স্কুল খোলা জরুরি। স্কুলে শুধু পড়াশুনো না, আরও অনেক কিছু শেখা যায়।
(গল্পটি চেনা বলে মনে হতে পারে। এটি আনন্দমেলা পত্রিকায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত)
কানের কাছে মুখ এনে লালু বলল, “আজ একটা হেব্বি জিনিস এনেছি। টিফিন পিরিয়ডে দেখাব।”
আমি মাথা সরাতে সরাতে বললাম, “ইস্, কদ্দিন দাঁত মাজিস না?”
লালু দুঃখিত ভাবে মাথা নাড়ল। বলল, “শেষ পর্যন্ত তুইও। বন্ধুত্বের খাতিরে লোকে জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেয়। আর তুই সামান্য মুখের গন্ধটুকু সহ্য করতে পারবি নে।”
আমি বললাম, “গন্ধটা মোটেই সামান্য নয়, অসামান্যই বলা চলে। তাছাড়া তোকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখি বন্ধুত্বের খাতিরে জীবন টীবন আমি মোটেই দিতে রাজি নই।”
লালু হতাশ ভাবে বলল, “একটা অটোম্যাটিক গ্লাস পরিষ্কারের মেশিন আবিষ্কার করেছি। ওইটাতে টুথ ব্রাশটা কাজে লেগেছে। ওদিকে বাবার কাছে নতুন ব্রাশ চাইতেও সাহস পাচ্ছি না। সবে মাত্র ক্লাস নাইনের অ্যানুয়াল পরীক্ষায় ফেল করেছি। বাবার মেজাজ পুরো ভিসুভিয়াস হয়ে আছে। অগত্যা দাঁত না মেজেই দিন কাটাচ্ছি।”
কথা হচ্ছিল ক্লাস নাইনের ‘ডি’ সেকশানের ঘরে। আমাদের মধ্যমগ্রাম হাই স্কুলের ক্লাস নাইনে চারটে সেকশান। তার মধ্যে ‘ডি’ সেকশানে থাকে যত ফেল করা ছাত্র। ফেল করা শুনে নাক সিটকাবেন না। ‘এ’ সেকশনের ছেলেরা সবাই পড়াশুনোয় ভাল, একই রকমের। একজনের সাথে আরেকজনের বিশেষ পার্থক্য নেই। আর আমাদের সেকশানে একেকজন একেক রকম। এমন এমন প্রতিভা আছে যেটা ফার্স্ট, সেকেন্ড হওয়া ‘এ’ সেকশানের ছেলেদের নেই।
হোক না একটা ফুটবল ম্যাচ। ‘এ’ সেকশানকে বলে বলে দশ গোলে হারাব। সুব্রত কাপের নাম শুনেছেন। ভারতে স্কুলগুলির মধ্যে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগিতা। আমাদের মধ্যমগ্রাম হাই স্কুল মোট ছয়বার সুব্রত কাপ জিতেছে। সুব্রত কাপ দলের ছয় জন খেলোয়াড় আমাদের নাইন ডি সেকশনের ছাত্র। মাঝে মাঝে ফার্স্ট, সেকেন্ড বয় পর্যন্ত আমাদের ঘরে উঁকি মেরে সেই খেলোয়াড়দের দেখে যায়।
তাছাড়া লালু। ও তো একেবারে ইউনিক প্রতিভা। মাঝে মাঝেই নিত্য নতুন জিনিস বানিয়ে সকলকে চমকে দিচ্ছে। ওর ভাল নাম চঞ্চল। কিন্তু সেই নাম অনেকেই জানেনা। স্যাররা পর্যন্ত ওকে লালু বলে ডাকেন। ওর ব্যাগ সবসময় আজব আজব জিনিসে ভর্তি। স্ক্রু ড্রাইভার থেকে মেয়েদের মাথার ক্লিপ কোনোটাই বাকি নেই। ওর বক্তব্য, “কখন কি আবিষ্কারের পরিকল্পনা মাথায় আসে ঠিক নেই। তখন কি মালপত্র খুঁজতে বের হব? বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার অনেকটা কবিতা লেখার মত। একবার ভাব চটকে গেলে আর ফেরত আসে না।”
