মেডিক্যাল কলেজের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আমাদের বিভিন্ন বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের অনেকের আত্মসমালোচনার পরিসর হাজির করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র ও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন কে আমাদের আপন অভিজ্ঞতা ও ভাবনার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করে নানা ধরনের কথা বলেছি। আন্দোলনের দাবির সপক্ষে দৃঢ় মানসিকতাকে অন্যায় জেদ বা দাবীর যৌক্তিকতা কে অপরিণত ভাবনার প্রকাশ ধরে নিয়ে মন্তব্য করেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জড়িয়ে বা অকারণে অজান্তেই তার প্রভাবে বাস্তব সামাজিক অবস্থান ও ফলিত বিজ্ঞান এর শিক্ষার থেকে দূরতর স্থানে অধিষ্ঠিত হয়ে পরছিল আমাদের অনেকের ভাবনা। যার প্রতিফলন ঘটেছে কিছু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়, মন্তব্যে।
আমাদের অনেকেরই ছাত্র বা জুনিয়র ডাক্তার থাকার সময়ে দীর্ঘ কয়েক বৎসরে আন্দোলন এর সংজ্ঞা বদলে দেওয়ার এক বিশেষ ও অভিনব প্রক্রিয়ার আগমন ঘটেছিল। সব আন্দোলন শাসক রাজনৈতিক দলের নির্দিষ্ট সংগঠনের নির্ধারিত পথে ও নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং একমাত্র সেক্ষেত্রেই সরকার সেই ‘নায্য’ দাবি মেনে নেবে আর তারপর সংগঠন সেই সরকারের নামে জয়ধ্বনি দেবে এটাই ছিল দস্তুর। ঐ ‘সময়ে’ বা তার কিছু আগে জুনিয়র ডাক্তার ও ডাক্তারী ছাত্রদের আন্দোলন কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের দাক্ষিণ্য ব্যতিরেকে বা বলা ভাল চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও সফল হয়েছে। শাসকের স্বাদ পাওয়া কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই এই বিষয়টি উপাদেয় নয়, দুঃস্বপ্নেও এসব ভাবতে চায় না।
এই রাজ্যেই একসময় গড়ে উঠেছিল ABJDF-এর আন্দোলন। রোগীদের অধিকার নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। সেসময় সরকার দমন অত্যাচার শাস্তিকেই আন্দোলন মোকাবেলায় ব্যবহার করেছে শাসক চরিত্রের বাধ্যবাধকতায়।
আজকের নতুন প্রজন্মের চিকিৎসা শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল সেই অসময়ের কবল মুক্ত হয়ে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিকতায় আন্দোলন গড়ে তুলছে, সফল হচ্ছে। আমাদের অনেকেরই এই প্রজন্মের কাছে অনেক কিছু শিখে নেওয়ার আছে। অন্তত যারা কোন এক সময়ে মেনে নিতাম বা মেনে নিতে বাধ্য হতাম শাসক রাজনৈতিক দলের অনুগামী বা অনুগৃহীত নেতৃত্ব ছাড়া কোন আন্দোলন সংগঠিতই করা যায় না, বরং সেই চেষ্টা কে ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে দেগে দেওয়া যায়।
এই অতিমারির সময়ে এরা যে পরিমিতি বোধ ও পরিণত মানবিক আবেদন নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করেছে তাকে অভিনন্দিত নয় সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদনই যথার্থ। অনতি ভবিষ্যতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অতিমারি মোকাবেলার সাথে অন্যান্য আবশ্যিক চিকিৎসা দিতে এরাই দিশা দেখাবে। এরাই তো আজ সরাসরি লড়াই এর ময়দানে। এদের মানসিকতার সাথী হয়ে মেডিক্যাল কলেজের যে শিক্ষক চিকিৎসকরা এদের পাশে থেকে মনোবল বাড়িয়েছেন তারা যথার্থ শিক্ষকের ভুমিকা পালন করেছেন যা অনেক দিন ধরে অদৃশ্য ছিল। এই বন্ধন অনেক আপাত অনতিক্রম্য সমস্যা কে সহজেই অতিক্রম করে আলোর পথে এগিয়ে চলবে।