সাবিত্রীবাই ফুলে ১৮৩১ সালে ৩রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
বাল্যকালে তিনি একটি বই পড়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর বাবা দেখে বইটিকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং তিনি বইটি কুড়িয়ে এনে লুকিয়ে যত্ন করে রেখে দেন পরে বলবেন বলে। তখন বলা হত মেয়েরা লেখাপড়া শিখলে তাঁদের স্বামীর মৃত্যু হবে।
নয় বছর বয়সে জ্যোতিরাও ফুলের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। জ্যোতিরাও নিজে ছিলেন শিক্ষা অনুরাগী। তাই তিনি তাঁর স্ত্রীকে, স্ত্রী যখন মাঠে খাবার নিয়ে যেত সেই মাঠের মধ্যে পড়াশোনা শেখাতেন- যাতে সমাজ থেকে বাধা না আসে। তবুও সে কথা একদিন জানাজানি হয়ে যায়। জ্যোতিরাও ফুলের বাবা বলেন হয় লেখাপড়া বন্ধ করতে হবে না হলে তাঁদের বাড়ি ছাড়তে হবে। জ্যোতিরাও এবং সাবিত্রী বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরবর্তী সময়ে নিজেদের প্রচেষ্টা এবং জ্যোতিরাও এর মুসলমান বন্ধু এবং পাদ্রীদের সহায়তায় সাবিত্রীবাই ফুলে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।
সাবিত্রীবাই ফুলে এবং জ্যোতিরাও ফুলে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতবর্ষের প্রথম মেয়েদের শিক্ষার জন্য জন্য আলাদা স্কুল। সেখানে ভারতবর্ষে প্রথম নারী শিক্ষিকা হিসাবে সাবিত্রীবাই ফুলে যোগদান করেন। তাঁরা ৯ জন তথাকথিত নিম্ন বর্ণের দলিত ছাত্রীদের নিয়ে স্কুল শুরু করেন।
কিন্তু সমাজের উচ্চবর্ণের লোকেরা এই দলিত নারীর শিক্ষা এবং শিক্ষা বিস্তারের প্রচেষ্টা মেনে নেয়নি। সাবিত্রীবাই ফুলে স্কুলে যাবার সময় তাঁকে পঁচা ডিম গোবর ইত্যাদি ছুড়ে মারা হতো। তিনি দুটো শাড়ি নিয়ে স্কুলে যেতেন। যাওয়া আসার পথের নোংরা শাড়ি পাল্টে তিনি পরিষ্কার শাড়ি পড়ে শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করতেন। এবং ফেরার সময় সেই নোংরা শাড়ি পড়ে ফিরে আসতেন।
সাবিত্রীবাই ফুলে ভারতের প্রথম নারী শিক্ষিকা।
পরবর্তীতে তাঁদের এই প্রচেষ্টা প্রচার পায় এবং ইংরেজ সরকারের আনুকূল্য লাভ করে যদিও স্থানীয় উচ্চবর্ণের সমাজ এটিকে সহজে মেনে নেয়নি।
তাঁরা সর্বমোট ১৮টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠা করেন একটি অনাথ আশ্রম, যেখানে ধর্ষিতা নারীর সন্তানদের আশ্রয়, লালন-পালন এবং শিক্ষা দেওয়া হতো।
তাঁদের কোন সন্তান ছিল না তাঁ্রা একটি বিধবা ব্রাহ্মণ কন্যার সন্তানকে দত্তক দেন। উচ্চবর্ণের দ্বারা লাঞ্ছিত হলেও সমাজে পরিষেবা দেওয়ার জন্য কোন বর্ণভেদ করেননি।
১৮৯৭ সালে বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত লোকেদের সেবা করার জন্য সাবিত্রী বাই ফুলে এবং তাঁর দত্তক পুত্র যশবন্তরাও ফুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত হয়ে সাবিত্রীবাই ফুলে ১০ই মার্চ 1897 সালে পরলোক গমন করেন।
তিনি শুধু শিক্ষিকা, সমাজ সংস্কারক এবং সেবব্রতী ছিলেন না , তিনি ছিলেন কবি। তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ আছে।
২০১৫ সালে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তার সম্মানে “সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়” নামকরণ করা হয়।
১৯৯৮ সালে ভারতীয় ডাক বিভাগ ফুলের সম্মানে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
এই মহীয়সী মহিলা ভারতের প্রথম নারী শিক্ষিকাকে তাঁর জন্মদিনে প্রণাম জানাই।