সাম্প্রতিককালে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছে। জয়ী হয়েই রাজস্থানের এক বিধায়ক ঘোষণা করেন, তাঁর এলাকায় প্রকাশ্যে আমিষ বিক্রি করা যাবে না। দুদিন পরে অবশ্য সেই ঘোষণা তুলেও নেন। এদিকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও একই ঘোষণা করেছেন।
বিজেপি একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক দল, যারা রামের নামে ভোট চেয়ে নিরামিষ খাবার প্রচারের ভেক ধরে, এদিকে ভুলে যায়, রাম ছিলেন ক্ষত্রিয় ও ফলে আমিষ খেতেন, reference স্বরূপ বাল্মীকি রামায়ণের এই শ্লোকটি:
क्रोशमात्रं ततो गत्वा भ्रातरौ रामलक्ष्मणौ।
बहून्मेध्यान्मृगान्हत्वा चेरतुर्यमुनावने।।
সে যাক গে, তাহলে কি বিজেপি আমিষ খাবার বিক্রির বিরোধী? আপাতদৃষ্টিতে উত্তরটা হ্যাঁ মনে হলেও তলিয়ে দেখলে বিষয়টা ভিন্ন।
আমরা যদি সাম্প্রতিক দুটো ফতোয়ার ঘটনাই দেখি, তাহলে দেখতে পাব, দুক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, প্রকাশ্যে বিক্রির ওপরে। অর্থাৎ, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছোট ব্যবসায়ীরা, যারা ফুটপাতে বিক্রি করেন। তাদের ব্যবসায় বিজেপি তালা ঝোলাতে চাইছে। কিন্তু এতে তাদের লাভ কী?
বিজেপি একবারও রিলায়েন্স ফ্রেস বা অন্যান্য ফুড সাপ্লাই কর্পোরেটের প্রসেসড মিট বিক্রয়ে প্রতিবন্ধকতা ব্যবহার করতে চায়নি। সেই একই কারণে রমরমিয়ে বাড়ছে Licious, Zepto এর মতো আমিষ খাবারের ডেলিভারি সংস্থা। কিন্তু প্রকাশ্যে মাংস কেনাবেচার সুযোগ থাকলে কেউ এখান থেকে কিনবে না, কারণ দাম বেশি। উপরন্তু এরাও মাংস কাটার জন্য শ্রমিক পাবে না, কারণ ছোট ব্যবসায়ীরা স্বাবলম্বী ভাবে ব্যবসা করছে।
তাই প্রকাশ্যে মাংস বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বিজেপি, এর ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা হারাবে, হারিয়ে তারা বাধ্য হবে পেট চালানোর জন্য এসব কর্পোরেট সংস্থায় যোগ দিতে। এভাবেই বিজেপি একদিকে কর্পোরেটদের হাত ধরে তাদের থেকে ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে মুনাফা কামাবে, অন্যদিকে স্বাবলম্বী মানুষকে কর্পোরেটের দাসে পরিণত করে তাদের যথেচ্ছ শোষণের ব্যবস্থা করে দেবে।
একইভাবে রাজস্থানেও ফুটপাথের আমিষ খাবার বিক্রির স্টল বন্ধ করার নিদান আসলে গরীব ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মে★রে তাদের জীবিকাহীন করার উদ্দেশ্যে, যাতে তারা বড় কর্পোরেট রেস্টুরেন্টের কর্মী হিসেবে যোগ দিতে বাধ্য হয়।
আসলে হিন্দুত্বের নাম করে, রামের নাম করে নিরামিষ প্রচারটা সম্পূর্ণই ছদ্ম কর্মসূচি। আসল উদ্দেশ্য, কর্পোরেটের মাধ্যমে ইলেকটোরাল বন্ড পেয়ে নিজেদের অর্থভাণ্ডার বাড়ানো, যা তারা বছর বছর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করতে পারবে।
অর্থাৎ, এই আমিষ ব্যানের পিছনে বিজেপির ধর্মীয় ভাবাবেগ, দেশীয় সংস্কৃতির কোন যোগ নেই। যোগ আছে বৃহৎ পুঁজির। এই সহজ সত্যটাকে অনুধাবন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।