শুরুতে আন্দামান সেলুলার জেল নিয়ে স্বল্প কিছু কথা বলে নেই। তারপরে প্রবেশ করব এ জেলের পত্তনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ১৮৪০-৫০-এর দশকে মেডিক্যাল কলেজের প্রথিতযশা চিকিৎসক তথা সেক্রেটারি (কিংবা প্রিন্সিপাল) ফ্রেডেরিক জোসেফ মোয়াটের (Frederick J. Mouat) প্রসঙ্গে।(যে সময় সেলুলার জেল তৈরি হয়েছিল, ১৮৯৬ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে, সেসময়ের ছবি)
ইউনেস্কো থেকে এ জেলকে UNESCO World Heritage Centre-এর তকমা দেওয়া হয়েছে (https://whc.unesco.org/en/tentativelists/5888/)। ইউনেস্কোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫৭২টি ছোট বড়ো দ্বীপ নিয়ে তৈরি ইউনিয়ন টেরিটরি অফ আন্দামান অ্যান্ড নিকবোর আইল্যান্ডস – ২০০০ বছরের মানববসতির এই দ্বীপপুঞ্জ – ১৮শ শতক থেকেই ইউরোপীয়দের দখলে আসতে শুরু করে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ক্যাপ্টেন আলেক্সান্ডার হ্যামিল্টনের লেখা A new account of the East Indies. Being the observations and remarks of Capt. Alexander Hamilton, who spent his time there from the year 1688. to 1723. Trading and travelling, by sea and land, to most of the countries and islands of commerce and navigation, between the cape of Goodhope, and the island of Japon (২য় খণ্ড, ১৭৪৪)-এ একেবারে গোড়ার দিকের আন্দামান সম্পর্কে কিছু বিবরণ পাওয়া যায় –
I knew one Ferguson, who commanded a Ship from Fort St. George, bound from Malacca to Bengal, in Company with another Ship, going too near one of the Andaman Islands … to conjecture that they were all devoured by those savage Canibals. I saw one of the Natives of those Islands at Atcheen in Anno 1694. He was then about 40 Years of Age. The Andemaners had a yearly Custom to come to the Nicobar Islands, with a great Number of small Praws, and kill or take Prisoners as many of the poor Nicobareans as they could overcome. The Nicobareans again joined their Forces, and gave the Canibals Battle, when they met with them, and one Time defeated them, and gave no Quarter to the Andemaners. (পৃঃ ৬৫। হ্যামিল্টনের পুস্তকের বানান অপরিবর্তিত।)
আন্দামান সেলুলার জেল
ইউনেস্কোর পূর্বোক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – “The architecture of Cellular Jail was conceptualized on the basis of ‘Pennsylvania System or Separate System’ theory in which separate confinement is necessary for each inmate for complete isolation from other inmates. No communication of any kind was possible between prisoners in the same or different wings. The design of Cellular Jail is heavily influenced by ‘Panopticon’ theory where radiating wings allowed a single guard to keep watch on all the prisoners from the central tower but without the prisoner being able to see him.”
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল, ব্রিটিশ উপযোগিতাবাদী দার্শনিক জেরেমি বেন্থামের “প্যানঅপটিকন”-এর তত্ত্বানুযায়ী ভারতে প্রথম জেল তৈরি হল আন্দামানে। কি এই প্যানঅপটিকন-এর ধারণা? ১৮শ শতকে আইনা-না-মানা দলছুট, ভ্যাগাবন্ড বা বিদ্রোহীদের পরিবর্তে যে সুশীল, অনুগত, শৃঙ্খলাপরায়ন এবং ‘রাষ্ট্রপ্রেমী’ নাগরিক তৈরি করা প্রয়োজনীয় ছিল, তার একটি হাতিয়ার ছিল এ ধারণা। জেল থেকে স্কুল, হাসপাতাল থেকে দৈনন্দিন নাগরিক জীবন – সর্বত্রই রাষ্ট্রের নজর থাকবে জেলের কয়েদী কিংবা মুক্ত নাগরিক, প্রত্যেকের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপরে। আজকের ভারতরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে?