তবে এই বৈজ্ঞানিক মনোভাবের জন্য তাকে কম হেনস্থা হতে হয়নি। কদিন আগেই বাবার নতুন টেপরেকর্ডার খুলে ক্যাসেট ঘোরানোর জায়গাটুকুর সাহায্যে দুটো অসামান্য পাখা তৈরি করেছিল, যা ব্যাটারিতে বন্ বন্ করে ঘোরে। কিন্তু যথারীতি পুরষ্কারের বদলে তার কপালে জুটেছিল বাবার তেল চুকচুকে লাঠির বাড়ি।
যাই হোক আসল গল্পে ফিরি। টিফিন পিরিয়ডে যে জিনিসটা লালু ব্যাগ থেকে বার করল, সেটা দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। বাদামী রঙের একটা চক্চকে বন্দুক। আমি বললাম, “খেলনা নাকি? মেলায় কিনেছিস? স্টেশন মাঠের রাসের মেলায়?”
লালু বেশ রেগে গেল। “হ্যাং ইয়োর খেলনা। দিস ইজ রিয়েল।” রেগে গেলেই লালুর মুখ থেকে ইংরাজি বেরোয়। তবু যে ও কেন বছর বছর ইংরাজিতে ফেল করে কে জানে?
আমি বললাম, “তার মানে তুই বলতে চাইছিস এটা সত্যিকারের বন্দুক। এটা দিয়ে মানুষ মারা যায়? এটা দিয়ে যুদ্ধ করা যায়?”
“মানুষ মারা যায় কিনা জানিনা, এটা হল পাখি মারা বন্দুক। তুই তো আমার জেঠতুতো দাদা পকাইদার নাম শুনেছিস। সেই পকাইদা’রে যে অভিযাত্রী হওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত দার্জিলিং মেলে বিনাটিকিটের যাত্রী বলে পুলিশ পকাইদাকে গ্রেপ্তার করে। তিনদিন জেলের খিচুড়ি খাওয়ার পর পকাইদাকে চিরস্থায়ী আমাশা রোগে ধরেছে। তাই সে ইদানীং আর অভিযানের স্বপ্ন দেখে না। এখন তার নতুন শখ পাখি শিকার। শনিবার হলেই বন্দুক নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। সেখানে জলার পাশে মশার কামড় সহ্য করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। হাতের টিপ মারাত্মক। এখনও কোনো পাখি নিহত হওয়াতো দুরের কথা আহত হওয়ারও খবর নেই। আজ সকাল সকাল পকাইদা মোহন বাগান মাঠে খেলা দেখতে গেছে। সন্ধ্যের আগে ফিরবে না। আমিও সুযোগ বুঝে বন্দুকটা ব্যাগে ভরে নিয়েছি। ছটা গুলিও আছে।”
লালু গুলি বের করে দেখাল। ছোট্ট ছোট্ট লোহার বল।
বন্দুক আছে। গুলিও আছে। কিন্তু সেসব নিয়ে কি করা যায়।
‘এ’ সেকশানের নবেন্দু বড্ড নাক উঁচু ছেলে। ক্লাসের সেকেন্ড বয়। ইস্ত্রী করা ইউনিফর্ম পরে রিক্সা চেপে স্কুলে আসে। নাইনের ক্লাসে বসে টেনের অঙ্ক করে। ‘ডি’ সেকশানের ছেলেদের সাথে একদম কথা বলে না। যেন কথা বললেই জাত যাবে। ওকে গুলি করলে কেমন হয়?
