নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন জন দাবী করছিলেন, ভারতে ডাক্তারের সংখ্যা খুব কম। তাই সেমি-ডাক্তার, মিনি-ডাক্তার, মাইক্রো কিংবা ন্যানো-ডাক্তার ইত্যাদি খুব দরকার। ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজতে শুরু করলাম। কিছু পরিচিত লোকজনের সাথে কথা বললাম। মোটামুটি যা তথ্য পাচ্ছি, সেগুলো তুলে দিলাম। তথ্যে ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন প্লিজ।
১.
ভারতে এই মুহূর্তে (গত বছরের জুনের হিসেবে) আয়ুশ ধরলে ডাক্তার-রোগী অনুপাত ১ঃ৮৩৪, শুধু মডার্ন মেডিসিন ধরলে ১ঃ১১৯৪। নথিভুক্ত ডাক্তারের ৮০% কাজ করছেন এরকম ধরে।
২.
রাজ্যভিত্তিক তফাত আছে। তামিলনাড়ু, কেরলের মতো রাজ্যগুলোয় প্রতি হাজার জনসংখ্যায় চারজনেরও বেশি ডাক্তার। মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, ইউপি এসব রাজ্যগুলোর জন্য জাতীয় গড় খারাপ। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান সম্ভবত জাতীয় গড়ের চেয়ে ভালো।
৩.
গ্রাম-শহর আলাদা করে ভালো তথ্য পাচ্ছি না। এক জায়গায় দেখলাম অনুপাতটা শহরে ১ঃ৬৭১। গ্রামের তথ্যে অনেকটা হেরফের পাচ্ছি।
৪.
২০৩০ সালে সম্ভাব্য জনসংখ্যা হবে ১৫১ কোটি। এখন (২০২২) ১৩ লক্ষের কিছু বেশি নথিভুক্ত ডাক্তার। আগামী ৮ বছর আর সিট না বাড়লেও ৮ লক্ষ এমবিবিএস ডাক্তার তৈরি হবে। তাদের ৮০% কাজ করলেও জনসংখ্যার ভিত্তিতে অনুপাত হবে ১ঃ৮৯২। WHO বলে মোটামুটি ১ঃ১০০০ হলেই যথেষ্ট ভালো। (অল্প কিছু ডাক্তার অন্য দেশে যাবেন। কিছু ডাক্তার মারা যাবেন। সেই সংখ্যাগুলো হিসেবের বাইরে রাখছি।)
৫.
২০১৪ সালে দেশে বছরে ৫১ হাজার নতুন মেডিক্যাল গ্রাজুয়েট তৈরি হ’ত। এখন সেটা প্রায় ৯২ হাজার।
৬.
এই হারে ডাক্তার তৈরি হ’লে সামনের দশ বছরে দক্ষিণের রাজ্যগুলো ডাক্তারের সংখ্যায় উন্নত দেশগুলোকেও ছাপিয়ে যাবে।
এই তথ্যগুলো ঠিক হ’লে ধরে নেওয়াই যায় এই মুহূর্তে ভারতে ডাক্তারের মোট সংখ্যায় খুব কিছু ঘাটতি নেই। গ্রামে ডাক্তার কম। কেন কম সেই দায় ডাক্তারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া খুব সহজ সমাধান। বাস্তব চিত্রটা মোটেই ওরকম নয়।
আমাদের রাজ্যে শেষ পাঁচ বছরে স্থায়ী-ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে নামমাত্র। তারপর ‘ডাক্তার নেই’ বললে সেটা কেবলই মিথ্যাচার। আসলে এগুলো কম বেতনে সুলভ শ্রমিক দিয়ে ফাঁক ভরানোর চেষ্টা। তিন বছরটাও ক’দিন বাদে অনেক বেশি লাগতে পারে। এরপর একবছর, ছ’মাস, তিনমাস এমনকি তিন দিনেও ‘সহজ ডাক্তারি শিক্ষা’ বইটি পড়িয়ে ডাক্তার তৈরি করা যেতে পারে।
বহুদিনের অভিজ্ঞ ডাক্তাররাই বিপুল মেডিক্যাল শিক্ষার সমুদ্রে হাবুডুবু খান। কোনটা খুব মামুলি রোগ, কোনটা জটিল সেটা বুঝে ফেলা এত সোজা কাজ নয়। অভিজ্ঞ ডাক্তাররাই ভুল করেন। সেখানে মিনি-ডাক্তার সব বুঝে চিকিৎসা/রেফার করে ফেলবেন এটা নেহাতই কষ্টকল্পনা। কিন্তু ওই যে… সেমি-ডাক্তার তো আর নেতামন্ত্রী কিংবা বড় ব্যবসায়ীর চিকিৎসা করতে যাচ্ছেন না। গ্রামের গরীব লোকেরা সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাঁদের দাম শুধু ভোটবাক্সে।
আজ থেকে বছর পনেরো আগেও ‘ডাক্তার নেই’ এই কথাটা সত্যি ছিল। পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলেছে। প্রায় প্রতিটি পাড়া থেকে ডাক্তার তৈরি হচ্ছে। জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ। তাদের নিয়োগ না করেই ‘ডাক্তার নেই’ বলে দিলে সেটা মেনে নেওয়া মুশকিল।
(লেখায় তথ্যগত ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন)