আমরা বৃদ্ধরা যখন মিলিত হই তখন অনেক কিছুর সাথে আমাদের ছেলেবেলার শিয়ালদা – এন জি পি দার্জিলিং মেল, শিলিগুড়ি – দার্জিলিং টয় ট্রেন, হাওড়া – ভায়া গয়া – দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস, কালকা – সিমলা টয় ট্রেন, হাওড়া – বম্বে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, হাওড়া – মাদ্রাজ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, কোয়েম্বাত্তুর – উটি ইত্যাদির যাত্রা সুখ নিয়ে রোমন্থন করি। কেউ কেউ আবার প্যালেস অন হুইলস এর প্রসঙ্গ তোলেন।
বর্তমান রেল বোর্ডের হর্তাকর্তারা আমাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়ে হৈ হৈ করে উঠবেন – এত স্মার্ট স্টেশন, বুলেট ট্রেনের ধাঁচে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ইত্যাদির কথা পারবেন, পরিসংখ্যান দেখাবেন অতীতের থেকে দুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে, সামগ্রিক আধুনিকীকরণ হয়েছে, কাশ্মীরে সর্বোচ্চ রেল সেতু হয়েছে, কোলকাতায় হুগলী নদীর নিচ দিয়ে মেট্রো যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
মন কিন্তু মানে না। ওনাদের বিজ্ঞাপিত নামী ট্রেন গুলি মায় বন্দে ভারত কয়েকবার চরা হয়ে গেছে। কাঁচা টাকার গরম হাফ প্যান্ট পরা সব উদ্ভট যাত্রী, অল্প জায়গার মধ্যে তাদের গায়ে গা লাগিয়ে বসা, উচ্চস্বরে অশালীন কথা বার্তা, হুল্লোড়, অল্প জায়গায় মাল রাখা নিয়ে নিয়ত ঝগড়া, মদের গন্ধ, নিম্ন মানের খাবার দিতে বেসরকারি সংস্থার অল্প পারিশ্রমিকের কর্মীদের লম্ফঝম্ফ অভব্যতা, টয়লেটের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া, সব চাইতে বড় বিষয় মাঝেমাঝে খারাপ হয়ে যাওয়া বিশেষ সুবিধার লাগেনি। কিছু ঝকমকে দোকান বসিয়ে দিয়ে আর সবকিছুতে পয়সা নিলেই কি স্মার্ট স্টেশন হওয়া যায়? পথ কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। ন্যূনতম পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, পর্যাপ্ত শৌচালয় পর্যন্ত নেই।
এবার আসি দূর পাল্লার ট্রেন। আগে দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনে অনায়াসে ও আরামে দূর দূরান্তে যাওয়া যেতো এবং আমরা যেতাম। হাওড়া থেকে পাঠানকোট, যোধপুর বা রামেশ্বরম যেতে সমস্যা হতনা। এখন উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারত গামী ট্রেন গুলি পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়ে এত ঠাসা থাকে যে স্লিপার ক্লাশে ওঠাই যায়না, কোন রকমে উঠলে আবার গাদাগাদি ভিড়ে নড়াচড়া করা যায় না। এমনকি এখন এ সি থ্রি টিয়ারে অননুমোদিত যাত্রীর ভিড় লেগে থাকে। টয়লেটের কথা তো কহতব্য নয়। একে উপচে পড়া ভিড়, তার উপর হকার বৃহন্নলা ভিখিরি সবাই এগুলিকে ইচ্ছেমত ব্যবহার ও নোংরা করছে। রেল মন্ত্রকের আধিকারিকরা বলবেন জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। ঠিকই তো। সেইমত আপনাদের পরিষেবা বাড়ানো উচিত ছিল। তা করেছেন কি? যে লাইনের ট্রেনগুলির টিকিটের খুব চাহিদা সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে, বয়স্কদের ছাড় তুলে দিয়ে, cancellation refund প্রায় উঠিয়ে দিয়ে, ডাইনামিক প্রাইসিং করে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে যাচ্ছেন, ট্রেনের সংখ্যা অথবা স্লিপার কোচের সংখ্যা বাড়িয়েছেন কি? যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য না দেখে কেবল ঘুষ নিয়ে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কোচে তুলে দেওয়া টি টি বাবু আর রেল পুলিশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কি? কোন অভিযান চালিয়েছেন ইঁদুর, আরশোলাদের বিরুদ্ধে? খেয়াল রেখেছেন কি যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জল, ব্যবহারের জল, খাদ্য ইত্যাদি আছে কিনা? এই অশালীন ঘর্মাক্ত ভিড়ে শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের কি অবস্থা? সময়মতো যাত্রীদের পৌঁছে না দিতে পেরে কোন ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন কি? উল্টে কোভিডের সুযোগে কিংবা নানা ফিকিরে বহু ট্রেন তুলে দিয়েছেন। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন।
এবার আসি প্যাসেঞ্জার ও লোকাল ট্রেন সম্পর্কে। এগুলিতেও অতীতে স্বচ্ছন্দে আসাযাওয়া করা যেত। হ্যাঁ, অফিস টাইমের কিংবা কিছু উৎসব পরবে ভিড় হত। আর অবহেলিত বনগাঁ বা ক্যানিং লাইন কিংবা লালগোলা প্যাসেঞ্জার এর মত কিছু ট্রেনে ভিড় থাকতো। কিন্তু এখন লোকাল ট্রেন বা প্যাসেঞ্জার ট্রেন গুলিতে সুস্থভাবে যাতায়াত করা যায় না এত সাংঘাতিক ভিড়। কোচ গুলির অবস্থাও সঙ্গীন। কোথাও জানালা খোলা বন্ধ করা যায় না, কোথাও ফ্যান ঘোরে না লাইট জ্বলে না, কোথাও সিট ভাঙ্গা। আর কি নোংরা! প্যাসেঞ্জার ট্রেনের বাথরুম তো নরক, এই সব ট্রেনে এমনকি সিটের মধ্যেও মাঝেমাঝে বমি, মল লেগে আছে দেখা যায়। সিটের তলাতে নোংরার স্তুপ। পরিষ্কারই হয়না। মাছের জল, ছানার জল ইত্যাদির আদর তো আছেই। ষ্টেশনগুলি আদৌ ষ্টেশন না বারোয়ারী বাজার? নাকি কিছু সমাজবিরোধীর ভবঘুরের আখড়া? স্টেশনের টয়লেট, পানীয় জল, যাত্রীদের বসার জায়গা কি আদৌ ব্যবহারযোগ্য? ছিঃ! এর পরেও বলবেন সামগ্রিক আধুনিকীকরণ?
বহু সময়, ঝক্কি ও অর্থ ব্যয় করে মানুষ ভারতীয় রেলের কাছে মূলতঃ তিনটে জিনিস চান: নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা সহ উপযুক্ত পরিষেবা এবং সময়ানুবর্তিতা। প্রতিটি তেই বর্তমান ভারতীয় রেল ডাহা ফেল।
এবার নিরাপত্তার কথায় আসা যাক। ১৮৩৭ এ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের হাত ধরে যে ভারতীয় রেলের যাত্রা শুরু সেটি আজ স্বায়ত্তশাসিত কোঙ্কন রেলওয়ে এবং ১৭ টি অপারেটিং জোন সহ (ক্রমাগত সব হারিয়ে চলা বাংলায় এখনও ইস্টার্ন রেলওয়ে, সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে ও কলকাতা মেট্রো তিনটির জোনাল হেড কোয়ার্টারস) ১২ লক্ষ স্থায়ী কর্মী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়ার পর চতুর্থ বৃহত্তম রেলওয়ে নেটওয়ার্ক (৯২,৯৫২ কিমি), বৃহত্তম বৈদ্যুতিন রেলওয়ে নেটওয়ার্ক (৯০.৫২%), বৃহত্তম যাত্রী পরিষেবা দায়ী (দৈনিক ২ কোটি ৩০ লক্ষ যাত্রী) এবং বহু ঘটনা দুর্ঘটনার সাক্ষী।
বর্তমানে রেলের বাহ্যিক চাকচিক্য, আধুনিকীকরণের ঢক্কানিনাদের অন্তরালে একের পর এক হাড়হিম করা দুর্ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যু সাধারণ যাত্রী মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে ব্রিটিশ প্রবর্তিত মূল পরিকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা ই এখনও ভারতীয় রেলের মেরুদণ্ড। এর উপর একেক রাজ্যের একেক দলের একেক কিসিমের মন্ত্রী রেলের দায়িত্ব নিয়ে পরিকাঠামো ও ব্যবস্থাগত উন্নতি না ঘটিয়ে নিজের রাজ্যে ভোট ব্যাঙ্ক কে খুশি রাখতে কিছু নতুন ট্রেন দিয়ে গেছেন। তাঁর রাজ্য কে তুষ্ট করলেও এবং ব্যাপক পরিবেশের ক্ষতি করলেও একমাত্র জাফর শরিফ উন্নত পরিকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার কোঙ্কন রেলওয়ে নির্মাণে ব্রতী হন। আর বর্তমান শাসকদের কাছে গরীবের রেল তো দুয়োরানি। বিপুল বাজেট হ্রাস, গুরুত্বপুর্ণ সেকশন গুলি সহ বিপুল কর্মী সংকোচন, বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ, আউটসোর্সিং, রেলের জমি সম্পত্তি বিক্রি বা লিজ দেওয়া, পরিষেবার অধোগতি, যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলা ইত্যাদি চলছে।
