নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদ অনুযায়ী (৮.১২.২১) এই মুহূর্তে ১৬টি ভ্যাক্সিন ইমার্জেন্সি ব্যবহারের ছাড়পত্র পেয়েছে। ৬টি ভ্যাক্সিন সর্বত্র ব্যবহারের জন্য পূর্ণ অনুমোদন পেয়েছে। এই ৬টির মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং গৃহীত ৫টি ভ্যাক্সিন হল – আমেরিকার মডার্না কোম্পানির mRNA ভ্যাক্সিন, ফাইজার/বায়োএনটেকের mRNA ভ্যাক্সিন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি/অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি নন-রেপ্লিকেটিং ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাক্সিন, রাশিয়ার গামালেয়ার ভ্যাক্সিন এবং চিনের সাইনোফার্মার তৈরি ভ্যাক্সিন।
এরকম ভাবার কোন কারণ নেই যে মডার্না বা ফাইজারের মতো দানবীয় হাঁ-মুখ বহুজাতিক কোম্পানি কোভিডের জন্য কোটি মানুষের মৃত্যুতে দুহাত দিয়ে দানসত্র খুলে বসেছে। আমি দেখার চেষ্টা করব “জাহান্নামের আগুনে” বসে মুনফার কত পুষ্প চয়ন করেছে এরা।
গতবছর যখন ভ্যাক্সিন তৈরির প্রবল উদ্যোগ চলছে সেসময় নেচার পত্রিকায় (২৭.০৮.২০২০) প্রকাশিত হয়েছিল “The unequal scramble for coronavirus vaccine” শীর্ষক প্রবন্ধ। প্রবন্ধে বলা হয়েছিল – “ধনী দেশগুলো ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সাথে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডোজের চুক্তি করে ফেলেছে। এর ফলে পৃথিবীর মাঝারি এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাক্সিনের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়বে … আগস্টের মাঝামাঝি তৈরির মাঝ পথে রয়েছে এরকম ৮০ কোটি ভ্যাক্সিন আমেরিকা কিনে নিয়েছে। এবং আরও প্রায় ১০০ কোটি কিনবে বলে স্থির করেছে। ইংল্যান্ড ৩৪ কোটি ডোজ (প্রতিটি নাগরিকের জন্য ৫টি করে ডোজ) এবং জাপান একশ কোটি ডোজের কাছাকাছি কিনে নেবে।”
COVAX (COVID-19 Vaccine Global Access Facility) নামে একটি যৌথ উদ্যোগ জন্ম নিয়েছে এই অতিমারি শুরুর গোড়ার দিকে। এতে রয়েছে বিল এবং মেলিন্দা গেটস-এর সংগঠন GAVI (Global Alliance for Vaccines and Immunization), Coalition for Epidemic Preparedness Innovations (CEPI) এবং WHO। এদের লক্ষ্য হল ৯২টি low-income and middle-income দেশে সমান স্বচ্ছভাবে এবং ন্যায্যতা রক্ষা করে যাতে ভ্যাক্সিন পৌঁছে দেওয়া যায়।
নেচার-এ গ্যাভিন ইয়ামি (যিনি ডারহাম ইউনিভার্সিটি, নর্থ ক্যারোলাইনার সেন্টার ফর পলিসি ইম্প্যাক্ট অন গ্লোবাল হেলথ-এর ডিরেক্টর) “Rich countries should tithe their vaccines” (২৫.০২.২০২১) শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এখানে তিনি যে বিষয়গুলোর ওপরে জোর দিয়েছিলেন সেগুলো হল – (১) কোভিড-১৯ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১৯ কোটির বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে (জনস হপকিন্স সেন্টার-এর ২.০৩.২০২১-এর হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ২৫ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে যা গত এক সপ্তাহে ১৭% বৃদ্ধি পেয়েছে), (২) এর ৩/৪ অংশ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০টি ধনী দেশে, (৩) এই ১০টি ধনী দেশের জিডিপি পৃথিবীর মোট জিডিপির ৬০%, (৪) ২৫০ কোটি জনসংখ্যার ১৩০টি দেশে একটিও ভ্যাক্সিনের ডোজ দেওয়া হয়নি, (৬) উচ্চ আয়ের দেশ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৬%, কিন্তু এরা অর্ধেকের বেশি ভ্যাক্সিন কিনে নিয়েছে। তিনি মন্তব্য করেছেন – “যখন সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ দাবানলের মতো অনিয়ন্ত্রিত তখন ভাইরাসের বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টে বিবর্তিত হবার সুযোগ থাকে।”