যাহোক, এ ধারণানুযায়ী যে জেল তৈরি করা করা হবে সেখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমস্ত সেলের সমস্ত বন্দীর ওপরে নজর রাখা যাবে। এক নতুন ধরনের নজরদারি পদ্ধতি চালু হল “আধুনিক ও গণতান্ত্রিক” পৃথিবীতে।
(বেন্থামের ধারণানুযায়ী Willey Reveley ১৭৯১ সালে জেলের এরকম একটি নকশা তৈরি করেন – The original panopticon design by Jeremy Bentham. Credit: The works of Jeremy Bentham vol. IV, 172-3, Public Domain, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=313049)
প্যানঅপটিকন-এর বহুলাংশে প্রতিফলন ঘটে ১৮২১ সালে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে Millbank Prison তৈরির মধ্য দিয়ে। Millbank Prison-এ কয়েদিদের অস্ট্রেলিয়ায় দ্বীপান্তরিত করার আগে সাময়িকভাবে রাখা হত। ১৮৯০ সালে এ জেল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
(সূত্র – আন্তর্জাল)
আমরা একটু নজর করলে বুঝব, আন্দামানে “দাগী আসামীদের” জন্য নতুন করে জেল তৈরি করার, বিশেষত বেন্থামের প্যানপটিকন-এর ধারণানুযায়ী, সম্ভাব্য কারণগুলো হতে পারে – (১) বন্দীদের প্রায়-দুর্লঙ্ঘ্য জায়গায় পাঠিয়ে রাষ্ট্রের সুরক্ষা বৃদ্ধি করা, (২) আন্দামানে করা অত্যাচারের খবর সহজে ভারতের মূল ভূখণ্ডে এসে পৌঁছবেনা, (৩) ভয়ংকরতম শাস্তিও লোকচক্ষুর আড়ালে হবে, এবং (৪) ক্ষমতার প্রদর্শন এমনভাবে করা হবে যাতে সবাই ক্ষমতার নজরদারির বৃত্তে থাকে, অথচ কে নজর রাখছে তাকে দেখতে বা বুঝতে পারবেনা।
এখানে বলা দরকার, মেডিসিনও এরকম অদৃশ্য নজরদারির একটি হাতিয়ার। জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু, শৈশব থেকে বার্ধক্য, দেহের প্রতিটি অংশের সুস্থতা রক্ষার জন্য যে প্রবল তাগিদ থাকে মানুষের সেসবের সম্মিলিত ফলাফলকে বলা যায় জীবনের তথা অস্তিত্বের “মেডিক্যালাইজেশন”। রোগী তথা নাগরিক জীবনে নজরদারি এবং মেডিসিনের মধ্যেকার গভীর সম্পর্ক বোঝার জন্য কয়েকটি সাহায্যকারী লেখা – জয়ন্ত ভট্টাচার্য, বায়োমেডিসিন থেকে নজরদারি মেডিসিন (অবভাস, ২০০৮ এবং হাওয়াকল প্রকাশনা, ২০১৭); ডেভিড আর্মস্ট্রং, “The rise of surveillance medicine”, Sociology of Health and Illness, 1995, 17 (3): 393-404; পিটার কনরাড, “Medicalization and Social Control”, Annual Review of Sociology, 1992 (18): 209-232; ডেভিড আর্মস্ট্রং, “Screening: mapping medicine’s temporal spaces”, Sociology of Health and Illness, 2012, 34 (2): 177-193; Michael Gochfeld, “Medical surveillance and screening in the workplace: complementary preventive strategies”, Environmental Research, Oct. 1992, 59 (1): 67-80।
প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিকভাবে এখানে কিছু ভিন্নতর বিষয়ের অবতারণা করা প্রয়োজন। আমরা যারা ফুকোর Discipline and Punish বইটি পড়েছি তারা ঐ বইয়ের প্রথম দুটি অধ্যায়ে দেখেছি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দানের গ্রাফিক বর্ণনা। গা শিউড়ে ওঠা, দেহের প্রতিটি অনুভূতিকে অবশ করে দেওয়া সে বিবরণে আমরা জেনেছি দেহের ওপরে রাষ্ট্রের, রাজনীতির এবং দণ্ডনীতির কি ভয়াবহ পরিণামচিহ্ন এঁকে দেওয়া যেতে পারে – “দুটো অথবা তিনটে চেষ্টার পরে ঘাতক স্যামসন এবং যে চিমটে ব্যবহার করছিল দু’জনেই তাদের পকেট থেকে ছুরি বের করল এবং শাস্তিপ্রাপ্ত মানুষটির পায়ের জয়েন্টগুলো কাটার বদলে দুটো উরু কেটে দিল। চারটে ঘোড়া দুদিক থেকে টেনে উরুদুটো নিয়ে চলল, প্রথমে ডান উরুটি পরে বাম উরু … এরকম করে যখন চারটে অঙ্গ আলাদা হয়ে গেল তখন যে পুরোহিত স্বীকারোক্তি শোনে সে এল মানুষটির সাথে কথা বলার জন্য …” (পৃঃ ৫)
এরকম বীভৎস, বিবমিষা উদ্রেককারী বর্ণনাকে অপ্রয়োজনে আরও বিস্তৃত করার কোন প্রয়োজন দেখছিনা। এলেইন স্কারি তাঁর অধুনা ক্ল্যাসিক গ্রন্থ The Body in Pain-এ যন্ত্রণা এবং ব্যথা নির্দিষ্টভাবে কি করে বোঝাতে গিয়ে বলছেন, দৈহিক যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষাকে শুধু রোধ করেনা, একে সক্রিয়ভাবে ধ্বংস করে “bringing about an immediate reversion to a state anterior to language, to the sounds and cries a human being makes before language is learned.” (পৃঃ ৪)
ঐতিহাসিক কারণে এভাবে প্রকাশ্যে বীভৎসতম অত্যাচার করা বা দণ্ডদান ইউরোপের দেশগুলোতে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াল। ততদিনে (১৮শ-১৯শ শতকে) ওখানে একটি প্রাণবন্ত সিভিল সোসাইটির জন্ম হয়েছে যে সোসাইটিগুলোর সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত কিংবা সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে কাগজপত্রে লেখে, খোলাখুলি ডিবেট করে, পার্লামেন্টে এদের প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিরা তুমুল সওয়াল করে। মোদ্দা কথা হল, রাষ্ট্রের সীমাহীন অত্যাচার বা প্রকট জনবিরোধী কার্যকলাপগুলো এদের অনুমোদন পায়না। পরবর্তী সময়ে একেই নাগরিক পরিসর বা তৃতীয় পরিসর বলা হবে। এ পরিসর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক – এটা সেসময়ের চিন্তকরা বুঝেছিলেন। আজকের ভারতবর্ষে এ পরিসরটি ক্রম-সংকুচিত, ক্রমশ অপসৃয়মান। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে এ পরিস্থিতি গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক অশনি সংকেত হয়ে উঠছে।
