অফিস থেকে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে দেখি গিন্নি রান্না করছে। রান্নাঘর থেকে বাসনের আওয়াজ আসছে। আমি চুপিচুপি ঘরে ঢুকে পড়লাম। কালো রঙের আলমারি থেকে বোতল বার করলাম। স্তালিন ফটো ফ্রেম থেকে আমাকে দেখছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কিচ্ছুটি টের পায় নি। কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।
সিঙ্কের উপরের তাক থেকে গ্লাস বার করলাম আর টক করে এক পেগ গিলে ফেললাম। গ্লাস ধুয়ে ফের সেটা তাকের উপর রেখে দিলাম। হ্যাঁ, বোতলটাও আলমারিতে রেখে দিলাম। স্তালিন মুচকি হাসলেন।রান্নাঘরে উঁকি দিলাম, গিন্নি দেখি আলু কাটছে। কেউ কিছু টের পায় নি। কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।
গিন্নিকে জিগেস করলাম: সমীরের মেয়ের চাকরি টাকরি কিছু হলো? গিন্নি: নাহ, মেয়েটার ভাগ্যটাই খারাপ। এখন চায়ের দোকান দিয়েছে রেল-স্টেশনে। আমি আবার ঘরে গেলাম, আলমারি খুলতে গিয়ে এবার একটু শব্দ হলো। তেমন কিছু নয় অবশ্যি। বোতল বের করার সময় অবশ্য কোনো আওয়াজ করিনি। সিঙ্কের উপরের তাক থেকে গ্লাস নিয়ে চট করে দু পেগ মেরে দিলাম। বোতল ধুয়ে সাবধানে সিঙ্কের মধ্যে রেখে দিলাম। আর গ্লাসটা আলমারিতে। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো কিছু আঁচ করতে পারে নি কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।
বাইরে এসে গিন্নিকে: যাই হোক, সমীরের মেয়ের বয়েসই বা কি! গিন্নি: কী বলছ !! ৩০ বছর বয়েস হলো, এম এ পাস, টেট পাস। আমি (ভুলেই গেছিলাম সমীরের মেয়ের এত বেশি লেখাপড়া): তা ঠিক। সুযোগ বুঝে ফের আলমারি থেকে আলু বের করলাম (আলমারিটা আবার জায়গা বদলে ফেলল কি করে রে বাবা), তাক থেকে বোতল বার করে সিঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে চট করে আর এক পেগ পেটে চালান করলাম। স্তালিন দেখি জোরে জোরে হাসছেন। তাক আলুতে রেখে স্তালিনের ছবি খুব ভালো করে ধুয়ে আলমারিতে রেখে দিলাম। গিন্নি কি করছে দেখি – হ্যাঁ, ও গ্যাসের উপর সিংক চড়াচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কিসসু টের পায় নি, কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।
আমি গিন্নিকে: তুমি সমীরকে এম এ পাশ বললে? গিন্নি: বকবক কর না তো, বাইরে গিয়ে চুপ করে বসো। এখন তুমি কথা বলবে না। আমি আলু থেকে ফের বোতল বের করে মজাসে আলমারিতে আরো এক পেগ গিললাম। সিংকটা ধুয়ে ওটাকে তাকের উপর রেখে দিলাম। ফটো ফ্রেম থেকে গিন্নি এখনো হেসে চলেছে। স্তালিন রান্না করছে। কিন্তু এখনো কেউ কিছু টের পায় নি কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।
গিন্নিকে হাসতে হাসতে বললাম: তাহলে স্তালিন চায়ের দোকান দিয়েছে ? গিন্নি: শোনো, তুমি মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে কোথাও চুপ করে বস তো! আমি রান্নাঘরে গিয়ে চুপচাপ তাকের উপর বসলাম। কিন্তু এখন অবধি সমীর কিছু টের পায় নি কারণ স্তালিন কোন রিস্ক নেন না।
স্তালিন এখনো রান্না করছে। আর আমি? আমি ফটোফ্রেম থেকে গিন্নিকে দেখে এখনো হেসে চলেছি। কারণ আমি কখনো ইয়ে নিই না, কি যেন নিই না ……ও হাঁ, আলু নিই না।”
(প্রিয়তম কবি প্রয়াত তারাপদ রায়ের জন্মদিনে তাঁকে অনুসরণ করে তাঁকেই শ্রদ্ধার্ঘ্য যিনি নিজেকে নিয়ে, নিজেদের নিয়ে হাসতে শিখিয়েছিলেন। চা দোকানি সেই মেয়েটি এই লেখাটা পড়লে আশা রাখি তার বিষন্ন মুখেও একটু হাসি আসবে। অপরাধ নিস না মা, আমাদের বিষন্ন জীবনে একজন তারাপদ রায়-এর খুব প্রয়োজন)