প্রদীপ্ত আবার অঙ্কের স্যার সুবলবাবুর নাম প্রস্তাব করল। গতকালই তাকে সুবলবাবু বেত দিয়ে আগা পাশতলা পিটিয়েছেন। তার অপরাধ ছিল একটি সহজ গ.সা.গু. করতে পারেনি। স্যার এই সহজ লজিকটা কিছুতেই বুঝতে চান না, যে ল.সা.গু, গ.সা.গু. এইসব করতে পারলে ‘ডি’ সেকশানে কেউ সাধ করে পড়ে!
কিন্তু সুবলবাবুর নামও গৃহীত হল না। কারণ গুলি করার পর স্যারের হাতে আততায়ীকে নিশ্চিত ভাবে শহীদ হতে হবে। দেখা গেল কেউই এতবড় আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত নয়।
স্কুলের গেটের পাশে একটা টুলে বসে বাহাদুর ঝিমায়। আজ পর্যন্ত কাউকে সে গেটে ঢুকতে বাধা দেয়নি। বস্তুত আজ পর্যন্ত কেউ তাকে টুল থেকে উঠতে অথবা কারও সাথে কথা বলতে দেখেনি। উঁচু ক্লাসের দাদারা বলে বাহাদুর আফিম খায়। তাই সারাক্ষণ ঘুমায়।
অনেক আলোচনার পর ঠিক হল বাহাদুরকে গুলি করা হবে। এতে হয়ত বাহাদুরের উপকারই হবে। ঝিমুনি কেটে গিয়ে সে কর্ম চঞ্চল হয়ে উঠবে।
যে কথা সেই কাজ। স্কুলের দোতলার একটি থামের আড়াল থেকে বাহাদুরের পা লক্ষ করে লালু টিপ করল। ট্রিগার চাপতেই খট করে শব্দ। তার পরেই বাহাদুরের আত্মচিৎকার। একদম বিশুদ্ধ বাংলায়। “উরে বাপরে। মইরা গেলুম রে……।”
মৃতপ্রায় বাহাদুর গেট থেকে মাত্র তিনটে প্রকান্ড লাফে একদম হেডস্যারের ঘরে ঢুকে গেল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমরা ক্লাসরুমে ঢুকে বই খুলে উচ্চস্বরে রিডিং পড়তে আরম্ভ করলাম।
খানিকক্ষণ বাদেই হেডস্যার নারাণবাবু বেত হাতে আমাদের ঘরে ঢুকলেন। হুংকার ছাড়লেন, “কে বাহাদুরকে গুলি করেছে?”
সমস্ত ক্লাস জুড়ে শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
হেডস্যার আমাদের ফুটবল দলের কোচ কাম ম্যানেজার কাম ফিজিওথেরাপিস্ট কাম সবকিছুই। তিনি ফুটবল দলের একনম্বর স্ট্রাইকার নেপালকে তুললেন। “এই ছ্যামরা, তুই বল কোন অপোগণ্ড এই অপকর্মটি করেছে?”