শাস্তিদানের ক্ষেত্রে এরকম এক পরিবর্তনকে ফুকো অভিহিত হতে করছেন “culture of spectacle” থেকে “carceral culture”-এ অতিক্রমণ। শাস্তিকে কিভাবে সুবোধ এবং অনুগত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সফল প্রক্রিয়া হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সে ব্যাপারে অতি বিস্তৃত এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন আলোচনা করেছেন ফুকো তাঁর পূর্বোক্ত Discipline and Punish: The Birth of the Prison (Vintage Books, 1972) গ্রন্থে।
ফুকোর পর্যবেক্ষণে – “Bentham’s Panopticon is the architectural figure of this composition. We know the principle on which it was based: at the periphery, an annular building; at the centre, a tower; this tower is pierced with wide windows that open onto the inner side of the ring; the peripheric building is divided into cells, each of which extends the whole width of the building; they have two windows, one on the inside, corresponding to the windows of the tower; the other, on the outside, allows the light to cross the cell from one end to the other. All that is needed, then, is to place a supervisor in a central tower and to shut up in each cell a madman, a patient, a condemned man, a worker or a schoolboy.” (পৃঃ ১৯৮)
পরে আবার ব্যাখ্যা করছেন – “the major effect of the Panopticon: to induce in the inmate a state of conscious and permanent visibility that assures the automatic functioning of power. So to arrange things that the surveillance is permanent in its effects, even if it is discontinuous in its action; that the perfection of power should tend to render its actual exercise unnecessary; that this architectural apparatus should be a machine for creating and sustaining a power relation independent of the person who exercises it”।
অর্থাৎ, “ক্ষমতা”র দৃষ্টির সামনে সবসময়েই দৃশ্যমান থাকবে বন্দী, কিন্তু বন্দী মানুষটি (যদিও “ক্ষমতা” বন্দীদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে কিনা এ নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে) – সে বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতের, কিংবা পাগল কিংবা বেন্থামের সময়কালের কুষ্ঠরোগী যে হোক না কেন – বুঝবেনা যে সে প্রতিনিয়ত নজরদারির মাঝে রয়েছে। সেখানে কোন বেচাল দেখলে “সংশোধনী” প্রক্রিয়া অতি অবলীলায় নির্দয় দণ্ডদানের প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত হবে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র-তে বর্ণিত সাম-দান-দণ্ড-ভেদ-এর সাথে খানিক সাযুজ্য থাকলেও থাকতে পারে। ফুকো একই পুস্তকে আবার জানাচ্ছেন – “The carceral texture of society assures both the real capture of the body and its perpetual observation; it is, by its very nature, the apparatus of punishment that conforms most completely to the new economy of power and the instrument for the formation of knowledge that this very economy needs.” (পৃঃ ৩০৪)
যাহোক, ১৮৯৬ থেকে ১৯০৬ সাল জুড়ে পোর্ট ব্লেয়ারের আটলান্টা পয়েন্ট হিলটপে তৈরি হয়েছিল সেলুলার জেল। জেল তৈরির মালমশলা আনা হয়েছিল তৎকালীন বার্মা থেকে। ওখানকার প্রবাল দিয়ে বানানো হয়েছিল প্রয়োজনীয় ইটের বড়ো অংশ। গোড়ায় ৭টি উইং ছিল এই জেলে। ১৯৪১ সালের ভয়ংকর ভূমিকম্পের অভিঘাতে এবং পরবর্তীতে জাপানি আক্রমণে ৪টি উইং ধ্বংস হয়। এখন ৩টি উইং দেখি আমরা। মোট ৬৯৬টি সেল বা কুঠরি ছিল এই জেলে। প্রতিটি সেল দৈর্ঘ্যে ছিল ১৩.৫ ফুট, প্রস্থে ৭.৫ ফুট। ওপরে একটি ছোট ঘুলঘুলি – মোটা লোহার শিক দেওয়া। সামনে আরও মোটা লোহার শিক দিয়ে সুরক্ষিত দরজা। স্বাভাবিক নিয়মে বন্দীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের কোন রাস্তা ছিলনা। আর ছিল সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি। বন্দীরা ঘানি ঘুরিয়ে সর্ষে থেকে তেল তৈরি করত – আরও পরিশ্রম, আরও তেল। নাহলে পিঠে চাবুকের বাড়ী থেকে হাতে-পায়ে-গলায় বেড়ি পরিয়ে রাখার মতো শাস্তি হামেশাই দেওয়া হত। নীচে ডান্ডাবেড়ির ছবি দিলাম স্মৃতিকে উস্কে দেবার জন্য।
প্যানঅপটিকন নিয়ে আরও কিছু কথা
প্রশ্ন আসবে, এখনও কি প্যানঅপটিকন-এর আদলে একইভাবে জেল/কারাগার/সংশোধনাগার তৈরি হচ্ছে? সঠিক উত্তর হবে, না। নতুন প্রযুক্তি (বিশেষ করে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর আগমনের পরে) সমাজের প্রতিটি স্তরে অন্যভাবে প্রতিনিয়ত নজরদারি চলছে। ভারতের ক্ষেত্রেও আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাব।
