বিশ্বাস করুন, বিরাট কোহলি হতে হবে না! প্রতিমুহূর্তে অদৃশ্য, অজস্র রোবট (আজকের ভাষায় বট) আমাদের মেপে চলেছে ?হ্যাঁ আমার আপনার মত রাম-শ্যাম-যদু-মধু সবাই কে !
সমরেশ বসুর স্বীকারোক্তি বলে একটা অসাধারণ গল্পে ছিল, ছোটবেলায় স্কুল পালিয়ে আম চুরি করা, নিষিদ্ধ কম্যুনিস্ট পার্টির ট্রেড ইউনিয়নে গোপনে জড়িত থাকা আর বাড়ি ফেরার পথে রিকশায় হালকা পরকীয়ার পাপ, বাবা, পুলিশ আর স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার গা শিরশিরে আখ্যান!
চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে, এক ধুতি পাঞ্জাবি পরা, সেজো পিশেমশাই টাইপ আমলা নিতান্ত নিরীহ মুখে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সাতবছর আগের অমুক দিনে কার্জন গেটে, একটা স্ট্রিট কর্নারিং এ উল্টোনো প্যাকিং বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে আমি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বক্তৃতা দিয়েছিলাম কি না !!!
এ কিন্তু তার থেকে আরো ভয়ঙ্কর!
ধরুন আপনি গুগল সার্চ করলেন সিমলা ওয়েদার, ব্যাস! পরের কয়েকদিন আপনার জি মেইলে আসতে শুরু করবে সিমলার গুচ্ছ গুচ্ছ হোটেলের সুলুক সন্ধান, ফেসবুক খুললেই ‘নাক-মুখ-থেঁৎলে’ নানান ট্যুর অপারেটর আর রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপনের দেওয়ালে হোঁচট!
এই ব্যাপারটা ম্যাট্রেস থেকে পিৎজা, আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট, কেমিস্ট্রির গৃহশিক্ষক থেকে মন্দারমনিতে মাছভাজা প্রতিটি বিষয়ে সত্যি!
আমরা পুর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন পড়ে মুগ্ধ হয়ে যেতাম, কবি কিভাবে যেন সেই যুগলের প্রাণিত, জৈবিক, গোপন ফিসফিসে বার্তাবিনিময় শুনে ফেলতেন! আর আমাদের শোনাতেন! আমরা শিহরিত হতাম! কিন্তু সে সব কান পেতে শোনা ছিল নিতান্ত নির্দোষ, নির্বিরোধ।
এক ঘোড়ার (মানে একটি বিলিতি ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ, উচ্চশিক্ষিত যুবকের) মুখে শুনলাম আজকাল আর সার্চ করতেও হয় না, অ্যালেক্সা কান পেতে শোনে আমাদের যাবতীয় কথোপকথন!
বাড়ি বা গাড়ি কেনার কথা ভাবছি কি না, মেয়ের বিয়ে দেবো কি না, ব্যাঙ্ক লোন লাগবে কি না, লাগলে ঠিক কি ধরণের লোন ইত্যাদি!
এমনকি আমায় চব্বিশ ঘন্টা মেপে চলেছে বালিশের পাশে রাখা ওই স্মার্ট ফোনটিও! সে যত দামী, ততই গুপ্তচর বৃত্তিতে ততই দড়!
আজ্ঞে হ্যাঁ! ডেটা মাইনিং, প্রোফাইলিং, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুনিয়াটা এই রকমই !
আপনার বাড়তে থাকা ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল ভবিষ্যতে আপনাকে বিরিয়ানির সুইগি করা থেকে বিরত করে দিতে পারে!ফেসবুকে আপনার সরকার বিরোধী কথায় আটকে যেতে পারে আপনার পুত্র বা কন্যার চাকরি! এমনকি অন্যদেশে যুদ্ধে শান্তির পক্ষ নেবার অভিযোগে বিষিয়ে উঠতে পারে আপনার ভিসা পাবার সম্ভাবনাও!
দার্জিলিং গিয়েছিলাম গেলো হপ্তায়! ম্যালে যাবার পথে বিশ্ববাংলার দোকানটি তে ঢুঁ মেরেছিলাম শুধু, কিছু কিনি নি, দোকানে দাঁড়িয়ে স্টেটাস আপডেট করি নি আর হ্যাঁ ফার্স্ট ফ্ল্যাশ চা কেনার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম বেশ কয়েক বার!
ব্যাস! এই বিজ্ঞাপনটি মোবাইলে এসে হাজির !
ভয় পাবো, না বিরক্ত হবো না কি গর্বিত হবো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না!
আপনারা কি বলেন?