পর্জন্য যে মেঘ-দেবতা সেটা জানবার জন্য আমাদের উপনিষদের পাতা ওল্টাতে হয় নি!
আমাদের অজয় বসু ছিলেন! আর পুষ্পেন সরকার!
আর ছিল আকাশবাণী কলকাতা। আর ছিল সেই রূপকথার মত বিকেলবেলাগুলো যখন রেডিও র নব ঘোরালেই কানে মধু ঝরে পড়তো- পর্জন্যদেবের অশেষ কৃপায় বৃষ্টি থেমে গিয়েছে! গঙ্গার দিক থেকে মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে! দেখতে দেখতে সবুজ ঘাসে লাল-হলুদ-সবুজ-মেরুন ফুল ফুটিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন দু দলের দিকপাল ফুটবলাররা!
শুধু তো বিকেল নয়! ভোরবেলা পা টিপে টিপে বাবা মায়ের ঘরে ঢুকে ভাড়াবাড়ির চুনসুড়কির ঠান্ডা মেঝেতে বসে, খুব আস্তে চালিয়ে দিয়ে রেডিওতে কান পেতে ভারত-অষ্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচের ধারা বিবরণী শোনা! অনন্ত শীতলাবাদের পর এবার বলছেন সুশীল দোশি, প্রায় ফিসফিস করে, -আউর ইয়ে গেন্দ, টপ্পা খানে কে বাদ…
অথবা শুক্রবার রাত আর শনি আর রবিবারের দুপুরের নাটক। জগন্নাথ বসু, শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায়!
আমাদের বেড়ে ওঠার বেলা জুড়ে রেডিয়ো। যেখানে শোনা মানেই সোনা!
আকাশবাণীতে যতবার বলার সুযোগ পেয়েছি প্রতিবারই মনে হয়েছে এক বিশাল নিঃশব্দ জন সমুদ্রের সামনে বসে আছি। আমি সে সমুদ্রকে দেখতে না পেলেও তাকে অনুভব করতে পারছি। সিক্ত হয়েছি সে সমুদ্রের জলোচ্ছাসে, অন্তরে, বাহিরে।
আকাশবাণী কলকাতার স্টুডিওতে প্রথমবার যাই ১৯৮৩-র ডিসেম্বরে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে বলতে বিদ্যার্থীদের জন্য অনুষ্ঠানে !
আমার পরম সৌভাগ্য যে ডাক্তার হিসেবে যেবার প্রথম আকাশবাণীর ভারী লোহার গেট পেরিয়ে ভেতরে যাবার আমন্ত্রণ পাই সে দিন লাইভ ফোন ইন প্রোগ্রাম স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসায় আকাশবাণীর বিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী!g
আমার মনে হয়েছিল যিনি চতুষ্পাঠী লিখেছেন, নবম পর্ব লিখেছেন, লিখেছেন অজস্র দ্যুতিময় ছোটগল্প, যাঁর সাক্ষাৎকার নেবার যোগ্যতাও আমার নেই, সেই স্বপ্নময় চক্রবর্তী কি না নিচ্ছেন আমার সাক্ষাৎকার! যাই হোক, সে আর এক গল্প।
সেই শব্দের জাদুকর আবার কলম ধরেছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে সেই সময় কাগজের রবিবারোয়ারি পাতায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে আবার একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস!
রেডিয়োওয়ালা।
প্রতিসপ্তাহে রবিবারগুলো আবার অন্যরকম হতে থাকবে।