এখানে একটি বৈজ্ঞানিক তথ্য মাথায় রাখা দরকার। mRNA ভাইরাসের দুটো চরিত্র আমাদের জন্য উদ্বেগজনক – (১) চরিত্রগতভাবে এগুলো “error-prone” অর্থাৎ একটি ভাইরাস থেকে আরেকটি ভাইরাস তৈরির সময়ে এর জিনের সিকোয়েন্সে গণ্ডগোল হয় যাকে সহজ কথায় মিউটেশন বলে, এবং (২) যত বেশি রেপ্লিকেশন অর্থাৎ ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি হবে তত বেশি মিউটেশন হবে। যেমনটা দেখছি আমরা ডেল্টা এবং ওমিক্রনের ক্ষেত্রে।
“ভ্যাক্সিন জাতীয়তাবাদ” এবং “ভ্যাক্সিন অসাম্য” ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইন তৈরি হবার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। টিকাকরণ যত কম হবে তত বেশি সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে। আবার যত বেশি সংক্রমণ হবে ভাইরাসের রেপ্লিকেশন তত বেশি হবে। রেপ্লিকেশন বেশি হওয়া মানেই মিউটেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। WHO এবছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে অন্তত ১০% জনসংখ্যাকে ভ্যাক্সিন দেবার কথা বলেছিল। ৫০টির বেশি দেশ এই টার্গেট মিস করেছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকা মহাদেশে। ৬ মাস আগে সুবিখ্যাত নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনের একটি খবরের (৫.০৬.২১) শিরোনাম ছিল “The Peril of Not Vaccinating the World”। সতর্কবার্তা ছিল – “যদি ভ্যাক্সিন অনুপস্থিত থাকে তাহলে বিশ্বব্যাপী এক অতল সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
খানিকটা পুরনো হিসেব দিই।নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রে “ফাইজার রিপস হান্ড্রেডস অফ মিলিয়নস ইন প্রফিট ফ্রম কোভিড ভ্যাক্সিনস” (মে ৪, ২০২১) শিরোনামে প্রকাশিত খবর জানিয়েছিল – (১) ২০২১-এর প্রথম তিন মাসে ফাইজার কোম্পানি ভ্যাক্সিন বিক্রী করে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার লাভের মুখ দেখেছে, এবং (২) যেখানে ধনী দেশগুলোতে ৪ জনের ১ জন মানুষ ভ্যাক্সিন পেয়েছে দরিদ্র দেশে এ সংখ্যাটা প্রতি ৫০০ জনে ১।
গার্ডিয়ান একটি সংবাদে সদ্যসমাপ্ত জি-৭ বৈঠক নিয়ে সখেদে বলেছিল – পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে অত্যন্ত দ্রুত এবং নিশ্চয়াত্মকভাবে ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছে অতিমারি জনিত মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য। পৃথিবীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য টিকাকরণের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ নেই।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর “ফ্রম ভ্যাক্সিন ন্যাশনালিজম টু ভ্যাক্সিন ইকুইটি”-এ বলা হয়েছিল – “সমগ্র বিশ্বের টিকাকরণ কেবলমাত্র একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, এটা আমাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি সুরক্ষিত করে আত্ম-স্বার্থও রক্ষা করে। ধনী দেশগুলোতে প্রথম টিকাকরণ করার পরে বাকী বিশ্বের সিদ্ধিলাভ হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই।”
(Public Funding for Covid-19 Vaccine Research and Development 2020–2021: Sources, Intermediaries, and Recipients ($U.S. millions)
