তেত্রিশটা ঘুমের বড়ি জোগাড় করেছিলো মেয়েটা।গুনে গুনে , আঁধারের দিকে ঠেলা প্রতি সিঁড়ির কথা মনে করে রেখে।
পাঁচখানা সেই মেসোর জন্য,
যার ছোঁকছোঁকে আঙুলগুলো সাত বছরে বুঝিয়েছিলো গুরুজনদের দেখেও গা ঘিনঘিন করতে পারে।
মা’র কাছে বলে এক সপাটে চড় জোটা মনে আছে তার,
স্মৃতি আরও ভারাতুর ঠিক তার পরপর আঁচল আড়াল দেওয়া চাপাকান্নায়।
সাতটা ট্যাবলেট সেই ছেলেটার জন্য,
স্কুল থেকে বেরিয়ে যার চোখে চোখ রাখলেই,
অটোর চিৎকার বাসের হর্ন গিজগিজে ভিড়ের ব্যস্ততা হয়ে যেতো কুলুকুলু প্রবাহিনী শান্ত নির্জন যমুনার তীর,
সদ্য সিগারেট খাওয়া চোয়াড়ে মুখটার দিকে তাকালেই সে পরিষ্কার দেখতে পেতো মাথায় শিখীর পালক,
হাতে আড়বাঁশি , চোখে সর্বনাশের হাতছানি।
গর্ভিণী প্রেমিকাকে ফেলে রেখে নি-খোঁজে মিলিয়ে যেতে সেই কালো মানিকের সময় লাগেনি।
পরের দশটা বড়ি দশ দশ খানা না হওয়া সম্বন্ধের জন্য। সেজেগুজে নিজেকে মেলে ধরতে হতো ছ সাত জোড়া চোখের সামনে,
এসব পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন আসেনা।
কেউ রঙ, কেউ চুল দেখে নামঞ্জুর করেছিলো,
কারো তীক্ষ্ণ স্ক্রুটিনি ধরে ফেলেছিলো জাতিকার রাহু কেতু শুক্রের খুঁত,
এসব পেরিয়ে গিয়ে বাপ মোটরসাইকেল আর ফ্রীজ দিতে পারবেনা বলে ফিরে গিয়েছিলো বাকি কয়জন।
প্রতিবার ফেল হলে বাবার শুকনো মুখ, মায়ের দীর্ঘশ্বাস আর পড়শির ভুয়ো সান্ত্বনা দেখে,
আয়নাটা নিভৃতে ভেঙচি কেটে বলতো ‘ মরতে পারিস না হতভাগী?’
এগারো নম্বর পরীক্ষায় সফল হয়েছিলো সে।
ফলস্বরূপ প্রাপ্তি প্রবল প্রতাপময়ী শাশুড়ির নিঃশর্ত দাসীত্ব, সাথে গঞ্জনা আর না খেয়ে থাকা ফাউ।
রাত্তিরে বন্ধ দরজার আড়ালে বৈধ ধর্ষণে কখনো আপত্তি জানালে সোহাগের কালসিটে পড়ে যায় গাল আর পিঠে।
মেয়ে হওয়ার পরে, বেকার জরায়ু নিয়ে হতাশা গোপন রাখেনি কেউ,
কানাঘুষো শুনেছে সে, বিকল্প সন্ধান শুরু হয়ে গেছে। এগারোটা ট্যাবলেট সাজিয়ে ফেলেছে সে সিঁদুরের নামে।
তেত্রিশটা ঘুমের বড়ি জোগাড় করে ফেলেছে মেয়েটা।
একটা একটা করে হাতে নিয়েছে সে, টলটলে জলের গেলাসও তৈরি।
এইবার?
হঠাৎ পড়লো মনে সেই মেসোটাকে আর কোনোদিন ঘরে
আসতে দেয়নি মা,
চোর চোর মুখ করে পালিয়েছে বারবার বাধ্যবাধক কোনো সামাজিক সাক্ষাতে।
পাঁচখানা ট্যাবলেট ফেলে দিলো সে।
প্রাণের বন্ধু আর তার দিদি মিলে,
ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলো ভুল ভরসা করা থরথর কুমারীকে।
আজ অবধি সেখবর জানে দুইজনই।
বন্ধুতা অমলিন রয়ে গেছে এতগুলো বছর পেরিয়ে। প্রেমিকের মুখ আর মনেও পড়েনা।
সাত খানা ট্যাবলেট গেলো ডাস্টবিনে।
যারা তাকে মানুষ ভাবেনি,
নারীর বদলে শুধু চুল রঙ কোষ্ঠী বা বাইকের চাবি ভেবেছে, তাদের জিতিয়ে দেবে খামোখা ঘুমিয়ে?
অতএব ফেলা গেলো আরো দশখানা ।
হপ্তাখানেক আগে এন জি ও দিদিমনি কাজের খবর বলেছিলো।
কোন এক অরফ্যানেজে কেয়ারটেকার, নিচু ক্লাসে পড়াবেও নাকি।
বরকে বলেনি সে, মার কেউ যেচে খেতে চায়?
নম্বর সেভ করা আছে, আশা করি দিদি ধরবেন কাল সকালবেলায়।
‘মা, খিদে পেয়েছে!’
কচি মুখে ডাক শুনে সম্বিত ফেরে।
এখনো হয়নি শেষ, মেয়েকে সঙ্গে করে গল্প আমূল দেবে পাল্টিয়ে গোটা।
জঞ্জালে ঠাঁই পেলো বড়ি এগারোটা।