বিখ্যাত মনোচিকিৎসক জন বলবি তাঁর “এটাচমেন্ট থিওরী”-তে জানিয়েছেন যে একটি শিশু ও এক যত্নশীল ব্যক্তির (যেমন শিশুটির মা) মধ্যে গড়ে ওঠা স্নেহের সম্পর্ক শিশুটির ব্যক্তিত্বের বিকাশে সাহায্য করে। শিশুর জীবনে এই রকম কোন “এটাচমেন্ট ফিগার” (যেমন তার মা) না থাকলে শিশুর মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সামান্য বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে প্রায়শই অশান্তি দেখা দিলে তার প্রভাব শিশু মনেও পড়ে। বাবা-মায়ের সাথে শিশুর দূরত্ব তৈরি হতে পারে। অনেকের মধ্যে উদ্বিগ্নতা, মন খারাপ, ঘুমের সমস্যা, অকারণে হিংস্রতার মত সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক সময় শিশুরা এই অশান্তির জন্য নিজেকে দায়ী ভাবতে থাকে।এই জাতীয় শিশুরা ভবিষ্যতে অসামাজিক কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে।
মেয়ের জীবন গঠনে বাবা -মায়ের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মনোবিজ্ঞানীরা বাবা-মায়েদের মানসিকতাকে চার ভাগে ভাগ করেছেন।
এক ধরনের বাবা-মা আছেন যাঁরা শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং ছেলে-মেয়েদের কঠোর শাসনের মধ্যে রাখেন। একে “অথোরেটারিয়ান পেরেন্টিং” বলা হয়। এই জাতীয় বাচ্চাদের মধ্যে মিথ্যে কথা বলার প্রবণতা বেশি এবং এরা ভবিষ্যতে আগ্রাসী মনোভাব সম্পন্ন হতে পারে।
“পারমিসিভ পেরেন্টিং”এর ক্ষেত্রে বাবা -মায়েরা বাচ্চার সমস্ত বায়না মেনে নেন এবং অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেন। এই জাতীয় বাচ্চারা বড় হলে অনেক সময় তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। তারা পড়াশুনোয় তেমন সাফল্য পায় না এবং সামাজিক নিয়মকানুন মেনে কাজ করতে পারে না।
আবার “আন ইনভলভড পেরেন্টিং” এর ক্ষেত্রে বাচ্চার সমস্ত বিষয়েই বাবা -মা উদাসীন থাকেন এবং অবহেলা করেন।স্বাভাবিক ভাবেই এই সব বাচ্চারা অসুখী হয়, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগে।
“অথোরিটেটিভ পেরেন্টিং”এর ক্ষেত্রে বাবা-মা প্রশ্রয় ও শাসনের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে সন্তান প্রতিপালন করেন। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন এটিই ছেলে মেয়েদের বড় করে তোলার সর্বোত্তম পদ্ধতি।
বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে বাচ্চার সুসম্পর্ক জীবনে এগিয়ে চলার পথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কৈশোরের চাহিদা বুঝে সেই অনুযায়ী অভিভাবকদের যত্নশীল আচরণ করতে হবে।ভয়হীন ভাবে বাবা মাকে মনের কথা খুলে বলতে পারলে কিশোর-কিশোরীরা সহজেই অনেক মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
কিশোর-কিশোরীদের সুষ্ঠু বিকাশে অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যত্নবান হতে হবে। দরিদ্র শিশু-কিশোরদের উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, বিভিন্ন নেশাদ্রব্যের যোগান বন্ধ করতে হবে।
শারীরিক-মানসিক বা যৌন উৎপীড়নের ঘটনা ঘটলে বা হঠাৎ করে বাচ্চার ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
“এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার” বা “কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার”– এগুলি যে এক এক ধরনের মানসিক সমস্যা, সে বিষয়ে অনেকে অভিভাবক বা শিক্ষক-শিক্ষিকাই বিশেষ ভাবে অবগত নন। তাই এই সব বিষয়ে তাঁদের অবগত করা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।