কোনও লেখক কি নিয়ে লিখবেন, কিভাবে লিখবেন সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার কিন্তু আজকাল বেশকিছু লেখাপত্তর দেখলে খুব বিরক্তি হয়, মনে হয় লেখকরা সবাই বামপন্থী আতঙ্কে ভুগছেন; কোনও কিছুর মধ্যে বাম সংক্রান্ত কিছু প্রসঙ্গ থাকলেই তাকে ধামাচাপা দেওয়া, সযত্নে এড়িয়ে যাওয়াটাই সেই লেখক এর একমাত্র কাজ।
এই আজকের কথাই ধরুন। প্রখ্যাত অভিনেতা রবি ঘোষ (দস্তিদার) এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে নানান লেখা পড়লাম, কিন্তু কোথাও তাঁর বামপন্থী মনন নিয়ে একটা কথাও নেই। আরে বাবা, সেই মানুষটার অভিনয় শিক্ষার আঁতুর ঘর হল লিটল থিয়েটার গ্রূপ, শিক্ষাগুরুর নাম উৎপল দত্ত এটা অন্ততঃ লেখা হোক। রবি ঘোষের প্রথম পুরস্কার সেই মিনার্ভা কাঁপানো অঙ্গার নাটকে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য, যে নাটকের মহড়া দেখতেন আসতেন মুজাফফর আহমেদ, জ্যোতি বসু। সে সব নেই, কেবল ঘুরে ফিরে সেই “গল্প হলেও সত্যি” এর ধনঞ্জয় চাকর।
কোনও লেখায় এটা খুঁজে পেলাম না রবি ঘোষের বাবা তার মা’কে রবি সম্পর্কে বলতেন, “হি ইজ আ ব্রান্ডেড কমুনিস্ট”; বলতেন যে “কমিউনিস্ট বলেই আমার ছেলেটা অসৎ কোনও কাজ করবে না।” থিয়েটারের পাশাপাশি রবি ঘোষ পার্টির হয়ে পোস্টার মারতেন, নির্বাচনী নাটক করতেন এসব উনি নিজেই লিখে গেছেন, নিজে কমিউনিজম এ “দীক্ষিত” বলে গর্ব করে গেছেন। নিজের বামপন্থী মনন রবি ঘোষ কখনো গোপন করেন নি। তাহলে তাঁকে নিয়ে লেখার সময় এসব গোপন করা কেন ? বামপন্থী জানালে কি রবি ঘোষকে নিয়ে এসব লেখা জনপ্রিয় হবে না ? লাইক শেয়ার কম হবে? মাঝে মধ্যে কমিউনিস্ট ইশতেহারের সেই কথাটা মনে পড়ে, “এরা সব ভূত দেখেছে, কমিউনিজম এর ভূত।
কোনও ঔপনিবেশিক হ্যাংলামো ছাড়াই বলা যায় যে হলিউডের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলে অনায়াসে যিনি জিতে নিতে পারতেন গোটা কয়েক অস্কার, সেই রবি ঘোষের জন্মদিনে এমন বিরক্তি প্রকাশের জন্য দুঃখিত। পরে একদিন তাঁকে নিয়ে অন্যভাবে লেখা যাবে, কথা দিয়ে রাখলাম।