অবতরণিকা
সুশ্রুত সংহিতা-র মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে সামান্য কিছু প্রাথমিক কথা বলা প্রয়োজন। আমার এ প্রবন্ধে প্রাচীন আর্য্যাবর্তের প্রথম ‘সার্জিকাল টেক্সট’ নিয়ে কাল নির্ণয়ের আলোচনা করিনি, দৃঢ়বলের হাতে প্রথম সংস্কার হবার পরে আরও কত ব্যাখ্যা-অনুষঙ্গ-সংযোজন হয়েছে সে আলোচনাতেও যাইনি। আমার আলোচনার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে খুব সংক্ষিপ্তাকারে এই গ্রন্থের ঐতিহাসিক অবস্থান, ঋক-সংহিতা থেকে ক্রম-বিবর্তিত হয়ে এর পরিণত চেহারা এবং এই টেক্সটে যেমন রয়েছে যে জ্ঞান লাভের জন্য শবদেহকে শিক্ষার্থীর কিভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন সে বর্ণনা এবং শল্য চিকিৎসার যে বিবরণ রয়েছে তার সঙ্গে শবদেহ প্রস্তুতের সংযোগ।
(Palm leaves of the Sushruta Samhita or Sahottara-Tantra from Nepal, stored at Los Angeles County Museum of Art. The text is dated 12th-13th century while the art is dated 18th-19th century. Courtesy: Wikipedia)
আয়ুর্বেদের অবস্থানে একেবারে গোড়ায় প্রাধান্যকারী ছিল ভেষজ বা ‘মেডিসিন’-এর অংশ। পরবর্তীতে যখন বহিরাগত আর্য্যদের সঙ্গে এ ভূখণ্ডের স্থানীয় অধিবাসীদের যুদ্ধবিগ্রহ লাগাতার চলতে এবং বাড়তে থাকে তখন বেশি বেশি করে সৈন্যদের আহত হবার সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ‘হাইজিন’ পালনের সঙ্গে আধুনিক মেডিসিনের পরিভাষায় সার্জারির প্রয়োজন বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধি পায় ‘সার্জন’ বা শল্য বিশারদদের প্রয়োজন। ঋকবেদ তথা ঋক-সংহিতা-য় উল্লেখ আছে, প্রাথমিকভাবে একজন চিকিৎসকের প্রয়োজন চিহ্নিত হয়। পরবর্তীতে শল্য চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা আসে। (“ভূমিকা”, The Astāngahṛidaya: A Compendium of the Ayurvedic System, Composed by Vāgbhaṭa, Collated by the Late Dr. Anna Moreshwara Kunte and Krishna Ramchandra Navre, Nirnaya-Sagar Press, 1939) যদিও “ভূমিকা”-র ভাষায় – “when then women had to be relieved in their labours, physician and the surgeon are mentioned in the Rik-Saṃhita … The medical profession to this extent was considered to be inferior religiously and socially.” (পৃঃ ৪-৫)
এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা ভালো, বর্তমান সময়ে আধুনিক মেডিসিনে একজন সার্জন যে অর্থ নিয়ে আমাদের সামনে আবির্ভূত হন আয়ুর্বেদে এর কোন সমার্থক শব্দ হিসেবে শল্য চিকিৎসককে বিচার করা কার্যত একটি প্রমাদ হবে। এ আলোচনায় পরে আসছি।
এই ভূমিকা থেকেই জানতে পারছি – “The ancient Aṣwin and Bhisag Angiras accomplished their professional then professional tasks in a way, and achieved important results.” (“ভূমিকা”, পৃঃ ৬) উদাহরণ হিসেবে জানতে পারছি, যুদ্ধে পা ভেঙ্গে যেত এবং লোহার পা লাগানো হত – “surgeons who extracted the shafts of arrows lodged in the body and dressed wounds which the ancient Āryas dreaded much”. (পৃঃ ৭)
আরেকটি বিষয়ও বলে নেওয়া জরুরী। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিধানকারী টেক্সট মনুস্মৃতি তথা মানব-ধর্মশাস্ত্র আধুনিক গবেষণার নিরিখে বলা যায় ২য় থেকে ৩য় শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। সেসময়েও মনুস্মৃতি-তে বিধান হিসেবে উল্লেখ আছে, কোন যজ্ঞানুষ্ঠানে চিকিৎসকদের আমন্ত্রণ করা যাবেনা। (The Laws of Manu, G. Bruhler, ৩.১৫২) বলা আছে, “কোন ব্রাহ্মণ যদি খাবার কোন চিকিৎসককে দেয় তাহলে সে খাবার পুঁজ এবং রক্তে পরিণত হয়।” (৩.১৮০) আরও বলা আছে, “The food of a physician (is as vile as) pus”। (৪.২২০)
প্রাচীন ভারতের ‘systematic’ চিকিৎসার উদ্ভব এবং আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ কেনেথ যিস্ক তাঁর “Mythology and the brahminization of Indian medicine: transforming heterodoxy into orthodoxy” (https://library.mibckerala.org/lms_frame/eBook/Mythology%20and%20the%20brahmanization.pdf)
