এই মিষ্টি মেয়েটিকে চেনেন?
চিনতে পারছেন না নিশ্চয়ই।
চলুন, সেদিনটার গল্প বলি..
টানা ঘন্টা তিনেকের খিঁচুনি নিয়ে অচৈতন্য ও মৃতপ্রায় অবস্থায় তিন বছরের মেয়েটি আমাদের হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে এসে পড়ে। সময়টা রোববার দুপুর। ঘড়ির কাঁটা আড়াইটা পেরিয়েছে।
সবে খেতে বসেছিলাম। খাওয়া ফেলে দৌড়ে এলাম।
গ্রামের হাসপাতালে পরিকাঠামোর ভাঁড়ে-মা-ভবানী। সামান্য কয়েকটি জিনিস ছাড়া এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করার মত কিছুই নেই।
শুরু হয় মৃত্যুর সাথে আমাদের অসম লড়াই। ‘আমাদের’ কথাটা খেয়াল করুন। এসব লড়াই একা লড়া যায় না।
জোড়াতালি চিকিৎসা শুরু করে ২৫ কিমি দূরে শহর থেকে ওষুধপত্র আনার ব্যবস্থা করা হ’ল। বন্ধুরা, খেয়াল করবেন এটা মেট্রো সিটি নয় যে আপনি ওলা-উবের ডেকে বসবেন। এই রাস্তাটা পেরিয়ে জিনিস নিয়ে ফিরে আসতে ঘন্টা তিনেক তো বটেই..
এদিকে বাচ্চার শ্বাসের গতিক সুবিধের নয়। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা কষা হাত ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসে। চোখের তারাও আলোর আহ্বানে ঠিকমত সাড়া দিতে পারে না। প্রাণের স্পন্দন মন্দিত হয়ে আসে..অথচ এই অবস্থায় রেফার করলে রাস্তাতেই..
গলায় নল পরিয়ে হাওয়া ভর্তি ব্যাগ দিয়ে পাম্প করা শুরু হয়। এক ঘন্টা..দু’ঘন্টা..তিন ঘন্টা..
সূর্য ঢলে পশ্চিমে। সারারাত..আবার পরের দিন..
আমাদের নার্স-দিদিমণি, ওয়ার্ড বয়, সিকিউরিটি দাদা, সাফাইকর্মী সবাই এসে হাত লাগান।
পরের দিন দুপুর থেকে বাচ্চাটি একটু একটু করে অচৈতন্য অবস্থা থেকে সাড়া দিতে থাকে। বিকেলে গলার নল খুলে ফেলার কিছুক্ষণ বাদে জড়িয়ে জড়িয়ে বলে ‘গলায় কুব ব্যতা’!! আমাদের চোখে আনন্দাশ্রু!!
পুরো সময়টা জুড়েই আমাদের সব স্টাফ অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছিলেন। বিশেষ করে নার্স দিদিমণিদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয়। যাঁরা কথায় কথায় নার্সদের তুলোধোনা করেন তাঁদের ভার্চুয়াল দুনিয়া বাদে সমাজের অন্য কোনও প্রয়োজনে পাওয়া যায় না এটাই হতাশার।
আজ বেশ জানি, এটা হ্যাপি এন্ডিং ছিল বলে গোটা পাঁচেক নিউজ পেপারে বড় করে ছাপা হয়, অনেকে পিঠ চাপড়ে দেন। আজ বাদ কাল এটাই অন্যরকম হলে ‘চিকিৎসার গাফিলতিতে…’ বলে পরিবেশিত হ’ত। বিষ্ঠা মাখা, রক্তাক্ত ডাক্তার দেখতে আমার-আপনার অভ্যেস হয়ে গেছে এতদিনে। বরং উপরি পাওনা কয়েকটা তিন-চার অক্ষরও জুটে যেত বোধহয়।
হ্যাঁ, এই মেয়েটিই আরাধ্যা। এই ঘটনা যখন ঘটছে তখন এ রাজ্যে ডাক্তার-নিগ্রহ প্রাত্যহিক খবর। তবু জানিনা, কীভাবে চ্যালেঞ্জটা নিতে পেরেছিলাম.. আজ ভাবলে মাঝে মাঝে আনন্দের থেকে ভয়ই হয় বেশি। সমাজ ডাক্তারের ওপর বিশ্বাস হারালে ভবিষ্যতে জীবন-মৃত্যুর সরু সুতোর ওপর দিয়ে হাঁটতে গেলে অনেকবার থমকে যাবো নির্ঘাত। অনেক দ্বিধায়। “যদি খারাপ কিছু হয়? যদি লাব-ডুব থেমে যায়?”
আসলে ডাক্তারের মাথা বড্ড সহজলভ্য এখন..
ও হ্যাঁ, বলা হয়নি। সালটা ২০১৮। আর তারিখ? পয়লা জুলাই। ডক্টরস’ ডে!! আর হাসপাতালের নাম? শালবনী সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল। সে হাসপাতাল এখন কেমন আছে জানতে চাইবেন না। আমার ভয় আছে- ঘাড়ে সাকুল্যে একটিই মাথা!! আর, কখনও কখনও সত্যি বলতে ভয় পাই।
অনেক বড়ো হয়ে গেছে আরাধ্যা। মাঝে মাঝে এসে দেখিয়ে যায়। ওর বাবা আমার জন্য বাড়ির কাড়ান ছাতু, লেবু, সব্জী দিয়ে যান মাঝেমাঝেই। আরাধ্যা হেসে বলে, “আমি এখন ভালো আছি, সৌম্য কাকু!!”
ডক্টরস’ ডে’র জন্য শিশুর হাসির চেয়ে ভালো উপহার? হতেই পারে না!!
চমৎকার । পোলিও মহামারীর সময় এভাবেই চিকিৎসা হতো । সে বহু যুগের ওপরের কথা ….
তোর জন্য গর্বিত।?❤❤
Hats off.
Bravo!!!
আপনারা আছেন বলেই এখনো মানুষ ডাক্তারদের ভগবান মানে
দারুণ…রুরাল হসপিটাল এ এই ধরণের পদক্ষেপ নিতে অনেক বুকের পাটা থাকা দরকার।
Tomake selam
সৌম্য বাবু। আপনিও ভালো থাকবেন। হাসপাতাল নিয়ে একদমই কথা নয় তাহলে গড়াই বাবুর দশা হবে। তবে এটাও ঠিক, আমার গ্রামের একটি ছেলের হাত ভেঙ্গে ছিল, তো তার বাবা আমাকে এসে বললো টাকা দাও অর্থ পিশাচের কাছে যাব। আসলে উনি বলতে চাইছিলেন অর্থোপেডিক্স। সৌম্যকান্তি পান্ডা তো সবাই নয়। তাই ওনার ভুল টা ভাঙ্গিয়ে দিয় নি। ধন্যবাদ।
Tomar jonyo gorbito Soumya da…
Ei khabar ta sonar porei apnar upor sradha anek bere gecche. Tachara salboni super speciality hospitaler porikathamo ami vloi jni, sottie namer superspeciality. Lot of thanks
Great job Dada..salute..
ঔষধ নেই, যন্ত্রপাতি নেই, থাকলেও তার ৯৯% কাজ করে না, এহেন সব জেলায় জেলায় হাসপাতালের বাইরে “সাদা নীল” রং করে দিয়েই ‘হীরক রাজার রানী, মমতাজউদ্দিন বন্দেমিঞা’ তাদের সব “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল” নাম দিয়ে দিচ্ছে।
এই না হলে পশ্চিমবঙ্গের “বদলা নয় বদল।”
এই যে আনন্দ এই যে ছোট শিশু টির নিস্পাপ ভালবাসা এর চেয়ে দামি কি আছে। কজন পেতে পারে এই আনন্দ।
Excellent work.
Like!! I blog quite often and I genuinely thank you for your information. The article has truly peaked my interest.
A big thank you for your article.
I used to be able to find good info from your blog posts.