কুষ্ঠ রোগের মতোই মানবসভ্যতার সবচেয়ে পুরনো অসুখগুলির একটি হল সোরিয়াসিস। এবং শ্বেতীর মতো এই অসুখটিকেও কুষ্ঠ বলে ভুল করা হত একটা সময়।
১৮৪১ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানী হেবরা প্রথম জানান, এটি সেরিয়াসিস এবং এর সাথে কুষ্ঠ রোগের কোনও সম্পর্ক নেই। শীতের দেশে বেশি হয়। শীতকালে আমাদের দেশে এর প্রকোপ বাড়ে। ইংরেজি সোরিয়াসিস বানানটি বেশ গোলমেলে। নিউমোনিয়া আর থাইমিসের মতোই। এটিও শুরু হচ্ছে একটি সাইলেন্ট ‘পি’ দিয়ে –Psoriasis- সোরিয়াসিস। বাংলায় অনেকে সোরাইসিসও বলেন।
দুনিয়া জুড়ে জনসংখ্যার ০.৫ থেকে ৩ বা ৪ শতাংশ মানুষ এই অসুখটিতে ভোগেন। ভারতে ৩.৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি।
প্রধানত দুটি বয়সে সোরিয়াসিস শুরু হতে পারে। ইয়াং অ্যাডাল্ট অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ – ২২ বছর। আর প্রৌঢ়ত্বের প্রথম প্রহরে, ৫৫ থেকে ৬০ বছরএই সময়টায়। ছোটদেরও হয়। নারী-পুরুষ সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে বিশেষ ভেদ নেই।
খারাপ কথাটা হল এটা সারাজীবনের অসুখ। একেবারে সেরে যায়না। যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, তেমনি। তবে ভালো কথাটা হল এ রোগটি ছোঁয়াচে আদৌ নয়। একজন থেকে আর একজনের হবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবে একই বাড়িতে একাধিক সদস্যের সোরিয়াসিস থাকতেই পারে। সেটা অবশ্য ছোঁয়াচে থেকে নয়, বংশগতির কারণে।
কেন হয় সোরিয়াসিস? সে তো এক জটিল ব্যপার। সংক্ষেপে বললে একটু বলা যায় যে প্রতি মুহূর্তে আমাদের শরীর থেকে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মৃত কোষ ঝরে যেতে থাকে, আর প্রতিমুহূর্তে ঠিক একইভাবে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোষ শরীরে তৈরি হতে থাকে। এটা আঠাশ দিনের একটা কোষ-চক্র বা সেল সাইকেল। সোরিয়াসিসে এই সেল সাইকেলটা খুব দ্রুত হয়ে যায়। আঠাশ দিনের মেয়াদ ফুরিয়ে যায় তিন-চারদিনেই। ফলে প্রয়োজনের বেশি দেহকোষ তৈরি হতে থাকে। আঁশ আঁশ অভ্রের মতো মিশমিশে খোস উঠতে থাকে।
মাথায়, হাতে, পায়ে, কনুই, হাঁটুতে, কোমরের পিছনেও হতে পারে। সারা শরীরে বৃষ্টির ফোঁটার মতো গাটেট সোরিয়াসিস, চাকার মতো দেখতে গোল রূপয়েড প্যাটার্ন, প্লাক্টাইপ বা পুঁজভরা পাসচুলার সোরিয়াসিস, বহু রকমভাবে দেখা দিতে পারে অসুখটি।
এমনকী হাতের তালু বা পায়ের নীচের অংশ ফাটা দিয়েও দেখা দিতে পারে সোরিয়াসিস। কারও কারও নখে পিটিং দেখা যায়, যেন আলপিন দিয়ে ফুটো ফুটো করে দেওয়া হয়েছে। হাড়ে, ছোট জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস থাকতে পারে। কখনো ত্বকে রোগলক্ষণ দেখা দেবার আগে। কখনো বা পরে।
পৃথুল বা ওভার ওয়েট মানুষদের বেশি হতে দেখা যায় সোরিয়াসিস। ইদানীং জানা যাচ্ছে মেটাবলিক সিন্ড্রোমের একটি অংশ এই অসুখটি। তার মানে ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল, হার্টের অসুখ এই সমস্ত সঙ্গী হতে পারে। আর মানসিক চাপে বেড়ে যায় এই অসুখটি। সোরিয়াসিসে একেবারে চলবে না ধূমপান এবং মদ্যপান। আর কিছু ওষুধ যেমন খাবার স্টেরয়েড, লিথিয়াম, বিটা ব্লকার ও মুড়ি-মুড়কির মতো ব্যথার ওষুধ ইত্যাদি।
চিকিৎসা সবসময়েই ত্বক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো হওয়া উচিত। নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট সময়ে লাগাবার স্টেরয়েড ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, কোল টার, ইউরিয়া, হোয়াইট পেট্রোলিয়াম জেলি, ক্যালসিপোট্রিয়ল তো আছেই। এছাড়া আছে ন্যারোব্যান্ড ফোটোথেরাপি, খাবার রেটিনয়েড, মিথোট্রিক্সেট, অ্যাপ্রেমিলাস্ট, সাইক্লোস্পোরিন বা হাল আমলের দুর্মূল্য বায়োলজিক।
সচেতন হোন, সঠিক চিকিৎসায় কিন্তু চমৎকার থাকা যায় সোরিয়াসিসে।
ভালো লেখা।আমার এক পরিচিতের এই অসুখ টি আছে। যদি নাম্বার দিতে পারেন, তাহলে যোগাযোগ করতে বলবো।