ফুকো অন্য একটি লেখায় জানাচ্ছেন – “The Panopticon is a privileged place for experiments on men, and for analyzing with complete certainty the transformations that may be obtained from them. The Panopticon may even provide an apparatus for supervising its own mechanisms.” (Foucault, “Panopticism” from “Discipline & Punish: The Birth of the Prison”, in Race/Ethnicity: Multidisciplinary Global Contexts, Vol. 2, No. 1, The Dynamics of Race and Incarceration: Social Integration, Social Welfare, and Social Control (Autumn, 2008), pp. 1-12) এ প্রবন্ধে ফুকো জানাচ্ছেন – “তাকে দেখা হয়, কিন্তু যাকে দেখা সে দেখেনা; সে তথ্যের বস্তুগত আকর, কিন্তু কখনওই ‘subject of information’ নয়।” (পৃঃ ৫)
প্যানঅপটিকন এবং আধুনিক সমাজের মধ্যেকার আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে ফুকোর পর্যবেক্ষণ হল – “Power has its principle not so much in a person as in a certain concerted distribution of bodies, surfaces, lights, gazes; in an arrangement whose internal mechanisms produce the relation in which individuals are caught up. The ceremonies, the rituals, the marks by which the sovereign’s surplus power was manifested are useless. There is a machinery that assures dissymmetry, disequilibrium, difference. Consequently, it does not matter who exercises power.” (পৃঃ ৬)
আধুনিক প্রযুক্তি এবং নজরদারির ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক উন্নত, sophisticated এবং শক্তিশালী হবার জন্য বিংশ শতকের তুলনায় অনেক অল্পসংখ্যক জেল প্যানঅপটিকন নীতির অনুসরণে তৈরি করা হয় বা আদৌ হয়না। এরকম একটি আধুনিক জেলের উদাহরণ দেওয়া যায়। আমেরিকায় F. House, Stateville Correctional Center, Illinois, 1925 সালে চালু হয়। ৯০ বছর চলার পরে ২০১৬ সালে জেলটি বন্ধ করে দেওয়া। কর্তৃপক্ষ জানায় – “F House closed in 2016 after 90 years of operation, with Illinois state officials commenting, “its Panopticon layout is antiquated and created safety and operational hazards for both staff and offenders.” (https://urbanutopias.net/2020/06/06/panopticon/)
কোভিডের সময়কালে, গবেষকেরা দেখিয়েছেন, নাগরিক এবং সমগ্র সমাজের ওপরে নজরদারি নতুন মাত্রা ও টেকনিক নিয়ে আসে। একটি প্রতিনিধিস্থানীয় গবেষণাপত্র “COVID-19—Extending Surveillance and the Panopticon” (Bioethical Inquery, 2020; 17(4): 809–814) প্রবন্ধটির পর্যবেক্ষণে – “COVID-19 has seen the development of a range of novel surveillance techniques. A multitude of smart phone apps have been devised to improve symptom tracking and contact tracing. Emergency powers have been widely enacted, and police, military, and government surveillance activities to ensure people are complying with COVID-19 restrictions have been greatly extended.” এ টেকনিকগুলো কোভিড-উত্তর সময়েও প্রবলভাবে চালু হয়েছে, যেমন আমাদের এখানে আধার কার্ডের মাধ্যমে নাগরিক সমাজের ওপরে অদৃশ্যে থেকে ক্রমাগত নজরদারি চালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রের তরফে।
উপরোক্ত প্রবন্ধের মন্তব্য – “The COVID-19 pandemic has strengthened and justified a shift to more intense and penetrating forms of surveillance culture. It is likely that this process will have long-reaching cultural, political, and economic impacts and will fundamentally reshape the structures of the societies which emerge and our personal affective lives.”
জেলের ভয়ংকরতম সেই দিনগুলি
এ ইতিহাস শুরুর আগে আরেকটি বীরত্বের অধ্যায়ের সাথে জড়িয়ে আছে আন্দামান। ব্রিটিশ ভারতের নর্থ-ওয়েস্ট প্রভিন্সের একজন আসামী শের আলিকে আন্দামানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ১৮৭২ সালে লর্ড মেয়ো যখন দ্বীপ পরিদর্শনে যান তখন তাঁকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে শের আলি আফ্রিদি। এ ঘটনা অন্য বন্দীদের এবং পরবর্তীতে সেলুলার জেলের কয়েদিদের ওপরে নরকতুল্য অত্যাচার ডেকে আনল।
সেলুলার জেল তৈরি হবার আগেই, আগে যেমন বলেছি, পোর্ট ব্লেয়ারের জেলে বন্দীদের পাঠানো শুরু হয়। ১৮৫৮ সালে প্রথম ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল রবার্ট নেপিয়ের পোর্ট ব্লেয়ার পরিদর্শনে যান। তিনি দেখেন, ১৮৫৮ সালে যে ৮,০৫৩ জন আসামীকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল তাদের মধ্যে ২০৯৮ জন অপুষ্টি এবং নির্মম জেল ব্যবস্থার জন্য মারা গেছে। ৬১২ জন পলাতক হয়েছে ভয়াবহ মানসিক অত্যাচারের দরুন। এরকম মৃত্যুর হার যে কোন তথাকথিত সভ্য প্রশাসনের কাছে ভয়াবহ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এমনটা হয়েছিল বলে কোন রেকর্ড নেই। আরেকটি তথ্যের উল্লেখ করি। (R.V.R. Murthy, “Penal System in Andaman”, Dialogue January-March, 2009, Volume 10 No. 3 – http://www.asthabharati.org/Dia_Jan%2009/RVR.htm)
