গাড়ী ঘুরে আবার পিছন দিকে উঠে চলল। আস্তে আস্তে আকাশ ফরসা হয়ে এল। রাস্তায় এক দুজন করে লোক দেখতে পেলাম। বৃষ্টি নেই। সকালের মনোরম পরিবেশে গাড়ী ছুটছে। মাইলের পর মাইল পথ চলার পর একটা জায়গায় দেখি সামনের দিকে একটু নিচের দিকে রাস্তা নেমে যাচ্ছে, পাথুরে রাস্তা। নামার মুখেই ডান পাশে একটা ট্রাক দাড়িয়ে আছে, বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে। নিচের দিক থেকে একজন বয়স্ক মহিলা উঠে আসছিল। ড্রাইভার নিজেদের ভাষায় তাকে কিছু জিজ্ঞেস করল, উত্তরে মহিলা মাথা নেড়ে না জানাল। ড্রাইভার নেমে রাস্তা ধরে নেমে গেল। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে গাড়িতে বসল। এবার আর এক বিপদ, গাড়ী স্টার্ট নিচ্ছে না। ব্যাটারিতে একটু ঠোকাঠুকি করার পর স্টার্ট নিল। সেই লরির পাশ কাটিয়ে, প্রায় ধ্বসে পড়া রাস্তা দিয়ে গাড়ী নিয়ে এগিয়ে গেল। কয়েক মিনিট পর রংপো পৌঁছে গেলাম।
একটা মোড় ঘুরতেই সামনে তিস্তা নদী। নদীর পাড় ধরে চওড়া রাস্তা, NH 10. শিলিগুড়ি ৭৭ কিমি দূরে। কিন্তু সে রাস্তা বন্ধ। আমাদের গাড়ী বামদিকে সরু রাস্তা ধরে খাড়া পাহাড়ে উঠল। আবার পাহাড়ী পথে ঘুরে ঘুরে উঠেই চললাম। এই ড্রাইভার পুষ্পা মাঝে মাঝেই মোবাইলে কার সাথে কথা বলে চলেছে। রংপো থেকে ঘন্টা দেড়েক চলার পর উল্টো দিকের থেকে আসা একটি গাড়ী আমাদের গাড়ীর পিছনে দাঁড়াল। এবার পুষ্পার গাড়ী থেকে আমাদের মাল পত্র নতুন গাড়ীতে তুলে রওনা হলাম। এই নতুন ড্রাইভার জানাল সে ভোরে ঋষিখোলার দু কিমি দূরে গিয়ে পৌঁছেছিল। আমাদের এবার লাভা গরুবাথান হয়ে রাস্তা। মাঝে একটা রাস্তা গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়, তাই তার আসতে দেরী হল। আমাদের ফ্লাইট ধরতে একটার মধ্যে বাগডোগরা পৌঁছতে হবে জেনে ড্রাইভার জানাল, হয়ে যাবে।
সকলেই সকালে শুধু চা খেয়ে বেরিয়েছি। ড্রাইভারকে বললাম, লাভায় দাঁড়ান, ব্রেকফাস্ট করে নেব। ড্রাইভার বলল, আর একটু নিচের দিকে নেমে দাঁড়াব। লাভা লোলেগাঁও-এর নাম অনেক শুনেছি, এবার বিপদে পড়ে লাভা দেখা হল। প্রচুর মেঘ থাকায় রাস্তার পাশের পাহাড় প্রায় কিছুই দেখা হল না। প্রায় নটা নাগাদ, অনেক নিচে নেমে, রাস্তার পাশের একটা ছোট দোকানে দাঁড়ানো গেল। ওখানে সকলে ম্যাগী আর চা খেয়ে রওনা হলাম। এবার ক্রমশ নেমে চলা।
আধ ঘন্টার মধ্যে গরুবাথান চলে এলাম। তার কয়েক মাইল আগে থেকেই রাস্তার পাশে সুন্দর চা বাগান। অন্য সময় হলে নেমে ছবি তোলা হত। এখন আর সে কথা মনেই আসেনি। গরুবাথান বাজারের মধ্যে একটু জ্যামে পড়লাম। বাজার পেরিয়েই একেবারে সমতলে চলে এলাম। চওড়া সোজা রাস্তায় গাড়ী প্রচণ্ড জোরে ছুটল। রাস্তার বাম দিকে মাইলের পর মাইল চা বাগান। মাল বাজারের কাছে আর একটা বড় হাইওয়েতে পড়ে গাড়ী ডান দিকে চলল। একটু পরেই ওদলাবাড়ী। মাত্র আধ ঘন্টার মধ্যে সেবকে এসে গেলাম।
সেবক থেকে শিলিগুড়ি গাড়ী আস্তে চালাতে হয়। শিলিগুড়ি শহরে ঢোকার পর তো রাস্তার গাড়ীর জটলায় এগোনোই কঠিন। শিলিগুড়ি শহরে পৌঁছে ড্রাইভারকে বললাম, একটা রাস্তার পাশের হোটেলে খেয়ে নেব। একেবারে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট-এর দুশো গজ দূরে একটা হোটেলে ঢুকলাম। পাঁচ দিন পর মাছ ভাত খাওয়া হল। এখানে বলে রাখি; সিকিমের সব হোটেল বা হোম স্টেতে একই রকম খাওয়া। দুপুরে ডিম ভাত, রাত্রে মুরগীর মাংস দিয়ে রুটি বা ভাত। আলু ছাড়া আর কোন সবজী নেই।
এবারের অভিজ্ঞতায় দেখলাম, সিকিমের ড্রাইভার কিন্তু গুগলের দাদা। এদের নিজেদের মধ্যে এত ভাল যোগাযোগ থাকে যে সব খবর ওরা সবার আগে পায়। পাহাড়ে বেড়াতে গেলে একটু আধটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে। আর একেবারে গোড়ার কথা, বর্ষায় পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাববেনই না।
বর্ষায় পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাববেনই না।
খুব মূল্যবান পরামর্শ