স্কিৎসোফ্রেনিয়া কাকে বলে?
মানসিক রোগগুলিকে সাধারণ ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-সাইকোসিস ও নিউরোসিস। সাইকোসিসের ক্ষেত্রে রোগী নিজে বুঝতে পারে না যে সে অসুস্থ এবং তার বাস্তবজ্ঞান নষ্ট হয়ে যায়। নিউরোসিসের ক্ষেত্রে কিন্তু রোগী তার নিজের সমস্যা বুঝতে পারে এবং তার বাস্তবজ্ঞান বজায় থাকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সাইকোসিস গোত্রের রোগ হলে রোগীর সামাজিক জীবন যাপন অনেক বেশি প্রভাবিত হয়।
স্কিৎসোফ্রেনিয়া হল সাইকোসিস গোত্রের একটি মানসিক রোগ যা শতকরা একজনের হয়। পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অসুখটির হার প্রায় সমান। সচরাচর ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে অসুখটি শুরু হয়।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। প্রথম দিকে কিছু আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায় । কিন্তু তারপর তা সামাজিক জীবন যাপনকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ -ধরা যাক সবসময় হাসিখুশি থাকা এক ব্যক্তি হঠাৎ করে চুপচাপ থাকা শুরু করলেন, বন্ধুবান্ধবদের এড়িয়ে চলতে লাগলেন, সবসময় দরজা জানলা বন্ধ করে রাখতে লাগলেন। যদিও তিনি নিজের অফিসে ঠিকমতই যাতায়াত করতেন। কিছুদিন পর দেখা গেল তিনি নিজের মানেই বিড় বিড় করে কথা বলছেন, সন্দেহ করছেন যে লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, তাঁকে নিয়ে খারাপ কথা বলছে। তিনি তাঁর সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া করতে লাগলেন এবং অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। এরপরেও কোনো চিকিৎসা না হওয়ার ফলে কিছুদিন পরে তিনি বাড়ির লোকজনকে সন্দেহ করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন যে খাবারে বিষ মেশানো আছে। তাই তিনি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলেন।না খাওয়ার ফলে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়লো এবং তাঁকে জোর করে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার কিছু লক্ষণ
১। হ্যালুসিনেশান (অলীক জিনিস অনুভব করা)-হ্যালুসিনেশান মানে রোগী কানে শব্দ শুনছেন, অথবা নাকে গন্ধ পাচ্ছেন, অথবা চোখে দেখতে পাচ্ছেন অথবা কোনো স্পর্শ পাচ্ছেন, যাঁর কোনো ভিত্তি নেই।
এই আওয়াজ কীরকম হয়?
আওয়াজগুলি একদম স্বাভাবিক আওয়াজের মত। মনে হয় বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে, কিন্তু অন্যরা সে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। রোগী নানা জায়গা থেকে আওয়াজ পেতে পারেন। অথবা আওয়াজ আসতে পারে কোনো একটি জায়গা থেকে যেমন টেলিভিসন,রেডিও,মোবাইল ফোন। এই কন্ঠস্বরগুলি এক বা একাধিক হতে পারে, রোগীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারে, রোগীকে নির্দেশ দিতে পারে অথবা তারা নিজেদের মধ্যে রোগীর সম্পর্কে কথা বলতে পারে। কখনো কখনো কন্ঠস্বরগুলি ভালভাবে কথা বলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলি সমালোচনা করে, গালাগাল দেয়, বা অন্য কোনো ভাবে বিরক্তির কারণ হয়।