হালের চিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল WHO-র মঞ্চ থেকে বলেছিলে (৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১) – “যদি কোম্পানি এবং ধনী দেশগুলো যারা বিশ্বব্যাপী ভ্যাক্সিনের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে তার যদি মনে করে যে বিশ্বের দরিদ্ররা তাদের ফেলে দেওয়া ভ্যাক্সিনের উচ্ছিষ্টতে সন্তুষ্ট থাকবে তাহলে আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবো না।” এর অর্থ হল অধুনা বিশ্বে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে ভ্যাক্সিনের সরবরাহ এবং উপযুক্ত টিকাকরণের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে। সংকটের ছবি দেখে নেওয়া যাক।
ল্যান্সেট-এর মতো জার্নালে “Challenges in ensuring global access to COVID-19 vaccines: production, affordability, allocation, and deployment” শিরোনামে একটি দীর্ঘ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল এ বছরের গোড়ায় (ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১)। সেখানে বলা হয়েছিল ভ্যাক্সিন সরবরাহের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো হল – কি হারে, কি দামে, মানুষের নাগালের মধ্যে কিনা, বিশ্বব্যাপী বিতরণ হচ্ছে কিনা যাতে যেখানে প্রয়োজন পড়ে সেখানে পাওয়া যায়, এবং স্থানীয় জনসধারণের মধ্যে পৌঁছুচ্ছে কিনা।
২৪ মার্চ, ২০২১-এ ১৫ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী এবং চ্যারিটেবল সংগঠনের প্রধান আমেরিকার হেলত্যহ এবং হিউম্যান সার্ভিসেসের সেক্রেটারি জেভিয়ার বেসেরা, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের ডিরেক্টর ফ্রান্সিস কলিন্স এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর অ্যান্থনি ফাউচিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন “Moderna and Its Use of an NIH-Owned Patent for COVID-19 Vaccines” শিরোনামে। এই চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন “মডার্না বর্তমানে mRNA-1273-র জন্য আমেরিকান ডলারে ১০ থেকে ৪০ ডলার পর্যন্ত দাম নিচ্ছে, যদিও উৎপাদন করতে খরচ পড়ছে ৩ ডলারেরও কম”। এর নির্গলিতার্থ হল মডার্নার যে ভ্যাক্সিন তৈরি করতে ৩ ডলারের কম খরচ হয় সে ভ্যাক্সিন কোম্পানিটি বাজারে বিক্রী করছে ১০ থেকে ৪০ ডলার দামে। মুনাফার পরিমাণ ৩৫০% থেকে ১৩৫০%। ঐ চিঠিতে আরও বলা হয় আমেরিকার ট্যাক্সদাতারা সরকারের হাত ঘুরে এই ভ্যাক্সিনের জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার ১১ মাসে কোভিড ভ্যাক্সিন বাজারে আনার জন্য আমেরিকা এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন মোট প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ টাকা সাধারণ মানুষের করের টাকা। গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত সংবাদ (“‘Wall of secrecy’ in Pfizer contracts as company accused of profiteering”, ৫.১২.২০২১) অনুযায়ী, “The Channel 4 investigation reveals analysis by one biological engineering expert claiming the Pfizer vaccine costs just 76p to manufacture for each shot. It is reportedly being sold for £22 a dose to the UK government.” অর্থাৎ যে ভ্যাক্সিন উৎপাদনে ফাইজারের খরচ পড়ছে ৭৬ পেন্সের কম (৭৬ টাকা) সে ভ্যাক্সিন ইংল্যান্ডের সরকারকে বিক্রী করছে ২২ পাউন্ডে (২,২০৫ টাকা) – মুনাফার পরিমাণ ৩০০%-এর মতো। এ সংবাদেই বলা হল – The company added: “The pandemic has highlighted the extraordinary value that a vibrant private sector can deliver to society.”
