কেউ হয়তো দিনের পর দিন সন্তানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কারো হয়তো আইভিএফ-এর চিকিৎসা চলছে কিংবা কারও হয়তো সদ্য মাস দুয়েকের প্রেগন্যান্সি নষ্ট হয়ে গেছে, কেউ বা জন্মও দেবার পরেই সন্তানকে হারিয়েছেন। এমন সময় অন্য কারও সন্তান ধারণের বা মা হবার খবরে মন খারাপ হওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু কীভাবে এই মন খারাপ কাটিয়ে ওঠা যায়?
কিছু জিনিস খালি হলে তার ভার বেশি হয়। নিজে মা হওয়ার চেষ্টা চালানোর সময় অন্যের বেবি বাম্প বা কারও কোলে ছোট বাচ্চা দেখলে অথবা কারও প্রেগন্যান্সির খবর শুনলে অনেকেরই মনখারাপ হয়ে যায়। এমন হতে পারে খুব কাছের বা ভালবাসার মানুষের ক্ষেত্রেও। এই মানসিক অবস্থা খুব স্বাভাবিক, এর সঙ্গে মানসিকতা ভালো মন্দ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে মনে রাখা দরকার মানুষই পারে তার মনের বিভিন্ন অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আর অন্যের ভাল খবরে নিজে দুঃখ পেয়ে কাজের কাজ কিছু হয় না। যদিও অন্যের খুশিতে নিজে খুশি হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, এটা বলা সহজ, কিন্তু করতে পারাটা বেশ কঠিন।
প্রাথমিকভাবে অন্যের সুখবরে দুঃখ, রাগ এমনকী একটু আধটু হিংসাও হতে পারে। এসব হলে নিজেকে সময় দিন এই সব অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসার। আপনার এই মানসিক অবস্থা কতটা যুক্তিযুক্ত ভাবলেই দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি খারাপ লাগাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
নিজেই খুঁজে বের করুন কেন অন্যের সন্তান হওয়ার খবরে আপনার খারাপ লাগছে। নিজের সঙ্গে কথা বলুন। ‘আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার এই খবরে’। ‘আমি চাই না আমি যে মানসিক কষ্ট পাচ্ছি তা আর কেউ পাক’, এভাবে কথা বললে নিজে হালকা হতে পারবেন।
মানসিক অবস্থার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। একথা ঠিক, নিজে যখন কিছুটা হতাশায় ভুগছেন তখন অন্যের প্রেগন্যান্সির খবরে আপনি প্রথমেই খুশি হতে পারবেন না এটা স্বাভাবিক। নিজেকে এজন্য অপরাধী ভাববেন না। নিজের এই মানসিকতার কাটাছেঁড়া করার আগে কিছুটা সময় নিন। নিজেকে বোঝান এই পরিস্থিতিতে অন্যের সুখবরকে মেনে নেওয়া অত সহজ নয়। তখন এমন কিছু করুন যাতে আনন্দ পান। নিজে যা ভালবাসেন যেমন সিনেমা দেখা, শপিং করা বা বিউটি পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করিয়ে নিতে পারেন।
সহকর্মী, আত্মীয় বা সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু যাঁর কাছ থেকেই প্রেগন্যান্সির খবর শুনুন না কেন, তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। যদি খুব কাছের কেউ হন তাহলে আপনার মানসিক অবস্থার কথাও শেয়ার করতে পারেন। তবে তা করার আগে অন্যের মানসিকতা যাচাই করে নেবেন। এমন না হয় আপনি সহজভাবে যা বলতে চাইলেন অন্যজন তার বিপরীত মানে করলেন। আর যদি এমন হয় সেই মহিলার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব, তাও করতে পারেন।
যাঁর সঙ্গে মন খুলে সব বলা যায় তাঁকেই শুধু নিজের অনুভূতির কথা জানাতে পারেন। সবার সঙ্গে সব কথা শেয়ার না করাই ভাল। বিশ্বাসযোগ্য এমন কেউ সে পরিবারের সদস্য হতে পারে, বন্ধু বান্ধব, সহকর্মী বা পারিবারিক চিকিৎসক হলেও তাঁকে বলতে পারেন।
মনে রাখবেন, সন্তান হওয়া কোনও মেরিটের ওপর এমনকী অনেক সময় স্বাস্থ্যের ওপরেও নির্ভর করে না। ওটা জাস্ট হয়ে যায়। অনেকে সহজেই সন্তান ধারণ করেন আবার অনেককে একটু বেগ পেতে হয়। কাজেই কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয়। এক এক জনের জীবনে এক এক রকমভাবে সব ঘটনা ঘটে। সবার জীবনেই কিছু না কিছু খামতি আছে, কষ্ট আছে, হতাশা আছে। সেটাকে নিয়েই আমাদের ভাল থাকতে হবে। কাজেই নিজের ভাল থাকার দিকে নিজেই নজর দিন, কারণ আপনিই আপনাকে সব থেকে ভাল চেনেন।
এই লেখাটা পড়ে কোনো কাজ হলো কি না কী করে বুঝবেন? পরের বার যদি কারোর সাধ, বাচ্চার অন্নপ্রাশন না জন্মদিনের নিমন্ত্রণ আসে তা হলে কোনো অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে না গিয়ে সাহস করে ঘুরে আসবেন। দেখবেন, অন্যের আনন্দের অংশীদার হলে নিজের মনখারাপ অজান্তেই কেমন মিলিয়ে যায়।
মেঘের কোলে রোদ উঠবেই।