নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর সম্পাদকীয়তে (“ডায়িং ইন এ লিডারশিপ ভ্যাক্যুয়াম” – ৮.১০.২০২০) বলা হল কোভিড-১৯ বিশ্ব জুড়ে সংকট তৈরি করেছে এবং এ সংকট দেশের নেতৃত্বকে বুঝে নেবার একটা পরীক্ষা। আমেরিকার নেতৃত্ব এ পরীক্ষায় পূর্ণত বিফল হয়েছে। ২০০,০০০-র উপরে মানুষের জীবনহানি হয়েছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, অসংখ্য বেকার তৈরি হয়েছে। “নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কেউ এরকম হঠকারীভাবে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে কিংবা টাকা তছনছ করলে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হত। এরপরেও আমাদের নেতৃত্ব তাদের কৃতকর্মের জন্য আমাদের কাছে অব্যাহতি দাবী করেছে। কিন্তু এই নির্বাচন আমাদের হাতে বিচারের ক্ষমতা দিয়েছে। যৌক্তিক মানুষেরা আমাদের প্রার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কখনো ‘লিবারাল’ বা ‘কনজারভেটিভ’ নয়। আমাদের জীবদ্দশার সবচেয়ে বড়ো জনস্বাস্থ্যের সংকটের প্রশ্ন যখন এসেছে তখন পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বিপজ্জনকভাবে অকর্মণ্য। আমরা এদেরকে আর উৎসাহ কিংবা সামর্থ্য জোগাতে পারিনা যাতে তারা আবার নেতা হিসেবে ফিরে আসে এবং হাজার হাজার আমেরিকানের মৃত্যু ঘটে। আমরা এদের আর ফেরার অনুমতি দিতে পারিনা।”
পৃথিবীর সর্বাধিক মান্য মেডিক্যাল জার্নালে (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭৪-এর বেশি) আমেরিকার নির্বাচনের প্রাক্কালে এরকম সম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে। দুটি ভাবনাপথ উন্মুক্ত হল – প্রথম, স্বাস্থ্য সংকটের সময়, যখন অসংখ্য মানুষের অসহায় মৃত্যু ঘটছে আমেরিকার মতো বিশ্বের কর্তা সবচেয়ে ধনী দেশে সেসময়ে দেশের নেতৃত্বের চূড়ান্ত অপদার্থতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা; দ্বিতীয়, নেতৃত্ব দেবার ক্ষেত্রে ভয়াবহ শূণ্যতা। ল্যান্সেট-এ “রোজা লুক্সেমবার্গ অ্যান্ড দ্য স্ট্রাগল ফর হেলথ” প্রবন্ধে (১২.০১.২০১৯) রিচার্ড হর্টন বলেছিলেন – “প্রাইভেট ইন্সিউরেন্সের ক্রমবিস্তার, আউটসোর্সিং ও পাব্লিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে কম অর্থ দেওয়া জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থাগুলোকে টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ফেলেছে।”
আপামর মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় সমধর্মী সংকটের মোকাবিলা হয়েছিল আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে পৃথিবীর একটি ভূখণ্ডে। কি সেই সময়? কি সেই ইতিহাস? সে ইতিহাস চেনার এক প্রচেষ্টা এই প্রবন্ধে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এই আরেকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল (৩০.০৯.২০২০) “রুথলেস হেলথ ল” শিরোনামে। আমেরিকায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর অংশের জন্য যে Affordable Care Act (ACA) রয়েছে সে আইন ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে রদ করার চেষ্টার বিরোধিতা করে – “যখন আমেরিকায় ৭০,০০,০০০-র বেশি মানুষ করোনা-আক্রান্ত এবং ২০০,০০০-র বেশি মানুষ মারা গেছে, সে সময় মানুষকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করা দেশের পক্ষে দুর্ভাগা এক সময়কে বোঝায়। এবং যে সময়ে সার্স-কোভ-২-এর আক্রমণে কালো ও অন্য বর্ণের মানুষ, জনজাতির মানুষ এবং শ্রেণী-নির্ভর অসাম্য নাটকীয়ভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে, এগুলো সংবাদপত্রের প্রথম পাতার খবর হচ্ছে সেরকম এক মুহূর্তে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এ সুযোগ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা দেশের পক্ষে সবচেয়ে কুৎসিৎ সময় – যা স্বাস্থ্যের অসাম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।”
অর্থাৎ, বিষয়টি চলে এলো রাষ্ট্রের তরফে সামাজিক অসাম্যের ক্ষেত্রে, বিশেষত স্বাস্থ্যের অসাম্যের ক্ষেত্রে, কি দৃষ্টিভঙ্গী নেওয়া হবে এবং রাষ্ট্রের পদক্ষেপ এই অসাম্যকে ত্বরান্বিত কিংবা উপশমিত করবে – এ প্রশ্নে।
সায়ান্স-এর মতো বিশ্ববন্দিত জার্নালে প্রকাশিত (১৫ মে, ২০২০) “অ্যান আনইক্যুয়াল ব্লো” প্রবন্ধে বলা হয়েছিল – “যে সমস্ত মানুষেরা সবচেয়ে বেশি রিস্ক বহন করে তারা প্রান্তিক – দরিদ্র এবং সংখ্যালঘু, যারা এমনভাবে সামাজিক বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছে যে তাদের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা স্বাস্থ্যের সুযোগ পাওয়া থেকে অনেক দূরে রয়ে গেছে অতিমারিকালের আগেও।”
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত হয়েছিল “ডেড ম্যান ওয়াকিং” (নভেম্বর ১৪, ২০১৩)। একজন দরিদ্র “কালো রোগীর” ইন্সিউরেন্স না থাকার জন্য তিলে তিলে অমোঘ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবার ভয়ঙ্কর অভিঘাত লেখকদের ভাষায় “শকড”, “স্যাডেনড”, “ডিসহার্টেনড” এরকম কোন শব্দবন্ধ দিয়েই প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছিলনা – “উই ওয়্যার সিমপ্লি অ্যাপালড।” কারণ? কোলনের ক্যান্সারে ভোগা এই হতভাগা দরিদ্র মানুষটির ইন্সিউরেন্স না থাকার জন্য জীবনের জমানো সমস্ত সঞ্চিত অর্থ (১০,০০০ ডলার) সিটি স্ক্যান করানোর মতো সাধারণ পরীক্ষানিরীক্ষায় ব্যয়িত হয়ে গেছে। লেখকদের শেষ কথা – “আমাদের কাছে ভয়াবহ এবং বেদনাদায়কভাবে নিষ্ঠুর মনে হয় যে মি. ডেভিস এবং তার মতো এই ধনী দেশের হাজারো হাজারো মানুষ মরে যাবে স্রেফ ইন্সিউরেন্স না থাকার জন্য।”
ঘটনাটি আমাদেরকে একাধিক কঠোর সত্যির সামনে দাঁড় করিয়ে দিল – (১) ইন্সিউরেন্স থাকা বা না থাকার ওপরে রোগীর বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়া নির্ভর করছে, এবং (২) যেহেতু রাষ্ট্র নাগরিকের স্বাস্থ্য এবং ইন্সিউরেন্সের দায়িত্ব নেয়না (বহুজাতিক ইন্সিউরেন্স হাঙ্গররা বসে আছে সেখানে) সেজন্য সার্বজনীন কোন ইন্সিউরেন্স নেই। ইন্সিউরেন্স হতদরিদ্রদের জন্য নয়।
করোনা অতিমারির সময়ে এই অসাম্য এবং এর ভয়াবহতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধে (“Structural Racism, Social Risk Factors, and Covid-19 – A Dangerous Convergence for Black Americans”, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০) – “বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক সম্পদের অভাব সমাজে গঠনগতভাবে রেসিজমকে রক্ষা করেছে। এবং এর ফলে বিভিন্ন সামাজিক রিস্ক যেমন খাদ্য, বাসস্থান ও সামাজিক সুরক্ষার অনিশ্চয়তা এবং ইন্সিউরেন্সের অভাব কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যের সুবিধে পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।”
অর্থাৎ, নির্জলাভাবে এটা সত্যি যে স্বাস্থ্য কেবলমাত্র একটি সংজ্ঞা নয়, এর সাথে যুক্ত হয়ে আছে রাষ্ট্রিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গীর প্রশ্ন। এখানে প্রশ্ন আসবে দেশের মানুষের বিষয়ে, রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্কের ব্যাপারে কি অবস্থান নেবে রাষ্ট্রের পরিচালক ও নীতি নির্ধারকেরা সে বিষয়ে।
একটি নতুন স্বাস্থ্যব্যস্থার অঙ্কুরোদ্গম – শতবর্ষ আগে
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসের চূড়ামণি জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেনরি সিজারিস্ট ১৯৩০-এর দশকে সদ্য গড়ে-ওঠা রাশিয়ায় গিয়েছিলেন, রুশ ভাষা শিখেছিলেন। নিবিড়ভাবে সোভিয়েত স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ফিরে এসে লিখলেন সোশ্যালাইজড মেডিসিন ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯৩৭)। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য – “পাঁচ হাজার বছর ধরে মেডিসিনের ইতিহাসের জগতে যা অর্জিত হয়েছে তাকে প্রথম যুগ বলা যায় – কিউরেটিভ (সারিয়ে তোলা) মেডিসিনের যুগ। এখন সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে – প্রিভেন্টিভ (প্রতিরোধী) মেডিসিনের যুগ।” (পৃঃ ১০৪) এই বইয়েই লিখলেন – “এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারেনা যে সোভিয়েত সিস্টেমের সামাজিক ইন্সিউরেন্স পুঁজিবাদী দেশের যেকোন ইন্সিউরেন্সের চেয়ে অকল্পনীয়ভাবে উৎকৃষ্ট।” লিখলেন – “এটা সম্পূর্ণত নতুন একটি মেডিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গী। এ দৃষ্টিভঙ্গীর উৎস হচ্ছে এক নতুন সামাজিক ব্যবস্থা। এ হল সোশ্যালিস্ট মেডিসিন … এর জন্য কোন জাতীয়বাদী কিংবা সাম্রাজ্যবাদী প্রোগ্রাম সফল করার তাগিদ নেই।” আরও জানালেন – “যে সব স্যানাটরিয়াম এবং হেলথ রিসর্টগুলো আগে কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন ধনীর সুযোগ হিসেবে ছিল সেগুলো সবকটাই সমস্ত মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।” এক অমোঘ সত্যি তিনি তুলে ধরেন – “কেবলমাত্র জনতার স্বাস্থ্য রাষ্ট্রের বিবেচনায় রাখা হয় এবং এটা বাহ্যত স্পষ্ট যে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোন স্বাস্থ্য পরিকল্পনাকে কার্যকরী করা সম্ভব নয় … সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর প্রথম দেশ যে মেডিসিনকে আক্ষরিক অর্থে সামাজিক চেহারা দিয়েছে, প্রথম দেশ যে জনতার স্বাস্থ্যকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে গ্রহণ করেছে।”
সিজারিস্টের বইয়ের ১০ বছর আগে প্রকাশিত আনা হেইনস-এর হেলথ ওয়ার্ক ইন সোভিয়েত রাশিয়া গ্রন্থে বলা হয়েছিল – “সোভিয়েত মেডিসিনের লক্ষ্য – যে কারণে এটা ফলপ্রসূ – এটা শুধু আরোগ্যের জন্য নয়, অসুখ প্রতিরোধের জন্য। সবার জন্য ইতিবাচক স্বাস্থ্যের জন্ম দেওয়া।” (পৃ; ২২) আরও জানালেন যে যক্ষ্মা-আক্রান্ত সমস্ত নারী-পুরুষ প্রাথমিকভাবে “রাত্রিকালীন স্যানাটরিয়াম”-এর স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাদের কাজের সময়ের বাইরে অন্য সময় কাটাতে পারে। এছাড়া রয়েছে “ফ্রি ডায়েট ডাইনিং রুম” যেখানে ডাক্তারেরা তাদের রোগীদের বৈজ্ঞানিকভাবে প্রস্তুত খাবারের জন্য পাঠাতে পারে। এসবের সম্মিলিত ফলে ১৯১৩-তে প্রতি ১০০ জনে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ২৭, ১৯২৩-এ তা হল ১৭। (পৃঃ ২)
রাশিয়ায় বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে আসার পরে প্রায় হুবহু একই কথা বললেন আরও দুই বিশেষজ্ঞ স্যার আর্থার নিউজহোম এবং জন অ্যাডামস কিংসবেরি তাঁদের রেড মেডিসিনঃ সোশ্যালাইজড হেলথ ইন সোভিয়েত রাশিয়া (১৯৩৮) গ্রন্থে – “বাস্তবিকই, সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীতে একটিমাত্র দেশ যে দেশের সীমান্তের মধ্যে বসবাসকারী প্রতিটি পুরুষ, নারী এবং শিশুর জন্য পরিপূর্ণ প্রিভেন্টিভ ও কিউরেটিভ মেডিসিনের সুযোগ পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং কার্যকরী করছে।” (পৃঃ vii)
আমি বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার শুধুমাত্র ১৯১৭ থেকে ১৯৩৭ সময়কালের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রটিতে সীমাবদ্ধ থাকবো। সিজারিস্ট তাঁর পূর্বোক্ত পুস্তকে রাশিয়ার চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে বলেছিলেন – “আমার মনে হয় নীচের ৪টি পয়েন্ট সোভিয়েত স্বাস্থ্যব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসূচক বিষয়গুলোকে পরিষ্কার করবেঃ (১) মেডিক্যাল সার্ভিসের জন্য কোন খরচ নেই, ফ্রি এবং সবার জন্য লভ্য, (২) সমস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব পায় প্রিভেনশন বা রোগ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা, (৩) সমস্ত স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করে কেন্দ্রীয় সংস্থা – পিপল’স কমিশারিয়েটস অফ হেলথ, (৪) স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয় অনেক বড়ো পরিধিতে ভাবা হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রের সার্বিক মঙ্গলের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা একান্ত আবশ্যিক।”
প্রাক-বিপ্লব (১৯১৭ পূর্ববর্তী) রাশিয়ার স্বাস্থ্যের চিত্র
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে (এখানে ইউরোপ ধরে নিতে হবে) ১৮৪৮-এর রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন (বিশেষ করে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে) স্বাস্থ্যের জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। নতুনভাবে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং আইন-কানুন, সোশ্যাল মেডিসিন এবং এপিডেমিওলজির মতো স্বাস্থ্যের নতুন শাখা তৈরি হল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল মেডিসিনের দর্শনের জগতে – নতুন করে বিশিষ্টতা পেলো প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বা আগাম রোগ-প্রতিরোধের বিষয়। টমাস কুনের অনুসরণে বলা যায় মানুষের গণ আন্দোলন এবং স্বাস্থ্যের দাবীতে সোচ্চার হওয়া মেডিসিনের দর্শন ও ভাবনার জগতে একটি “প্যারাডাইম শিফট” ঘটালো – বেড সাইড মেডিসিনকে অতিক্রম মেডিসিন এলো জনসমাজে এবং জনস্বাস্থ্য একটি আলাদাভাবে চিহ্নিত অবস্থান হল।
এগুলো যখন ইউরোপের অগ্রণী দেশগুলোতে চলছে তখন জারের রাশিয়ায় এর কোন প্রভাবই প্রায় পড়েনি। তা সত্ত্বেও কিছু কিছু পদক্ষেপ ওখানে নেওয়া হয়েছিল – যেমন, “মেডিক্যাল স্যানিটারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন” তৈরি হয়েছিল ১৮২০ সালে, স্মল পক্সের জন্য শিশুদের বাধ্যতামূলক টীকাকরণ চালু হয়েছিল ১৮৮৫ সালে, “রাশিয়ান ফার্মেসি সোসাইটি ফর মিউচ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স” জন্ম নিল ১৮৯৫ সালে। হাওয়ার্ড লিখটার জারের রাশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে “আতঙ্কজনক” বলেছেন। লিখটার তাঁর গ্রন্থ এ কম্প্যারেটিভ অ্যাপ্রোচ টু পলিসি অ্যনালিসিসঃ হেলথকেয়ার পলিসি ইন ফোর নেশনস (১৯৮০)-এ বলছেন – “রাশিয়ার এক সুবিশাল অংশে কোন ধরনের মেডিক্যাল ব্যবস্থাই চূড়ান্তভাবে অনুপস্থিত ছিল।” সেসময়ে রাশিয়ার মানুষদের চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল ৯১ কোপেক যা বর্তমান হিসেবে প্রায় ৯৫ পয়সা। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রতি ৫৬৬৫ জন মানুষের জন্য ১ জন ডাক্তার ছিল, এবং প্রতি ১০০০ জনের জন্য ১টি হাসপাতাল বেড ছিল। গ্রামাঞ্চলে ওষুধের দোকান প্রায় ছিলনা বললেই চলে। ১৯১৪ থেকে ১৯২০-র মধ্যে যে সমস্ত ডাক্তারদের জোর করে মিলিটারিতে নেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ১০,০০০ জন মারা যায়।
ভৌগলিকভাবে পৃথিবীর এক-ষষ্ঠাংশ (৮০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার) জুড়ে বিস্তৃত রাশিয়ার ভূখণ্ডে বাস করতো প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি মানুষ – ১২.৯% ভাগ মানুষ শহরাঞ্চলে, ৮৭% গ্রামাঞ্চলে। এদের সবার স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে বলশেভিক সরকার – সেসময়ের বিশ্বে (এখনও কি নয়?) যা অকল্পনীয়, অভাবিত এবং অভূতপূর্ব।
প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাতে মস্কোর জনসংখ্যা ১৫ লক্ষ থেকে কমে ৯০০,০০০ হয়ে যায়। পেত্রোগ্রাদে ২০ লক্ষ থেকে কমে ৬০০,০০০। ১৯১৩-র হিসেব বলছে নবজাত শিশুদের ৫০% অবৈধ এবং রাশিয়ার মানুষের সেসময়ে গড় আয়ুষ্কাল ছিল ৩২ বছর। সমগ্র রাশিয়া জুড়ে স্বাস্থ্যের প্রধান সমস্যা ছিল – যৌন রোগ, টাইফাস, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, চোখের রোগ ট্র্যাকোমা, প্লেগ, স্মল পক্স, কলেরা এবং ম্যালেরিয়া। ১৯১৩-র আরেকটি হিসেব বলছে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের ৪% মানুষ মদ্যপ ছিল। ১৯১৪ সালে সিফিলিস বা গনোরিয়ার মতো যৌন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫ লক্ষ। সেনাবাহিনীতে যারা কাজ করতো তাদের ১০% যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিল। ভ্লাদিমির রেশেৎনিকভ এবং অন্যান্যরা তাদের গবেষণাপত্র “দ্য হিস্টরি অফ পাব্লিক হেলথকেয়ার ইন রাশিয়া”-তে জানাচ্ছেন – “সমগ্র ইউরোপের মধ্যে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের স্যানিটারি অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপের মধ্যে একটি। ১৯০৭ থেকে ১৯১৭-র মধ্যে ১,০০০,০০০-এর বেশি মানুষ টাইফাস মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিল। ১৯১৫ সালে নথিভুক্ত মহামারিজনিত রোগীর সংখ্যা ৮০০,০০০। এর মধ্যে ১৭৮,০০০ জন টাইফয়েড এবং ৪৩,০০০ কলেরা রোগী। ১৯০৯-এ স্মল পক্সে মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২,০০০। সবমিলিয়ে মৃত্যুহার ছিল প্রতি হাজারে ২৫-৩০ জন। গড় আয়ুষ্কাল ছিল মোটামুটি ৪০ বছর। প্রতিবছর যে ৬০,০০,০০০ শিশু জন্মগ্রহণ করতো তাদের মধ্যে ২০,০০,০০০ মারা যেত বিভিন্ন অসুখে এবং অপুষ্টিতে। ১৯শ শতকের শেষে এবং ২০শ শতকের গোড়াতে শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি ১০০০ শিশুতে ২৫০ জন। ১৯১০-এ প্রতি ১০০০-এ গড় মৃত্যুর হার ফ্রান্সে ১৭.৭, গ্রেট ব্রিটেনে ১৩.৫, জার্মানিতে ১৬.২ এবং আমেরিকাতে ১৫.৯।। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পরে সরকারি বিভিন্ন নীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে পড়ে সরকার ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৬-তে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ হেলথ তৈরি করে। সঙ্গতভাবেই ধরে নেওয়া হয় এটা সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরের (মিনিস্ট্রি অফ হেলথ) আদিরূপ।”
১৯০৫ থেকে নারী ও শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ১৯১৪ সালে কম-উন্নত কারখানাগুলোতে ৭৫% শ্রমিক ছিল নারী ও শিশু।
নবজাত সোভিয়েত রাষ্ট্র
১৯১৭-র নভেম্বর মাসে ক্ষমতা দখলের কয়েকদিনের মধ্যে তৈরি হল নতুন “কম্প্রেহেন্সিভ স্যানিটারি লেজিসলেশন”। এখানে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হল – বাণিজ্যিক এবং শিল্পাঞ্চলের উদ্যোগগুলোতে ও নাগরিকের বাসস্থানে পরিচ্ছন্ন পেয় জলের ব্যবস্থা, স্যানিটারি পর্যবেক্ষণ, জাতীয় স্তরে নতুন খালের খনন করবে সরকার। সালমন কেশভজি ব্লাইন্ড স্পটঃ হাউ নিওলিবারালিজম ইনফিল্ট্রেটেড গ্লোবাল হেলথ-এ জানাচ্ছেন – “বলশেভিকদের স্বাক্ষরিত অন্যতম প্রথম ডিক্রি ‘কম্প্রেহেন্সিভ স্যানিটারি লেজিসলেশন’-এ শিল্পাঞ্চল এবং বাসস্থানে পরিচ্ছন্ন জল ও ময়লা পরিষ্কারের কথা বলা হয়েছিল।” (পৃঃ ২৮)
বিপ্লবের পরে ১৯১৭ সালেই তৈরি হল “অল-রাশিয়া কংগ্রেস অফ নার্সেস ইউনিয়ন”। ১৯১৮ সালে বিভিন্ন অঞ্চলে এর শাখার সংখ্যা হল ৫৬, সদস্য সংখ্যা ১৮,০০০। ১৯১৮ সালে জন্ম নিলো “কমিশারিয়েট অফ পাব্লিক হেলথ”। নিকোলাই আলেক্সান্দ্রোভিচ সেমাশকো এক বৈপ্লবিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রথম পিপল’স কমিশার অফ পাব্লিক হেলথ, অর্থাৎ, রাশিয়ায় জনস্বাস্থ্যের প্রধান ব্যক্তি নির্বাচিত হলেন। উল্লেখযোগ্য হল, এ সময়ে বলশেভিক রাশিয়ার নাম ছিল রাশিয়ান সোভিয়েত ফেডেরেটিভ সোশ্যালিস্ট রিপাব্লিক। ১৯২২ সালে জন্ম নেয় USSR। একটি কেন্দ্রীভূত, জনমুখী, সমস্ত স্তরের জনতার জন্য ফ্রি, নিজস্ব খরচ-বিহীন জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা জন্ম নিলো। কেন কেন্দ্রীভুত স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল? সেমাশকো তাঁর স্মৃতিকথায় জানাচ্ছেন – “আমাদের সবকিছুই আক্ষরিক অর্থে শূণ্য থেকে গড়ে তুলতে হয়েছে। এখন আমাদের ৩৯৭,৪৯৬টি বেড রয়েছে রোগীদের জন্য এবং ২৩২টি পরিপূর্ণভাবে সুসজ্জিত ট্রেন আছে। আমরা স্নানের ট্রেন, লন্ড্রি ট্রেন, হাসপাতাল ট্রেন চালু করেছি যা ইউরোপের যেকোন মিলিটারি সংগঠনগুলো করতে পারলে গর্বিত হবে। আমাদের রয়েছে সুবিশাল সুসংগঠিত প্রতিটি স্তরে বিস্তৃত এবং কেন্দ্রীভূত কর্তৃত্ব।”
(সেমাশকো – তাঁর কর্মস্থলে)
ত্রিমুখী আক্রমণে নবজাত সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া চূড়ান্ত বিপর্যস্ত হয়েছিল। ১৯১৮-২০ পর্যন্ত চললো গৃহযুদ্ধ, এর সাথে শুরু হল মহামারি এবং দুর্ভিক্ষ ১৯১৮-২২ অবধি। এস জি হোয়েটক্রফট তাঁর গবেষণাপত্র “ফেমিন অ্যান্ড এপিডেমিক ক্রাইসিস ইন রাশিয়া, ১৯১৮-১৯২ঃ দ্য কেস অফ সারাতোভ” প্রবন্ধে দেখিয়েছেন – দুর্ভিক্ষ এবং রোগের ফলে ১৯১৮ থেকে ১৯২০ এই তিন বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ অসামরিক বা সাধারণ মানুষ মারা যায়। আবার ১৯২১-এর শেষ তিন মাস থেকে ১৯২২-এর প্রথম ৬ মাসে দেশজুড়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ।
১৯১৭-১৯২২ পর্যন্ত পরিস্থিতির ভয়াবহতা গভীরভাবে আরও ভালো করে অনুভব করা যায় চিকিৎসক উইলিয়াম ন্যাটের ১৯২৪ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ কিস্তিতে প্রকাশিত “এ রিভিউ অফ মেডিক্যাল এডুকেশন ইন সোভিয়েত রাশিয়া” এবং “এ মেডিক্যাল রিভিউ অফ সোভিয়েত রাশিয়া” শীর্ষক প্রবন্ধগুলিতে। আভ্যন্তরীন সংকটে পর্যুদস্ত নবজাত সোভিয়েত রাশিয়ায় এমন অবস্থা ছিল যে নামী চিকিৎসক-অধ্যাপকেরা বেলচা হাতে বরফ পরিষ্কার করেছেন, দৈনিক ১/৪-১ পাউন্ড কালো রুটি, আলু এবং হেরিং মাছের জন্য লাইন দিয়েছেন, এবং দ্রুতপদে হেঁটে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আরেকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেছেন রোগী দেখার জন্য। এমনকি নোবেলজয়ী (১৯০৪) বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী পাভলভও ব্যতিক্রম ছিলেননা। ন্যাট লিখছেন – “১৯২৫-এর সেপ্টেম্বর অব্দিও গবেষকেরা তাদের নিজেদের মাস মাইনের অর্ধাংশ দিয়ে ল্যাবরেটরির কাগজপত্র কিনছেন। এবং অনেক অধ্যাপক তাঁদের মাইনের একাংশ দিয়ে ল্যাবরেটরিকে সচল রেখেছেন।” পাভলভ তাঁর “কন্ডিশন্ড রিফ্লেক্স” নিয়ে তাঁর যুগান্তকারী বইয়ের প্রতি ৮,০০০ শব্দের জন্য ২৫ রুবল করে পেতেন।
এরকম এক অসম্ভব প্রতিকূল, শক্ত এবং অভাবিতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক বা কমিউনিস্ট পার্টি গ্রহণ করেছিল একের পরে এক মানুষ-কেন্দ্রিক কর্মসূচী। তার মধ্যে প্রধান কর্মসূচী ছিল জনস্বাস্থ্যকে ঘিরে। এই দুই কর্মসূচীর ভরকেন্দ্রে ছিল রুশ ভূখণ্ডের সমস্ত স্তরের, জাতের (রাশিয়াতে সেসময়ে ১৭৫টি জাতিসত্তা ছিল), এবং ধর্মের মানুষের অসীম গুরুত্ব। এবং অবশ্যই অগ্রাধিকার ছিল শ্রমিক এবং যারা কারখানায় বা জমিতে শ্রম দিয়ে দেশের জন্য সম্পদ তৈরি করছে, দেশকে বাঁচিয়ে রাখছে সেরকম সমস্ত মানুষের। এদের তৈরি সম্পদ ব্যয় করা হয়েছে এদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। রাষ্ট্র নিজে এ দায়িত্ব নিয়েছে শুধু নয়, একে প্রসারিত করেছে।
(সোভিয়েত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা)
১৯২০ সালে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম “রেস্ট হোম” তৈরি হল। এরপরে ১৯২৫ সালে ইয়াল্টায় কৃষকদের জন্য তৈরি হল “রেস্ট হোম”। এ সুযোগ-সুবিধে পৃথিবীর অন্য কোন দেশে তখন একটি অকল্পনীয় ভাবনা ছিল, কারণ অন্য সমস্ত দেশেই এদের শ্রম আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত মুনাফা এবং সম্পদের পাহাড় তৈরি হয়। কিন্তু রাশিয়ার যাত্রাবিন্দুই ছিল এদের শ্রমকে অর্গলমুক্ত করে দেশের মানুষের মাঝে সুষম বন্টন করা এবং সার্বিক শ্রীবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটানো। সিজারিস্ট তাঁর মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯৪৭) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন – “রুশ বিপ্লবের নির্দিষ্ট সাফল্যতে – প্রায়শই যে অনস্বীকার্যকে অস্বীকার করা হয় – বহু দেশের শাসকশ্রেণীকে এতদূর ভীত হয়েছিল যে তারা সমাজতন্ত্রকে ঠেকানোর জন্য ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করেছিল। ইতিহাস এই কঠোর যুক্তিকে অনুসরণ করেছ।” (পৃঃ viii, নজরটান লেখকের)
ভ্লাদিভস্টক এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মধ্যে একটি অ্যান্টি-টাইফাস ট্রেন চালানো শুরু হল। এই ট্রেনে ৩৫০ জন রোগীকে রেখে চিকিৎসা করা যেত। ৩৫ বগির এই ট্রেনে স্নান করার, জামা-কাপড় ছাড়ার, অপারেশনের যন্ত্রপাতি এবং গায়ের জামা-কাপড় স্টেরিলাইজ করার বন্দোবস্ত ছিলো, ফুটন্ত জলের ব্যবস্থা ছিলো, একটি ট্যাংকার, ক্ষৌরকারদের জন্য আলাদা বগি সমেত ডাক্তার, বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসাকর্মী এবং সহায়ক কর্মীদের থাকার সমস্ত ব্যবস্থাও ছিলো। মনে রাখতে হবে এ সময়টি ছিল তীব্র, রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষ ও মহামারির এক মরণ-বাঁচন অধ্যায়। কিন্তু এরকম ট্রেনেও সংক্রমণে ৯০ জনের মধ্যে ৪০ জন অব্দি মারা গিয়েছে। সামান্য সাবান, গ্লাভস, মাইক্রোস্কোপ, জীবানুনাশক, কম্বল বা বিছানার চাদরের সরবরহারও সবসময় ছিলনা। একটি বিছানায় ৩ জন রোগীও থাকতে বাধ্য হত।
১৯১৯-এর জুনে লেনিন একটি ডিক্রি সই করলেন। এই ডিক্রিতে বাচ্চাদের খাওয়ানোর আলাদা ব্যবস্থা করা হল। শিশুদের খাবার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, বয়ঃসীমা ১৬ বছর পর্যন্ত। ১৯১৮-১৯২২ সাল ছিল “ভয়াবহ ক্ষুধার বছর”। দৈনিক ক্যালরির পরিমাণ ১৪০০ ক্যালরির নীচে চলে যায়। ১৯২১ সালে “নিউ ইকনোমিক পলিসি” গ্রহণ করার পরে কিছু পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।
পূর্বোল্লেখিত ভ্লাদিমির রেশেৎনিকভ-এর “দ্য হিস্টরি অফ পাব্লিক হেলথকেয়ার ইন রাশিয়া” প্রবন্ধে বলা হল – “জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বলশেভিকদের নিষ্ঠা দেখে ডাক্তার এবং নার্সেরাও পিপল’স হেলথকেয়ার কমিশারিয়েট-এর সমর্থনে এগিয়ে এলেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২২-এর মধ্যে ১৬টি মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি খোলা হল এবং উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা ফ্রি এবং উন্মুক্ত হল RSFSR-এর সমস্ত রুশ নাগরিকের জন্য। সমস্ত মেডিক্যাল পেশাজীবীরা বাধ্যতামূলক সার্ভিস দেওয়া শুরু করলেন ১৯১৮ থেকে। রুশ কমিউনিস্ট পার্টির ৮ম কংগ্রেসে (১৮-২৩ মার্চ, ১৯১৯) সোভিয়েত স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রাথমিক লক্ষ্য এবং বিকশিত হবার স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করলো। নতুন যেসব প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থা জন্ম নিলো সেগুলো এরকম – আশু চিকিৎসা এবং প্রিভেনশনের জন্য বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন কেন্দ্র, শিশুদের খাওয়ানোর কেন্দ্র, ডে নার্সারি, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অরগানাইজেশন, চাইল্ড হেলথকেয়ার অরগানাইজেশন, জনস্বাস্থ্যের শিক্ষার জন্য আলাদা বিশেষ কেন্দ্র।” জনস্বাস্থ্যের বোধ এবং শিক্ষার বিকাশের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেওয়া, লিফলেট বিলি করা, রেডিওতে প্রচার করা এবং সিনেমা দেখানো – যাবতীয় পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে।
এসময়ে মেডিক্যাল শিক্ষাক্রম ছিল – প্রথম দু’বছরে শিখবে কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, বায়োলজি, অ্যানাটমি, হিস্টোলজি, ফিজিওলজি এবং ফিজিওলকিক্যাল কেমিস্ট্রি (ল্যাবরেটরি এবং প্র্যাক্টিক্যাল সহ)। ৪র্থ এবং ৫ম বছরে ক্লিনিক্যাল শিক্ষা অর্জন করবে। ১৯১৭-১৯২০ পর্যন্ত গবেষক-অধ্যাপক-শিক্ষকদের কোন মাইনে দেওয়া যায়নি, বাসস্থান এবং রেশন ছাড়া। ১৯২১ থেকে স্বল্প মাইনে (সেসময়ের হিসেবে মাসে ৩ পাউন্ডের কিছু বেশি) দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু নতুন দুনিয়া গড়ার জন্য গবেষক-অধ্যাপক-শিক্ষকেরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে গেছেন।
কেন্দ্রীভূত কিন্তু জনসমাজের গভীর পর্যন্ত প্রসারিত জনস্বাস্থ্যের এবং স্বাস্থ্যের উদ্যোগের ভরকেন্দ্র করা হল ‘ডিসট্রিক্ট প্রিন্সিপ্লস”-কে। বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টে ভাগ করা হল সমগ্র পরিচালনার বিষয়টিকে। এই সমগ্র উদ্যোগের ফলে রাশিয়ার প্রিভেন্টিভ স্ট্র্যাটেজি এবং স্যানিটারি পদক্ষেপ যে আলোড়ন তৈরি করেছিল তা কিছু বিশেষজ্ঞের চোখ এড়ায়নি। জার্মানির অস্কার ভোগট এবং লিপম্যান ১৯২৪-এ স্বচক্ষে এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল দেখেছিলেন এবং দেশে ফিরে গিয়ে একটি সুবৃহৎ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ১৯২৮ সালে মস্কোতে “ব্রেইন ইন্সটিটিউট” তৈরিতেও ভোগট সাহায্য করেন।
পূর্বোক্ত রেড মেডিসিন-এ বলা হল – “সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর প্রথম দেশ যে একটি সম্পূর্ণ সংগঠন গঠন করার দায়িত্ব তুলে নিয়েছে। এই সংগঠনের ডিজাইন হল রাশিয়ার ভূখন্ডে বাস করা প্রতিটি মানুষ, নারী এবং শিশুকে একইসাথে প্রিভেন্টিভ এবং কিউরেটিভ সুরক্ষা পৌঁছে দেওয়া।” (পৃঃ vii) এঁদের পর্যবেক্ষণে – “১৯৩১ সালের মধ্যে দরিদ্রতর জনসমষ্টির জন্য রাশিয়ায় ৭২৪,০০০ বেড তৈরি হয়েছিল সেরে ওঠার কেন্দ্র এবং স্যানাটরিয়ামগুলোতে।” এঁদের চোখে ধরা পড়েছিল – পুঁজিবাদী দেশগুলোর এবং রাশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটি মূলগত প্রভেদ হচ্ছে রাশিয়ায় প্রতিটি ডাক্তার রাষ্ট্রের প্রতিনিধি এবং প্রাইভেট প্র্যাক্টিস রয়েছে যৎসামান্য। (পৃঃ ২১৮) বিপ্লবের আগে চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ২৬,০০০। ১৯৩৩ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৬,০০০। এঁরা আমেরিকা এবং রাশিয়ার মেডিক্যাল কেয়ারের একটি প্রতিতুলনা করেছিলেন মোট ১০টি পয়েন্টে। (পৃঃ ২৭১-২৭৫) একমাত্র ডেন্টিস্টদের সংখ্যা আমেরিকায় বেশি এবং দাঁতের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হওয়া ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রেই আমেরিকার ঔকর্ষ খুঁজে পাননি। বরঞ্চ, ব্যক্তিগত মুনাফা-কেন্দ্রিক আমেরিকার যে মেডিক্যাল কেয়ার ব্যবস্থা সেখানে রোগীকে মানুষের উপযুক্ত সম্মান দিয়ে চিকিৎসা হয়না এ কথা জোর দিয়ে বলেছেন। এঁদের তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৭-র আগে রাশিয়াতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ২৬,০০০। ১৯৩১-এ সে সংখ্যা হয় ৭৬,০০০। এঁদের বক্তব্য অনুসারে – “সোভিয়েত মেডিসিনের আরেকটি পথনির্দেশক নীতি হল যে নতুন সার্ভিস বিশেষভাবে প্রযুক্ত হয়েছে সমস্ত শিল্পশ্রমিক এবং কৃষকদের দরিদ্রতম অংশের পরিবারের জন্য।” (পৃঃ ২৬৮, নজরটান মূল লেখায়) ১৯৩১-এর মধ্যে দরিদ্রতর মানুষের জন্য বিভিন্ন “কনভ্যালেসেন্ট হোমস” এবং স্যানাটরিয়ামে ৭২৪,০০০ শয্যার ব্যবস্থা ছিল। (পৃঃ ২৬৯) প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করা চিকিৎসকের সংখ্যা ১০%-এর বেশি ছিলনা। (পৃঃ ২৭০)
(সোভিয়েত হাসপাতাল)
(সোভিয়েত হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড)
এখানে উল্লেখযোগ্য ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এর ইতিহাস। আমার ধারণা অংশত সোশ্যালিস্ট মেডিসিনের প্রভাব, অংশত ইউরোপের জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের অভিঘাত, অংশত ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ের বিশেষ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ – এসবের সম্মিলিত যোগফলে এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের জন্ম। ১৯৪৮ সালের জুন মাসে ইংল্যান্ডের প্রতিটি বাড়িতে একটি লিফলেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। লিফলেটে বলা হয়েছিল – “আপনার ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস শুরু হবে ৫ জুলাই। এটা কি? কিভাবে আপনি পাবেন? এই সার্ভিস আপনাকে সমস্ত মেডিক্যাল, ডেন্টাল, এবং নার্সিং-এর ব্যবস্থা জোগাবে। প্রতিটি মানুষ – দরিদ্র অথবা ধনী, পুরুষ, নারী অথবা শিশু – একে পূর্ণত কিংবা এর যেকোন অংশকে ব্যবহার করতে পারবে। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এর জন্য কোন মূল্য দিতে হবেনা। এর জন্য কোন ইন্সিউরেন্সের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটা কোন “দাক্ষিণ্য বা চ্যারিটি” নয়। আপনারা সবাই এর জন্য অর্থ দিচ্ছেন, প্রধানত একজন ট্যাক্সদাতা হিসেবে, এবং অসুস্থতার সময়ে আপনাদের অর্থের জন্য বিপুল উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেবে এই সার্ভিস।” (নজরটান লেখকের)
শেষ কথা
১৯১৭ সালের ১৩ নভেম্বর (রুশ বিপ্লবের ৫ দিন পরে) সোভিয়েত সরকারের জারি করা ডিক্রিতে বলা হয়েছিল – “(১) ব্যতিক্রমহীনভাবে সমস্ত শ্রমদানকারী শ্রমিকের জন্য সোশ্যাল ইন্সিউরেন্স করা হল যার সুযোগ প্রসারিত হবে শহর ও গ্রামের দরিদ্রদের জন্যও, (২) সমস্ত ধরনের অক্ষমতাকে (যেমন অসুস্থতা, আঘাত, পঙ্গু হয়ে পড়া, বার্ধক্য, মাতৃত্বকালীন অবস্থা, বৈধব্য, অনাথ সন্তান এবং কর্মহীনতাকে) এই ইন্সিউরেন্সের আওতায় আনা হল, (৩) ইন্সিউরেন্সের সমস্ত খরচ রাষ্ট্র বা মালিক বহন করবে, (৪) কাজ চলে গেলে কিংবা অক্ষম হয়ে পড়লে সমস্ত ধরনের খরচ রাষ্ট্র বহন করবে, এবং (৫) যার ইন্সিউরেন্স করা হয়েছে তার ইন্সিউরেন্সের ওপরে সমস্ত অধিকার থাকবে। (সিজারিস্ট, সোশ্যালাইজড মেডিসিন ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন, পৃঃ ৮৬-১০৪)
উইলিয়াম ন্যাট জোর দিয়ে উল্লেখ করেছিলেন, “এরকম ভয়াবহ এবং আশাহীন বছরগুলোতেও চিকিৎসকেরা নিঃস্বার্থভাবে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করে গেছেন।” আমরা বর্তমান ভারতের সাথে একবার মিলিয়ে নিতে পারি। বর্তমান ভারতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে আত্মপ্রসাদের বীভৎস রস উপভোগ করার এর চেয়ে ভালো উপায় আর কি আছে?