গবেষণা প্রবন্ধে জানাচ্ছেন – আয়ুর্বেদ তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রথম ধাপ, ১২০০-৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বৈদিক মেডিসিন যার পরিণতি ঋকবেদ থেকে শুরু হয়ে অথর্ববেদ-এ। দ্বিতীয় ধাপ, ‘ক্লাসিকাল’ পর্যায় যে সময়ে চরক– এবং সুশ্রুত-সংহিতা তৈরি হয়েছে। তৃতীয় ধাপ, “syncretic” পর্যায় যেখানে আয়ুর্বেদের ধ্রুপদী কাঠামোর ওপরে ইউনানি এবং অন্যান্য “non-classical” মেডিসিনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় এবং যেগুলো পরবর্তী সময়ে রচিত আয়ুর্বেদের টেক্সটের মধ্যে আত্মীকৃত হয়েছে।
আয়ুর্বেদের এনসাইক্লোপিডিয়া বলে বিশ্বখ্যাত বিশারদ মিউলেনবেল্ড সমধর্মী মতামত পোষণ করেন। তাঁর “The Many Faces of Ayurveda” প্রবন্ধে তিনি মন্তব্য করেছেন – “Since numerous authors, especially in our own times, have emphasized the unchanging aspects of Ayurveda, it seems natural to study the other side of the coin as well.” (G. J Meulenbeld, “The Many Faces of Ayurveda”, Ancient Science of Life, January-April 1992, XI (3-4): 106-113) আরও বলছেন – “A new branch of Ayurveda suddenly appears in the thirteenth and fourteenth centuries. This branch, called nadisastra, is concerned with diagnostics and prognostication by means of the examination of the pulse. The abrupt appearance of this procedure, present for the first time in the Sarngadharasamhita, poses a still unsolved problem to medical historians because of the obscurity of its origins.” তাঁর মতে, এর আগেও নাড়ী পরীক্ষা আয়ুর্বেদে পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত ছিল। কিন্তু শার্ঙ্গধরের আগে নাড়ীশাস্ত্র আয়ুর্বেদের সঙ্গে পূর্ণত সংযুক্ত হয়ে পড়েনি।
তিনি জানাচ্ছেন – “নাড়ী পরীক্ষা ছাড়াও আরও কিছু পরীক্ষাপদ্ধতি আয়ুর্বেদে দেখা গেল, যেমন মূত্রপরীক্ষা এবং, বিশেষত, তৈলবিন্দু পদ্ধতি।” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১১০) তাঁর মতানুযায়ী – “The culture that had a definite influence on Ayurveda was that of Islam … The available information on the actual situation shows clearly that Ayurveda is going through a period of far-reaching changes.” (পৃঃ ১১১-১১২)
যাহোক, আমরা যিস্কের প্রবন্ধে আসি। তাঁর ধারণানুযায়ী, ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবে একটি মুক্তমনা (heterodox) জ্ঞানের জগৎ প্রবল গোঁড়া (orthodox) সংস্কার ও শাস্ত্রের চাপে ঈপ্সিত চলনপথ থেকে কেবলমাত্র উচ্চবর্ণের কুক্ষিগত স্কল্যাস্টিক চিকিৎসার এক বিশেষ জ্ঞানভান্ডারে পর্যবসিত হল।
একইরকম ধারনা দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধায় তাঁর Science and Society in Ancient India (Calcutta: Research India Publications, 1977, ১৯৭৮ সালে ব্রিল প্রকাশনা থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয়) গ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন – “The physicians try to save their science by concealing it under a heap of intellectual debris. These are of nature of random concessions to the counter-ideology – to its metaphysics, its morals, its mythology, in short, any sundry superstition satisfying it.” (পৃঃ ৩৬৪)
যিস্কের মতে – “এটা যৌক্তিকভাবে ধরে নেওয়া যায় গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কালে (৪র্থ থেকে ৭ম শতাব্দী) আয়ুর্বেদের ব্রাহ্মণীকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই সময়কালেই ঝক, সাম, যজুর –এর সাথে অথর্ববেদ-কে প্রথম পবিত্র বেদ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এই সময়কালেই প্রাধান্যকারী পুরাণগুলো রচিত হয়।” এবং “The conversion of this medical lore into the orthodox Hindu tradition of ayurveda, as expounded in the two classical compendia of Caraka and Susruta, required another step. This involved the transformation of a largely heterodox repository of medical