আশা করি, সবাই রবার্ট ফ্রস্টের নাম শুনেছেন? বিখ্যাত আমেরিকান কবি, ইতিহাসে বোধহয় একমাত্র কবি যে চার চার বার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন!
মনে পড়ছে তাঁর কোন লেখা? A Boy’s will অথবা North of Boston থেকে After Apple picking বা the death of hired man বা Mending well অথবা The oven bird অথবা New Hampshire থেকে Fire and ice বা Nothing gold can stay বা বিখ্যাত সেই কবিতা Stopping by woods on a snowy evening মনে পড়ে গেল তো??
আর কিছু মনে পড়ছে?? একটি অন্যরকম কবিতা – জীবন ও মৃত্যু নিয়ে একটি অসম্ভব সুন্দর দার্শনিক চিন্তা ভাবনা নিয়ে লেখা কোন কবিতা?
বলেই ফেলি। Provide provide কবিতাটি পড়েছেন অবশ্যই। Tercets rhyme এর সেই অসাধারণ কবিতাটির লাইন গুলো মনে করুন —
The witch that came (the withered hag)
To wash the steps with pail and rag
Was once the beauty Abishag–প্রথম তিন লাইন।
না, রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার সমালোচনা করার মতো অসভ্যতা আমার দ্বারা হবে না।
শুধু একটা নাম নিয়ে নিই এই কবিতা থেকে। Abishag.
কে এই Abishag? হঠাৎ কবি এই নামটি কেন ব্যবহার করলেন কবিতায়?? এর পেছনের ইতিহাস কি?
আসুন – চলে যাই টাইম মেশিনে চেপে প্রায় তিন হাজার বছর আগে। স্থান ইজরায়েল। কিং সলোমনের রাজত্ব কাল। নাম শুনেছেন অবশ্যই।
Old testament এর 1 Samuel, 2 Samuel পড়তে শুরু করি। সলোমন টের পেলেন তাঁর শত্রু আশেপাশে ঘুরঘুর করছে রাজত্ব দখল করতে। সে আর কেউ নয় – তাঁরই নিজের সৎ ভাই Adonijah!
সন্দেহ কেন হলো? সন্দেহ হবার কারণ হলো – Adonijah রাজপ্রাসাদেরই এক অল্পবয়সী সুন্দরীকে বিয়ে করার জন্য তখন পাগল। সে হাত করতে চেষ্টা করলো Bathsheba-কে । ইনি কে? ইনি কিং সলোমনের মা।
মা কি করে হলেন? হলেন কারণ, সলোমনের বাবা এবং Bathsheba-র ছিল অবৈধ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। এবং সলোমনের সুযোগ্য বাপ Bathsheba-র আগের স্বামীকে খুনও করেছিলেন!! আর Adonijah ছিল অন্যপক্ষের সন্তান!
তো সলোমন বুঝতে পারলো- শত্রুকে মারতে হবেই! কারণ, একবার এই বিয়ে হয়ে গেলেই Adonijah আইন অনুযায়ী রাজত্বের দাবিদার হয়ে যাবেন!!
কি আইন? যদি কেউ পূর্বতন রাজার কোন রক্ষিতা (বা concubine)-কে বিয়ে করে, তাহলে সে রাজত্বের দাবিদার হবে!! যেহেতু Adonijah এমনিতেই উত্তরসুরি, সে ক্ষমতা চাইবেই!
আদতে Adonijah-র কিন্তু তেমন উদ্দেশ্য ছিল না! সে সুন্দরীর প্রেমে পাগল!
সলোমন একদিন টুক করে মেরে দিল সৎ এবং বড় ভাইকেই!!
আপদ বিদায়!
এবার এই সুন্দরীটি কে? এনার নাম হলো Abishag, Shunem বলে একটি জায়গার বাসিন্দা এই অল্প বয়সী মেয়েটি সলোমনের বাপ মানে কিং ডেভিডের সময়কাল থেকে রাজপ্রাসাদে আছে!