এরপরেও আরও কিছু কথা থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালে তৈরি হল লিগ অফ নেশনস। এর অন্যতম কর্মকর্তা ছিলেন নরওয়ের স্বাস্থ্য প্রধান কার্ল ইভাং। তিনি জানাচ্ছেন যে “স্বাস্থ্য” বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গুরুত্বপুর্ণ কোন ব্যাপার ছিলনা। ইভাং-এর বয়ানে – “একটি মজার উদাহরণ হল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন কভেন্যান্ট অফ লিগ অফ নেশনস ড্র্যাফট করা হল তখন স্বাস্থ্য ‘ভুলে যাওয়া হয়েছিল’। একেবারে শেষ মুহূর্তে লিগ অফ নেশনস-এর হেলথ সেকশনে ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটিকে ঢোকানো হয়।” (কে ইভাং, “পলিটিক্যাল, ন্যাশনাল অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল লিমিটেশনস টু হেলথ কন্ট্রোল”, হেলথ অফ ম্যানকাইন্ড, সং, গর্ডন ওলস্টেনহোম এবং মেভ ও’কনোর, ১৯৬৭, পৃঃ. ২০২)
মনে রাখা দরকার, যে সময়ে পৃথিবীর তাবড় ধনতান্ত্রিক দেশগুলো “স্বাস্থ্য” শব্দটিকে ভুলে যাচ্ছিল সেসময়ে বলশেভিক রাশিয়ায় সবার জন্য, সমস্ত নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যের নতুন মহাযজ্ঞের উদ্বোধন শুধু হয়নি, প্রবল উদ্দীপনা নিয়ে সবার কাছে স্বাস্থ্যের সুযোগ পৌঁছে দেবার কর্মযজ্ঞ বিপুল গতিতে চলেছে। সিজারিস্ট তাঁর মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন গ্রন্থে বলছেন – “সোভিয়েত মেডিসিনে কোন আপোষ নেই। এর কাঠামো সহজেই বোঝা যায় কারণ এটা বাস্তবোচিত, যুক্তিযুক্ত এবং স্বচ্ছ।” (পৃঃ ২৪) তিনি সোভিয়েত মেডিসিনের চারটি বৈশিষ্ট্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন – (১) মেডিক্যাল সার্ভিস খরচবিহীন, এবং সবার কাছে লভ্য, (২) সমস্ত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কার্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছে “promotion health and prevention of disease”, (৩) কেন্দ্রীয় সংস্থা, স্বাস্থ্যমন্ত্রক (পূর্বতন পিপলস’ কমিশারিয়াট অফ হেলথ) সমস্ত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা করে, এবং, এর ফলে (৪) অনেক বৃহৎ পরিসরে স্বাস্থ্য নিয়ে পরিকল্পনা করা যায়। (পৃঃ ২৪-২৫)
কিন্তু সেসময়ের পরিস্থিতিতে একান্ত প্রয়োজনীয় কেন্দ্রীভূত, ক্ষমতাশালী যে স্বাস্থ্যের কাঠামো গড়ে উঠেছিল আশঙ্কা হয় সে কাঠামোর মধ্যেই পরবর্তীতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপরিমেয় ক্ষমতাসম্পন্ন আমলাতন্ত্রও গড়ে উঠেছিল, যা শেষ অব্দি মানুষের স্বরকেই হয়তো বহুক্ষেত্রে রুদ্ধ করেছে।
আবার দারুণ লেখা ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যের। সাম্যবাদী সোভিয়েত রাষ্ট্র চিকিৎসাকে ব্যবসা হিসেবে না নিয়ে সাম্যবাদী স্বার্থে জনমুখী করে তুলেছিল তৎকালীন নেতৃত্বের আন্তরিকতায় ও সততায়। সেই প্রচেষ্টার সাফল্য সম্বন্ধে তো কোন দ্বিধা পন্ডিতদের নেই। তবে সময়ের সাথে সাথে তাতে ঘুণ ধরে যাওয়াটা নেতৃত্বের ব্যর্থতা।
কিন্তু সামাজিক স্বার্থে স্বাস্থ্যকে বীমামুখী করা বন্ধ করে জনমুখী না করলে রোগ হিসাবে রোগীর চিকিৎসা হবে না, হবে বীমার মূল্য হিসাবে।
চিকিৎসায় ব্যবসার স্বার্থ ও মানুষের স্বার্থের এই লড়াইয়ে এখনও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আছে কারণ “উন্নত” রাষ্ট্রগুলি ব্যবসায়ীদেরই কথা শুনতে পছন্দ করছে।
এই অতিমারীও কিন্তু অভিমুখকে নাড়া দিলেও বদলাতে পারে নি। তবে হয়তো সময় আসবে তখন আর উপায় থাকবে না মানুষকে অস্বীকার করার।
khub sundor lekha.
Wonderful sir. Very informative and beautifully explained. Loved it sir.
খুব ভালো লেখা – বাংলায় এমন লেখার দীর্ঘমেয়াদী ডিজিটাল সংরক্ষণ হওয়া খুব দরকার
Very informative
ভালো লেখা। যারা সমাজতন্ত্রের শুধু নেতিবাচক দিক গুলোর দিকেই আঙুল তোলে তাদের এসব জানা দরকার
Khub bhalo and informative. Bhalo laglo
Apnar lekha gulo khub valo. Highly informative. Apnar lekha pore Prochur jinis jante pari.
Rastra khamota sorbo kalei soshon niti chalie eseche. Pujibadi Bajar arthoniti soshoner matra kromoso barie barie tike thakar khelate motto. Fol sarup janosadharon er jibon durbisaho hoe utheche…….