knowledge into an orthodox brahmanic science by the application of a Hindu veneer which used a Hindu mythological structure to sanction this new source of useful knowledge. The completion of this process marks the beginning of the “classical” phase of Indian medical history.” (“Mythology and the brahminization of Indian medicine: transforming heterodoxy into orthodoxy”) অর্থাৎ, ‘ক্লাসিকাল’ পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো মুক্তমনা আয়ুর্বেদকে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবাধীন হিন্দু পৌরাণিকতার সঙ্গে যুক্ত করে গোঁড়া এবং পরিবর্তনহীন একটি জ্ঞানশাস্ত্রে রূপান্তরিত করার মধ্যে।
বাস্তবে আয়ুর্বেদের সেক্যুলার চরিত্রের ওপরে আরেকটি স্তর যুক্ত হল – গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদের স্তর। এখানেই আয়ুর্বেদের প্রধান সংকট এবং পরবর্তীতে শরীরের কাটাছেঁড়া ক্রমাগত আয়ুর্বেদের মূল চরিত্র ও কাঠামো থেকে দূরে আরও দূরে সরে গেছে। অবশেষে মুছে গেছে। সামাজিকভাবে কিছু নীচুতলার মানুষের বা গোষ্ঠীর মাঝে বংশ পরম্পরাগত craft হিসেবে রয়ে গেছে। যিস্ক মনে করিয়ে দেন যে শবব্যবচ্ছেদ কোন সময়েই গৃহীত পদ্ধতি ছিলনা কারণ শবব্যবচ্ছেদ করতে গেলে চিকিৎসক এবং ছাত্রদের অতি অপবিত্র এবং নোংরা বস্তুর সংস্পর্শে আসতে হবে যা ব্রাহ্মণ্যবাদ অনুমোদিত নয়। ফলে, তাঁর ধারণা অনুযায়ী, ব্রাহ্মণ্যবাদের পরিবেশে আয়ুর্বেদের জ্ঞানের এবং কৃৎ-কৌশলের পূর্ণ বিকাশ ঘটেনি। তিনি বৌদ্ধদের সার্বিক চিকিৎসার জ্ঞান ও ধরণের থেকে আহরণের কথা বলেছেন – “The technique of dissection described in the medical treatise of Suśruta was likely incorporated into the larger body of medical teachings before the text crystallized into its its extant form and probably occurred before the addition of the Hindu veneer.” (Kenneth Zysk, Asceticism and Healing in Ancient India: Medicine in the Buddhist Monastery, Motilal Banarsidass, 200, পৃঃ ৩৭)
কিন্তু এসব সত্ত্বেও আয়ুর্বেদে যে যুগান্তকারী রূপান্তর ঘটেছিল তা হল, অথর্ববেদ পর্যন্ত রোগের উৎপত্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হত দেহের বাইরের অতিজাগতিক শক্তিকে। আয়ুর্বেদে ত্রি-দোষ তত্ত্বের সাহায্যে রোগের অবস্থান চিহ্নিত এবং প্রতিষ্ঠিত হল দেহের অভ্যন্তরের ক্রিয়াকর্মের বৈকল্যের মধ্যে। এটা একটা “paradigm shift” – টমাস কুনের বিখ্যাত তত্ত্ব অনুযায়ী – বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রবল প্রভাব এবং পৌরাণিক উপাদানকে আয়ুর্বেদের মূল কাঠামোর মধ্যে অন্তর্নিবিষ্ট করার পরেও মুক্ত চিন্তার অধিকারী ‘বিদ্রোহী’ চিকিৎসককুল এ অসম্ভব কাজটি সমাধা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেবীপ্রসাদের বক্তব্য – “Apparently there were among physicians also conscientious scientists protesting against the intrusion of these into their science.” (পৃঃ ৩৬৪)
সুশ্রুত-সংহিতার অবস্থান
আণ্ণা মোরেশ্বর কুন্তে গ্র্যান্ট মেডিক্যাল কলেজ-এর অ্যানাটমির ডেমনস্ট্রেটর ছিলেন। একাধারে আয়ুর্বেদজ্ঞও বটে। ১৮৮০ সালে প্রকাশিত হল তাঁর Astanagahridayam. A Compendium of the Hindu System of Medicine Composed by Vāgbhaṭa. Withe the Commentary of Aruṇadatta, Vol. 1.
এ গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে ঋক সংহিতা তথা ঋগবেদ-এর সময় অত্যন্ত মনোযোগী, বুদ্ধিদীপ্ত এবং চিন্তাশীল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে ভেষজ জ্ঞান গড়ে উঠেছে। তিনি দেখিয়েছেন, ঋক সংহিতা-য় ১০০ এবং ১০০০ বিভিন্ন ওষুধ (ভেশজ)-এর উল্লেখ রয়েছে। (পৃঃ ৭) এমনকি নিজেদের অভিজ্ঞতা–লব্ধ জ্ঞান (empirical/experiential knowledge) থেকে cryptogamous (পুষ্প ও বিজহীন) এবং phanerogamous (পুষ্প ও বীজ বহনকারী) গাছের মধ্যে পার্থক্য করতে পারতেন চিকিৎসকেরা। আজ থেকে প্রায় ৩০০০-৩৫০০ বছর আগে এই বিভাজন বুঝতে পারাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে।
