মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকে যা নম্বর পেয়েছিলাম তাতে সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ পেতাম। উচ্চ-মাধ্যমিকের বছরেই জয়েন্টে মেডিক্যালে ৯৫ আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২৬৫ র্যাঙ্ক ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং নিলেও ভালো জায়গাতেই পড়া যেত। যদিও ডাক্তারি পড়া নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবিনি।
আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে এলাম। ডাক্তারি নিয়ে সেই স্বপ্ন স্বপ্ন ব্যাপারগুলোর ঘোর বহুদিনই কেটে গেছে। আইনের ফাঁস, চিকিৎসক-নিগ্রহ, সন্দেহের বাতাবরণ… সব মিলিয়ে, উজাড় করে চিকিৎসা করার বদলে জল মেপে চলতে হয়। বাধ্য হয়েই। কম তো দেখলাম না… যে রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি সময় দিয়েছি, সবচেয়ে ভালো করে বুঝিয়েছি, সেই… থাক সে কথা! তবু এখনো কিংবা আরও কয়েক দশক বাদেও সুযোগ দিলে ডাক্তারই হ’তে চাইবো আবার। বারবার। স্টেথোস্কোপের একটা অদ্ভুত সম্মোহন আছে। “পরতে গেলে লাগে, ছিঁড়তে গেলে বাজে।” লাব-ডুব সবচেয়ে প্রিয় শব্দ হিসেবে থেকে যাবে সারাজীবন। একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ড আবার চলতে শুরু করার চেয়ে প্রিয় শব্দ, প্রিয় দৃশ্য আর কিছু হতেই পারে না।
যে কোনও জায়গায় চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও খবর এলে নিচের কমেন্ট বক্সে চিকিৎসককে গালাগালি কিংবা ডিজিটাল-নিগ্রহ থাকবেই। সত্যিই তো, চিকিৎসকের গাফিলতি ছাড়া মৃত্যু হতেই পারে না! এমনকি মস্তিষ্কে কর্কটরোগ ছড়িয়ে মৃত্যু হলেও সেটা চিকিৎসকেরই গাফিলতি! ক’দিন আগেই সেলিব্রিটি মৃত্যুর পরের খবরে দেখেছিলাম। আগে রাগ হ’ত। এখন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
এতসব কালো দিকের মাঝেও দেখলাম বেশিরভাগ মাধ্যমিকে ভালো নম্বর পাওয়া ছেলেমেয়েরা ডাক্তার হ’তে চাইছে। কাউকে নিরুৎসাহিত করবো না। সবার ভালো হোক। সবাইকে অভিনন্দন জানালাম। প্রতি বছর মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ-মাধ্যমিকের ফলাফল বেরোনোর পরে কিছু লোকজন নিয়ম মেনে ভালো নম্বর পাওয়া ছেলেমেয়েদের উপহাস করতে শুরু করেন। সম্ভবত তাঁরা নিজেরাও সারাজীবনে প্রশংসা পাওয়ার মতো কিছুই করে উঠতে পারেননি। অন্তত শুভেচ্ছাটুকু জানাতে অসুবিধে কোথায়?
তোমাদের সবার ইচ্ছে পূর্ণ হোক। অনেক বড় হও।