে ভালো কাজ হয়। তবে ৪৫ বছরের মহিলারাও টিকা নিতে পারেন। ১৫ বছরের কম বয়স হলে দুটো আর তার বেশি বয়স হলে তিনটি ডোজ নিতে হয়। প্রথমটি নেওয়ার ১-২ মাস পর দ্বিতীয় আর তার ৬ মাস পর তৃতীয় ডোজ নিতে হয়। তবে টিকা নেওয়ার আগে শিশুদের ক্ষেত্রে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সারভাইকাল ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার কিছু টিপস
• অল্প বয়সে বিয়ে না দেওয়া বা কম বয়সেই যাতে শারীরিক মিলনে অভ্যস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা
• ঘন ঘন সন্তান প্রসব না করা ও সঙ্গী না বদলানো
• সুষম খাবার খাওয়া
• রোজকার খাবারে ভিটামিন এ, সি ও ই যাতে পরিমাণ মতো থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা
• পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
• সুরক্ষিত যৌন জীবন যাপন করা।
আমি সুতপা জানা। আমার একটি 5বছরের মেয়ে আছে। তাকে কী এই টিকা দেওয়া যায়? আর এই টিকা দিতে কত খরচ হবে?
দিদি, এই ওয়েবসাইটে “বড়দের জন্য টিকা”এরকম একটি লেখা মন দিয়ে পড়ুন, মেয়ের জন্য Gardasil ₹2444 বা Cervarix ₹1800 private Gynecologist doctor er কাছে নিতে পারেন।