এই জ্ঞানেরই ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়েছে বৃহৎ-ত্রয়ীর তিনটি ক্লাসিকাল টেক্সট চরক, সুশ্রুত এবং বাগভটের রচনায়। উদাহরণ হিসেবে, সুশ্রুত-সংহিতা-য় পরিষ্কারভাবে বলা আছে – “উদ্ভিদদের চেনা যাবে রাখাল, সন্ন্যাসী, শিকারী এবং অন্যান্যদের অনুসরণ করে যারা জঙ্গলে চারণ করে ও গাছের শেকরকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।” (সূত্রস্থান, ৩৬.১০)
সুশ্রুত-সংহিতা-র শুরুতেই বলা হচ্ছে – “শল্যতন্ত্র – বিবিধ তৃণ, কাষ্ঠ, পাষাণ, ধূলি, অস্থি, কেশ, নখ প্রভৃতি শরীরে প্রবিষ্ট হল তা বের করার জন্য, পূষশ্রাব (পুঁজ বের করে দেওয়া) করার জন্য এবং গর্ভশল্য (অস্বাভাবিকভাবে তৈরি ভ্রুণ) সমাধা করার জন্য যেসব উপায়সমূহ প্রয়োজনীয়, সেসব এ শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। এবং এ শাস্ত্রে যন্ত্র, শস্ত্র, ক্ষার ও অগ্নির প্রয়োগ এবং ব্রণসমূহের বিবরণ বলা আছে। (ধারবিশিষ্ট যন্ত্রের নাম শস্ত্র, অন্য ধরনের শল্যের উপযোগী ভোঁতা বস্তুকে সাধারণত যন্ত্র বলে। ব্রণ শব্দের অর্থ ঘা। এগুলোর মধ্যে আঘাতজনিত ঘা-কে সদ্যোরণ বলে)। (সূত্রস্থান, ১.৪, পরবর্তীতে শুধু সূ বলা হবে)
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে শল্য কি? শল্যতন্ত্রই বা কি বোঝায়? আমরা প্রবন্ধের শুরুতে দেখেছি আর্য্যদের যুদ্ধবিগ্রহের সময় আঘাতজনিত কষ্টের উপশমের জন্য শল্যবিদের এবং চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল। জি ডি সিঙ্ঘল তাঁর ১০ খণ্ডের গ্রন্থ Ancient Surgery Baseed on Sushruta Saṃhita-য় শল্যতন্ত্র এবং শল্যের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে – “Śalyatantra: (a) That science in which ‘Śala’ (surgical instruments) are used, (Amar Koṣa II, 5.7), (b) That science which mainly deals with the surgical removal of ‘Śalya’ (substances which penetrate the body easily, are injurious and produce pain). Both words ‘Śala’ and ‘Śalya’ have been derived from the verbal root meaning ‘Śal’’ meaning: (i) to enter easily, (ii) to cause injury, and (iii) to cause pain.” (Vol 1, p. 17)
তাহলে উনবিংশ শতাব্দী থেকে ‘নব্য-আয়ুর্বেদ’-এর ব্যাখ্যায় শল্যতন্ত্র এবং আধুনিক সার্জারিকে যেভাবে সমার্থক করে তোলা হয়েছে বিষয়টি সেরকম নয়। আদিতে শল্যতন্ত্র মানে মূলত শল্য বের করার পদ্ধতি বা আর্ট হিসেবেই দেখা হত। পরবর্তীতে সুশ্রুতের হাতে এর অনেক বিস্তার হয়। নতুন নতুন জ্ঞানের ভাণ্ডার উন্মোচিত হয়। বহু শাকাহ্য বিকশিত হয়।
সম্ভবত এসব কারণে স্কলার এবং পণ্ডিত হেনরি জিমার সুশ্রুতের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবে – “Associated primarily with warfare, surgery for a long while remained a special branch, distinct from the civil science of longevity. It needed a particular effort, a stroke of genius, to break down the barriers of traditional specialization, and to merge surgery with the science of macrobiotics (a philosophically oriented program incorporating elements from several ancient cultures and emphasizing harmony with nature, especially through adherence to a diet consisting primarily of whole grains, beans, vegetables, and … fruit). This step is accomplished through the work Suśruta.” (Hindu Medicine, Johns Hopkins University Press, 1948, p. 56)
(সুশ্রুত-সংহিতা-র তালপাতার পাণ্ডুলিপির একটি পাতা)
সূত্রস্থানের শুরুর দিকেই এ গ্রন্থের গুরুত্ব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে – “শল্যতন্ত্র আয়ুর্বেদের প্রথম অঙ্গ, কেননা জ্বর ইত্যাদি শারীররোগ উৎপন্ন হবার আগে আঘাতের কারণে ব্রণসমূহ উৎপন্ন হত এবং এই তন্ত্রের উপদেশ অনুযায়ী সেসব ব্রণের পূরণ করা হত।” (সূ, ১.১৪)
