(প্রতিটি লেখায় একটি করে কবিতা ফাউ)
★★★★★অদ্যকার বিষয়বস্তু মদ্য★★★★★
“সুরাসাগর পার করেও
আমি তৃষ্ণার্ত।।
তোমার ওষ্ঠাধরে
মেটাও তৃষ্ণা।
সততঃ বিশুষ্ক হৃদয়;
মদ্য কি মেটায়
সে বিক্ষুব্ধ হিয়া?”
[আসব=ভাত/চাল থেকে তৈরি মদ, ধেনো=ধান/চাল থেকে তৈরি, মাধ্বী=মধু থেকে তৈরি (বিদেশে মীড-Mead নামে চলে, প্রভু যীশুখৃষ্ট ওনার শেষ সায়মাশে (last supper) মীড পান করেছিলেন, আমাদের কৃষ্ণের অগ্রজ বলরাম ও ভীমসেন এই পানীয়ে অতিরিক্ত আসক্ত ছিলেন, বংশীধারী কৃষ্ণও এই নেশার ঊর্ধ্বে ছিলেন না।
সুরা একটি দেবভোগ্য পানীয়। প্রাচীন কালে আঙুর বা দ্রাক্ষাফলের সঙ্গে চাল দিয়ে সুরা তৈরি হতো। সবথেকে দুঃখের কথা যে এই পদ্ধতির বিষয়ে বিস্তারিত কোনও বিবরণ পাওয়া যায় না। প্রথম সুরা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায় চীন দেশে, তারপর জর্জিয়া, ব্যাবিলন এবং ইওরোপের বহু দেশে এর প্রচলন হয়। শোনা যায় মহান নাসিকাধারী ক্লিওপেট্রা এবং জুলিয়াস সিজার অবরে সবরে এই পানীয় সেবন করতেন। যদিও এই দেবভোগ্য পানীয় স্বর্গের সব দেবতারাই একনিষ্ঠভাবে সেবন করতেন তবে ভারতে সুরাসংবাদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় চাণক্যের লেখায়।
হাড়িয়া আমাদের দেশের আদি বাসিন্দাদের পানীয়। এটাও ভাত থেকে তৈরি হয়(অতি উপাদেয়)।
সোমরস মুনি ঋষিদের প্রিয় নেশাকারক পানীয় ছিল। সোমরাজ গাছের নির্যাস থেকে সোমরস তৈরি হতো (কোনোদিন চোখে/চেখে দেখি নি😢)। এই পানীয় প্রথম তৈরি হয় সুইজারল্যান্ডে। এবং অতিরিক্ত পান করলে খিঁচুনি টিঁচুনি হয়ে মরে যেতে পারেন। সম্ভবতঃ সাধুদের এই বিষয়ে সাবধান করার জন্য ‘সাধু সাবধান’ কথাটির উৎপত্তি হয়।
এইসব তরল পানীয় নিয়ে তরল লেখা আমাদের সম্পাদক মশাই পছন্দ করবেন না তাই এবার আমরা তরল পানীয়টির আসক্তি এবং অন্যান্য বিষয়ে প্রবিষ্ট হৈ।]
এই লেখার প্রথমেই, যে বই পড়তে পড়তে রবিঠাকুর সঞ্ঝেবেলা ঘুমে ঢলে পড়তেন সেই ইংলিশ ফার্স্ট বুকের প্রণেতা শ্রী পরলোকগত প্যারী চরণ সরকার মহাশয়কে আভূমি প্রণাম জানাই। বিদ্যাসাগর ঈশ্বরচন্দ্র মহাশয়ের সুহৃদ প্যারী চরণ ছিলেন ‘আর্নল্ড অব ইস্ট’-নারী শিক্ষার একজন পুরোধা। এবং বঙ্গীয় সুরাপান নিবারণী সভার প্রতিষ্ঠাতা। নমস্কার।
না না ভয় পাবেন না। আমি সুরা সম্বন্ধে বলবো। বিরুদ্ধে কথাটি বলবো না।
(১)
ক) মদ্য কী পদার্থ?