Year-wise convict deportation to Andamans 1874-1901
Year 1-16 17-40 41-60 Over 60
1874 20 4,582 1,991 476
1881 – 8,730 2,180 542
1891 – 8,815 2,421 502
1901 – 7,264 3,945 635
Source: Census Report 1901, Andaman and Nicobar Islands. p. 92
২০০১ সালের ২৩ জুন গার্ডিয়ান সংবাদপত্রে Cathy Scott-Clark এবং Adrian Levy-র প্রতিবেদন “Survivors of our hell” প্রকাশিত হয়। বিপুল পরিশ্রমে, প্রায়-হারিয়ে যাওয়া, লুপ্তপ্রায় ব্রিটিশ সরকারের নথি ঘেঁটে এঁদের এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ২০০১ সাল অব্দি আন্দামান সেলুলার জেলের দুঃস্বপ্নের দিনগুলি পার করে যে দুয়েকজন বিপ্লবী তখনও বেঁচেছিলেন তাঁদের ইন্টারভিউও এঁরা কলক্তায় নিয়েছিলেন। সম্ভবত ব্রিটিশ নাগরিকত্ব থাকার জন্য এবং গার্ডিয়ান-এর মতো নামী পত্রিকার সাংবাদিক হবার সুবাদে নথিপত্রগুলো ব্যবহার করার সুবিধে সেসময়ে এঁরা পেয়েছিলেন।
আজ থেকে ২৩ বছর আগে (২০০১-এ) এঁরা আন্দামানের অন্যতম জীবিত বিপ্লবীদের একজন ধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন – বহু কষ্ট করে উত্তর কলকাতার এক এঁদো গলির ভেতরে অনেক খোঁজখবরের পরে। উদ্ধারও করেছিলেন তাঁর কেস ফাইল – “concealed among tens of thousands of logs and reports, all long forgotten, in a New Delhi vault”। প্রতিবেদকদের বয়ানে – “Among the records of the Government of India’s Home Department, we found the Empire’s response in its Orders to Provincial Governors and Chief Commissioners, “Very Secret: Regarding security prisoners who hunger strike, every effort should be made to prevent the incidents from being reported, no concessions to be given to the prisoners who must be kept alive. Manual methods of restraint are best, then mechanical when the patient resists.”
এরপরে সমগ্র প্রতিবেদন জুড়ে সহানুভূতির সাথে বর্ণনা করা হয়েছে নির্মমতম অত্যাচারের গ্রাফিক ঘটনাপুঞ্জ। অনশনকারী বন্দীদের কিভাবে জোর করে নাক দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে খাওয়ানো হত তার বর্ণনা। একাধিক ক্ষেত্রে সে সময়কার মোটা ফিডিং টিউব ফুসফুসে ঢুকে গিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে বন্দীর মৃত্যু ঘটাতো। “ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কমিটি”-র একটি রিপোর্ট তুলে দিয়েছেন – “Recommendation, 24/1629/1: A rubber catheter should be inserted through the nostril and into the gullet and so to the stomach. A solution of milk, eggs and sugar should be poured via a funnel. In certain cases rectal feeding should be tried.” এতসবের পরেও বন্দী বিপ্লবীদের “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” শ্লোগান ব্রিটিশদের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিত।
এঁদের এই প্রতিবেদনে সাভারকরের (কয়েদি নম্বর ৩২৭৭৮) কথা রয়েছে। রয়েছে উল্লাসকর দত্তের কথা। কয়েদি নম্বর ৩১৫৫২ ছিল উল্লাসকরের, পাশে ছিলেন কয়েদি নম্বর ৩১৪৫৯ বারীন ঘোষ, তার পাশে কয়েদি নম্বর ৩১৫৫৫ ইন্দুভূষণ রায়। জেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ইন্দুভূষণ রায় সেলের মধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। উল্লাসকর উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। সাভারকর মুচলেখা দিয়ে বিচিত্র প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্য হল, সাভারকর একাধিকবার (সংখ্যায় ৫) “mercy petition” করেছিলেন ব্রিটিশ সরকারের কাছে। এর মধ্যে লক্ষ্যণীয় রেজিনাল্ড ক্র্যাডকের (Home Member of the Governor General’s Council) কাছে করা পিটিশনের বয়ান (নভেম্বর ১৪, ১৯১৩) – “I am ready to serve the Government in any capacity they like, for as my conversion is conscientious so I hope my future conduct would be. By keeping me in jail nothing can be got in comparison to what would be otherwise. The Mighty alone can afford to be merciful and therefore where else can the prodigal son return but to the parental doors of the Government? Hoping your Honour will kindly take into notion these points.” (সূত্রঃ https://counterviewfiles.files.wordpress.com/2019/05/savarkar1.pdf)
জেলের চিকিৎসক ডঃ বেকার একটি গোপন নোটে লিখেছিলেন – “Recommendation of FA Barker, to Secretary to Government of India, 20 June 1933: If the medical authorities can be assured of immunity they should be given absolutely a free hand.” নয়া দিল্লীর মহাফেজখানা তন্নতন্ন করে ঘেঁটে প্রতিবেদকেরা আবিষ্কার করেছিলেন – কয়েদি নম্বর ১৯৭ বঙ্কিম চক্রবর্তী অত্যাচারী ডাক্তার টডকে জুতো মারার অপরাধে “Recommendation of Dr Todd to Major LH Marshall Upshon regarding punishment: Convict malarial. Too ill to be flogged. Suggest seven days in cross-bar fetters.”
