প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নিরামিষ খাবার হল সাত্ত্বিক আহার আর আমিষ খেলে রজঃ ও তম গুণ বেড়ে যায়। এবার কোনটা নিরামিষ আর কোনটা আমিষ এই নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। সব প্রাণিজ খাবার আমিষ নয় যেমন দুধ। আবার মসুর ডাল নাকি আমিষ! বাংলাতে পেঁয়াজ রসুন তামসিক বা আমিষ। আবার ইউ পি এবং পাঞ্জাবে কট্টর নিরামিষপন্থীদের পেঁয়াজ রসুনে অরুচি নেই। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য মহাশয় আবার রসুনকে মর্ত্যের অমৃত বলে গেছেন..
মাছ মাংস খেকো জীবদের তুলনায় নিরামিষাশী জীবদের কাম ক্রোধ যে কম তারও কোনো প্রমাণ নেই। কোনো প্ররোচনা ছাড়াই ঘাসাহারী বাইসনের অকারণ ক্রোধ-প্রবৃত্তি মাংসাশী জীবের তুলনায় অনেক বেশি। ঝুঁটিয়াল চটক পাখি চালের কণা খুঁটে জীবনধারণ করে কিন্তু দিনে পঞ্চাশবার রমণ করে অথচ পিওর মাংসভোজী সিংহ বছরে একবার মাত্র সিংহীকে কাছে টানে। মানুষ নিরামিষ আমিষ দুইই খায় তবে আলো নিভে গেলে কোন মানুষ কী করে তা দেখা অসম্ভব 😀
এবার দেখা যাক আমাদের শাস্ত্র কী বলে “বিষয়াভিলাষং আমিষং, তদ্ রাহিতত্যং নিরামিষং বা” অর্থাৎ আসক্তিযুক্ত হয়ে মনে দ্বেষ রেখে যা খাওয়া হয় তা আমিষ আর শান্তমনে চেটে পুটে যে খাবারই খাওয়া হোক না কেন তা নিরামিষ। অতএব ছুৎমার্গ ছেড়ে যা পুষ্টিকর, যা খেলে শরীর ভালো থাকে, যা খেলে পেটে সয়, যা খেলে তৃপ্তি হয়, সেই সব খাবার যে যার রুচিমতো গ্রহণ করবে।
ধরা যাক মুরগীর মাংস, এই জিনিসটির আঁশটেগন্ধ আমার একদম সহ্য হয় না, পেটও সায় দেয় না, সে জন্য এই খাদ্যটি আমি পরিহার করে চলি।
গৌরচন্দ্রিকা না করে, মাছ ও বাঙালি নিয়ে এত যে বিতর্ক চলছে এবার ওখানে ঢুকি।
বাঙালিদের প্রিয় খাদ্য মাছ। কী আছে এই মাছে? মাছে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন এবং প্রোটিন। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের হাড়ের অন্যতম উপাদান, একথা সবাই জানে। সামুদ্রিক মাছে আয়োডিন থাকে, এই আয়োডিন গয়টার বা গলগন্ড রোগ প্রতিহত করে। এবার মাছের সঞ্জীবনী উপাদানটিতে আলোকপাত করবো।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই omega 3 fatty acid-এর অন্যতম কনটেন্ট হল DHA (Docosahexanoic acid) । DHA মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, বিশেষ করে শিশুদের। বরস্কদের ক্ষেত্রে স্মৃতিভ্রংশ রোগ বা আলজাইমার্সকে রোধ করে। শরীরের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেলকে কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখে। সদ্য, চীনের একটি জার্নাল (springer link) 4165 জন পার্টিসিপেন্টের মধ্যে করা একটি রিসার্চের ফল প্রকাশ করেছে, তাতে সিদ্ধান্তে আসা গেছে―মাছ খেলে গড় আয়ু পাঁচবছর বাড়ে।
আমাদের ধর্মের প্রাণভোমরা চতুর্বেদের কোথাও মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধদেব ছিলেন আমিষভোজী।
সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটিশসাম্রাজ্যবাদের ভিত নাড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও বাঙ্গালিরা আর একটি কাজ করেছে। হিন্দুধর্মের যেটুকু সংস্কার হয়েছে তা হয়েছে তিন ‘মছলিখোর’ বাঙালির হাত ধরে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (বিধবাবিবাহ, নারী শিক্ষা), রাজা রামমোহন রায় (সতীদাহ রোধ) ও স্বামী বিবেকানন্দ (প্রাকটিক্যাল বেদান্ত)। এই তিনজনই মাছ খেতেন।
উপসংহার―
শংকারচার্য বলে গেছেন সব ধরণের দুঃখের কারণ হল অজ্ঞানতা। সাধারণ একজন মানুষের কাছে অসাধারণত্ব আশা করাও একধরণের অজ্ঞানতা।
বিনোদন জগতের কোনো ভাঁড় রাজনীতিতে নেমে বক্তব্য রাখবেন আর সেটা একদম যুক্তিযুক্ত হবে, এটা ধরে নেওয়াও অজ্ঞানতা। এর জন্য উক্ত রাজনৈতিক দলটিকে দোষারোপ করাও অজ্ঞানতা। মনে রাখতে হবে, কলিযুগ লুজমোশানের যুগ, অল্পেতেই লুজ, সে মোশানই হোক বা লুজটক।