খ)উহা শরীরে কীরূপে ব্যবহৃত হয়? (৪+৪)
উঃ
ক) মিষ্ট খাদ্য এবং বিভিন্ন ফল পচাইয়া মস্তিষ্কের বিভিন্ন উচ্চ ক্ষমতা সাময়িক বিনাশকারী যে ইথানল নামক যে রাসায়নিক বস্তুটি তৈয়ার হয় উহাই মদ্য বলিয়া জনসমাজে পরিচিত।
খ) মদ্য আপনার শরীরে প্রবেশ করিয়া পাকস্থলী হৈতে রক্তে প্রবেশ করে। রক্ত উহাকে অর্থাৎ মদ্যকে আপনার যকৃতে লৈয়া যায়। অতঃপর লিভারের মধ্যে প্রবিষ্ট মদ্য অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ এবং অ্যালডিহাইড ডিহাইড্রোজিনেজ নামের দুইটি উৎসেচক (enzyme) দ্বারা অ্যাসিটাইলডিহাইডে পরিণত হয়। এই অ্যাসিটাইলডিহাইড একটি ভয়ঙ্কর কর্কট রোগ (ক্যানসার) উৎপাদক পদার্থ। বহু মদ্যপ ব্যক্তির খাদ্যনালীর যে কোনও স্থানে কর্কট রোগ (ক্যানসার) ঘটাইতে পারে। এবং ব্যক্তিটি দীর্ঘকাল ভুগিয়া ভুগিয়া পটল তুলিতে পারেন (ইহাতে পরিবারস্থ ব্যক্তিগণ হাঁফ অর্থাৎ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাঁচিবেন (যাক বাবা মালখোরটা মরিয়াছে)।
(২) শরীরে মদ্যপানের ফলাফল সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করো। (৬)
(২) উঃ মদ্য অতি শক্তিশালী পদার্থ। ইহার প্রভাব সর্বাত্মক। উক্ত কারণে যকৃৎ অত্যন্ত তাড়াতাড়ি শরীর হৈতে মদ্যকে নিষ্কাশনের(বার করে দেওয়ার) চেষ্টা করে।
(ক) মস্তিষ্ক:- (৹)মদ্য এই স্থলে অর্থাৎ ঘিলুতে ঢুকিয়া মদ্যপায়ীর মনের ভাব প্রকাশ করিতে বাধা দ্যায় (এতদ কারণে লোকসমাজে একটি বাক্য বহুল প্রচলিত-দ্ধুর্বা মাতালের কথা ছাড়্ তো) এবং উহারা পরস্পর সম্পর্করহিত এবং অর্থহীন বাক্য প্রয়োগ করিতে থাকে।
দীর্ঘকালীন মদ্যপানে মাতাল ব্যক্তির স্মৃতিবিভ্রম ঘটিতে পারে। ফলতঃ উক্ত ব্যক্তি একই বাক্য বারম্বার বলিতে থাকিবে। অধিকন্তু ভবিষ্যতে স্মৃতিহীন হৈয়া ভৃঙ্গার(মদের বোৎল) খুঁজিয়া পাইবে না।
(¥) সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তির পরম বিনাশ ঘটে। এতদ কারণে মাতালদিগের ব্যবসা এবং চাকুরী মুহূর্ত মধ্যে চৌপাট হয়।পরিবার পরিজন ভিক্ষার থালিকা হস্তে “বাবা দুটি পয়সা দ্যান” বাক্য নিঃসরণপূর্বক পথিমধ্যে উপবেশন করে।
(£) সামাজিক বোধ এবং বুদ্ধি বিনষ্ট হয়। পূর্বে বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কিয়ৎ সংখ্যক যুদ্ধ ফেরৎ আহত সেনানীকে সামাজিক সহজ নীতিসমূহ অগ্রাহ্য করিয়া যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ এবং বিবিধ কুকর্ম করিতে দেখা যাইতো। তৎপরে চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণায় জানা যায় যে গুলি খাইয়া উহাদিগের ফ্রন্টাল লোব নামক মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্ষতি হৈয়াছে। উহাই উহাদিগের গরুত্বপূর্ণ আচরণ এবং গোধর্ম পালনের উৎস (মহাভারতে উদ্দালক পুত্র শ্বেতকেতু এবং ঐ বংশজাত দীর্ঘতমার কাহিনী পাঠ করিলে গোধর্ম সম্বন্ধে অবগত হৈবেন। মহাভারত পাঠ করা হয় নাই? ক্ষিপ্ত হৈয়েন না। সংক্ষিপ্তসার বলিতেছি। যত্রতত্র যাহার তাহার সহিত উন্মুক্তভাবে যৌনকর্ম করিবার নাম গোধর্ম পালন)