এখানে আরেকটি তথ্যও ইতিহাসের সত্য হিসেবে উল্লেখ করা দরকার। আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দীদের ওপরে বীভৎসতম অত্যাচার করা হত এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি আরেকটি সত্যিও আমাদের সামনে আসা প্রয়োজন। ১৮৫৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্দামানে “দাগী কয়েদি”দের penal settlement-এর জন্য ৩ জনের একটি কমিটি দ্বীপ পর্যবেক্ষণে আসে। এই কমিটিতে ছিলেন Dr. F.J. Mouat, Dr. G.R. Playfair, এবং লেফটন্যান্ট J.S. Heatcote। এরপরে সরকারের কাছে ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৮-তে রিপোর্ট পেশ করেন। ২২শে জানুয়ারি ১৯৫৮-তে আন্দামান দ্বীপে ইউনিয়ন জ্যাক (ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতাকা) উত্তোলন করা হল।
১৮৬৩ সালে পোর্ট ব্লেয়ারের পাদ্রী এবং Jesus College, Cambridge-এর গ্র্যাজুয়েট রেভারেন্ড হেনরি করবিন ২৮ জন আন্দামানিকে পাকড়াও করে বন্দী করে রাখেন রস আইল্যান্ডে। এদের মধ্যে ১০ জন শিশুও ছিল। করবিনের উদ্দেশ্য ছিল এদের মধ্যে ব্রিটিশ আনুগত্য তৈরি করা ছাড়াও “restore them to a place in the human family”। এদের মধ্যে ৮ জনকে আবার “বৈজ্ঞানিক কৌতুহল” মেটানোর জন্য বার্মা ও ভারতে পাঠানো হয়েছিল। (সূত্রঃ https://lookeast.in/survivors-of-kalapani/)
কি সেই কৌতুহল? সরকারি রিপোর্টে বলা হচ্ছে – “~he inhabitants are dwarf Negrilloes, strong and robust, when their supply of food is abundant, as it was during the time of our visit; intensely black; and possessing most of the physical characters of the true Negro, with the exception of the projection of the heel. The individual captured at Interview Island was singularly quiet and docile, imitated readily the acts and gestures of those by whom be was surrounded, and never from first to last exhibited the smallest indication of ferocity.” (Selections from the Records of the Government of India (Home Department), No. XXV. The Andaman Islands; with Notes on Barren Island, Calcutta, Baptist Mission Press, 1859, পৃঃ x)
এদের শরীরের সমস্ত মাপজোক করা হয়েছিল। নিচে একটি নমুনা দেওয়া হল।
এখানে অনেকেরই স্মরণে আসতে পারে ১৮১০ সালে আফ্রিকা থেকে এক নারীকে ধরে আনা হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল Hottentot Venus। সাদা, “উন্নত” সভ্যতার ব্রিটিশ তথা ইউরোপীয়দের “অপর” হিসবে অতি-ভারী নিতম্বের ঘোর কৃষ্ণবর্ণ এই নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় খাঁচা-বন্দী করে লন্ডনে (এবং পরে প্যারিসে) প্রদর্শিতও করা হয়েছিল। ফলে আন্দামানের যুবকটির সাথে ব্রিটিশদের এ আচরণের একটি “অভিজাত ঐতিহ্য” আছে।
(হটেনটটের প্রদর্শনীর ছবি – সূত্রঃ ব্রিটিশ মিউজিয়াম)
হটেনটটের প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল – “Just arrived from London, and, by permission, will be exhibited here for a few days at Mr. James’s Sale Rooms, corner of Lord-street: that most wonderful phenomenom of nature, the Hottentot Venus : the only one ever exhibited in Europe.” কাগজেও এ বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল। (সূত্রঃ ওয়েলকাম লাইব্রেরি – https://wellcomecollection.org/works/pg5nsuur)
যাহোক, আবার আন্দামান ও সেলুলার জেলের ছোট করে বলা ইতিহাসে ফিরে আসি। ১৮৬৬ সালে আন্দামানের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ নজর করে, আন্দামানের আদি বাসিন্দারা “dying in large numbers”। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় এদের সাথে ব্রিটিশদের যৌন সংসর্গের ফলে সিফিলিস ছড়াচ্ছে এবং এরা মারা যাচ্ছে – “Eight years later, after measles, flu, tobacco, opium and whisky had swept out of the European settlement and into the jungle, more than half of the 5,000-strong tribal population was dead.” (https://www.theguardian.com/lifeandstyle/2001/jun/23/weekend.adrianlevy)
এ প্রসঙ্গে অনেকেরই মনে আসবে Alfred W. Crosby-র লেখা দুটি বইয়ের কথা – The Ecological Imperialism: The Biological Expansion of Europe, 900-1900; এবং The Columbian Exchange: Biological and Cultural Consequences of 1492। এ বই দুটিতে ক্রসবি দেখিয়েছেন, ইউরোপীয় সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে কামান-বন্দুজ-গোলাগুলির সাথে সাথে “পুরনো পৃথিবী”র মানুষের মধ্যে বিভিন্ন যৌন রোগ, স্মল পক্স, হাম ইত্যাদি ভয়ংকর সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। পরিণতিতে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। ইউরোপীয় বিজয়পতাকা সগর্বে উড়েছে। আন্দামানের আদিম অধিবাসীরাও এরকম “ecological warfare”-এর হাত থেকে রেহাই পায়নি। তারা ক্রমাগত মরে গেছে। জনসংখ্যা ক্রমশ কমে গেছে। কোণঠাসা হয়ে গেছে নিজভূমে পরবাসীরা।
Frederick J. Mouat-এর কাহিনি