নেপাল চুপ। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার থেকে বিপক্ষের মোটাসোটা ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলকিপারের একপাশ দিয়ে বল গোলে ঠেলা অনেক সহজ।
হেডস্যার বুঝলেন এভাবে হবে না। তিনি বললেন, “হয় কেউ একজন অপোগণ্ডোটার নাম বল। না হলে সবাইকে পেটাব।”
পেটানো শুরু হল। প্রত্যেককে হাতে ছটা করে বেতের বাড়ি। হেডস্যার টিচার্স রুম থেকে সুবলবাবুকে ডেকে নিলেন। বেত চালাতে সুবলবাবুর সমকক্ষ আমাদের স্কুলে আর কেউ নেই।
সুবলবাবু খুব আনন্দ আনন্দ মুখ করে বেতের বাড়ি শুরু করলেন। তিনি তাঁর মনের মতো কাজ পেয়েছেন।
কিন্তু আমরা তো আর ‘এ’ সেকশানের ভাল ছেলে নই, যে বেতের ভয়ে বন্ধুর নাম বলে দেব। আমরা ‘ডি’ সেকশানের ছেলে।ওরকম বেতের বাড়ি আমরা বহু খেয়েছি।
হেডস্যার বুঝতে পারলেন এভাবে হবে না। তিনি সকলের ব্যাগ সার্চ শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই লালুর ব্যাগ থেকে বন্দুক উদ্ধার হোল।
লালু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সকলের বুকের মধ্যেই ধড় ফড় করছে। এখুনি সশব্দে একটা বিরাশি সিক্কার চপেটাঘাত লালুর গালে আছড়ে পড়বে। হেডস্যার নিয়মিত ব্যায়াম করা, ফুটবল খেলা লোক। তাঁর চড় খেয়ে খুব কম ছেলেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
আসলে আমাদের স্কুলে প্রায় প্রত্যেক স্যারেরই শাস্তি দেওয়ার ব্যপারে কোনো না কোনো ব্যপারে স্পেসালাইজেশন আছে। হেডস্যারের বিরাশি সিক্কার চড়, সুবলবাবুর বেত, হারাধনবাবুর কানমলা, সি কে বি স্যারের গাঁট্টা, কমলবাবুর মধুমোড়া, শৈবালবাবুর হাফ নিল ডাউন।
চড়ের আওয়াজ নয়, কানে এলো হেডস্যারের গলা। “ওরে ছ্যামরা, এই বন্দুকখানা কার?”
“আজ্ঞে স্যার, আমার জেঠতুতো দাদার।”
“বলে এনেছিস, নাকি না বলে এনেছিস?”
“না বলে।” ডাকাবুকো লালুর গলার আওয়াজ প্রায় শোনাই যাচ্ছে না।
“জানিস, না বলে কারুর কিছু নেওয়াকে চুরি করা বলে। তুই নিজের দাদার জিনিস চুরি করলি?”
“নিজের দাদা নয় স্যার, জেঠতুতো দাদা।”
“আবার মুখে মুখে তর্ক।” হেডস্যার বন্দুকটা নেড়েচেড়ে দেখলেন। বললেন, “জিনিসটা কিন্তু বেশ সরেস। এটা দিয়ে তোর জেঠতুতো দাদা কি করে?”
লালু জবাব দিল, “আজ্ঞে স্যার, পাখি শিকারে যায়।”
“কি পাখি শিকার করে?”
“আজ্ঞে স্যার, এখনও অব্দি কোনও পাখিই শিকার করতে পারেনি। দাদার নিশানা তেমন সুবিধার নয়।”
হেডস্যার হাসি হাসি মুখে বললেন, “তোর নিশানা কিন্তু খারাপ নয়। দোতলা থেকে একবারে বাহাদুরের ঠ্যাঙে লাগিয়েছিস।”
এটা প্রশংসা না নিন্দা সেটা বুঝতে না পেরে লালু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল।
হেডস্যার ততোক্ষণে টানাটানি করে গুলি ভরার জায়গাটা খুলে ফেলেছেন। তিনি লালুকে বললেন, “এই ছ্যামরা, গুলি আছে নাকি?”
“গুলি দিয়ে কি হবে স্যার?”
“আমার হাতের নিশানা কেমন দেখতাম।”
লালু পকেট থেকে পাঁচটা গুলি বার করে হেডস্যারের হাতে দিল। হেডস্যার একটা গুলি বন্দুকে ঢোকালেন। বললেন, “এবার ট্রিগার চাপলেই গুলি বেরোবে তো?”
“হ্যাঁ স্যার।”
“ঠিক আছে। ছ্যামরা, তুই এবার সোজা হেঁটে ঐ দেওয়ালের দিকে যা। তারপর আমার দিকে পেছন করে চুপচাপ দাঁড়া। নড়াচড়া করিস না কিন্তু।”
“কেন স্যার?… কি হবে স্যার?”
“আমি নিশানা প্র্যাকটিস করব- বললাম না!”