“অভিমত এরকম যে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদের মতে শল্যতন্ত্রই অধিক গুরুত্বসম্পন্ন, কেননা এর সাহায্যে যন্ত্র, শত্র, ক্ষার ও অগ্নি প্রয়োগ করা যায় বলে দ্রুত ক্রিয়া হয় অথচ সর্ব তন্ত্রের সাথে এর সমানতা আছে (অর্থাৎ অন্যান্য তন্ত্রে যে সকল রোগের চিকিৎসা আছে, সে সকল রোগ এ তন্ত্রের সাহায্যেও অনেক সময় নিবারণ করা যায়)। এই তন্ত্র নিত্য, পুণ্যকারক, স্বর্গলাভের উপায়, যশ লাভের উপায়, আয়ু বৃদ্ধিকারক এবং অর্থোপার্জনের উপায়।” (সূ, ১.১৫) এখানে নজর করার বিষয় হল, শল্যতন্ত্রের শিক্ষা এবং শল্য চিকিৎসা কেবলমাত্র রোগ নিরাময়ের হাতিয়ার ছিলনা, খ্যাতিলাভ এবং অর্থাগমের একটি উপায়ও ছিল।
আমরা প্রাচীন গ্রিসের সঙ্গে এক্ষেত্রে আমরা সুশ্রুতের সাযুজ্য দেখতে পাব। গ্রিক-মেডিসিন বিশেষজ্ঞ লুডভিগ এডেলস্টাইন বলছেন – “The physician’s fee is, therefore, a worry for the patient, because he may leave if he does not receive sufficient remuneration. The physician should learn not to charge very much when the patient is unable to pay; he should see his reward in his patient’s gratitude and in the reputation he gains for also treating the poor.” (Ancient Medicine: Selected Papers of Ludwig Edelstein, ed. Owsei Temkin and C. Lilian Temkin, Johns Hopkins University Press, 1994, p. 90) প্রাচীন গ্রিসেও দেখতে পাচ্ছি, চিকিৎসা পেশা হিসেবে অর্থাগম এবং খ্যাতির সমার্থক হয়েছিল।
সূত্রস্থানেও সমধর্মী কথা রয়েছে – “দ্বিজ, গুরু, দরিদ্র, মিত্র, প্রব্রজিত, শরণাগত, সাধু, অনাথ ও আগন্তুকদের নিজের জ্ঞাতি-কুটুম্বের মতো মনে করে নিজের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করবে, এতে মঙ্গল হয়ে থাকে। ব্যাধ, শাকুনিক, পতিত ও পাপকারীদের চিকিৎসা করবেনা। এভাবে আচরণ করলে বিদ্যা প্রকাশিত হয় এবং মিত্র, যশ, ধর্ম, অর্থ ও কাম লব্ধ হয়।” (সূ, ২.৫) আরেকটি স্থানে আয়ুর্বেদের সাধারণ ধারণার সাথে খাপ খায় না এমন একটি শ্লোক রয়েছে – “কেউ কেউ বলেন যে, কুলগুণসম্পন্ন শূদ্রকেও মন্ত্রভাগের অংশ বাদ দিয়ে দীক্ষিত করা যায়।” (সূ, ২.৩)
এ অংশটিকে কি ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে নিরুচ্চার এবং নিরন্তর সংঘাতে লিপ্ত চিকিৎসাবিদ্যার ‘সেক্যুলার’ চরিত্রের একটি প্রকাশ বলে মনে করতে পারি? সম্ভাবনা সে কথাই বলে।
পরীক্ষার জন্য শবদেহ প্রস্তুত
সুশ্রুত সংহিতা-য় আধুনিক অর্থে ডিসেকশন-এর বর্ণনায় যে বিষয়টি এতদিন বিশেষভাবে প্রচারিত এবং প্রচলিত ধারণা হিসেবে গৃহীত হয়েছে সে বিষয়টি আরেকটু মূল থেকে বোঝা যাক। মোট ১২০টি অধ্যায় রয়েছে সুশ্রুত সংহিতা-য়। এর মধ্যে শারীরস্থানম্-এর (৩য় বিভাগ) ৫ম অধ্যায়ের ৪৬ নম্বর থেকে ৫০ নম্বর শ্লোকে রয়েছে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শবদেহ প্রস্তুত করার বর্ণনা। সুবিশাল সুশ্রুত সংহিতা-র এক অতি ক্ষুদ্রাংশ বরাদ্দ হয়েছে তথাকথিত ‘ডিসেকশন’-এর জন্য। এমনকি কেউ যদি এ অংশটুকুকে সংহিতা-র মধ্যে প্রক্ষিপ্ত অংশ হিসেবে জ্ঞান করে তাহলে তাকেও খুব দোষ দেওয়া যায়না। কিন্তু মিউলেনবেল্ড, পি ভি শর্মা, জি ডি সিঙ্ঘল, আচার্য যাদবজি ত্রিকমজি-র মতো পণ্ডিতেরা যখন একে প্রক্ষিপ্ত বলেননি তখন একে সংহিতা-র অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
কি বলা আছে এই ৫টি অনুচ্ছেদে? মিউলেনবেল্ড বলছেন – “The description of the whole body, given in this chapter, is a characteristic element of the surgical science, not found in other divisions (of āyurveda).” (5.46)
এ বর্ণনার শুরুতে বলা আছে – “ত্বক পর্যন্ত যে সকল বিষয় এতক্ষণ আলোচিত হল, শল্যশাস্ত্রের জ্ঞান না থাকলে তাদের মধ্যে কোন অঙ্গই বর্ণনা করা যায়না। আর যদি শল্যহর্তা সে সব অঙ্গের নিঃসংশয় জ্ঞান লাভ করতে ইচ্ছুক হন তাহলে মৃতদেহ শোধন করে সে সব অঙ্গ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করবেন। প্রত্যক্ষদৃষ্ট এবং শাস্ত্রদৃষ্ট উভয় হলে সমাসতঃ অতিশয় জ্ঞান বৃদ্ধিকারী হয়।” (৫.৪৭-৪৮)