মোয়াট ভারতের ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসের উচ্চপদস্থ অফিসার হিসেবে অবসরগ্রহণ করলেন ১৮৭০ সালে। ১৮৪২-৪৩ থেকে ১৮৫৩-৫৪ পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজের সেক্রেটারি হিসেবে কলেজের বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করেছেন। সাবেকি পদ্ধতিতে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার অগ্রগতির জন্য তাঁর চেষ্টার ত্রুটি ছিলনা। এর স্মারক হিসেবে মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের প্রফেসরের পদ থেকে এবং সরাসরি কলেজ থেকেই অবসর নেবার সময়, ১৮৫৪ সালে, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে মেডিক্যাল কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা তাঁকে একটি সুদৃশ্য ফুলদানি উপহার দিয়েছিল। কম কথা নয়।
(ওয়েলকাম ইমেজেস – https://wellcomecollection.org/works/uhkyk622)
এ ব্যাপারে জানুয়ারি ২১, ১৮৭১-এর ল্যান্সেট-এ “Retirement of F. J. Mouat, M.D., F.R.C.S.” শিরোনামে লেখা হল – “Considering the prominent part which Dr. Mouat has so long played in the medical, sanitary, and educational questions affecting India, and the impetus he gave to them, it is not surprising that his retirement should be a subject of regret to the numerous classes who have been benefited by his energetic and enterprising labours. Deputations on behalf of the Hindu community of Bengal and of the Mahomedan community presented Dr. Mouat with addresses, and the Bethune Society of Calcutta passed a resolution expressive of the sense it entertained of his valuable services.” (পৃঃ ৯৪)
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, উপনিবেশিক ভারতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইউনিভার্সিটি তৈরির পরিকল্পনা তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। ১৮৪৫ সালে তিনি লিখেছিলেন Proposed plan of the University of Calcutta। এই ছোট পুস্তিকায় তিনি জানান, ভারতে, বিশেষত বাংলায়, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হবার অনুরাগ যেভাবে ক্রমবর্ধমান এবং যত বেশিসংখ্যক ছাত্র এতে উৎসাহী হয়ে উঠছে সেক্ষেত্রে – “The only means of accomplishing this great object is by the establishment of a central University, armed with the power of granting degrees in Arts, Science, Law, Medicine, and Civil Engineering, incorporated by a special act of the Legislative Council of India, and endowed with the privileges enjoyed by all chartered Universities in Great Britain and Ireland … it is proposed, that the University of Calcutta shall consist of a Chancellor, Vice Chancellor, and Fellows” (পৃঃ ২-৩)
যদিও আরও ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছিল তাঁর এ ধারণা বাস্তবায়িত হতে। মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক থাকাকালীন তিনি ছাত্রদের জন্য লিখেছিলেন Elements of anatomy / compiled from the most recent authorities, and translated into Hindustani (Calcutta: Baptist Mission Press, 1848) এবং An atlas of anatomical plates of the human body (Calcutta: Bishop’s College Press, 1849)। নিখুঁত এবং সুন্দর চিত্রে সজ্জিত ছিল বইদুটি। নিচে কয়েকটি চিত্র দেওয়া হল।
তাঁর প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র – (১) “Medical statistics, with especial reference to cholera and syphilis” (১৮৭৬), এবং (২) দেশজ ওষুধ চালমুগরা তেলের কুষ্ঠ রোগে ব্যবহার নিয়ে “Notes on Native Remedies – No. 1. The Chaulmugra” (১৮৫৪)।
এছাড়া একাধিক সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকের রচয়িতাও মোয়াট – (১) The British soldier in India (১৮৫৯), (২) Hospital construction and management (১৮৮৯), (৩) Report on the jails of the lower provinces of the Bengal Presidency, for 1857-58 (১৮৫৯), (৪) Observations on the nosological arrangement of the Bengal medical returns, with a few cursory remarks on medical topography and military hygiene (১৮৪৫)।
মেডিক্যাল কলেজ থেকে অবসর নেবার পরে (মেটেরিয়া মেডিকা, কেমিস্ট্রি এবং মেডিসিনের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন) তাঁর চাকরিজীবনের শেষ পর্যন্ত (১৮৭০) তিনি Inspector-General of Gaols in the Lower Provinces of the Bengal Presidency পদে ছিলেন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ তাঁর মৃত্যুর পরে যে “অবিচ্যুয়ারি” লেখা হয়েছিল (মার্চ ৬, ১৮৯৭) তাতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ – “largely increased the profits from prison labour, decreased the cost of gaols, and lessened the sickness and mortality in these establishments.” লক্ষ্যণীয়, যে মানুষটি ছাত্রদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল, জেলের হাইজিন উন্নত করার ব্যাপারে যত্নবান সে মানুষটিই জেলের আয় বাড়ানোর জন্য কয়েদিদের দিয়ে কায়িক শ্রম বেশি করিয়ে জেলের লাভ বাড়াতে চান – “increased the profits from prison labour”।
স্থিতাবস্থা এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, রাষ্ট্রের অনুগত সেবক এবং ”মানুষ” মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও “না-মানুষ” জেলের কয়েদি, এরকম মোটা দাগের বিভাজনের মতো বৈশিষ্ট্য থাকা ছাড়া একে ব্যাখ্যা করা মুশকিল। আধুনিক রাষ্ট্র (শুধু আধুনিকই বা কেন, সব রাষ্ট্রই) এরকম নাগরিক ও প্রশাসনিক মানুষ চায়। মানুষের মধ্যে অন্তর্লীন এরকম বৈশিষ্ট্যই হয়তো নাৎসি ডাক্তার বা “টর্চার ডক্টরস” বলে অভিহিত ডাক্তারদের তৈরি করে। বর্তমান ভারতে এরকম যথেষ্ট উদাহরণ মজুত রয়েছে হয়তো বা।