লালু কেঁদে ফেলল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “মরে যাব স্যার। আমাকে গুলি করবেন না স্যার। আর করব না স্যার।”
“করবি না কেন। নিশ্চয়ই করবি। তবে করার আগে যাতে একবার মনে পড়ে যাকে ব্যথা দিচ্ছিস, তার ব্যথাটা কীরকম- তার ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।” হেড স্যার এবার গর্জন করে উঠলেন, “যা, দাঁড়া বলছি। আর সময় নষ্ট করিস না।”
সমস্ত ক্লাস নিস্তব্ধ। অন্য ক্লাসের ছেলেরাও আমাদের ক্লাসের বাইরে জড়ো হয়েছে। তারা জানলা দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে। হেডস্যার বন্দুক নিয়ে একাগ্রচিত্তে লালুর পায়ে তাক করছেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি যেন মধ্যমগ্রাম হাই স্কুলের ক্লাস নাইনের ‘ডি’ সেকশন নয়, অলিম্পিকের শুটিং এরিনায় দাঁড়িয়ে আছেন।
অবশেষে হেডস্যার গুলি করলেন। কিন্তু আমাদের হতাশ করে গুলি লাগল লালুর ডান থাইয়ের ঠিক আড়াই ইঞ্চি দূরে। দেওয়ালে লোহার গুলির ছোট্ট একটি ক্ষত হ’ল।
হেডস্যার হতাশ ভাবে বললেন, “না, হাতটা একেবারে গেছে দেখছি। এত কাছ থেকেও নিশানা লাগাতে পারলাম না। দাঁড়া আরেকবার চেষ্টা করি।”
এবারও একই ফলাফল হ’ল। গুলি ডান থাইয়ের ঠিক আড়াই ইঞ্চি দূরে একেবারে একই জায়গায় গিয়ে লাগল।
স্যার পাঁচটা গুলিই ব্যবহার করলেন। কিন্তু ফলাফল একই। সবকটা গুলিই লালুর ডান থাইয়ের ঠিক আড়াই ইঞ্চি দূরে দেওয়ালে একই জায়গায় লাগল। পাঁচটা গুলির আঘাতে সেখানে একটা ছোটো খাটো গর্ত হয়ে গেছে।
হেডস্যার আর বিমলবাবু ক্লাসরুম থেকে চলে যাওয়া মাত্রই অন্য সেকশনের ছেলেরা আমাদের ঘরে ঢুকল। সবাই লালুকে আর লালুর বন্দুকটাকে একবার দেখতে চায়। লালু তখনও কথা বলার মত অবস্থায় আসেনি। ঘামে তার জামা ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেছে।
‘এ’ সেকশনের নাক উঁচু ভাল ছেলে নবেন্দু দেওয়ালের গর্তটা দেখতে দেখতে বলল, “একটা জিনিস বুঝলাম, হেডস্যারের খেলাধুলোতে যতই উৎসাহ থাকুক, উনি নিজে মনে হয় সেরকম ভালো খেলতেন না। স্পোর্টসম্যানের নিশানা এত খারাপ হয়না।”
পেছনেই নেপাল দাঁড়িয়েছিল। আমাদের স্কুলের ফুটবল দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার। সে নবেন্দুকে বলল, “তুই ঘন্টা বুঝেছিস। তোর মাথায় গোবর পোরা।”
অপমানে নবেন্দুর মুখ লাল হয়ে গেল। সে নাকটাকে আরও উঁচু করে বলল, “তাই নাকি। তা তুই পুরো ঘটনাটা দেখে কি বুঝলি?”
তিনবার সুব্রত কাপের ফাইনালে খেলা নেপাল, পাঁচটা গুলির আঘাতে হওয়া একমাত্র গর্তটায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আমি একটা জিনিস শিখলাম। আমি শিখলাম, স্পোর্টিং স্পিরিট শুধু খেলার মাঠে নয়, সব জায়গাতেই দেখানো যায়। এমন কি ক্লাসরুমেও।”