পুরুষদের একটা খুব কমন ক্যান্সার হলো প্রস্টেট ক্যান্সার। বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে অনেকেই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আশার কথা হলো এই ক্যান্সার থেকে সম্পুর্ণ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা হয়। আর দুঃখের কথা হলো প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পরার পরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর সঠিক চিকিৎসা মানুষ পান না বা করান না।
প্রস্টেট একটা গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড যা মূত্রনালীর মুখে থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে মূত্রনালী যায়। এর সিম্পটম বা উপসর্গগুলো অনেকটা আর একটি নন ক্যান্সার মানে ক্যান্সার নয় এমন একটি অসুখ– বিনাইন হাইপারট্রফি অফ প্রস্টেট (বি এইচ পি)-এর মতো। কিন্তু দুটোর চিকিৎসা সম্পুর্ণ আলাদা।
দুটোতেই প্রস্রাবের সমস্যা হয়। প্রস্রাব পরিস্কার হয় না। বার বার পায়। ধরে রাখা সমস্যা হয়। প্রস্রাবের ধারা সরু হয়ে যায়। রাতে বারবার প্রস্রাব করতে উঠতে হয়।
যেটা ক্যান্সার নয় মানে বি এইচ পি, তার চিকিৎসা করেন ইউরোলজিস্ট এবং এটি ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেক্সন অফ প্রস্টেট বা টি ইউ আর পি নামক একটা অপারেশনের মাধ্যমে হয়। এতে এন্ডোস্কোপিক সার্জারীর মাধ্যমে মূত্রনালীর যে অংশে প্রস্টেট বড় হয়ে মূত্র প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেছে তাকে চেঁছে পরিস্কার করা হয়। এতে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বাদ দেওয়া হয় না।
কিন্তু প্রস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই সার্জারির ভুমিকা প্রায় নেই বললেই চলে এবং তা অপ্রয়োজনীয়। কেন না ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তাকে নির্মূল না করলে সারানো সম্ভব নয়। টি ইউ আর পি কেবল একটূ চেঁছে পরিস্কার করা, তাই এই করে ক্যান্সার সারানো যায় না। উলটে ইনকন্টিনেন্স বা প্রস্রাবের ধরে রাখতে না পারার সমস্যা হতে পারে।
তবে প্রস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা কি?
এর চিকিৎসা করেন অনকোলজিস্ট (মূলত রেডিয়েশন চিকিৎসা) বা ইউরো অনকোলজিস্ট (ইউরোলজিস্ট নন)।
চিকিৎসা মূলত হরমোন থেরাপি মানে পুরুষ হরমোন বা এন্ড্রোজেনকে বন্ধ করা কারণ এই ক্যান্সারটা হরমোনের ওপর নির্ভরশীল ( ওষুধ বা এ ডী টী-র মাধ্যমে বা অন্ডকোষ বাদ দিয়ে) এবং রেডিয়েশন চিকিৎসা। কিছু আর্লি স্টেযে প্রোস্টেট সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া বা প্রস্টেটেকটমি (মনে রাখবেন টি ইউ আর পি নয়) যা আজকাল রোবোটীক পদ্ধতিতে করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের পরও রেডিয়েশন চিকিৎসা লাগে। একটু এডভান্স স্টেজে হরমোন থেরাপি আর রেডিয়েশন চিকিৎসাই করা হয়।
এইসব কথা বলার কারণ অনেক রোগী কেবল টি ইউ আর পি করিয়ে (কিছুক্ষেত্রে অন্ডকোষ বাদ দিয়ে) খানিকটা সিম্পটমের উপশম হওয়ার পর আর কোন চিকিৎসা করান না। ফল হয় মারাত্মক, কেন না ওনার ক্যান্সারের আসলে কোন চিকিৎসাই হয়নি আর তা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে রয়ে গিয়েছে। তাই স্বাভাবিক নিয়মে ক্যান্সার বাড়তে থাকে ও একসময় স্টেজ ফোর মানে সারা শরীরে ছড়িয়ে যায় ও অত্যন্ত কষ্টদায়ক অবস্থার মুখোমুখি তাঁদের হতে হয় যার পরিণতি মৃত্যু। কিন্তু তা খুবই কষ্টদায়ক মৃত্যু। হাড়ে ও অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে গিয়ে প্রভূত ব্যথা-বেদনার সম্মুখীন তাঁরা হন। আর এই পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যায়।
প্রস্টেট ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস এর জন্য রক্তে পি এস এ বলে একটা জিনিস পরীক্ষা করা হয়। তারপর মাল্টিপ্যারামেট্রিক এম আর আই বলে একটা এম আর আই করিয়ে সন্দেহ হলে বায়প্সি করা হয় (আবারো বলছি টি ইউ আর পি নয় এ বায়প্সি অন্য ভাবে করা হয়)। তারপর স্টেজ ও রিস্ক গ্রুপ অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।
তাই অনুরোধ দয়া করে প্রস্টেট ক্যান্সার সন্দেহ হলে বা ডায়াগনসিস হলে একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। (রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট অথবা ইউরো অনকোলজিস্ট হলে ভালো)। এবং সঠিক চিকিৎসা করান।
আশার কথা অনেক ভালো ওষুধ ও উন্নত রেডিয়েশন চিকিৎসার ফলে প্রস্টেট ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। এখন এমনকি স্টেজ ফোর প্রস্টেট ক্যান্সার রোগীকেও অনেকদিন উপসর্গহীন ভাবে ভালো রাখা সম্ভব হচ্ছে।
প্রস্টেট ক্যান্সার একটি সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য ক্যান্সার, এর সঠিক চিকিৎসা করান আর অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
এবারের শারদীয়া সুচিকিৎসা পত্রিকায় প্রকাশিত।