সাফল্যের যেহেতু অনেক বাবা মা থাকে, তাই খেটে খুটে যারা বোর্ডের পরীক্ষায় সফল হল তাদের রিফ্লেক্টড গ্লোরিতে নিজেকে কিঞ্চিৎ রাঙিয়ে নেওয়ার অনেক কাহিনী আজ দেখতে পাওয়া যাবে “জানো, আমার পাশের বাড়ির/ পাড়ার/ স্কুলের/ জেলার/ সহকর্মীর/ পিসতুতো দাদার মাসতুতো বোনের বা পাঁচ বছর আগের সহকর্মীর ছেলে/মেয়ে মাধ্যমিক এ দারুন রেজাল্ট করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সফলদের নিয়ে মাতামাতি হোক আপত্তি নেই, হওয়ারই কথা।
কিন্তু তার পাশাপাশি অসফল, অকৃতকার্য, ততটা সফল হতে পারেনি এমন সব পড়ুয়াদের নিয়েও বোধহয় একটু ভাবা দরকার। তাদের পাশে থাকা দরকার যাতে তারা দুঃখে ভেঙে না পরে, হঠকারী কোনো কাজ করে না ফেলে।
আমাদের চেনা-জানা জগতের মধ্যেই অনেক মানুষ আছেন, একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে, যাঁরা ছোটবেলায় লেখাপড়ায় তেমন মজবুত ছিলেন না কিন্তু পরে সফল মানুষ হয়েছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে। অসংখ্য খেলোয়াড়, অভিনেতা, ব্যবসায়ী, চিত্রকর, গায়ক, এমনকি রাজনীতিবিদের নাম করা যায়, যাঁদের মাধ্যমিকের রেজাল্ট পাতে দেওয়ার মতো ছিল না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামটা বাড়াবাড়ি মনে হলে অক্ষয় কুমার, শচীন টেন্ডুলকার, পাবলো পিকাসোরা আছেন।
তেমন নম্বর পায়নি বলে নিজের ছেলে মেয়ের কথা ফেসবুকে ফলাও করে লিখতে না পেরে আজ যাঁরা দুঃখিত হবেন তাঁদের একবার মনে করিয়ে দিই, ফেসবুকের আবিষ্কারক মার্ক জুকেরবার্গ নিজে কিন্তু হার্ভার্ড ড্রপআউট (যদিও দারুন মেধাবী ছিলেন)।
নম্বর না পাওয়া অনেকেই কোনো না কোনো ভাবে ওই পড়াশোনা ভিত্তিক রেজাল্টের অসফল ইতিহাসকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন, জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীরা নয়, তাদের যে বাবা-মা, অভিভাবকরা ছেলেমেয়ের রেজাল্টে হতাশ, ধরেই নিয়েছেন, এর আর কিস্যু হবে না, তাঁরাও নিজেদের চাঙ্গা করুন, ছেলেমেয়েগুলোর পাশে দাঁড়ান। স্নেহ ভালোবাসা থেকে ওদের বঞ্চিত করবেন না।
বোর্ডের একটা পরীক্ষার ফলাফল কিছুই প্রমাণ করে না। মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠার জীবনের পরীক্ষা এখনো ওদের অনেক বাকি।
জীবনে বহু মেধাবী, পরীক্ষার সাংঘাতিক ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রছাত্রী দেখেছি পরিবারে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের ছড়াছড়ির সুবাদে। তাদের বেশ কিছুকে মানুষ বলেই মনে হয়নি। উলটোদিকে ক্লাস টেনও পাস করতে পারেনি কিন্তু মানুষ হিসেবে উঁচুদরের এমন লোকজনও কম দেখিনি।
তাই আবার অনুরোধ, শুধু সাফল্য নয়, অসফলেরও বাবা-মা যেন হয়ে উঠতে পারি, কেউ অনাথ থাকবে না। এই ছোট্ট লেখার প্রথম লাইনে উল্লেখ করা প্রবাদটাকে ভুল প্রমাণ করা জরুরি।
“মেধা তো জয়ের পক্ষে, সে তার উল্লাস নিয়ে বাঁচে।
হৃদয় তবু ছোটে হেরে যাওয়া মানুষের কাছে।”
Strategic thinking….