পূর্বোক্ত জার্নালের উদ্ধৃত প্রতিবেদনেই বলা হয়েছিল – “In I857, during the Mutiny, Dr. Mouat was appointed President of a Committee sent to explore the Andaman islands with a view to the selection of a convict settlement. This was a difficult and even dangerous enterprise, but it was accomplished so successfully that he received the thanks of the Governor-General in Council, who directed that a harbour discovered by the Committee on the west coast of the Great Andaman should be called Port Mouat in his honour.” (পৃঃ ৬২৯)
আন্দামানের অভিযান সেরে ফিরে এসে মোয়াট “Narrative of an Expedition to the Andaman Islands in 1857” লিখেছিলেন। লন্ডনের রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি-র ১২ জানুয়ারি, ১৮৬২ সালের মিটিংয়ে তিনি এটা পাঠ করেন। পরে Journal of the Royal Geographical Society of London-এ (Vol. 32 (1862), pp. 109-126) এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ পেপারে তিনি জানান যে তাঁর যাবার উদ্দেশ্য ছিল – “with a view to the selection of a site for the establishment of a penal settlement for the reception, in the first instance, of mutinous deserters and rebels sentenced to imprisonment in banishment,” and eventually for the re-establishment of a more general convict settlement for felons sentenced to transportation from all parts of the British possessions in India.”
ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকল, একজন ছাত্রপ্রেমী ডাক্তারের আন্দামানের ভয়াবহ জেল তৈরির সূচনার কারিগর হিসেবে। অনেকটা ডঃ জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইডের সহাবস্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
শেষ কথা
যেসব আন্দামানিকে মাপজোক করে ধরে আনা হয়েছিল, তাদের একজনের ব্যাপারে মোয়াট ১৫ জানুয়ারি, ১৮৫৮ সালে গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি C. Beadon-কে লিখছেন – “I REGRET much to have to report for the information and orders of the Right Hon’ble the Governor General, that the native of the Andaman Islands brought up to Calcutta has been so seriously ill since his arrival, as to render it absolutely necessary to send him away to save his life. He was first attacked with Cholerine, which was treated successfully and then with Bronchitis, which threatened to merge in the low form of Typhoid inflammation of the Lungs, that destroys Sonthals and all other wild tribes so rapidly and certainly in the Jails of the Lower Provinces.” .” (Selections from the Records of the Government of India (Home Department), No. XXV. The Andaman Islands; with Notes on Barren Island, Calcutta, Baptist Mission Press, 1859, পৃঃ ২৮)
সাদাদের আহ্লাদ এবং “বৈজ্ঞানিক অভীপ্সার”র জন্য ধরে আনা আন্দামানি পরিবেশচ্যুত হয়ে ভিন্ন পরিবেশে পরীক্ষার শিকার হিসেবে মারা গেল বিভিন্ন রোগে ভুগে। একে মানবিক এবং নৈতিক পাপ বলে মনে করার মতো বিন্দুমাত্র অনুভূতি উপনিবেশিক কর্তাদের ছিলনা। এখনও আছে কি?
প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা মানুষটি সাদা ও “সভ্য” মানুষের কৌতুহল চরিতার্থ করার জন্য মারা গেল। মুছে গেল ইতিহাস থেকে।
(প্রছদের পরের পৃষ্ঠা – Selections from the Records of the Government of India (Home Department), No. XXV. The Andaman Islands; with Notes on Barren Island)
Great Article – Incredible!
অসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। তথাকথিত সাদা রঙের সভ্যজাতির মানুষরা আবহমান কাল ধরে দখল করা উপনিবেশগুলিতে আদি জনজাতিদের ধ্বংস করেছে, ভোগ করেছে, বিনা খাদ্যে কাজ করিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ নিশ্চিহ্ণ হয়ে গিয়েছে পৃথিবী থেকে।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ বা সেলুলার জেল তারই শিউরে ওঠার ইতিহাস বহন করে চলেছে। সেলুলার জেল ফেরৎ বিপ্লবীরা অনেকে সেই সময়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা সেই সব তথ্য আজকের দিনে পাই না, কারণ সেগুলি যত্ন করে সংরক্ষণ করি নি আমরা।
সাভারকার বীর ছিলেন, তাই সরকারের পাঁচবার আবেদন করেছিলেন। বাকীরা হয়তো বোকা ছিলেন, তাই ভগবানের কাছে হয়তো আবেদন করতেন।
মোয়াট সাহেব তো আসলে সাদা সভ্যজাতির প্রতিনিধি ছিলেন। তার স্বরূপ তো বেরুবেই। সুবোধ ঘোষের কালাগুরু গল্পে টেনব্রুকের স্বরূপও বেরিয়ে পড়েছিল এই ভাবে।
ধন্যবাদ ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে।
Excellent
Excellent and informative analysis of historical facts and figures. The comparison with present day surveillance systems of Governments, reinforced by the Covid pandemic is noteworthy. Best wishes.
Excellent sir
Excellent writing. Visited the Cellar jail, read about its savage torture to the inmates but this writing is an eye opener with many authentic information unknown earlier. Thanks
Osadharon