Remember, remember the Fifth of November,
The Gunpowder Treason and Plot,
I know of no reason
Why the Gunpowder Treason
Should ever be forgot.
এ শহরে যদিও স্পর্ধার আঙুল ক্যালেন্ডার মেনে ওঠেনি কখনও। সেপ্টেম্বরের ভেজা বিকেলে রাজপথ ভেসে গিয়েছে হোককলরব স্লোগানে। জুনের ভ্যাপসা গরমে এন আর এসের সামনে দিয়ে বয়ে গিয়েছে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া সাহসের দমকা জোলো হাওয়া। আর জুলাইতে মেডিকেল কলেজে টানা একমাস মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সতীর্থদের কাঁধে কাঁধে ঘুরে বেড়িয়েছে মুঠোভরা তরুণ আবীর।
এবং সারা শহরে যখন আলো ঝলমল খুশিতে ভেসে যাচ্ছে তখন শ্যামবাজার ফাইভ পয়েন্ট ক্রসিং এর একটু ওপাশে কিছু অনড় স্পর্ধা আঙুল তুলছে আবার। কারণ এ শহর শুধু উৎসব আর আলোর রোশনাইয়ের নয়। সে এই সবকিছুর মধ্যেও দেবীমূর্তিকে ডিটেনশন ক্যাম্পের মাঝে সাজিয়ে তোলার সাহস দেখায়, পুরোনো বিগ্রহের ভেতরে বীজ বোনে আজকের লড়াইয়ের।
************************************************
লড়াইয়ের কেন্দ্র আপাতত আরজিকর। ঠিক কী ঘটেছে, ঘটছে সেখানে তা হুবহু ওদের বয়ানেই রইল।
গতকালের বয়ান
“আমরা, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা স্বচ্ছ ছাত্র কাউন্সিল, স্বচ্ছ হাউসস্টাফশিপ কাউন্সেলিং, নিরপেক্ষ হোস্টেল কমিটিসহ একাধিক দাবিতে আড়াইমাস ধরে কলেজ কাউন্সিলের সাথে পাঁচ বারের বেশী আলাপ-আলোচনা এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরেও কোনো সদুত্তর না পেয়ে অনশনে বসতে বাধ্য হই। গত আড়াইমাসে একাধিকবার প্রতারিত ছাত্রছাত্রীদের অনশনের ১১৭ ঘন্টার মাথায় (এই পোস্টের সময় তা ১৫০ ঘন্টা অতিক্রম করেছে) প্রিন্সিপালসহ কলেজ কাউন্সিল তাদের শোনায় যে নোটিস তাতে কোনো সমাধানসূত্র নেই, আছে ছেলে-ভোলানো গল্প।
ছাত্রছাত্রীরা কোনোভাবেই আর কোনো প্রতারণা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়,তারা অনশন চালিয়ে যায়। অনশনকারীরা অধিকাংশই মফস্বলের। আজ, ৯ই অক্টোবর সকালে অনশনকারীদের বাড়ীতে (চিত্তরঞ্জন, আসানসোল, ঘাটাল, মেদিনীপুর সদর, চন্দ্রকোনা টাউন, রায়গঞ্জ, পুরুলিয়া, সিউড়ি, মুর্শিদাবাদের বড়ঙা, মুর্শিদাবাদের ঔরঙ্গাবাদ, হলদিয়া, হাবরা) এক গাড়ী,ক্ষেত্রবিশেষে দুই গাড়ী পুলিশ চড়াও হয়। অভিভাবকদের হুমকি দেওয়া হয়, তাঁরা কোনোভাবে সন্তানের অনশন না তুলতে পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তারা জানায়,আর জি করের প্রিন্সিপালের নির্দেশে তাঁরা এসেছেন। জনৈকা ছাত্রীর বাবা( ক্রনিক হার্ট ফেলিওরের রোগী) এহেন হুমকিতে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাকী অভিভাবকরাও ত্রস্ত।ছাত্রছাত্রীরা হুমকির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে প্রিন্সিপালের অফিসে গেলে প্রিন্সিপাল স্যার ছাত্রছাত্রীদের “দেখে নেওয়া”-র হুমকি দেন এবং ছাত্রছাত্রীদের গুন্ডা-সুলভ শরীরী ভাষায় রুম থেকে
