ধরুন একজন পেশেন্টকে আপনি কোভিড টেস্ট লিখলেন, ধরুন তার বাড়ির লোক টেস্টটা করালো না। তারপর হলো কি, লোকটা মরে গেলো। একদম মরেই গেলো। তারপর হলো কি লোকটার বাড়ির লোকজন সবাই আপনার নামে বেজায় বদনাম করতে লাগলেন।
তারপর হলো কি একজন ষাঠ বছরের ভদ্রমহিলা আপনাকে দেখাতে এলেন, তাঁকে আপনি শুগার আর ইসিজি করাতে বললেন। কিন্তু তিনি সময়ে করালেন না। এরপর আবার আপনার কপালে একটা গালিপ্রাপ্তি আছে। আপনি কি করবেন? কতটুকুই বা আপনার ক্ষমতা?
বেশীরভাগ রোগী মনে করেন-“হুশ, পয়সা দিলে অনেক ডাক্তার পাওয়া যাবে। খাবার ছড়ালে কি কুত্তোর অভাব হয়?” (এই ডায়ালগবাজি আমি বহু বার শুনেছি, কিন্তু এই দেশী কুত্তোর কাছেই তাঁরা আবার এসেছেন আমার দুচোখ ছেয়ে’)
এই ধারণাটা বদলানো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে। আমরা আত্মসম্মান বোধটাই হারিয়ে ফেলেছি।
তাহলে রোগীদের জানা উচিত কোন কোন ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে রিফিউZ করতে পারেন।
প্রথমতঃ একজন ডাক্তার (এমনকি একজন বেশ্যাও) একজন ক্লায়েন্টকে গ্রহণ করবেন কিনা, সেটা তাঁর ব্যাপার।
তবে ডাক্তার একজন এমার্জেন্সি পেশেন্টকে রিফিউজ করতে পারেন না। কিন্তু রেফার করতে পারেন। সেটা নির্ভর করে সেই ডাক্তার সেই মুহূর্তে যেখানে আছেন, সেখানে তিনি এই চিকিৎসা দিতে পারবেন কিনা অথবা তিনি বিষয়টাতে ততটা পারদর্শী কিনা। বিনা পারদর্শিতায় কেউ যদি রোগী সামলাতে যায়, তাহলে অবধারিত কনজিউমার ফোরাম। হ্যাঁ, একজন এমবিবিএস ডাক্তারও সব বিষয়ে চিকিৎসা করার লাইসেন্স পেয়েছেন, যদি তাঁর পক্ষে এটা সামলানোর মতো অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে কোনও বাধা নেই (I am proud to be an MBBS)।
বেশীরভাগ আইসিইউ মেডিক্যাল অফিসারই এমবিবিএস। (সঙ্গে সিস্টার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও) কিন্তু আইসিইউ সামলাতে দক্ষ। অনেক বিশেষজ্ঞই এই কাজটা ঠিকঠাক করতে পারবেন না। সুতরাং বিশেষজ্ঞ কৈ? কথাটাই অপ্রয়োজনীয়।
ডাক্তার রোগীর সম্পর্কটা এখন একটা চুক্তিকে ভিত্তি করে হয়। সাধারণতঃ চেম্বারে চুক্তিটা অলিখিত থাকে। কিন্তু এটাই মেনে চলা হয়। চুক্তি কাকে বলে এটা লিখে আমি এই লেখাকে বেদনাবিধুর করতে চাই না-কিন্তু এটাই বাস্তব। একজন ফ্রি রোগীও আপনাকে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মুখে দাঁড় করাতে পারেন। মানবতা অবশ্যই একটা জরুরী ব্যাপার। তবে কনজিউমার ফোরামের সুবিধে নেওয়ার সময় রোগীদের কিন্তু মানবতার কথা মনে থাকে না।
সুতরাং কখন আপনাকে আপনার ডাক্তার রিফিউজ করতে পারেন?
(১) যদি আপনি অ্যাবিউসিভ হন। এই শব্দটার একটা অনেক বড়ো তাৎপর্য আছে। সেটা শারীরিক থেকে মানসিক বা সামাজিকও হতে পারে।
(২) যদি আপনি আপনার ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ওষুধপত্তর না খান। (অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা স্মৃতিহীনতা থাকলে এটা প্রযোজ্য নয়)
(৩) আপনি যদি সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা না করান। এখানে অর্থনৈতিক শব্দটি প্রযোজ্য নয়কো কেন না এখনও, এই গ্যাট চুক্তির যুগেও, অনেক সাধারণ পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে করানো যায়। তাছাড়া আপনি যখন একজন ডাক্তারের চেম্বারে এসেছেন, তখন কিছু পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে তৈরি থাকতেই হবে।
(৪) রোগীকে তার রোগের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র এবং ইতিহাস ডাক্তারকে জানাতে হবে।
এরপর একটা বিচ্ছিরি ধারা আছে। রোগী ডাক্তারের ফি টাকায় এবং কেবলমাত্র টাকায় দিতে বাধ্য থাকবেন। মানবতার ক্ষেত্র বাদ দিয়ে। সেটা ডাক্তারের করুণা।
এগুলোর কোনও একটা রোগীর তরফে না করা হলে’ সেই ডাক্তার রোগীর সঙ্গে ‘ডাক্তার -রোগীর’ সম্পর্ক শেষ করতে পারেন।【(a) will enable the doctor to terminate patient-physician relationship and that will free him from legal responsibilities.
(b) will be construed as contributory negligence and weaken the case of the patient for compensation】
তথ্য Consumer Protection Act and Medical Profession ইতি গজ।
ধরুন আপনি একটা হার্ট অ্যাটাকের রোগী পেলেন এবং আপনি বললেন “এক্ষুণি হার্ট স্পেশালিস্ট দ্যাখান”, কিন্তু সেকথাটি লিখলেন না। রোগীটা আর কারো কাছে গেলো না এবং মরেই গেল। আপনিও কনজিউমার ফোরামে গেলেন।
লিখুন, লেখা ওভ্যেস করুন।
সহমত