অন্য সবকিছুর চাইতে মানুষ বেশি আতঙ্কিত তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। উন্নত দেশ গুলিতে এবং আমাদের দেশে কোঙ্কন রেলওয়ে তে আধুনিক প্রযুক্তিজাত anti collision device (ACD) ব্যবহৃত হয় যা দুর্ঘটনা প্রতিহত করতে সক্ষম। পরবর্তীতে রেলওয়ে সারা দেশের অন্যত্র, প্রথমে ২০০০ কিমি, পরে ধীরেধীরে বাদবাকি লাইনে যে Collision Avoidance System (KAVACH) লাগানোর কথা বলে সেটির স্রষ্টা বিশিষ্ট ভারতীয় রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার রামাজি বজ্জি হলেও বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রনীল মজুমদার প্রমুখের অবদান রয়েছে। এতে খরচ বিদেশের থেকে চার ভাগের এক ভাগ হলেও যথেষ্ট বেশি। Global Positioning System (GPS) ও Radio Frequency Identification Device (RFID) সমন্বিত এই ব্যবস্থায় প্রতি দুই কিলোমিটার অন্তর ট্র্যাকে রিফ্লেকটর লাগাতে হয় যার খরচ কিলোমিটার প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা এবং ইঞ্জিন গুলিতে যে যন্ত্র লাগাতে হয় তার খরচ ইঞ্জিন পিছু ৭০ লক্ষ টাকা। বলা হয় তিন কিলোমিটার এর মধ্যে অন্য ট্রেন চলে এলে স্বয়ংক্রিয় ব্যাবস্থায় ট্রেনের গতি কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এই যন্ত্রের একটি সীমাবদ্ধতা ১০ মিটারের কম দূরত্বের কোন ট্রেনকে সে সনাক্ত করতে পারবেনা যেটা ষ্টেশন, জংশন, শেড ইত্যাদিতে প্রয়োজন হতে পারে। এই সব কারণে রেল কিছু ভিআইপি লাইনে লাগিয়ে অন্যক্ষেত্রে পেছিয়ে যায়। অথচ মানুষকে বলে রক্ষা কবচ রয়েছে আর চিন্তা নেই। প্রতিটি দুর্ঘটনা প্রমাণ করেছে কোথাও রক্ষা কবচ ছিলনা। সম্প্রতি জানা গেল বাংলার কোন লাইনে কবচ বসানো নেই আর সেখানকার অরক্ষিত লাইন গুলি থেকে দ্রুতগামী এক্সপ্রেস ট্রেন গুলি ছুটে চলেছে।
আর রক্ষনাবেক্ষনের অভাব, সমন্বয়ের অভাব, অল্প কর্মীদের দিয়ে ট্রেন চালানোর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ টানা করিয়ে নেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি বাইরের সংস্থাকে দিয়ে কম পারিশ্রমিকে অদক্ষ কর্মীদের দিয়ে করানো, বিভিন্ন কাট মানি চুরি দুর্নীতি অপচয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রেল মাফিয়াদের দৌরাত্ম ইত্যাদির সাথে সাথে দেশজুড়ে হাজার হাজার কিলোমিটার অরক্ষিত ট্র্যাক, অসংখ্য অরক্ষিত সিগন্যাল বক্স, কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন অজস্র ম্যানড অথবা আনম্যানড লেভেল ক্রসিং। তার উপর যান্ত্রিক ও মনুষ্যকৃত গুরুতর ত্রুটি একের পর এক দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। কখনও উত্তর দিনাজপুরের গাইসালে দেশ বিরোধী শক্তির অথবা ঝাড়গ্রামের খেমাশুলিতে সন্ত্রাসবাদীদের অন্তর্ঘাতের কারণে ট্রেনের লাইনচ্যুতি ও প্রচুর প্রাণহানি, কখনও রেলের সিগন্যাল বা অপারেটিং সিস্টেম বা চালকদের ত্রুটিতে বা অন্য কারণে সাইথিয়া, জলপাইগুড়ি ও বাহানাগার মত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। উত্তর বঙ্গের চিকেন নেক এ বারবার দুর্ঘটনায় অনেকে নাশকতার গন্ধ পাচ্ছেন। কারণ কাছেই শত্রু দেশ চীন। ঢিল ছোড়া দূরত্বে অনেকটাই অরক্ষিত বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্ত। বর্তমানে এই দুটি দেশে ভারত বিরোধী শক্তিগুলি খুব শক্তিশালী ও সক্রিয়।