অন্যান্য হ্যালুসিনেশান-
দৃষ্টিবিভ্রম অথবা স্পর্শ, গন্ধ কিংবা স্বাদের অনুভূতিও হতে পারে। তবে সেগুলি অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়।
২। বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারণা বা ডিলিউশন– এগুলি এক ধরনের মিথ্যা বিশ্বাস যা রোগী প্রত্যয়ের সাথে ধরে রাখে। এই ধারণা বদ্ধমূল হলেও এর কারণ কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতির ভুল বিশ্লেষণ। রোগীর কোনো সন্দেহ না থাকলেও, লোকে মনে করে যে সেই ধারণা ভ্রান্ত, ভিত্তিহীন বা অদ্ভুত।
প্যারানয়েড ডিলিউশন- এই ক্ষেত্রে বদ্ধমূল ভ্রান্ত ধারণা হয় যে কেউ রোগীকে তাড়া করছে, পিছনে লেগেছে বা অন্য কোনো ভাবে হেনস্থা করবার চেষ্টা করছে। যেমন রোগীর মনে হতে পারে যে গভর্মেন্ট রোগীর পিছনে চর লাগিয়েছে। রোগীর এমনও মনে হতে পারে যে তার প্রতিবেশিরা বিশেষ টেকনোলজি অথবা বিশেষ ক্ষমতার মাধ্যমে তার উপর প্রভাব ফেলছে। আবার রোগীর হঠাৎ মনে হতে পারে যে তাঁর স্বামী অথবা স্ত্রী অন্যের প্রতি অনুরক্ত যদিও অন্যেরা নিশ্চিত যে এমন মনে করবার কোনো কারণ নেই।
৩। বিক্ষিপ্ত চিন্তা (থট ডিসর্ডার) চিন্তা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলে অন্যেরা রোগীর কথার মনে বুঝতে পারেন না। রোগীর পক্ষে মনঃসংযোগ করা কঠিন হয়ে ওঠে। একটা চিন্তার সঙ্গে আরেকটার কোনো মিল থাকে না। কয়েক মিনিট পরে রোগী প্রথম কী ভাবছিলেন, সেটাই ভুলে যান। কেউ কেউ বলেন যে তাঁদের চিন্তা যেন ‘ধোঁয়া ধোঁয়া’ হয়ে গেছে।
৪। অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবার অনুভূতি-রোগীর মনে হতে পারে যে- তাঁর চিন্তাগুলি উধাও হয়ে গেল, কেউ বা কারা যেন সেটা তাঁর মাথা থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তাঁর চিন্তাগুলি যেন তাঁর নিজস্ব নয়, অন্য কেউ সেগুলি তাঁর মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। রোগীর যেন নিজের শরীরের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কেউ যেন তাঁকে পুতুলের মত নাচাচ্ছে বা রোবটের মত চালাচ্ছে। কেউ বলেন, তাঁদের মাথা বা শরীরের মধ্যে কোনো যন্ত্র বসানো হয়েছে, বা কোন বিশেষ টেকনোলজির মাধ্যমে (যথা টিভি, রেডিও, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা লেসার বিম ) তাঁদের পরিচালনা করা হচ্ছে। আবার কেউ মনে করেন ভূতপ্রেত, শয়তান এইসব করছে।
৫। নেগেটিভ বা নেতিবাচক লক্ষণ– এই লক্ষণ গুলি সহজে বোঝা যায় না। উৎসাহ, উদ্যম অনুভূতি সব একেবারে নি:শেষ হয়ে যায়। কথাবার্তা কমে যায়, কোনো ব্যাপারে উচ্ছলতা বা উত্তেজনা থাকে না। স্নান করা, কাপড় কাচা, এমনকী পরিচ্ছন্ন থাকাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার কারণ কী?
