ক্লাস ফাইভ না সিক্স এখন আর মনে নেই, খুব সম্ভবত সিক্স। অলক বাবু স্যার বাংলা পড়াতে এসে মধুসূদন দত্তের চতুর্দশপদী কবিতার কথা বলছিলেন। কী বুঝেছিলাম জানি না কিন্তু অবাক হয়েছিলাম গুনে গুনে দেখে যে চোদ্দোটা লাইন আর প্রত্যেকটা লাইনেই চোদ্দোটা অক্ষর! বা রে! চমৎকৃত আমি।
ওই সময়েই অলক বাবুর উদ্যোগে শুরু হয় এক হাতে লেখা ম্যাগাজিনের কাজ। ঠিক হলো নাম হবে ‘মুকুল’।
স্যার সবাইকে নিজের লেখা জমা দিতে বললেন। আর পরের দিনই দেবু এক তাড়া লেখা জমা করে দিল। ও সবসময়ই এগিয়ে। পরীক্ষার হলে এক ঘণ্টাও হয় নি, দেবু উঠে দাঁড়িয়েছে, স্যার পাতা চাই। মুষড়ে পড়া আমি খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার তো অনেক পাতাই ফাঁকা।
কাজেই সেই দেবু যে ঘোষণার পরের দিনই লেখা জমা দেবে বলাই বাহুল্য। অলক বাবু আমার দিকে তাকালেন, অভিজিৎ তোমার কতদূর।
আমি তখন দেবুকে টপকানোর জন্য নতুন কিছু ভাবছি। গুটি গুটি পায়ে টিচার্স রুমে ঢুকেছি, যাক অলক বাবু একাই আছেন।
—স্যার
–হ্যাঁ বল?
একটা গোটানো পাতা স্যারের সামনে খুলে ধরলাম।
–এটা কি? ও তোমার লেখা। কবিতা লিখেছ?
–হ্যাঁ, কিন্তু মানে স্যার, একটু স্পেশ্যাল ব্যাপার আছে।
–তা বলো কি বিশেষত্ব?
–স্যার এটা অষ্টপদী।
–মানে?
–মানে স্যার, ভালো করে দেখুন এতে আটটা লাইন আছে, প্রতিটিতেই আটটি বর্ণ।—-
ফুটবল ফুটবল, খেলে মোট দুই দল।
ছুটোছুটি করে সব,
মাঠময় কলরব।
বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠ যারা,
পেলে তাদেরও সেরা।
যে দলে তে পেলে রয়,
সে দলের জয় হয়।।
হাসছেন অলক বাবু।
–স্যার লেখাটা ‘মুকুল’ এ থাকবে তো!
অভয় দিলেন মুকুল পরিচর্যার মালিক (নাকি মালী)।
তখনো হাত কচলাচ্ছি আমি,–স্যার কবিতাটার নীচে একটু লিখে দেবেন, যে আটটা লাইন আর প্রত্যেকটায়– কেউ যদি খেয়াল না করে।
–ঠিক আছে বাবা তাই হবে।
স্যারের অভয় বাণী পেয়ে একছুটে ক্লাসরুমে দেবুর পাশে।
–কী রে কোথায় ছিলি?
–বাথরুমে। মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।
আজ ‘অভিমুখ’ কে সাথে নিয়ে অলক বাবুর ঘরে এসে পুরনো কথা খুবই মনে পড়ছে। আহা দেবুর সাথে এই বই নিয়ে যদি একটা ছবি হতো! কিন্তু ঐ যে বললাম, দেবু সবসময়ই এগিয়ে। আগেই খাতা জমা দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। আমি বসে আছি এখনো কিছু খালি পাতা হাতে নিয়ে।
ছবিতে অলক বাবু স্যার, আমি ও অভিমুখ।
ক্যামেরার পেছনে আমার ও স্যারের অতি প্রিয় সৌমিত্র শংকর।