বের করে দেন। এর আগেও বহুবার সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে ইন্টার্নশিপের ক্লিয়ারেন্স না দেওয়ার হুমকি, পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশনের পর বন্ড পোস্টিং বানচাল করার হুমকি দেওয়া হয়েছে অসংখ্যবার। আর জি কর কলেজ ক্যাম্পাসে চিৎপুর, টালা, কাশীপুর এই তিনটি থানার পুলিশে ছয়লাপ করে রাখা হয়েছে গত আড়াইমাস ধরে।
কলেজে ঘটমান অচলাবস্থা, ভীতির পরিবেশের জন্য সন্দেহহীনভাবে দায়ী প্রিন্সিপাল স্যারের সীমাহীন ঔদ্ধত্য, প্রকাশ্য স্বজনপোষণ, দমন-পীড়নে পুলিশি নিয়োগ। ছাত্রছাত্রীদের কলেজভিত্তিক বিষয়ে পুলিশি হুমকির বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে প্রিন্সিপালের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান শুরু করেছে। অনশন চলছে তাল মিলিয়ে। আমরা রাজ্যের গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবর্গের কাছে আর্জি জানাই আমাদের ন্যায়সংগত লড়াইয়ে পাশে থাকার।
*************************************************
আসলে মেডিকেল কলেজগুলোয় আজকাল তার ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে চেয়ার আলো করে এমন কেউ বসেন না যার কাজ, অভিভাবকত্ব, দূরদর্শিতা অথবা দায়িত্ববোধকে বাই ডিফল্ট শ্রদ্ধা করা যায়। এখন প্রতিটা চেয়ার ঘিরেই নির্লজ্জ ক্লাব আর লবি কালচার। তার ফলে সেই চেয়ার থেকে অভিভাবকত্ব নয়, দিনের শেষে ঠিকরে বেরোয় নির্লজ্জ স্বজনপোষণ আর বিষণ্ণ ঔদ্ধত্যের যুগ্ম ককটেল।
একটা মেডিকেল কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যুক্তিসঙ্গত দাবীদাওয়া শোনা অথবা তাদের ক্ষোভের উৎস বোঝার কোনও চেষ্টা না করে যিনি পাড়ার মস্তানের মতো আঙুল উঁচিয়ে দেখে নেওয়ার, কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার থ্রেট দেন, এই উৎসবের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে এক গাড়ি করে পুলিশ পাঠান, ভোর রাতে তাদের মাড়িয়ে পুলিশি সহায়তায় পালিয়ে যান তিনি আর যাই হোক এ শহরের ইতিহাস জানেন না। ক্যালেন্ডারের পাতায় তিনি নিজের নেতা-নেত্রীর ছবি ছাপিয়ে কলেজে টাঙিয়েই দেন শুধু, তার ভেতর জমে থাকা স্লোগান আর বারুদের গন্ধ চেনেন না। সন্ধ্যে আসরে তিনি ক্ষমতা আর ঔদ্ধত্যের পেগ মাপেন শুধু, এ শহরের ইঁটের পাঁজা থেকে আকাশের দিকে উড়ে যাওয়া ধোঁয়ার খবর রাখেন না।
আপনার অগ্রজকে একবার জিজ্ঞেস করে নেবেন স্যার, মেডিকেল কলেজ কলকাতার প্রিন্সিপালের চেয়ার থেকে তিনি ঠিক কত ডেসিবেলে আঙুল উঁচিয়ে ‘এটা আমার কলেজ, আমি যা ইচ্ছে করতে পারি’ থ্রেট দিয়েছিলেন, অনশনরত ছেলেমেয়ে গুলোর বাড়িতে ঠিক ক’বার ফোন গিয়েছিল কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে। ফলাফল কী হয়েছিল জানেন? খালি পেটে শুয়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর মা বাবা এসে বসেছিল ওদের মাথার কাছে। একটা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে দু’দিনের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে গিয়েছিল গোটা শহরের হাতে পায়ে মাথায়। গণ কনভেনশন হয়েছিল লেকচার থিয়েটারে, তার সামনে উদাসী গান গেয়ে উঠেছিলেন কাঁচাপাকা চুলের এক মহিলা।
“আমি শুনেছি তোমরা নাকি এখনও স্বপ্ন দেখ
এখনও গল্প লেখ গান গাও প্রাণ ভরে।
মানুষের বাঁচা মরা এখনও ভাবিয়ে তোলে
তোমাদের ভালবাসা এখনও গোলাপে ফোটে”
আর এই সবকিছুর শেষে ভুখা পেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর সামনে, মাথার পাশে রাতজাগা মায়ের চোখের সামনে, ভেসে যাওয়া উদাসী গানের সামনে তার এই তাঁবেদারি আর অসীম ঔদ্ধত্যকে কতখানি ধুলো চাটতে হয়েছিল, জিজ্ঞেস করে নেবেন সেটাও।
আপনি মিলটন, মৌসুমি ভৌমিক অথবা এ শহরের উৎসবের আগুন কিছুই চেনেন না স্যার। তাই ভাবেন ক্ষমতার চেয়ার থেকে আঙুল তুললে শিউলি ঝরবে পার্টি অফিসে। আপনি এ শহরের কিশোর জেদ চেনেন না, এক বিকেলে হঠাৎ করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া আগুন চেনেন না, যাদবপুর থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত যতবার কিশোরী বৃষ্টি হয়েছে সেখানকার উদ্ধত মাথাদের ক্রমে ঝুঁকে আসার গল্প চেনেন না। চিনলে বুঝতেন, এখানে এখনও শিউলি ঝরে তারুণ্যের স্পর্ধায়, রঙমশালের ভোরে।
হাজার লোভ-ক্ষমতা-অন্ধকার-হতাশার সাদাকালো দিন পেরিয়ে শ্যামবাজারে ঘোড়ার পিঠে যুদ্ধের সাজে আজও জেগে আছেন এক অতন্দ্র সৈনিক। তার সামান্য দূরে রঙমশাল পুড়ছে আবার, শিউলি ঝরছে কিটোন জমে ওঠা শরীরের ভেতর, আবীর তৈরি হচ্ছে নিজের নিয়মে।
আপনি তাদের মাড়িয়ে এসে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে নেবেন একটু। ক্লান্ত হলে চলবে না, আমাদের এখনও অনেক গান আর লড়াই বাকি।
এঃ,ডাক্তারদের আবার আন্ডোলন!সবাই চাকরমনস্ক ধামাধরা।
একদল ডাক্তার না খেয়ে পড়ে আছে,বাকিরা মালিকের সুনাম রাখার জন্য তথাকথিত ব্যাঙের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উর্ফ হাসপাতাল চালু-এ্যাক্কেবারে ঠিকঠাক চালু রেখেছে।
অবশ্যই “মা ন ব সে বা” করছে।তা মাইনে নিয়ে কেন?যাক না বিহার, মধ্যপ্রদেশের নিরন্ন মানুষের কাছে-নিদেনপক্ষে সাঁওতাল, ভীল, ওঁরাওঁ, মুন্ডা অধ্যুষিত ওড়িশায়,সবাই চাকরগিরি করছে।
আমাদের না আছে ঐক্য, না আছে রোগীর প্রতি সমবেদনা।থাকলে সবার জন্য স্বাস্থ্যের দাবীতে কিছুদিন এই রাংতা মোড়ানো, ঠুনকো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বন্ধ করে পথে নামতাম,বাচ্চাদের দাবীর সমর্থনে হাসপাতাল অচল করে দিতাম।
প্রশাসন জানে-করোনা কাম পুজো কাম অনুকেষ্ট-শোভন-বৈশাখী বাজারে এদের দু’এক’ পীস মরলেও কিস্যু হবে না।হাসপাতাল ও চলবে, এরাও শেষমেশ কাজে যোগ দেবে।
চ্চ, ঢাক বাজাই।
দাবী উঠুক এই নাম কা ওয়াস্তে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বন্ধ রেখে সব সরকারি ডাক্তার এই আন্দোলনে শামিল হো’ক।