থাকগে!
আচ্ছা, ডেভিড এবং গোলিয়াথের গল্পটা কে কে জানেন?
সেই যে shepherd ডেভিড, যে খুব ভালো মিউজিশিয়ান ছিল! হঠাৎ একদিন ফিলিস্তিনি বীর গোলিয়াথ সদম্ভে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ইজরায়েলি বীরদের একে একে আহ্বান করলে একমাত্র বাচ্চা ডেভিড গুলতি আর পাথর নিয়ে নেমে পড়েছিল যুদ্ধে! অসম লড়াইয়ের উদাহরণ এই গল্প! যেখানে underdog ডেভিড একখণ্ড পাথর ছুঁড়ে গোলিয়াথকে কাৎ করে মাথাটা কেটে এনেছিল! তারপর একদিন রাজাও হয়ে গিয়েছিল!
এই মহাপুরুষ হলেন সলোমনের বাপ- কিং ডেভিড! ইজরায়েলের ইতিহাসে প্রায় অবতার ইনি!!
আর এই ডেভিড বয়সকালে যখন রোগশয্যায়, শুকনো শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসছে, কোন কিছুতেই আর দাঁড়াতে পারছেন না, কোন কিছুই আর যখন দাঁড়াবার অবস্থায় নেই,
তখন হয়তো কোন এক বৈদ্যাচার্যের বুদ্ধিতেই চিকিৎসার এক অদ্ভুত অত্যাধুনিক ব্যবস্থা হলো!
কি সেই চিকিৎসা? ঠিক হলো- অল্প বয়সী মেয়ে (ছেলে নয় কিন্তু!), যাদের শরীরে সদ্য প্রস্ফুটিত যৌবন, উষ্ণতা ভরপুর, তেমন মেয়েকে এনে সম্পূর্ণ রূপে বিবস্ত্র করে পাঠাতে হবে রাজার বিছানায়! সে জড়িয়ে ধরবে ডেভিডকে। আর শরীর থেকে শরীরে ‘টাচ থেরাপি’র মতো করে চলে যাবে উষ্ণতা ও যৌবন!!
শুনে কি খুব একটা অবৈজ্ঞানিক উপায় মনে হচ্ছে? না! এটা তো হওয়া সম্ভব! ব্যাড টাচ তো আর বলেনি!! আরো বড় কথা- যদ্দুর লেখা আছে- এক্ষেত্রে কিন্তু তাঁদের যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি!
মেয়েটি শুধু ….
(আমাদের দেশের একজন মহাপুরুষের কথা মনে পড়ছে কি?
তিনিও নাকি অল্প বয়সী মেয়েদের সঙ্গে বিবস্ত্র হয়েই নিজের চারিত্রিক সততার প্রমাণ দিয়েছিলেন! জানি না, তেমন হয়েছিল কিনা! আমার বিশ্বাস নেই এই গল্পে।)
এবার এই যে মেয়েটি, যে রাজার concubine ছিল অথচ ভার্জিন, সেই হলো Abishag, যাকে বিয়ে করার জন্য ক্ষেপে উঠে ভুল করে খুন হয়ে গেল Adonijah! হ্যাঁ, ডেভিডের বড় ছেলে!!
যারা ভাবছেন, পরিবারের মধ্যে হয়ে যাচ্ছিল তো- তাঁদের জন্য বলি, এই পরিবারের মধ্যে এক ছেলে নিজের পিসিকেও ধর্ষণ করেছিল!!
আর রাজার এই সময় থেকেই চালু হলো এই চিকিৎসাপদ্ধতি!
Abishag যেহেতু Shunem এর বাসিন্দা, তাই এই চিকিৎসার নাম হলো – Shunamitism, পরবর্তীতে আমরা যাকে জানবো Gerocomy বলে!
কি ভাবছেন- তিন হাজার বছর পুরোনো গল্প দিয়ে কি প্রমাণ করবো? দাঁড়ান!