কোন দুর্ঘটনা ঘটলে রেলের সঠিক ও দ্রুত তদন্ত করে ত্রুটি সনাক্ত করে উপযুক্ত প্রতিবিধান নেওয়া উচিত। তা না হয়ে মূল কারণকে ধামাচাপা দেওয়া, তদন্ত রিপোর্ট ঠিকমত বের না করা, নীচু তলার বা মৃত কর্মীদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার আধুনিক ভারতীয় সংস্কৃতি চলছে। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটেই চলেছে। অথচ রেলের নিজস্ব কমিশনার অফ সেফটি ও তার অধীনে একটি বৃহৎ কাঠামো রয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যের ভারতীয় রেলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ৩২ জন দেশবাসীর মৃত্যু হয়। সাম্প্রতিক উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জোনাল রেলের কাটিহার ডিভিশনের রাঙাপানি ও চটেরহাট স্টেশনের মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও মালগাড়ির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে অটোসিগনাল দীর্ঘক্ষণ খারাপ থাকা, সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রায়শই খারাপ থাকা, অপারেটিং সিস্টেম কাজ না করা, আবসলিউট ব্লক সিস্টেমের পরিবর্তে ম্যানুয়াল মেমো দিয়ে পরপর ট্রেন পার করানো, চালকদের দিয়ে পরপর চার রাত্রি গাড়ি চালানো ইত্যাদি শিউরে ওঠা সব তত্ত্ব সামনে আসছে। প্রশ্ন হচ্ছে এত সবের পরেও রেল মন্ত্রক কবে শিক্ষা নেবে?
আরেকটি বিষয়। অল্প বয়সে ফিল্ম সোসাইটি তে ত্রুফো প্রমুখের ফিল্মে দেখতাম দ্রুতগামী ট্রেন এলিভেটেড রেল পথে চলে। পরে উন্নত দেশের ট্রেনে চরে দেখেছি হয় এলিভেটেড ট্র্যাকে চলে নইলে দুদিকে শক্তিশালী ফেন্সিং। আর ডেডিকেটেড লাইন তো রয়েছে। আমাদের এখানের মত প্রয়োজনের কম লাইনের জন্যে এত শান্টিং হয় না। আর কোন অবস্থাতেই রেল লাইনে গাড়ি, মানুষ, গরু, ছাগল আসার সম্ভবনা নেই। কথায় কথায় রেল অবরোধ বা ইলেকট্রিক লাইনে কলাগাছ ফেলে লাইন বন্ধ করে দেওয়ার বিপ্লবী সংস্কৃতিও নেই। স্টেশনেও আপনি ইচ্ছেমত লাইন পার হতে পারবেন না। নির্দিষ্ট সাবওয়ে বা ওভারব্রীজ দিয়েই পার হতে হবে। সেখানে অবশ্য লিফট বা এস্কেলারেটর এর সুবিধা আছে। সবাই যেমন নিয়ম মেনে চলেন, নিয়ম না মানলে ভালো রকম জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা আছে।
উত্তরবঙ্গের অরণ্যের মধ্যে দিয়ে রাজধানী সহ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার আগে এলিভেটেড ট্র্যাক ও আন্ডারপাস করলে বাঘ, হাতি সহ এত বন্য পশুর মৃত্যু ঘটত না। রেলের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং পরিচালনা (both organisational and operational) ব্যবস্থা, যাত্রী সুরক্ষা স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিষেবা, কর্মীদের স্বাস্থ্য স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রশিক্ষণ প্রভৃতির প্রয়োজনীয় উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি ডেডিকেটেড এলিভেটেড ট্র্যাক এর বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ফেন্সিং এর কথা বললাম না কারণ ভারতীয়রা বিশেষ করে পূর্ব ভারতীয়রা এতটাই গণতান্ত্রিক ও সৎ যে ওইসব ফেন্সিং কেটে সুবিধামত লাইন পারাপার করবেনই বলা যায়।
যাইহোক, আমাদের কারো উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয় যে অন্যদের দোষারোপ করা। বিপরীতে সমবেতভাবে এই গুরুতর সমস্যাকে কাটিয়ে ওঠা। তাহলে আমাদের প্রজন্ম না হলেও পরের প্রজন্মগুলি নিরাপদ, মসৃণ আর আরামের ট্রেন যাত্রা উপভোগ করতে পারবে।
১৯.০৬.২০২৪