People’s Vaccine Alliance নামে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে যারা বিভিন্ন দরিদ্র দেশে যাতে ক্রয় ক্ষমতার মূল্যে ভ্যাক্সিন পৌঁছয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। ২১ অক্টোবর, ২০২১-এ এরা “Dose of Reality: How rich countries and pharmaceutical corporations are breaking their vaccine promises” শিরোনামে ৩৩ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয় – “অতিমারি শুরুর সময়কাল থেকে সমস্ত উৎপাদিত ভ্যাক্সিনের ০.৭%-এরও কম পৌঁছেছে নিম্ন আয়ের দেশে। এর একটি কারণ হল মডার্নার মতো কোম্পানি এদের উৎপাদনের ৮৪% অত্যন্ত বেশি দামে ধনী দেশগুলোকে বিক্রী করেছে যাতে এদের মুনাফার পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এর থেকে যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হল ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির সম্পদ এবং ধনী দেশের প্রয়োজনাতিরিক্ত ভ্যাক্সিন জমিয়ে রাখার ফলে গরীব দেশের হাজার হাজার মানুষ পরতিদিন কোভিড-১৯-এ মারা যাচ্ছে। World Health Organization (WHO)-র মতে এই মৃত্যু ‘সম্পূর্ণত প্রতিরোধযোগ্য’।” মডার্না এবং ফাইজার/বায়োএনটেক ইত্যাদি কোম্পানি যে ভ্যাক্সিন তৈরি করছে তার মাত্র ০.৭% গরীব দেশগুলোতে পৌঁছুচ্ছে। প্রায় সম্পূর্ণ উৎপাদিত ভ্যাক্সিন চড়া দামে কিনে নিচ্ছে ধনী দেশগুলো যেখানে পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যার মাত্র ২৫% বা তার কম বাস করে এ দেশগুলোতে (বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী)।
পূর্বোক্ত রিপোর্টে আরও বলা হয় – “Via their bilateral deals Moderna has sold an estimated nine of every ten doses to high income countries. Pfizer/BioNTech has sold eight times as many doses to high-income countries compared to doses sold to low and low-middle-income countries13.” ধনী দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক চুতির মধ্য দিয়ে মডার্না প্রতি ১০টি ডোজের ৯টি ডোজ এদেরকে বিক্রী করেছে। এবং ভ্যাক্সিন তৈরি হাবার আগেই এ চুক্তি হয়ে বসেছিল। ফাইজার দরিদ্র এং মধ্য আয়ের দেশগুলোতে যে পরিমাণ ভ্যাক্সিন সরবরাহ করেছে তার ৮ গুণ বেশি সরবরাহ করেছে ধনী দেশগুলোতে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর (জুলাই ১৫, ২০২১) “Averting Future Vaccine Injustice” প্রবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছিল – “A more reliable strategy is to build scientific and industrial capacity to develop and produce adequate volumes of countermeasures in all regions and to negotiate rules ensuring that knowledge and technology are globally shared, even when physical products are not. Using and expanding regional manufacturing hubs today are necessary steps toward ending the current pandemic and preparing for the next one.”
