প্রশ্নঃ রেকারেন্ট প্রেগন্যান্সি লস বিষয় টি কি?
উত্তরঃ এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। কুড়ি সপ্তাহের আগে পরপর যদি তিনটে বা তার বেশি মিসক্যারেজ বা গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাকে রেকারেন্ট প্রেগন্যান্সি লস বলে। অন্য মত অনুসারে পরপর দুটি বা তার বেশি গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হলে তাকেও রেকারেন্ট প্রেগন্যান্সি লস বলা হয়। যদিও বর্তমানে আমরা পরপর দুটি প্রেগন্যান্সি লস হলেই রোগীর মূল্যায়ন করে থাকি বিশেষত যদি রোগীর বয়স ৩৫ বছর বা তার বেশি হয়।
প্রশ্নঃ রেকারেন্ট প্রেগন্যান্সি লসের কারণ কি?
উত্তরঃ শতকরা ৫% দম্পতির মধ্যে এই ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কারণগুলি চিহ্নিত করা গেছে। তবে অনেক সময় নিৰ্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে নাও পাওয়া যেতে পারে।
এক) ইমিউনোলজিক্যাল কারণ: এন্টি ফসফলিপিড সিনড্রোম নামে একটি রোগকে চিহ্নিতকরণ করা গেছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে।
দুই ) কোনো কোনো দম্পতির ক্ষেত্রে কিছু জিনগত ত্রুটি পাওয়া গেছে এর কারণ হিসেবে।
তিন) মায়ের শরীরে বেশ কিছু হরমোনের মাত্রা কমে বা বেড়ে যাওয়া অনেকাংশে দায়ী থাকে।
চার) জরায়ুর কিছু জন্মগত সমস্যা, জরায়ু ঘরে পর্দা, টিউমার থাকলে বা জরায়ুর মুখ দুর্বল থাকলে তা বার বার গর্ভাবস্থার ক্ষতি করে।
পাঁচ) রক্ততঞ্চন ঘটিত কিছু রোগকেও কিছু সময় চিহ্নিত করা গেছে।
ছয়) মায়ের প্রজনন তন্ত্রের ইনফেকশন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপান–বেশ কিছু সময় দায়ী হয়ে থাকে।
এছাড়া স্বামীরও বীর্যগত সমস্যা কিছু বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্নঃ কখন ও কোথায় গিয়ে এই সমস্যার মূল্যায়ন করানো দরকার?
উত্তরঃ পরপর দুটি প্রেগন্যান্সি লসের পরই এই সমস্যার জন্য মূল্যায়ন করা উচিত। পরবর্তী প্রেগন্যান্সি নেওয়ার আগে স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই প্রেগন্যান্সি নেওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ সাধারণত কি কি পরীক্ষা করানো হয়?
উত্তরঃ প্রথমে কম ব্যয়সাপেক্ষ কিছু টেস্ট করানো হয়–যেমন,
ট্রান্সভ্যাজিনাল আল্ট্রা সাউন্ড: বর্তমানে উন্নত মেশিনে (থ্রি,ফোর ডি) জরায়ুর গঠনগত সমস্যা, জরায়ুর ঘরে পর্দা, টিউমার অতি সহজেই নির্ধারণ করা যায়।
রক্তপরীক্ষা: থাইরয়েড, প্রোল্যাকটিন, সুগার এইগুলিসহ আরো কিছু রক্তপরীক্ষা করা হয় ইমিউনোলজিক্যাল ও রক্ততঞ্চন ঘটিত কারণ খোঁজার জন্য।
এ ছাড়া স্বামী ও স্ত্রী এর জিনগত ত্রুটি আছে কিনা জানার জন্য একটি বিশেষ পরীক্ষা করা হয় যাকে ক্যারিওটাইপিং বলে।
প্রশ্নঃ কি কি ধরণের চিকিৎসা করা যেতে পারে?
উত্তরঃ জরায়ুর সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে হিস্টেরোস্কোপিক ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বা মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে সমাধান করা হয়। জরায়ুর মুখে দুর্বলতা থাকলে পরবর্তী প্রেগন্যান্সির সময় জরায়ুর মুখে সেলাই দিয়ে দেওয়া হয়।
এপ্লা সিন্ড্রোমে বা ইমিউনোলজিক্যাল কারণ পাওয়া গেলে পরবর্তী প্রেগন্যান্সির সময় প্রথম থেকেই কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হয়।
হরমোনাল কারণ পাওয়া গেলে বিভিন্ন হরমোনাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
এছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ও অন্যান্য ক্রনিক অসুখ থাকলে সঠিক ওষুধ ও ইনজেকশনের মাধ্যমে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন পরবর্তী প্রেগন্যান্সি নেওয়ার আগে।
যদি স্বামী ও স্ত্রীর জিনগত সমস্যা থাকলে আই.ভি.এফ বা টেস্ট টিউব বেবি পদ্ধতিতে পরবর্তী প্রেগন্যান্সি নেওয়া যেতে পারে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো কারণ খুঁজে না পেলে পরবর্তী প্রেগন্যান্সি নেওয়ার আগে থেকেই অনুমান করে কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া যায়।
পরিশেষে বলি বারবার প্রেগন্যান্সি লস হলে ভয় না পেয়ে সতর্ক হোন। সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও পরবর্তী গর্ভস্থ সন্তানকে সুরক্ষিত রাখুন।