- বর্তমানে গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে মূলত ডোপামিন নামের একটি কেমিক্যাল মস্তিষ্কের মধ্যে বেড়ে গেলে এই রোগ হয়।এছাড়া গ্লুটামেট,সেরোটোনিন,গাবা ইত্যাদি কেমিক্যালের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
- মাতৃগর্ভে থাকার সময় মাথায় কম অক্সিজেন গেলে বা কোনো চোট-আঘাত লাগলে,বা সেইসময় মায়ের কোন সংক্রমণ হলে সেইসব বাচ্চাদের মধ্যে ভবিষ্যতে এই জাতীয় রোগ হতে পারে।
- এছাড়া এই রোগের ক্ষেত্রে বংশগত কারণও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত দশজনের মধ্যে একজনের মা কিংবা বাবার স্কিৎসোফ্রেনিয়া থাকে। কিছু কিছু যমজদের জেনেটিক মেক-আপ এক। এরকম যমজদের ক্ষেত্রে একজনের স্কিৎসোফ্রেনিয়া হলে অন্যজনের হবার সম্ভাবনা শতকরা পঞ্চাশ ভাগ।
- কখনো কখনো ড্রাগের নেশা করলে স্কিৎসোফ্রেনিয়া দেখা দেয়। এইসব ড্রাগের মধ্যে এক্সট্যাসি(ই), এলএসডি(আসিড), অ্যাম্ফেটামিন (স্পিড)এবং কোকেন ইত্যাদি অন্যতম।
- যাঁদের জিনগত প্রবণতা আছে তাঁরা অতিরিক্ত মদ্যপান করলে তাঁদের মধ্যে এই রোগের সূত্রপাত হতে পারে। আবার যাঁদের স্কিৎসোফ্রেনিয়া আছে, তাঁদের মদ্যপান করলে বা মাদকদ্রব্য সেবন করলে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
- গাঁজা সেবন করলে স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
- শৈশবে বঞ্চনা এবং নিযাতনের অভিজ্ঞতা সেই ব্যক্তির মধ্যে স্কিৎসোফ্রেনিয়া হবার সম্ভাবনা বাড়ায়।
- পারিবারিক অশান্তি ও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ এই রোগের উপসর্গ গুলিকে বাড়িয়ে দেয়।
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা
স্কিৎসোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে যত শীঘ্র সম্ভব ওষুধ শুরু করা দরকার। চিকিৎসায় দেরি হলে রোগ সারানো ক্রমশ মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই উপরোক্ত সমস্যা গুলি দেখা দিলে দেরি না করে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের (সাইকিয়াট্রিস্টের) পরামর্শ নিন।
- এই রোগের চিকিৎসায় আন্টি সাইকোটিক গোত্রের ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
- রোগের উপসর্গ বেড়ে গেলে আবার অনেক সময় ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি (শক থেরাপি)ব্যবহারের দরকার পড়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে বর্তমানে আনাস্থেসিয়া দিয়ে(অজ্ঞান করে) ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি দেওয়া হয়।এতে রোগী কোনরকম ব্যথা অনুভব করে না।
ওষুধ প্রয়োগ করার সময় পরিবারের করণীয়ে
রোগী অনেক সময় ঠিকমত ওষুধ খান না। আত্মীয়-স্বজনদের এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে এবং রোগীকে ঠিক সময়ে ঠিক পরিমাণে ওষুধ খাওয়াতে হবে ও ফলো আপ সাক্ষাৎকারগুলিতে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের সাথে কথা না বলে ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্বন্ধে ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভাল। সেরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।
আমার জেঠিমা এই রোগে আক্রান্ত, চিকিৎসা চলছে। সারাদিনে অনেক গুলি ওষুধ খেতে হয়। আমার প্রশ্ন হল ওষুধ খাওয়ার নিয়ম কী? মানে ধরুন সকালে ৫টা ওষুধ খেতে হবে, সেক্ষেত্রে ওষুধগুলো একসঙ্গে মুখে পুরে জল খেতে নেওয়া যেতে পারে নাকি প্রত্যেকটা ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টসময়ের ব্যবধান রাখতে হবে।
আপনার ডাক্তারবাবু যদি কোন ওষুধের ব্যাপারে বিশেষ ভাবে বারণ না করে থাকেন,তাহলে ওষুধগুলি একসাথে খেতে পারেন।
Amar maa nanarakom delution korchen .bt dr.er kache konovabei nie jete raji karate parchi na .plzz bolben kivabe nie jabo?khub helpless lagche.
Like!! Great article post.Really thank you! Really Cool.
I learn something new and challenging on blogs I stumbleupon everyday.