এজন্য পূর্বোক্ত “Moderna and Its Use of an NIH-Owned Patent for COVID-19 Vaccines” চিঠিতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি দাবী তোলা হয়েছি – (১) “Require technology sharing with the World Health Organization to help ramp up global production”, এবং (২) “Include requirements for accessible pricing universally”।
Oxfam একটি আন্তর্জাতিক চ্যারিটেবল সংস্থা। এদের ১৬ নভেম্বর, ২০২১-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে – “Pfizer, BioNTech and Moderna making $1,000 profit every second while world’s poorest countries remain largely unvaccinated”। এদের হিসেব অনুযায়ী প্রতি মিনিটে ৬৫,০০০ ডলার মুনাফা করছে ফাইজার, বায়োএনটেক এবং মডার্না। একমাসের আগের হিসেব পর্যন্ত মডার্না ০.২% ভ্যাক্সিন গরীব দেশগুলোতে সরবরাহ করেছে যেখানে এই দেশগুলোর ৯৮% মানুষের পূর্ণ টিকাকরণ হয়নি। শুধু তাই নয় এ কোম্পানিগুলো অন্য কোন দেশকে ভ্যাক্সিন টেকনোলজি এবং know-how হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানি। এই কোম্পানি “নো প্রফিট-নো লস” ভিত্তিতে ভ্যাক্সিন বিক্রী করছে এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মতো অন্য দেশের ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে টেকনোলজি হস্তান্তরও করছে। এদের তৈরি ভ্যাক্সিনের দাম ৩ ডলার বা তার কম। কিন্তু একেবারে হালে এ ছবিও বদলে গিয়েছে। গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত সংবাদ (১২.১১.২০২১) জানাচ্ছে – “AstraZeneca signs new Covid contracts in shift away from not-for-profit”। জানাচ্ছে – “AstraZeneca has started signing commercial contracts to supply its Covid-19 vaccine next year as the pandemic moves to an “endemic phase” – in a major shift away from the drugmaker’s not-for-profit pricing … AstraZeneca has sold more than $2.2bn (£1.64bn) of its Covid-19 vaccine, called Vaxzevria, in the first nine months of this year, half of which it booked in the three months to September.”
ভ্যাক্সিন বিক্রীর মধ্য দিয়ে এই অতিমারিকালে নতুন ৫ জন বিলিওনেয়ারের জন্ম হয়েছে। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সমেত ১০০টির বেশি দেশ TRIPS তুলে নেবার দাবী জানিয়েছে। একে বর্তমান এবং প্রাক্তন ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ী সমর্থন করেছেন। কিন্তু ভবিতব্য ভুলবার নয়। বহাল তবিয়তে TRIPS আছে। ফাইজার পূর্বাভাষ দিয়েছে ২০২১ সালে ভ্যাক্সিন বিক্রী করে ৩৬ বিলিয়ন ডলার রেভেন্যু আশা করছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ পরকাশিত একটি খবর (“Pfizer faces scrutiny over scale of its Covid profits, says report”, ডিসেম্বর ৫, ২০২১) অনুযায়ী – “Only 2 per cent of people in low-income countries had been fully vaccinated against coronavirus. Drug firms should suspend intellectual property rights for Covid-19 vaccines, tests, treatments and other medical tools.”
ব্লুমবার্গ নিউজউইক-এ প্রকাশিত “When Lifesaving Vaccines Become Profit Machines for Drugmakers” খবর অনুযায়ী কলম্বিয়া ১ বিলিয়ন ডলার নাগরিকদের ভ্যাক্সিনের জন্য খরচ করছে মডার্নার কাছ প্রতি ৩০ ডলারে কিনে। বলা হয়েছে “Covid vaccines are emerging as a $100 billion-plus business in 2021.” আফ্রিকার বাজার দখল করেছে চিনা সংস্থা সাইনোফার্মের ভ্যাক্সিন। সেনেগালের মতো দরিদ্র দেশ যেখানে স্বাস্থ্যের জন্য মাথাপিছু ব্যয় ৬০ ডলারের কম সেখানে ৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাইনোফার্মের ২০০,০০০ ডোজ ভ্যাক্সিন কিনেছে – প্রতি ডোজ ২০ ডলার দামে।
এখানে তিনটি প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে – (১) ভ্যাক্সিনকে public good হিসেবে দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী জোরালো আওয়াজ উঠবে কিনা, (২) দানবীয় ফার্মা কোম্পানিগুলোর আকন্ঠ তৃষ্ণা মেটানোর জন্য যে মানবাধিকারের সংকট তৈরি হচ্ছে তাকে আমরা গুরুত্ব দেবো কিনা, এবং (৩) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেমন বলেছে “the rights of billions of people around the world to life and to health will continue to be in jeopardy” হতে দেবো কিনা।
শক্তিশালী বক্তব্য
আসলে করোনাভাইরাসের বিষয়টা এখন বেশ জটিল অবস্থায় পৌঁছেচে। প্রথম থেকে যদি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি দেশগুলো গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিলি করে সকলের জন্য যাতে সমবণ্টন সম্ভব হয়, এমন একটি পদক্ষেপ নিত, তাহলে একরকম হত। সেইটে হয়নি, বরং যেটা হয়েছে তাতে একটা ভয়ঙ্কর রকমের বাজে ব্যাপার হয়েছে, যে পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও জনবহুল দেশগুলোতে ভ্যাকসিন বিলি হয়নি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি সেভাবে, ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতন দেশে এবং গোটা আফ্রিকা মহাদেশে ধরা যাক, গড়ে ৩০% এরও কম মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে (দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ৩০%, বাকি দেশগুলোতে ১০% এরও কম!),
https://ourworldindata.org/covid-vaccinations
এবং বিপদটা এইখানেই, “রথচক্র গ্রাসিছে মেদিনী”, কারণ যত কম ভ্যাকসিন, তত বেশী ইনফেকশনের ঝুঁকি, তত বেশী নতুন স্ট্রেন বেরোনর সম্ভাবনা। ফলে আজ ওমিক্রণ যে ছড়াতে শুরু করেছে, তার কার্যকারণের হিসেব নিলে দেখা যাবে ভ্যাকসিন বণ্টনের অসাম্য কার্যকারণগত মডেলের একটা মস্ত জায়গা জুড়ে থাকবে |
ভ্যাকসিনের কারণে কোম্পানীর মুনাফা যতই হোক না কেন, একটা বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। ২০২২ এও যদি এই একই গল্প চলতে থাকে, ভ্যাকসিন বণ্টনের অসাম্যের কারণে একটা অন্য রকমের বিপদ আসছে।
সেটা এই রকম: আমরা টের পাচ্ছি যে ওমিক্রন (ওমাইক্রণ) দু দাগ ভ্যাকসিন যারা পেয়েছে, তাদের ভ্যাকসিনে বিশেষ কাজ করবে না, আরো এক দাগ ভ্যাকসিন প্রয়োজন (বুস্টার) | এই জায়গাটায় বিশ্বব্যাপী অসাম্য রয়েছে | এবং ChadoX বনাম BNT162B2 তুলনামূলক “লড়াই”য়ের ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। প্রথম বিশ্বের দেশগুলো দেশান্তরে যাতায়াত বেশী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাতে হিতে বিপরীত হবার সমূহ সম্ভাবনা, কারণ যে সমস্ত দেশে নতুন স্ট্রেন বেরোবে, তারা এবার খবর আড়াল করতে শুরু করবে।
ভ্যাকসিন কোম্পানীদের পৌষ মাসে যে বিশ্ব জুড়ে সর্বনাশের মাথয় বাড়ি পড়তে হতে চলেছে, সেই আসন্ন সম্ভাবনার কথা ভেবে ভাল লাগছে না।
অনেক নতুন তথ্য পেলাম। ধন্যবাদ।
আপনার সান্নিধ্যে অনেক অজানা তথ্য জানছি , অসংখ্য ধনযবাদ স্যর
অনেক নতুন কিছু জানলাম
প্রতিদিন আপনার কাছ থেকে নতুন নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারি ধন্যবাদ প্রিও স্যার আপনাকে ♥️
Excellent post.
আন্তরিক ধন্যবাদ!
ওষুধ কোম্পানীগুলোই রোগ ও ভ্যাক্সিন নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষ নয়, মুনাফাই তাঁদের লক্ষ্য।
প্রথমে শুরু হোল নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা-আমাদের ভ্যাক্সিন সবচেয়ে কার্য্যকরী।
কাল দেখলাম হু বলছেন এক কোম্পানীর এক ডোজ ভ্যাক্সিন নিয়ে অন্য কোম্পানীর দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যাবে। বোঝা নতুন উৎপাদন বন্ধ হয়েছে, সবার ষ্টক এখন চালাতে হবে।
আশা করছি করোনা এবার যাবে।
ধন্যবাদ ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
ধন্যবাদ!