সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩ বছরের ডাক্তারি ডিপ্লোমা কোর্সের ঘোষণা করেছেন। বিষয়টিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য এক বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠিত হয়েছে।
শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ মনে করে যে ৩ বছরে ডাক্তার তৈরি করা যায় না। আর শহরের মানুষের জন্য (৪.৫+১) বছরের এম বি বি এস ডাক্তার এবং গ্রামের মানুষের জন্য ৩ বছরের ডিপ্লোমা ডাক্তার, এই প্রস্তাব অন্যায্য ও অনৈতিক।
আমাদের দেশ বা রাজ্যে কোথাও জনসংখ্যা অনুপাতে ডাক্তারের অভাব নেই। পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবছর ৩২ টি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রায় ৪৭২৫ ডাক্তার পাশ করে বেরোন। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা য়ারও বাড়বে, বছরে প্রায় ১০০০০ নতুন ডাক্তার বেরোবেন।
সরকারি ব্যবস্থায় ডাক্তারের অভাব কেন না সরকার দুবছর ধরে নতুন ডাক্তার নিয়োগ করে নি, দাঁতের ডাক্তার নিয়োগ করেনি ৭ বছর ধরে। সরকারি ব্যবস্থায় প্রায় ৪৬% ডাক্তারের পদ খালি। ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের পেছনে শক্তিক্ষয় না করে সরকার শূন্যপদে নিয়োগ করুক। একই শিক্ষক চিকিৎসককে কুমীর ছানা দেখানোর মতো NMC ভিজিট এর সময় বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে না ঘুরিয়ে প্রতি কলেজে পর্যাপ্ত নিয়োগ হোক।
ডাক্তাররা গ্রামে যেতে চান না কথাটা অর্ধসত্য। গ্রামীণ এলাকায় পরিকাঠামোর উন্নয়ন হলে, গ্রামীণ এলাকায় কাজের যথাযথ পরিবেশ থাকলে, গ্রামীণ এলাকায় কাজ করার জন্য স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে বিশেষ সুবিধের মতো উৎসাহের ব্যবস্থা থাকলে, ডাক্তারের নিজের জেলা বা কাছের জেলায় নিয়োগ করলে গ্রামের জন্য ডাক্তারের অভাব হবে না। এটা শহর বা মফঃস্বল এর সরকারী স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য।
আমরা মনে করি কেবল ডাক্তার দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলে না। সমস্ত রোগ চিকিৎসার জন্য ডাক্তার লাগে এমনটাও নয়। ইউনিভারসাল হেলথ কেয়ার আছে এমন অনেক দেশেই দ্বাররক্ষক (Door Keeper) হিসেবে মাঝারি স্তরের চিকিৎসাকর্মী থাকেন। ডা. কে শ্রীনাথ রেড্ডির নেতৃত্বাধীন High Level Expert Group on Universal Health Coverage এই স্তরের চিকিৎসা কর্মী তৈরীর কথা বলেছেন। তাদের পাঠের সময়সীমা ৩ বছর হতেই পারে!
তাঁরা কিন্তু চিকিৎসা কর্মী, চিকিৎসক নন।
একমত।