যেহেতু মদ্যপান মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের কার্যকলাপ হ্রাস করে সেই হেতু মদ্যপানের পর মাতালদিগের যত্রতত্র মূত্রত্যাগ ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনসম্পর্ক স্থাপন করায় আশ্চর্য কিছু নাই।
($) যকৃৎ -এতদ্বিষয়ে অধিক আলোচনা বাহুল্য। উহাকে ইংলিশে লিভার বলা হয়। Liver কথাটির উৎস Live অর্থাৎ বাঁচা। অর্থাৎ কিনা লিভার ফুট তো লাইফ ফুট। মদ্যপানে লিভারে সিরোসিস নামক একটি মারণ ব্যাধি হয়। এই ক্ষেত্রে অন্য কোনও নিকট পরিজনের লিভার লৈয়া মদ্যপের লিভারে প্রতিস্থাপন করিতে হৈবে। (মদ্যপান ব্যতিরেকেও সিরোসিস হয়)।
(৺) এতদ্ব্যতীত নিয়মিত মদ্যপান অগ্ন্যাশয় (প্যাঙ্কৃয়াস), হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিসাধন করিতে পারে।
(😢) সেক্ষপীয়ার অমোঘভাবে বলিয়াছিলেন “ইট (মদ্য) ইনক্রিজেজ দ্য ডিজায়ার বাট ডিক্রিজেজ দ্য পারফরম্যান্স। অস্যার্থ – মদ্যপানে যৌন আকাঙ্ক্ষা বর্ধিত হয় কিন্তু যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানও সমমতাবলম্বী।
প্রশ্ন (৩)
মদ্য কি নেশাকারক? হইলে কীরূপে? বর্ণনা কর। (২+৪)
মদ্য একটি নেশাকারক দ্রব্য। আমাদের বাংলা মাস্টার মহাশয় সদাসর্বদা বলিতেন বালক বালিকারা তোমরা উদ্ধৃতি সহযোগে উত্তর করিবে। তা এই দুরূহ পয়েন্টে এসে একটি লাগসৈ উদ্ধৃতি স্মরণাগত হৈল।
“সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে
ভ্রমিছ দীনপ্রাণে সতত হায়
ভাবনা শতশত”
হ্যাঁ, প্রাগুক্ত অবস্থায় যখন মানুষ সুখ পায় না তখন সে নিয়মিতভাবে মদ্যে অবগাহন করে। তখন মানুষ মদ্যের আশ্রয় লয়। এতে মস্তিষ্কের আনন্দের কেন্দ্র গুলো প্রায় তাৎক্ষণিক ভাবেই অতিরিক্ত কর্মকাণ্ড শুরু করে এবং ফ্রন্টাল লোব নিস্ক্রিয় হইতে শুরু করে। যতৈ মদপান করিবে শরীরে মদ্যের চাহিদা ততৈ বাড়িবে, এবং উক্ত মদ্য তাহার স্কন্ধে চাপিয়া তাতা থৈ তাতা থৈ নৃত্য করিবে।
ফলতঃ গামা অ্যামাইনো বিউটিরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত ক্ষরিত হয়। এতে হাইপোথ্যালাস পিটুইটারি অ্যাড্রেনাল অ্যাক্সিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জিনগত কিছু পরিবর্তনও হয়। অন্যান্য স্বাভাবিক ক্ষরণ বন্ধ হৈয়া আসে। এবং একটা সময়ে দ্যাখা যায় ছয় ঘন্টার বেশী সময় মদ্যপানের সুযোগ না পাইলেই মদ্যপায়ীর খিঁচুনি হইবে, হাত পা কাঁপিবে, ঘাম হইবে, চোখে একটি জিনিসকে দুটি দেখিবে। এমন কি সহসা হার্ট ধর্মঘট ডাকিয়া জীবন বিপন্ন করিয়া তুলিবে।
মাত্র চারটি নম্বরের জন্য এর থেকে বেশী লেখা বাতুলতা। রাত্রিও প্রচুর হৈয়াছে। সুতরাং অলমিতি বিস্তারেণ, বরং বিস্তারায় আশ্রয় করি।
আসিতেছে আসিতেছে আসিতেছে……
প্রবল সমারোহে গাঁজা, ভাং, এলএসডি, কোকেন সবাই পরবর্তীতে আসিতেছে।
কমিক রিলিফ হিসেবে সিগারেট বিড়িও থাকবে।