সপ্তদশ শতকে Thomas Sydenham বলে একজন বিখ্যাত চিকিৎসকও তাঁর রোগীদের এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলেছেন!
ইনি কে জানেন? ইংল্যান্ডের হিপোক্রেটস! যাঁর লেখা বই Observationes medicae দু’শো বছর ধরে ছিল তৎকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থার একমাত্র আধুনিক বই!! Sydenham chorea বলে ব্রেনের অসুখ ইনিই আবিষ্কার করেছিলেন!!
আবার আরো পরে অষ্টদশ শতকে আরেকজন বিখ্যাত মানুষ Booerhaave (এনার আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বেশ অবদানও আছে!) এই পদ্ধতিতে মানুষকে চিকিৎসা করেছেন !!
তা বলে, বিজ্ঞান কি সেই জায়গায় থেমে গেছে?? থামেনি!
বড় বড় নামী দামী মানুষের দ্বারা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোকেও হাজার হাজার বার পরীক্ষানিরীক্ষা করে, পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে বাতিল করা হয়েছে!!
এটাই বিজ্ঞান!!আজকের বিজ্ঞান যেটা, কাল নাও থাকতে পারে।
কোথায় আজকের দিনে সেই শুশ্রূত? কোথায় তাঁর অপারেশন পদ্ধতি?
বিজ্ঞান পৃথিবীর সব জাত-পাত ধর্ম-বর্ত্রের প্রাচীন ইতিহাস অব্দি ঘেঁটে যেখানে যা পেয়েছে ব্যবচ্ছেদ করে ভালোটুকু সাজিয়ে দিয়েছে থালায় এবং দিচ্ছে আজও! রাজহাঁসের মতো – দুধ খেয়েছে, জল ফেলে দিয়েই!!
আর আপনি আজ চিৎকার করছেন- ওহ! আমরা তো এটা ওটা কত কিছু করতে জানি! তো এতোদিন প্রমাণ করেননি কেন?
পারেননি কেন??
বিজ্ঞান কারো বাবার সম্পত্তি তো নয়! তাকে ব্যবহার করে নিজের ভেতরে আনুন আগে!
Shunamitism আরো বহু পদ্ধতির মতোই বাতিল আজ।
শরীর সর্বস্বতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণ ঘটেছে মানুষের।Abishag-কে রবার্ট ফ্রস্ট নিয়ে এসেছিলেন কবিতায়। কিসের প্রতীক হিসেবে?
শরীরের! যৌবনের! উষ্ণতার! ব্যর্থতারও নয় কি??
সেই ব্যর্থতা কার?? সেই ব্যর্থতার দায়- যুক্তি তর্ক প্রমাণহীন এক ধারণার! একটি চিকিৎসা পদ্ধতির!
আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে – সেদিনের সেই Abishag, যার শরীরে যৌবন ছিল, উত্তাপ ছিল, শেষমেশ ভার্জিনও ছিল, সেকি ডেভিডের শরীরে সত্যিই হিট অ্যাণ্ড ময়েশ্চার ট্রান্সফার করতে পেরেছিল?? নাকি … থাক!
খুব মনে হয়, কোন এক পূর্ণিমার রাতে Abishag হয়ে উঠতে চেয়েছিল আমাদের মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুসুম। হয়তো সেও Adonijah-এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল গা ঘেঁষে … তারপর বলেছিল- “এমনই চাঁদনি রাতে আপনার সঙ্গে কোথাও চলে যেতে সাধ হয় ছোটোবাবু”।
সে পারেনি Adonijah শশীর হাত ধরতে। একই রকম হলে আজকের দিনেও পারতো কি??
নাকি আপনি আমি হয়ে উঠতাম শশী- চিৎকার করে বলে উঠতাম- শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম? নাকি হয়ে উঠতাম ডেভিড?? কি করতাম??