চাকরীর নিয়মে (সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়ম বেশি থাকলেও) সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে বদলি হয়ে বিদায় নিলাম গতকাল (২৩.১২.২২)। গন্তব্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ। আগেও সেখানে কাজ করেছি। কিছুটা হলেও তাই পরিচিত জায়গা।
মানুষের প্রয়োজনে সরকার, স্বাস্থ্য দপ্তর যেখানে কাজ করতে বলবে সেখানে কাজ করাটাই সরকারি কর্মীদের দস্তুর। অনিয়ম, বেনিয়ম, স্বজনপোষণ, প্রতিহিংসা, রুটিন …..এরকম নানা বিশেষণের “বদলি” তাই আমাদের চেনা শব্দ। চাকরি জীবনে ব্লক, জেলা ঘুরে বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে কাজ করেছি। কোথাও মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি। সব জায়গাতেই চেষ্টা করে গেছি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের এবং অবশ্যই সরকার বা রাজনীতির উর্ধে উঠেই। তবে সংবাদ মাধ্যমে শাসক দলের নেতারা বলেছে, সব জায়গায় নাক গলানোর জন্যেই নাকি এই কয়েকজনের বদলি। যার মধ্যে আমিও আছি। তবে মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনের সময় থেকেই সরকারপন্থীরা আমাদের বলে দিয়েছিল বাসস্থান পরিবর্তনের জন্যে প্রস্তুত হতে।
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিদায় দেওয়ার জন্যে প্রশাসনের তাড়াহুড়োয় একটু অসুবিধায় পড়েছিলাম। বদলির আদেশনামা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই খবর পৌঁছায় পরের দিন সকালেই রিলিজ নিতে হবে। কারণ নতুন কাজের জায়গায় আমাকে নাকি জরুরি দরকার। একটা দিনও অপেক্ষা করা যাবে না। ছুটিতে ছিলাম মালদায়। পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে। শ্যালিকার মেয়ের বিয়ে। প্রশাসনের নির্দেশে ছুটি ক্যানসেল করে, অনুষ্ঠানের মাঝপথেই তড়িঘড়ি ছুটে আসতে হয়েছে এবং বিদায়ের আদেশনামা নিতে হয়েছে। তবে কিছুটা হলেও আমি ভাগ্যবান। বাইরে ছিলাম বলে অন্তত দু চার দিন সময় পেয়েছি। এই অর্ডারেই বদলি হওয়া, কয়েকজন বন্ধুর সেই সৌভাগ্য অবশ্য হয়নি। তাঁদের বিদায় নোটিস নিতে হয়েছে পরের দিন সকালে অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে। সরকারি অফিসে কাজ হয় না অভিযোগকে তুড়ি মেরে হটিয়ে।
মন খারাপ হয়েছে বৈকি। বেশ কয়েকটা বছরের সম্পর্ক। মাটির তলা থেকে এই কলেজ গড়ে তুলতে কিছু অবদান আমারও আছে। সর্বোপরি ইন্টার্ন, হাউসস্টাফ, পিজিটি, বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক সহকর্মী, হাসপাতালের আপামর, সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভালোবাসা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, ছাত্রছাত্রীদের বন্ধুত্ব সহজে কি ছেড়ে আসা যায়? কামারহাটি এবং সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের সাথে গড়ে ওঠা আত্মিক সম্পর্কের জাল হঠাৎ ছিন্ন করাও মুশকিল। চারপাশের এই মানুষগুলোর এক সমুদ্র ভালোবাসা, উষ্ণতার বিপরীতে কি বা দিতে পারি সবাইকে, অন্তরের গভীর থেকে উঠে আসা ধন্যবাদ ছাড়া?
সবার জন্যেই রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা। চলার পথে আবারও নিশ্চয়ই দেখা হতে থাকবে।
অফুরান ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই তোমার পথচলা চিরকাল আমাদের প্রাণিত করে 🌹❤