“পরীক্ষার জন্য গৃহীত শবদেহ যেন সম্পূর্ণ-গাত্র (অর্থাৎ কোথাও কোন কাটা-ছেঁড়া না থাকে) হয়। যেন কোন বিষ প্রয়োগে ব্যক্তির মৃত্যু না হয়। যেন দীর্ঘকাল ব্যাধি-পীড়িত না হয়ে থাকে, যেন শতবর্ষবয়স্ক (অর্থাৎ অতিবৃদ্ধ) ব্যক্তির মৃতদেহ না হয়। এ শবদেহের অভ্যন্তরের অন্ত্র এবং পুরীষ নিষ্কাসিত করতে হবে। এরকম দেহ মুঞ্জ ঘাস (Saccharum munja), গাছের ছাল, কুশ বা শন (hemp) ইত্যাদি দিয়ে ভালোভাবে আবৃত করে একটি খাঁচার (সম্ভবত বাশের) মধ্যে রেখে স্রোতস্বতীর প্রবাহী জলে লোকচক্ষুর আড়ালে অন্ধকার স্থানে রেখে দিতে হবে। সাত দিন পরে যখন দেহটি সম্পূর্ণভাবে পচে যাবে তখন দেহটিকে উশীর ঘাস (Vetiveria zizanioides), জন্তুর লোম, বাঁশ, বল্বজ ঘাস (Eleusine indica) কিংবা অন্য কোন বস্তু দ্বারা তৈরি ব্রাশ (শ্লোকে কূর্চ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে) দিয়ে আস্তে ঘর্ষণ করে (অবঘর্ষণ) আগে উল্লেখিত ত্বক ইত্যাদি সবরকমের অঙ্গ বাহ্য ও আভ্যন্তর চক্ষু দিয়ে পৃথক পৃথক দর্শন করবে।” (৫.৪৯)
“আত্মন (বিভু) অত্যন্ত সূক্ষ্ম হবার জন্য সাধারণ চোখে দেখা বা বোঝা যায়না। কিন্তু কেবলমাত্র জ্ঞানচক্ষু এবং তপসচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব।” (৫.৫০) মনোযোগী পাঠক নজর করবেন, এ শ্লোকটির আগে পর্যন্ত দেহ-কেন্দ্রিক যে আলোচনা হয়েছে সে আলোচনা এ শ্লোকে এসে পরিবর্তিত হয়ে গেল জ্ঞানচক্ষু এবং তপসচক্ষু-র প্রপ্সঙ্গে। ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবে কি? আরও একটি বিষয়ও নজর করার মতো। ৪৭-৪৮ নম্বর শ্লোকে ব্যবহৃত শল্যহর্তা-র (সংস্কৃতে শল্যহর্তর শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে) লাগসই ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই বলে মিউলেনবেল্ডের মতো বিশেষজ্ঞ নির্ভুল পণ্ডিতও বন্ধনীর মধ্যে শল্যহর্তর শব্দটি রেখে প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সার্জন’ ব্যববহার করতে বাধ্য হয়েছেন।
এখানে লক্ষ্যণীয় –
(১) এই সমগ্র পদ্ধতিকে দেখা যায় পৃথিবীর প্রথম উদাহরণ হিসেবে যেখানে ‘অ্যানাটমি’র জ্ঞান আহরণের জন্য শবব্যবচ্ছেদ করা হয়নি, ধাপে ধাপে মৃতদেহের উন্মোচন করা হয়েছে। এবং যেখানে ছুরির কোন ব্যবহার নেই। একজন স্কলারের পর্যবেক্ষণ – “The anatomical of Ayurveda is rich, but the notions covered by them are fairly rudimentary, especially as regards visceral anatomy.” (Guy Mazars, A Concise Introduction to Indian Medicine, Motilal Banarsidass, 2006, p. 29) তিনি বলেছেন, ইউরোপে ১৯শ শতাব্দীতে চালু hydrotomie পদ্ধতির সাথে এ পদ্ধতির সাযুজ্য দেখা যায়।
(২) এভাবে অবঘর্ষণ পদ্ধতিতে যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চাক্ষুষ করা হবে সেগুলো সবই উপরি তলের। কোন vasculature, nerve কিংবা আভ্যন্তরীন অঙ্গসংস্থাপন বোঝা সম্ভব নয়। বিভিন্ন লিগানেন্ট, টেন্ডন এবং অস্থি তথা হাড়ের পর্যবেক্ষণ সম্ভব। এজন্য সুশ্রুত সংহিতা-য় দেহের অভ্যন্তর বা তৃতীয় পরিসর (3rd dimension) সম্পর্কে কোন আলোচনা নেই। যেটুকু আলোচনা রয়েছে সেসবই স্পেক্যুলেটিভ বা অনুমান-নির্ভর।
এর একটি উদাহরণ দেওয়া যায় সুশ্রুত সংহিতা-র ষষ্ঠ অধ্যায় উত্তরতন্ত্রে (শালক্যতন্ত্রের সাপ্লিমেন্টারি অধায় হিসেবে) চক্ষুরোগ নিয়ে সুবিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। ৭৬ রকমের চক্ষুরোগের বর্ণনা এবং চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এমনকি বাইরে থেকে যতটুকু দেখা যায় চোখের ততটুকু অ্যানাটমি কুশলতার সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু চোখের আভ্যন্তরীন গঠন সম্পর্কে যেহেতু শবব্যবচ্ছেদের অবধর্ষণ পদ্ধতিতে জ্ঞান লাভ করা যায়না সেজন্য যা বলা আছে তা ভাসাভাসা এবং স্পেক্যুলেটিভ। একথা একাধারে আধুনিক মেডিসিনের এমডি, এফআরসিপি এবং আয়ুর্বেদজ্ঞ কুটুম্বিয়া তাঁর পুস্তকে নির্দিষ্টভাবে আলোচনা করেছেন “Subtle Anatomy of the Eye” উপ-শিরোনামে। তাঁর ব্যাখায় – “বিশ্ব যে ৫টি উপাদান দিয়ে তৈরি সে ৫টি উপাদান নিয়ে চোখ গঠিত হয়েছে। চোখের মাংসপেশি তৈরি হয়েছে “the lements of earth” দিয়ে, রক্ত অগ্নি দিয়ে। বায়ু চোখের কালো অংশ তৈরি করেছে, জল তৈরি করেছে সাদা অংশ এবং আকাশ তৈরি করেছে ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিসমূহ যার সাহায্যে চোখের জল নির্গত হয়।” (P. Kutumbiah, Ancient Indian Medicine, Orient Longmans, 1962, পৃঃ ১৭২)
