জিতেন কাকু আমার পেশেন্ট| ইনহেলারে তার ভয় ছিল| প্রথম দিনই সে প্রায় আঁতকে উঠে না করে ছিল| বাবু আমাকে ইনহেলার দেবেন না| খাবার ওষুধ দিন| আমি তাকে চেষ্টা করে বোঝাতে পেরেছি| দুবেলা পাম্প নিয়ে সে বেশ আছে, মাঝেমাঝেই রুগী নিয়ে আসে, তার অঞ্চলে জিতেন কাকু আমার জীবন্ত বিজ্ঞাপন|
ইদানিং তার ঘুম হচ্ছে না|ভোর ভোর উঠতে হয়| সারারাত ওঠার তাড়ায় ঘুম আসে না| তাকে পটল ছোঁয়াতে হবে| তুলোয় ভরে পরাগ মাখাতে হবে স্ত্রী ফুল পুরুষ ফুলে|
সেকি এসব তোমাদের করতে হয়!মৌমাছি ফড়িং….. তাঁরা?! আমি অবাক হই!
জিতেন কাকা উদাস তাকিয়ে থাকে| নেই বাবু| ফড়িং নেই, প্রজাপতি নেই, মৌমাছি নেই… মোবাইল এসে সব শেষ…দেখেন না এখন চড়ুই দেখা যায়? টাওয়ারে সব খে নিছে| সব
দেখলাম মোবাইল টাওয়ারের উপর তার খুব রাগ!
ফোড়ন কাটি, তুমি নাওনি মোবাইল..
খানিক চুপ থেকে আমার দিকে তাকায় সে| নিছি একটা|ছেলেটা বোম্বে থাকে| ফোনে কথা হয়| ভিডিও হয়..
তালে.. ফোনের সবটাই খারাপ না, কি বলো? প্রশ্ন করে তেড়ছা তাকাই
জিতেন কাকা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে| ভালো তো আছেই, মানুষের তৈরী ভালোগুলোর মধ্যি কত কিছু খারাপ লুকোয় থাকে! বোঝা যায় না|
আর ভগবানের তৈরীতে!!
জিতেনকাকা আমার দিকে তাকায় না.. অস্ফুট উচ্চারণে কি সব বিড়বিড় করে
# # # # # # # # # # # # #
শরৎ এলে বিকেলের রোদ ঢালু হয়ে পড়ে|বনে বাদাড়ে চড়ে বেড়ানো আমাদের ছেলেবেলায় চোরকাঁটাকীর্ণ মাঠে ঘাটে বিকেলের সেই আলো কিচমিচ করতো ফড়িংদের রঙিন ডানায়| আমরা ধরতাম| জিগা গাছের আঠা লাগিয়ে পাটকাঠির মাথায় ফড়িং ধরতাম| সুতোয় বেঁধে এরোপ্লেন হতো| এতসব অত্যাচারের পর হয়তো মরেই যেতো| কিংবা ছেড়ে দিতাম| ভাঙা ডানায় সে আর উড়তো কিনা মনে নেই|
এখন কেউ আর ফড়িং ধরে না| প্রজাপতিদের তাড়া করে না পড়ন্ত বিকেলে| তবু তারা নেই| কিছু যায় আসে না কারও|
শুধু পরাগ ছোঁয়ানোর তাগিদ কিংবা অন্য কোনও নস্টালজিয়ায় জিতেন কাকাদের দীর্ঘশ্বাসে… শিশিরের শব্দের মতো নীরব জাগরণে সেইসব মৃত ফড়িংদের স্মৃতি ঘুরে বেড়ায়| শরতের ঢালু রোদ নিঃসঙ্গ ডুবে যায় সান্ধ্য উৎসবে।।