(১) নলকূপ শোধন বা জীবাণুমুক্তকরনের কাজে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহারবিধি:-
কাজ শুরু করার আগে মনে রাখতে হবে যে নলকূপের পরিশোধন মানে পাম্প এর যন্ত্রাংশ ও নলকূপের বিভিন্ন অংশের শোধন করা যা দূষিত জলে ডুবে যাওয়ার ফলে জীবাণু যুক্ত হয়ে পরেছে। পাম্প এর সাহায্যে যে জলস্তর থেকে জল তোলা হচ্ছে তা কোনো অবস্থাতেই জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব নয়, তার প্রয়োজনও নেই। যে প্রক্রিয়ায় এটি করা হয় সেটি জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানের পরিভাষায় “সুপার ক্লোরিনেশন” বা “শক ক্লোরিনেশন” নামে পরিচিত।
এর জন্য যে যে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি লাগবে তা হল: (ক) দশ লিটার জল ধরে এমন দুটি বালতি; (খ) উচ্চমানের ব্লিচিং পাউডার যাতে শতকরা ২৫ ভাগ ক্লোরিন আছে; (গ) ৫০ সেমি × ৫০ সেমি মাপের এক টুকরো সুতির কাপড়; (ঘ) ৫০ সেমি লম্বা একটি কাঠের কাঠি। এবার ধাপে ধাপে পদ্ধতিটি বর্ণনা করা হল, (ঙ) ব্লিচিং মাপার (ওজন করার) ব্যবস্থা (অভাবে চামচ বা দেশলাই বাক্সের খোল – চেপে ভর্তি করলে মোটামুটি ২০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার ধরে)
- প্রথমে পরিষ্কার বালতিতে পরিমান মতো (এই পরিমাণের জন্য নীচের সারণীটি দেখুন) ব্লিচিং পাউডার নিন। তাতে অল্প জল ঢেলে পেস্ট বা লেই বানান। লেই এর সাথে নিরাপদ জল মিশিয়ে বালতি ভর্তি করুন ও কাঠের টুকরো দিয়ে ভালো করে মেশান।
- এই দ্রবণটি ওই কাপড়ের টুকরোর সাহায্যে ছেঁকে নিয়ে অন্য পরিষ্কার বালতিতে ঢালুন।
- নলকূপ থেকে হ্যান্ডপাম্প এর যন্ত্রাংশ খুলে ফেলুন। তারপর সাবধানে “seat valve” অংশটি খুলে নিন। প্রয়োজনে এই কাজ করার জন্য অভিজ্ঞ পাম্প মিস্ত্রির সাহায্য নিন।
- হ্যান্ডপাম্প এর যন্ত্রাংশগুলি ব্লিচিং দ্রবণ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এইবার ওই নলকূপের মধ্যে ওই ছেঁকে নেওয়া দ্রবণ আস্তে আস্তে ঢেলে দিন যাতে উপচিয়ে না পরে এবং সঙ্গে সঙ্গে সিট ভালভ লাগিয়ে হ্যান্ডপাম্প লাগিয়ে দিন।
- এর পর কমবেশি বারো ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে, তারপরে ওই নলকূপ ব্যবহার করা যাবে। এ জন্য বিকেল নাগাদ শোধনের কাজ শুরু করলে ভালো যাতে সারারাত ব্যবহার না করে পরের দিন সকালে ওই নলকূপ ব্যবহার করা যায়।
- ব্যবহার করার আগে কয়েকবার পাম্প করে ব্লিচিং যুক্ত জল বের করে ফেলে দিতে হবে। যখন দেখবেন যে কলের মুখ থেকে বেরোনো জলে আর ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না তখন বুঝবেন যে এবার পানীয় হিসেবে ওই জল ব্যবহার করার উপযুক্ত।
- জল পরিশোধিত হয়ে নিরাপদ হয়েছে কিনা সেটা সুনিশ্চিত হওয়ার উপায় হল ওই জলের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।
- কোভিভ এর কথা মাথায় রেখে এই প্রক্রিয়া শুরুর আগে কাজে যুক্ত সবাই মাস্ক ব্যবহার ও স্যানিটাইজার/ সাবান জলে হাত ধোয়ার অভ্যেস বজায় রাখবেন।
পরিমাণের সারণীটি এই রকম-
- ছয় নং পাম্প/ ভারত মার্ক দুই পাম্প – জলের গভীরতা ১ মিটার হলে জলের আনুমানিক পরিমান হল ২৫ লিটার এবং ব্লিচিং পাউডার লাগবে ৫ গ্রাম;
