শুরুর কথা
হেলেন গ্রাহাম তাঁর বিখ্যাত বইয়ের শুরুতেই জানাচ্ছেন – “The Spanish Civil War began with a military coup. There was a long history of military intervention in Spain’s political life. But the coup of 17–18 July 1936 was an old instrument being used for a new purpose. It aimed to halt the mass political democracy set in train by the effects of the First World War and the Russian Revolution, and accelerated by the ensuing social, economic, and cultural changes of the 1920s and 1930s. In this sense, the military rising against Spain’s democratic Second Republic was the equivalent of the fascist takeovers that followed the coming to power of Mussolini in Italy (1922) and Hitler in Germany (1933) and which were also designed to control similar manifestations of social, political, and cultural change.” (The Spanish Civil War: A Very Short Introduction, 2005, পৃঃ ১)
সহজ করে বললে, গণতান্ত্রিক পথে জনতার ভোটে নির্বাচিত রিপাবলিক সরকার এবং ফ্যাসিস্ট ফ্রাংকোর নেতৃত্বাধীন আক্রমণকারী ন্যাশনালিস্ট শক্তির মধ্যে বিভাজিত হয়ে গেল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তুলনায় দরিদ্র এবং গৃহযুদ্ধে শ্রান্ত-ক্লান্ত স্পেন। পৃথিবীর সেসময়ের বৃহৎ শক্তিগুলোও ভিন্ন ভিন্ন পক্ষ অবলম্বন করলো। ন্যাশনালিস্ট সরকার ফ্যাসিস্ট ইতালি, নাৎসী জার্মানি এবং পর্তুগালের কাছ থেকে যুদ্ধের সরঞ্জাম, আগ্নেয়াস্ত্র, যুদ্ধবিমান এবং সৈন্যবাহিনীর সাহায্য পেল। রিপাবলিক সরকারের সমর্থনে বিশ্বজুড়ে জনমত তৈরি হল। গড়ে উঠলো ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেড। গড়ে উঠলো পপুলার ফ্রন্ট। রিপাবলিক সরকার সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মেক্সিকোর কাছ থেকে প্রত্যক্ষ সাহায্য পেল। পরোক্ষ সাহায্য এলো ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার মতো বৃহৎ শক্তির কাছ থেকে।
সেই ১৯৩৬ থেকেই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী শক্তি গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে – এখনও, বিভিন্ন ঢংযে, ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় এবং rhetorics-এ।
এখানে ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেড নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। ৮৬টি দেশ এবং উপনিবেশ থেকে মুক্তিকামী মানুষ এই ব্রিগেডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে কমিনিস্ট, বামপন্থী, নৈরাজ্যবাদী এবং গণতান্ত্রিক অভীষ্টে বিশ্বাসী সমস্ত ধরনের কৃতবিদ্য মানুষেরাই ছিলেন। ভলান্টিয়ারদের প্রথম ব্যাচ স্পেনে আসে অক্টোবর ১৯৩৬-এ। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অংশগ্রহণ ঘটে ১৯৩৭-এর বসন্তকালে। উল্লেখযোগ্য হল, এই ভলান্টিয়ারদের একটি বড়ো অংশই, শিল্পী সাহিত্যিক কবি ছাড়া, ছিলেন চিকিৎসক। পোল্যান্ড থেকে আগত চিকিৎসকের সংখ্যা ৫৬ জন, জার্মানি থেকে ৩৯ জন, আমেরিকা থেকে ৩৬ জন, হাঙ্গেরি থেকে ২৬ জন, এবং ফ্রান্স ও রোমানিয়া উভয় দেশ থেকেই আগত চিকিৎসকের সংখ্যা ২৫ জন করে ছিল। এর বাইরে কানাডা থেকে সুবিখ্যাত নর্মান বেথুন ছিলেন। (Esther Cuerda-Galindo, “Physicians imprisoned in Franco Spain’s Miranda de Ebro “Campo de Concentración”, Medical History (2022), 66: 3, 264–279)
চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের প্রসঙ্গে বিস্তৃতভাবে আমি পরে আসবো আবার। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেডের প্রসঙ্গে সৃষ্টিশীল মানুষদের নিয়ে আরও কিছু কথা বলা যাক। যুদ্ধ মেডিসিন বা সার্জারির জগৎ ছাড়া শিল্পের অনেক নতুন সম্ভার নিয়ে আসে। নতুন পথ ও সম্ভাবনা উন্মোচিত করে। একটি উল্লেখযোগ্য চিত্র হল নোবেল জয়ী সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে রিপাবলিকদের সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত।
(তথ্যসূত্রঃ Steve Hurst, Famous Faces of the Spanish Civil War: Writers, Artists in the Conflict, 1936-1939, 2009)
আলোচনায় আরও বিস্তারে যাবার আগে আমেরিকান কবি ল্যাংস্টন হিউজ ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেডের বীর সন্তানদের উদ্দেশ্যে একটি অসামান্য কবিতা লিখেছিলেন। আমার করা অনুবাদে সে কবিতাটি একবার পড়া যাক।
“আমি এলাম পেরিয়ে এলাম মহাসমুদ্দুর এবং অর্ধেক বিশ্ব কত শত সীমান্ত আকাশছোঁয়া পাহাড় আর কত না দেশ যারা বলেছিলঃ না তুমি যেতে পারবে না।
আমি এলাম এলাম আগামীদিনের আলোকোজ্জ্বল সীমান্ত প্রদেশে উজাড় করে দিলাম আমার এতদিনের শৌর্য আর প্রজ্ঞা। কিন্তু সে তো খুব বেশি নয় কারণ আমি যে যুবক (বরঞ্চ বলা ভালো যুবক ছিলাম এ জন্য যে, এখন তো আমি মৃত)
আর সবার বেঁচে থাকার জন্য আমি যা দিতে চেয়েছিলাম সবই দিয়েছি।
যখন এক ঝাঁক বুলেট এসে স্তব্ধ করে দিল আমার হৃদস্পন্দন এবং শোণিত উপছে পড়লো আমার গলা বেয়ে আমি বুঝিনি, এ কি রক্ত!
কিংবা এক লাল অগ্নিশিখা! কিংবা আমারি মৃত্যু হয়ে উঠলো জীবন স্পন্দন।
সব তো একই আমাদের স্বপ্ন আমাদের মৃত্যু তোমাদের জীবন।
আমাদের শোণিত লাল অগ্নিশিখা সব একাকার হয়ে গেছে।
(সূত্রঃ Luis Gustavo Girón Echevarría, Langston Hughes’s Spanish Civil War Verse”, Anuario de Estudios Filológicos, vol. XXVIII, 91-101)
(সূত্রঃ Steve Hurst, Famous Faces of the Spanish Civil War: Writers and Artists in the Conflict, 1936-1939, 2009, পৃঃ ১০)
স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ মনুষ্য সন্তানের দলে যেমন গার্সিয়া লোরকা ছিলেন (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “কবির মৃত্যু – লোরকা স্মরণে” সবার স্মৃতিতে আছে নিশ্চয়ই) তেমনি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন Arthur Koestler, Luis Quintinilla, জর্জ অরওয়েল (যদিও অরওয়েলের অংশগ্রহণ এবং পরবর্তী অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে), John Cornford-এর মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা। লোরকা ছাড়াও ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭-এ মাত্র ৩০ বছর বয়সে ব্রিটিশ মার্ক্সবাদী, তাত্ত্বিক, চিন্তক এবং অ্যাক্টিভিস্ট ক্রিস্টোফার কডওয়েলের মৃত্যু হয় ফ্রাংকোর ঘাতকবাহিনীর বুলেটে। তাঁর বিখ্যাত বইগুলোর বেশ কয়েকটি আশা করি অনেকেই পড়ে থাকবেন – Illusion and Reality, Studies in a Dying Culture, The Crisis in Physics, Culture as Politics ইত্যাদি। ছিলেন আঁদ্রে মালরো, ইলিয়া এরেনবুর্গ, এমা গোল্ডম্যান স্টিফেন স্পেন্ডার, হেলেন গ্রাহামের মতো আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত লেখজ-শিল্পী-কলাকুশলীরা। সর্বোপরি পাবলো পিকাসো। তাঁর ১৯৩৭ সালে আঁকা অমর সৃষ্টি Guernica-র কথা আমরা সবাই জানি। বোধহয় সবাই দেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হবে ডলোরেস ইবারুরির নাম। একজন কমিউনিস্ট এবং মাদ্রিদ মুক্ত করার যুদ্ধে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করা যোদ্ধা। তাঁর সেই বিখ্যাত শ্লোগান “No Passaran” (আর এগিও না) এখনো বিখ্যাত হয়ে আছে। তাঁর সাড়া জাগানো বই They Shall Not Pass: The Autobiography of La Pasionaria অনেকেই পড়ে থাকবেন আশা করি।
বিপরীত দিকে, সালভাদোর দালির মতো শিল্পী জেনারেল ফ্রাংকোর ফ্যাসিস্ট সরকারের জয়ের পরে নিজের আঁকা ছবি স্বহস্তে উপহার দিয়েছেন। (Hurst, Famous Faces of the Spanish Civil War, পৃঃ ৪১) অথচ, দালি নিজেই ১৯৩৬ সালে স্পেনে যুদ্ধ সম্ভাবনার অনুমান করে সৃষ্টি করেছিলেন এক অমর চিত্র – Soft Construction with Boiled Beans (Premonition of Civil War)।
(সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
স্পেনের গৃহযুদ্ধ এবং মেডিসিন ও সার্জারির কয়েকটি দিগন্ত
পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কিভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে আহত, মরণাপন্ন এবং অসুস্থ মানুষ এবং সৈনিকদের সুস্থ করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে পথ প্রদর্শন করেছে। বিষম পরিস্থিতিতে কে আগে চিকিৎসা পাবে, কার আগে চিকিৎসার বিশেষ প্রয়োজন এ নিয়ে medical triage-এর উদ্ভাবন হয়েছে।
আলোচ্য গৃহযুদ্ধে ৫,০০০,০০০-এর বেশি মানুষ মারা গেছে। উল্লেখযোগ্য হল – যত না বন্দুক-ধরা মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মারা গেছে সাধারণ মানুষ। বলা যেতে পারে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সাল ছিল এই গৃহযুদ্ধ। ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে ইতালিয় সামরিক বিমান বার্সেলোনায় প্রতি ২ ঘন্টায় ১ বার করে বোমা ফেলেছে। একটি হাসপাতালে বোমায় বিক্ষত ২২০০ মানুষ ১ দিনে ভর্তি হয়েছে। পাশের আরেকটি ছোট হাসপাতালে এ সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। ভয়াবহ রকমের গ্যাস গ্যাংগ্রিন এবং অ্যাম্পুটেশনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে সার্জন Josep Trueta Raspall এবং তাঁর সহকর্মীদের। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল এবং ল্যান্সেট-এ যুদ্ধের বিবরণী নিয়ে ৫৬টি লেখা বা পেপার প্রকাশিত হয়েছে। (Nicholas Coni, “Medicine and the Spanish Civil War”, Journal of the Royal Society of Medicine 2002, 95: 147-150)
গৃহযুদ্ধের সময়ে যে চারটি ক্ষেত্রে প্রধানত মেডিক্যাল সায়ান্সের অগ্রগতি হয়েছিল, সেগুলো অল্প কথায় বললে – (১) যেকোন ক্ষত এবং আঘাতের চিকিৎসা, (২) ব্লাড ব্যাংকের বিকাশ ঘটানো, (৩) বিশেষত বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত রোগের চিকিৎসা, এবং (৪) সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য কিভাবে মেডিক্যাল সাপোর্ট টিম তৈরি করা যায়।
ইংল্যান্ডের সেন্ট বার্থোলোমিউ হাসপাতালের একজন ছাত্র K. Sinclair Loutit-এর একটি চিঠি ল্যান্সেট-এ প্রকাশিত হয় “An Ambulance in Spain” শিরোনামে (ল্যান্সেট, নভেম্বর ২৮, ১৯৩৬, পৃঃ ১২৯৫-১২৯৬) Loutit স্পেনে “স্প্যানিশ মেডিক্যাল এইড কমিটি”-র একটি অ্যাম্বুলেন্সের দায়িত্বে ছিল। এ চিঠিতে Loutit জানায় – “আমাদের অ্যাম্বুলেন্স প্রায় ১৪,০০০ মাইল যাত্রা করেছে এবং ১৫২৩ জন রোগীকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে গেছে।” লুইটরা যেখানে কাজ করতো সে হাসপাতালটি ছিল “a small, dirty, ill-developed village in a key position behind a fan-shaped front … We have a medical, a surgical and a V.D. ward, with a total accommodation for 40 patients, which can be increased on emergency by a further 30 … cleared over a thousand square meters of floor from dirt approximately a meter deep. … At first only the crudest surgery was possible. Abdominal surgery was unthinkable owing to the dirt.” (পৃঃ ১২৯৫)
চিঠিটির শেষে লুইট একটি আবেদন রেখেছিল – “There is also room for an absolutely first-class surgeon, Do you by any chance know of an ex-chief assistant who might fancy the job?”
সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে ঘোড়ায় টানা গাড়িকে ব্যবহার করা হয়েছে,কিংবা বাঁশকে ব্যবহার করা হয়েছে স্ট্রেচার হিসেবে।
(ইংল্যান্ডের পরোক্ষ সহযোগিতার একটি নিদর্শন – উপনিবেশিক ভারত থেকে রিপাবলিক সরকার এবং ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেডকে সাহায্য করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছিল। যদিও এ ব্যাপারে প্রধান উদ্যোগ ছিল ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের তরফে জওহরলাল নেহেরু এবং কৃষ্ণ মেননের।এঁদের সাথী ছিলেন মূলক রাজ আনন্দ।)
(গৃহযুদ্ধের সময়ে কয়েকজন ডাক্তারের ছবি)
জুন ২৪, ১৯৩৯ সালে পূর্বোল্লেখিত Josep Trueta-র একটি দীর্ঘ কেস স্টাডি প্রকাশিত হয় ল্যান্সেট-এ “Closed” Fracture Treatment of War Fractures শিরোনামে (পৃঃ ১৪৫২-১৪৫৫)। তিনি যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষতের মোকাবিলায় সাধারণভাবে চালু সার্জিকাল পদ্ধতির কিছু পরিবর্তন ঘটান – “My procedure consists in debridement and excision of all bruised tissue; the wound is then packed and covered with dry sterile gauze, and finally a plaster case with no window in it is applied to the limb. At first I treated only unimportant wounds in this way ; but encouraged by the results I used the method in severe compound fractures of the tibia and fibula with a very satisfactory outcome. After treating 100 cases thus I communicated my results to the Surgical Society of Barcelona but did not get a good reception.” (পৃঃ ১৪৫২) তাঁর অনুসৃত এই পদ্ধতিতে ১০৭৩ জন রোগীর মধ্যে ৯৭৬ জন সুস্থ হয়, খারাপ ফল পাওয়া যায় ৯১ জন রোগীর ক্ষেত্রে এবং ৬ জন মারা যায়। তাঁর এই নতুন পদ্ধতিতে সাফল্যের হার প্রায় ৯১% ছিল, যেখানে সাধারণভাবে চালু পদ্ধতিতে এই হার ৩০-৪০%-এর মধ্যে ঘোরাঘুরি করত।
Josep Trueta তাঁর গৃহীত পদ্ধতির সারসংকলন করে জানান – “At operation extensive debridement was carried out, all bruised tissues, especially muscles and cellular tissue, being excised; but care was taken to preserve as much skin as possible and all large bony fragments. The cavities left by extirpation of tissues were drained with sterile absorbent gauze or sometimes a rubber tube. The skin was seldom sutured.
The joints above and below the fracture were immobilised in the plaster, which was not removed unless it became wet and soft, or there was an intolerable stench, or the patient’s condition showed that some complication had developed.
The fear that such treatment of fractures must lead to an increase in sepsis, especially gas-gangrene, was found to be groundless, and the method, by facilitating evacuation and dispensing with apparatus, had great advantages under war conditions.” (পৃঃ ১৪৫৫)
ল্যান্সেট-এই F. Duran Jorda-এর রিপোর্ট “The Barcelona Blood-Transfusion Service” (এপ্রিল ১, ১৯৩৯, পৃঃ ৭৭৩-৭৭৫) এ রিপোর্টে Jorda জানান যে, বার্সেলোনায় ব্লাড ট্রান্সফিউসন সার্ভিস ১৯৩৬-এর আগস্ট মাসে শুরু হয় এবং চালু ছিল জানুয়ারি ১৯৩৯ অব্দি। এখানে তাঁর দুই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন কানাডার কমিউনিস্ট সার্জন নর্মান বেথুন এবং ইংল্যান্ডের রিডিং-এর ডাক্তার রেজিনাল্ড স্যাক্সটন। এঁরা দুজনেই বীরের মতো লড়েছিলেন।
Jorda লিখছেন – “A main object of a blood-transfusion service is the proper organisation of donors; thus in 2i years of work we never at any time failed to obtain donors, and we prepared from them 9000 litres of blood. The organisation of donors is threefold: by groups in (1) work-places and clubs, (2) small towns and villages round the city, and (3) districts of the city. With this triple organisation the service can mobilise many donors at any moment and yet preserve the secrecy of military movements. The Barcelona service included 28,900 donors”। (পৃঃ ৭৭৩)
যুদ্ধক্ষেত্রে এরকম চলমান ট্রান্সফিউশন চালু রাখতে তাঁদের এক নতুন অভিজ্ঞতা হয় – “Automatic bacteriological control is the most important part of our method and is what has without doubt placed it at the head of all other methods. Physiologists have shown that a pressure of 16 mm. Hg is enough to convert 99 per cent. of the haemoglobin to oxyhaemoglobin if the blood is in contact with oxygen. This action takes place in our tube owing to the amount of oxygen in the air.” (পৃঃ ৭৭৪)
(নর্মান বেথুন ব্লাড ট্রান্সফিউসন শুরু করছেন)
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কি ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল, এ বিষয়ের ওপরে এমিলিও মিরা-র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল (“সাইকিয়াট্রিক এক্সপেরিয়েন্স ইন দ্য স্প্যানিশ ওয়ার”, জুন ১৭, ১৯৩৯, পৃঃ ১২১৭-১২২০) তিনি দেখেছিলেন, শিশুদের মধ্যে মৃত্যুভয় বা যুদ্ধভীতি কম। বড়ো বেদনা নিয়ে সম্ভবত তিনি জানিয়েছিলেন যে সাধারণ মানুষ মনে করে – “In the war butter was quite as important as guns.”
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এই মে ২৭, ১৯৩৯ এবং জুন ৩, ১৯৩৯-এ দুটি কিস্তিতে প্রকাশিত হল “War Surgery in Spain – I” এবং “War Surgery in Spain – II” শিরোনামে। লেখক সারজন এ টিঊডর হার্ট। তাঁর প্রথম প্রতিবেদনে তিনি বলেন – “I will touch on the present position in regard to three main topics: (1) the general problem of wound excision and primary suture, and the conditions favouring its success; (2) the treatment of septic wounds and of anaerobic infection; and (3) conservative surgery of limbs.” তিনি প্রত্যয় নিয়ে জানান, আহতদের ফ্রন্ট থেকে, যত দূরেই হোক না কেন, যত দ্রুত সম্ভব পশাচদবর্তী হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে – “absolutely nothing must be allowed to interrupt the flow of casualties to the rear, even if this means some! loss of lives that might have been saved under peace-time working conditions. For this reason the casualty clearing station was developed, near enough to the front to enable the first operative intervention to reduce enormously the incidence of severe sepsis and gangrene, yet inevitably also too near to the front to permit the majority of cases to remain there.” এখানে মেডিক্যাল ট্রায়াজের প্রসঙ্গ জরুরী হয়ে আসছে।
“War Surgery in Spain – II” প্রতিবেদনটিতে আমরা প্রথম সালফানিলামাইড ব্যবহারের উল্লেখ পাই। এই অ্যান্টিবায়োটিকটি কার্যত ১৮৩৮ সালে বহুল ব্যবহৃত হতে শুরু করে। হার্ট লিখছেন – “Sulphanilamide was given to a number of my cases, but without any quotable results, although I myself felt sure that it had -been effective in, certain instances. I will only venture the opinion that dosage must be very large if the drug is to be given at all.”
আমেরিকার এফডিএ (FDA)-র অনুমোদিত এই ওষুধ তখন ডাক্তারদের কাছে স্ট্রেপ্টোককাস সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার একটি বড়ো হাতিয়ার ছিল। সেসময় কার্যত দুটি অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিনের হাতে ছিল – সালফিনামাইড এবং পেনিসিলিন। এবং যুদ্ধে যে ভয়ংকর সুংক্রমণ হয়, যেমন গ্যাস গ্যাংগ্রিন, তাকে রোখার হাতিয়ার ছিল নিতান্তই অপ্রতুল।
মনে রাখতে হবে, ডাক্তার এবং সার্জনদের পাশাপাশি নার্সদেরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সমস্ত রকমের সার্জারি ও মেডিসিনের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাদের ভূমিকার প্রায় কোথাও লেখা নেই।
(গৃহযুদ্ধের নার্স)
এখানে উল্লেখ করা দরকার, স্পেনে যুদ্ধ চলাকালীন স্বাস্থ্যের বার্তা দিয়ে বিভিন্ন পোস্টারে প্রচার করা হয়েছিল। শিশু এবং মায়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা আলাদা পোস্টার তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি মেডিক্যাল স্কুলের ক্লাসও চলতো যুদ্ধের মাঝেও।
(একটি মেডিক্যাল স্কুলে ক্লাস হচ্ছে)
মেডিসিনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক অসুখগুলোর একটি ছিল ম্যালেরিয়া। ১৯৩৭ সালে ৪০০০ বাস্ক প্রদেশের শিশু ইংল্যান্ডের সাদাম্পটনে রিফিজি হিসেবে জাহাজ থেকে নামে। তাদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল, একমাত্র গায়ের উকুন ছাড়া অপুষ্টি বা ম্যালেরিয়ার কোন লক্ষন ছিলনা। (Nicholas Coni, পূর্বোক্ত) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অসুখ ছিল পেলাগ্রা – ভিটামিন B3 বা নিয়াসিন তথা নিকোটিনিক অ্যাসিডের অভাবে হয়, বিশেষ করে শিশুদের। এ রোগে ডায়ারিয়া, চর্মরোগ ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক বিকৃতিও ঘটে। এ ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাথিরিজম বলে একটি রোগ হত যেখানে নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে যায়। গড়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ মানুষের মৃত্যু হত না খেতে পেয়ে। এসবকিছুর মোকাবিলা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেড এবং পপুলার ফ্রন্ট – দেশের সীমিত সম্পদ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপরে নির্ভর করে।
শেষ কথা
সেদিন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পৃথিবী একটি বৃহৎ অংশ থেকে মানুষ নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ব্রিগেডে – মুক্তির লক্ষ্যে। ব্রিগেডের সদস্যের সংখ্যা ৩২,০০০ থেকে ৩৫,০০০ ছিল। (“Serving in Spain – the International Brigades”, https://archives.anu.edu.au/exhibitions/australia-spanish-civil-war-activism-reaction/serving-spain-international-brigades)
আজও জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এরকম যুদ্ধ চলছে – নীরবে কিংবা সরবে। কিন্তু এরকম জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংহতি কখনোই গড়ে উঠছেনা। এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা যোগ্য কারণ এখনো আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। নিকোলাস কোনি তাঁর পূর্বোক্ত প্রবন্ধের উপসংহারে বলেছিলেন – “Medical activity flourished in the comparatively liberal atmosphere of the great Republican cities during the Civil War. Nationalist medicine, on the other hand, made very little impact in terms of scientific publications, despite the fact that the insurgents ultimately prevailed.” (পৃঃ ১৫০)
এ কথা আজও প্রাসঙ্গিক – ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন রূপে, ভিন্ন ঢংয়ে।
অসাধারণ লেখা থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
Very much informative 👍🏼👍🏼
নিশ্চয়ই এই ব্রিগেড আবার কাজ করছে, দানা বাঁধছে না ভয়াবহ আক্রমনের ভয়ে। আমরা ভরসা হারাবো না।
অসাধারণ লেখা থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
এসব কথা আমি শুনিনি যদিও।
Excellent one sir 🙏🏼