কিন্তু আধুনিক আয়ুর্বেদের হাতে পড়ে সুশ্রুত সংহিতা-য় অচেনা চোখের অ্যানাটমি রূপান্তরিত হয়ে গেল আধুনিক অ্যানাটমির আলোকে। এমনকি চোখের মধ্যে আলোর প্রতিসরণও যেন আয়ুর্বেদে আলোচিত হয়েছে এমন ধারণা দেওয়া হতে থাকল।
(৩) তাহলে বিপুল সংখ্যক শল্য পদ্ধতি তথা সার্জারির বর্ণনা সুশ্রুত সংহিতা-য় রয়েছে সেটা কিভাবে সম্ভব হল? কুটুম্বিয়া এর সম্ভাব্য একটি ব্যখ্যা দিয়েছেন – “The Indian surgeons surmounted the absence of such precise knowledge of anatomy by the concept of marmas, which supplied them with the regional anatomy so crucial for any intelligent surgery.” (Kutumbiah, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৪৬)
মর্ম বা মর্মন সম্পর্কে ফিলিওজাত বলছেন – “The Ayurvedic texts have an extremely detailed catalogue
of the marmans and they are, in general, quite easily identifiable, thanks to the precisions that are furnished. They are most often the big vasculo-nervous packets or the tendons and the important nervous trunks. Because of haemorrhages which they determine or the paralyses or functional impotences they bring in, the wounds thereof are extremely serious.” (J. Filliozat, The Classical Doctrines of Indian Medicine: Its Origins and Its Greek Parallels, Munshiram Manoharlal, 1964, পৃঃ ১৬৪)
তিনি আরও বলছেন – “the anatomy of the (Classical texts of medicine is, in so far as the notions on the various canals and vessels of the body are concerned, a direct descendant of the Veda. It is equally from a Vedic conception in preserving the corresponding Vedic name that classical medicine has elaborated one of its most characteristic notions <of anatomy, that of the vulnerable points or marman.” (প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৬৩)
সুশ্রুত সংহিতা-র ৩য় অংশ শারীরস্থান-এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে মর্ম নিয়ে সুবিস্তৃত আলোচনা রয়েছে। সে আলোচনা এ প্রবন্ধের পরিসরের বাইরে। শুধু এটুকু বলা যায়, ১০৭টি মর্ম-র কথা বলা হয়েছে এবং এদেরকে ৫টি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে – (ক) মাংস-মর্ম, (খ) শিরা-মর্ম, (গ) স্নায়ু-মর্ম, (ঘ) অস্থি-মর্ম, এবং (ঙ) সন্ধি-মর্ম। মর্ম সম্পর্কে পি ভি শর্মা বলছেন – “Marmans (vital spots) consist of the aggregate of muscle, blood vessles, ligaments, bone and joint in which particularly prāṇas, by nature, stay, that is why injury to marmans leads to respective consequences.” (P. V. Sharma, Suśruta-Saṃhitā: With English translation of text and Dalhana’s commentary along with critical notes, Chaukhamba Visvabharati, 2005, Vol. 2, p. 188)
বাইরে থেকে বা শল্যচিকিৎসার সময় মর্মের আঘাতজনিত কারণে কি ধরনের এবং কি গভীরতার ক্ষতি হতে পারে তার ওপরে ভিত্তি করে এদেরকে আবার ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে – (১) সাধ্য-প্রাণহর – ৭ দিনের মধ্যে প্রাণনাশক, (২) কালান্তর-প্রাণহর – ১৪ বা ৩০ দিনের মধ্যে প্রাণনাশক, (৩) বিশল্যঘ্ন – যদি শরীরে বিদ্ধ কোন শলাকা বা অন্য বিপর্যয়কারী বস্তু বের করা হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ প্রাণনাশক, (৪) বৈকলকর – যার ফলে খোঁড়া বা পঙ্গু হয়ে যায়, এবং (৫) রুজাকর – যা অসম্ভব যন্ত্রণদায়ক। (শা, ৬.১৬-২১)
শেষ কথা
দু’জন রাশিয়ান স্কলার শবদেহ প্রস্তুত এবং সুশ্রুতের ‘সার্জারি’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিন্ন পর্যবেক্ষণ রেখেছেন যেগুলো এ সংক্রান্ত আলোচনাকে সমৃদ্ধ করেছে। শারীরস্থানে রয়েছে –
tasmānniḥsaṃśayaṃ jñānaṃ hartrā śalyasya vāñchatā // śodhayitvā mṛtaṃ samyagdraṣṭavyohańga viniścayaḥ // (47) pratyakṣato hi yadṛṣṭaṃ śāstradṛṣṭaṃ ca yadbhavet // samāsatastadubhayaṃ bhūyo jñānavivardhanam // (5.48)
