কোভিভ রোগের সাম্প্রতিক বাড়াবাড়ির কারণ নিয়ে যে হাইপোথিসিস বাজারে চালু হয়েছে সে সম্বন্ধে দু’একটা কথা বলা দরকার। ভাইরাসের নতুন ধরণের আবির্ভাব কতটা দায়ী সে বিষয়ে বলার মত যথেষ্ট তথ্য হাতে নেই তাই অন্য কিছু হাইপোথিসিস হাজির করা যায়।
এক) বছরের শেষের এই সময়টা সারা রাজ্য জুড়েই জমায়েতের নানান ঘটনা যেমন পিকনিক, বেড়াতে যাওয়া, চিড়িয়াখানা, বইমেলা, নাটক দেখা ইত্যাদির সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ে এটা আমরা দেখেছি। এবছরেও তার কোনো ব্যতিক্রম ছিলনা।৷
দুই) শীত যত জমিয়ে পরে তত মানুষ ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে, বাড়ির জানালা দরজা বন্ধ, ট্রেন, বাসের জানালা বন্ধ ইত্যাদি হয় যেটা একটা ড্রপলেট বাহিত ভাইরাস ছড়ানোর জন্য সুবিধাজনক।
তিন) এর সাথে যোগ করা যায় কমপ্লেসেন্সি, গা-ছাড়া ভাব। সাধারণ মানুষতো বটেই, সাধারণ প্রশাসন, স্বাস্থ্য প্রশাসনও এই মনোভাবের শিকার। ডাক্তার সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও নানান বিধিবদ্ধ সতর্কতা মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা এসেছিল যার ফলে তাঁরা সম্প্রতি প্রচুর সংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
একটা অসুখের মোকাবিলা করার জন্য সব সময় সারা বছর ধরে সবাই ওই বিধিবদ্ধ সতর্কতাগুলো একই রকম উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে টানটান ভাবে মেনে চলবেন, এটা আশা করাটা অবাস্তব। রোগের সংখ্যা বাড়লে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লে মানুষ আবার নতুন করে সতর্ক হয়ে যান কিছুটা, এটাই দেখা গেছে।
এটা আশা করা যায় যে অন্তত আগামী কিছুদিন জীবন-জীবিকার টান ছাড়া অন্যান্য জমায়েত, যেগুলো অত্যাবশ্যক নয় সেই মেলা-খেলা জাতীয় জমায়েতগুলো মানুষ এড়িয়ে চলবেন যতটা সম্ভব। মানুষ তাঁর সাধ্যমতো যতটা পারেন কোভিডি আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলবেন ক্ষতিকারক বেপরোয়া মনোভাব ত্যাগ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কিঞ্চিৎ কড়াকড়ি হবে -আশা রাখি যে ওগুলো বাস্তবসন্মত ও বিজ্ঞানসন্মত হবে। শীত ব্যাপারটাও অনেকটা কমে যাবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা রাখতেই পারি যে আগামী মাসদুয়েকের মধ্যে এই বর্তমান আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো অভূতপূর্ব ব্রেক-থ্রু, নতুন ভ্যাকসিন, নতুন ওষুধ আশা করাটা ঠিক হবে না এটাও বলে রাখা দরকার। তাই যাঁরা আক্রান্ত হবেন তাঁরা যাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন সেজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে আগামী দু’মাস আবার সেই নিজেদের সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে নতুন করে লড়াই চালানোর সময়। এ কাজ তাঁরা আগেও করেছেন, সাফল্যের সাথেই করেছেন। তাই তাঁদের ওপরে ভরসা রাখাই যায়।
অন্ধকার যে সুড়ঙ্গের মধ্যে আমরা আবার ঢুকে পরেছি, তার শেষে আশার আলো বেঁচে আছে এটুকুই বলার। আলোটা জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব আমার, আপনার, সবার।