- ভারত মার্ক তিন পাম্প – জলের গভীরতা ১ মিটার হলে জলের আনুমানিক পরিমান হল ৫১ লিটার এবং ব্লিচিং পাউডার লাগবে ১১ গ্রাম;
- তারা পাম্প – জলের গভীরতা ১ মিটার হলে জলের আনুমানিক পরিমান হল ৩৯ লিটার এবং ব্লিচিং পাউডার লাগবে ৮ গ্রাম।
জলের গভীরতা ও পাম্প এর তারতম্য অনুযায়ী শক সল্যুশন তৈরির ব্লিচিং পাউডার এর পরিমাণ ঐকিক নিয়মে কষে বের করতে হবে।
(২) পানীয় জল বিশুদ্ধকরনের কাজে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহারবিধি:-
দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়, একটি হল হ্যালজন জাতীয় পরিশোধক বড়ি ব্যবহার আর অন্যটি হল “স্টক সল্যুশন” ব্যবহার। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি নীচে বর্ণনা করা হল।
- এক লিটার বা চার গ্লাস (এক গ্লাস = ২৫০ মিলি) পরিষ্কার জলে ছয় চা চামচ অর্থাৎ আনুমানিক ৩০ গ্রাম ক্লোরিন পাউডার মিশিয়ে একটি দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এটি স্টক সল্যুশন হিসেবে অর্থাৎ জীবাণু নাশক হিসেবে কাজ করবে।
- এই দ্রবণটিকে একটি কাচের বোতলে ভরে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে সরাসরি সূর্যের আলো না লাগে, ভিজে না যায় এবং শিশুদের নাগালের বাইরে থাকে (শিশু বা অন্য কেউ ভুল করে এই দ্রবণটি খেয়ে ফেললে খুবই ক্ষতি হবে)।
- জল পান করার আগে সেই সম্ভাব্য দূষণমুক্ত জলে এই স্টক সল্যুশন পরিমান মতো যোগ করতে হবে। ১ লিটার জলে তিন থেকে চার ফোঁটা স্টক সল্যুশন মেশাতে হবে।
- মেশানোর পরে তৎক্ষণাৎ ওই জল পান করার উপযুক্ত হবে না। কমবেশি তিরিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
- একবার তৈরি করার পরে এই স্টক সল্যুশন ৭২ ঘন্টা অবধি ব্যবহার করা যাবে (জীবাণু নাশক ক্ষমতা কার্যকরী থাকবে)।
দুটি তথ্য মনে রাখা প্রয়োজন:
- জল যদি ঘোলাটে হয় তাহলে সেটি শোধন করা কঠিন। তাই তেমন জলে স্টক সল্যুশন যোগ করার আগে সুতির কাপড় ভাঁজ করে ছেঁকে নিন। ছাঁকার আগে ওই জলে ফটকিরি মেশালে জল আরো পরিষ্কার হবে।
- কেবল খাওয়ার জল নয়, নিজের বাড়িতে অথবা ত্রাণশিবিরে থাকার সময় রান্না বা খাওয়া-দাওয়ার কাজে লাগানো বাসনপত্র ব্যবহার করার আগে ও পরে ওই শোধনকরা জল ব্যবহার করবেন।
(৩) পরিবেশ দূষণমুক্ত করার জন্য ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহারবিধি:-
- অস্থায়ী ত্রাণশিবির বা নিজের বাসস্থানের আশেপাশে বিশেষ করে যেখানে জঞ্জাল জমছে, বর্জ্য পদার্থ জমছে, অপসারণের সুবন্দবস্ত বা নিকাশি ব্যবস্থা নেই সেখানে পরিবেশ দূষণমুক্ত করার কাজে (এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন) ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যায়।
- এক্ষেত্রে সরাসরি ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার না করে একভাগ ব্লিচিং পাউডারের সাথে নয় ভাগ চুন এর মিশ্রণ ব্যবহার করুন (ছড়িয়ে দিন)।
- মনে রাখবেন যে ব্লিচিং একটি জীবাণুনাশক।।কিন্তু এটি কীটপতঙ্গ মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে না। তাই কীটনাশক হিসেবে অর্থাৎ মশা মারার কাজে এটি ব্যবহার করে লাভ নেই।