তাঁরা এর অনুবাদ করেছেন – “Therefore, anyone who strives after acquiring a safe knowledge of śalya, must prepare a dead body, and examine its parts in the right way.” (I. Fiser and G. Fiserova, “Dissection in Ancient India”, in History and Culture of Ancient India (For the XXVI International Congress of Orientalists), ed. W. Ruben, V. Struve and G. Bongard-Levin, Moscow: Oriental Literature Publishing House, pp. 306-328. Quotation on p. 313) এঁদের ব্যাখ্যায় শল্য-কে অ্যানাটমির সাথে সংযুক্ত করার বদলে সার্জারির পরিপ্রেক্ষিতে দেখা সমীচীন।
রুডলফ হর্নলে (A. F. Rudolf Hoernle, Studies in the Medicine of Ancient India, 1907) তাঁর গ্রন্থে Bodleian MS., No. 739 এবং India Office MS., No. 1842-এর দুটি পাঠে পাঠান্তর (varia lectio) দেখিয়েছেন। প্রথমটিতে রয়েছে icchatā śalya- jīvinā এবং দ্বিতীয়টিতে śalyasya vāñchatā (প্রাগুক্ত, পৃঃ ২২৫-২২৬) ফিসের এবং ফিসেরোভা দেখাচ্ছেন, icchatā śalya- jīvinā পরিষ্কারভাবে দেখায় যে যাদের জীবিকা নির্বাহ হয় শল্যচিকিৎসা তথা সার্জারির মধ্য দিয়ে।
এ ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করলে বোঝা যায় প্রাথমিক স্তরের অঙ্গসংস্থানগত জ্ঞান এবং ছুরিবিহীন শবদেহ প্রস্তুত করা ছাড়াও একদিকে দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান এবং অন্যদিকে, মর্ম-র ধারণাকে আত্মস্থ করে উল্লেখযোগ্য সার্জারি করা সম্ভব ছিল সে যুগের শল্যহর্তাদের পক্ষে। ১৯৬৪ সালেই ফিলিওজাত আয়ুর্বেদ নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন – “Ayurveda need neither be exalted beyond measure nor condemned either for its antiquity or for the failure of those who practise it without prudence. It should be studied as an original system of science and as an exceptional source of medical experience.” (Filliozat, The Classical Doctrines, পৃঃ xv)
আজ আয়ুর্বেদ নিয়ে বাড়াবড়ির যুগে এ সতর্কবাণী স্মরণে রাখা ভালো।
A wonderfully balanced article. Can you guide me, if similar evaluations are on for other parallel medicine systems, from E.g., China or Islamic? Would love to learn
গুরুত্বপূর্ণ লেখা।অতীত সম্বন্ধে হিন্দুত্ববাদীদের
অতিকথা আর উপনিবেশিত মনের অতীত সম্পর্কে তাচ্ছিল্য, এই দুই অবস্থান থেকে যুক্তিপূর্ণ দূরত্ব বজায় রেখে লেখক প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রকৃত অবস্থান
নির্ণয় করেছেন।
অসাধারণ গবেষণা মূলক প্রবন্ধ
খুব মূল্যবান লেখা। একটা বিতর্ক তোলা হয় যে, সুশ্রুত সংহিতায় শব ব্যবচ্ছেদের কথা বলা ছিল। তাই মধুসূদন গুপ্ত প্রথম ভারতে শব ব্যবচ্ছেদ করেন, এটা ভুল। ঔপনিবেশিক দৃষ্টিতে দেখা। আপনার লেখার সূত্র ধরে এই বিষয়টার ওপরে আলোকপাত করলে খুব উপকৃত হই
Oshadharo lekha,somriddho hobar motoi probondho ta.
Points:-
A very good article! But I am not very clear about the statement: Brahman offering food to a physician that would turn into blood and pus 🤔.Where does it come from? What is the logic?
Ayurveda is appreciated the oldest method or form of treatment. Ayurveda’s similarities with Islamic culture may be linked with introduction of unani medicine by Muslims about thousand years ago, which has actually come from Greek literature. Even though both unani and ayurveda draw parallel with their sources, as I understand. According to Ayurveda, it is necessary to keep the balance of Vata, Pitta, and Kapha in the body to be healthy. While ayurveda is primarily sourced from plants unani medicines are prepared from plants, animals and minerals. Ayurveda does have two branches of surgery, Shayla tantra and shakalya tantra, which are very specific limited to non complex ones, but unani on the other hand has very limited scope for surgery.
Surgery and Medicine(primarily allopathy)are inseparably conjoined today as essential parts of the art of heeling. This, however, does not in anyway put ayurveda or unani any lesser important pedestal.
Fabulous sir