এই অন্ধকার সময়ে, চারিদিকে যখন ভয় আর মৃত্যুর কথা,আসুন আমরা জীবনের জয়গান গাই। মনে আছে কি, মুকুন্দপুরের নয়াবাদের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষিকা সুমিতা বসু, বেহালার শকুন্তলা পার্কের অমিত মুখোপাধ্যায় কিংবা কাঁথির এক গ্রামের স্বপন হাজরার নাম? কারও কারও মনে থাকলেও অনেকেই ভুলে গেছেন। যদিও ওঁরা সকলেই সমাজে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। নিজেদের অঙ্গ দানের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন। যেমন করলেন ভাটপাড়ার ৩১ বছরের যুবক সংগ্রাম ভট্টাচার্য। পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ।পথ দুর্ঘটনায় মৃত সংগ্রামের লিভার থেকে শুরু করে চোখ, কিডনি এমনকী ত্বকও অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করার জন্য দান করা হল। আমাদের দেশেও অঙ্গ দানের ঘটনা একটু করে বাড়ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই যথেষ্ট নয়। কারণ এ দেশে প্রতিবছর আড়াই লাখ কিডনি, ৮০ হাজার লিভার, ৫০ হাজার হার্ট আর লাখ খানেক কর্নিয়ার দরকার হয়। কিন্তু সেই তুলনায় অঙ্গ দানের জন্য এগিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অঙ্গদানের প্রবণতায় বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ভারতের স্থান এখনও তেমন আশাজনক নয়। যেমন, প্রতি ১০ লক্ষে স্পেনে ৪৭ জন, আমেরিকায় ৩২ জন, ইউরোপে ৩০ জন আর চিনে ৪ জন অঙ্গদান করে থাকেন। ভারতে সেখানে প্রতি ১০ লক্ষে মাত্র একজন অঙ্গদান করেন। কাজেই সবাইকেই এই কাজে এগিয়ে যাওয়া দরকার।
অঙ্গদান নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। এই সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
অঙ্গ দান বলতে ঠিক কী বোঝায়? কোন কোন অঙ্গ দান করা যায়?
মানুষের শরীরের কিছু কিছু অঙ্গ অন্যের জন্য দান করাকেই বলা হয় অঙ্গদান। শরীরের যেসব অঙ্গ দান করা যায় তাহল লিভার, কিডনি, প্যাংক্রিয়াস, হার্ট, লাংস, ইন্টেস্টিন। এছাড়া কিছু কিছু টিস্যুও দান করা যায়। যেমন, ত্বক, চোখের কর্নিয়া, হার্ট ভালভ, ব্লাড ভেসেলস, ইত্যাদি।
অঙ্গ দান কত রকমের?
অঙ্গদান দু’রকমের। জীবিত ব্যক্তির অঙ্গদান ও মৃত ব্যক্তির অঙ্গদান। একজন ব্যক্তি জীবিত থাকাকালীন দুটোর মধে একটা কিডনি, প্যাংক্রিয়াস ও লিভাবের কিছুটা করে অংশ দান করতে পারে।
মৃত ব্যক্তির কর্নিয়া থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি অঙ্গ ও টিস্যু দান করতে পারে।
অঙ্গ দানের কোনও বয়সের সীমা আছে কি?
অবশ্যই আছে। প্রথমেই দেখা হয় যিনি দান করছেন তিনি জীবিত আছেন না মৃত। জীবিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অঙ্গ দান করার জন্য বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সব পরীক্ষা করে যদি জানান, তাঁর বিশেষ অঙ্গ কোনও বিশেষ ব্যক্তির শরীরে ব্যবহার করা যাবে তাহলেই তা প্রতিস্থাপন করা যাবে। সব ঠিক থাকলে ৭০- ৮০ বছরের ব্যক্তির শরীরেও সফলতার সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা যায়। টিস্যু ও কর্নিয়ার ক্ষেত্রে বয়স তেমন কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
মৃত ব্যক্তির অঙ্গের ক্ষেত্রে যদিও বয়সের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। যেমন, লিভার নেওয়া যায় ৭০ বছর পর্যন্ত, হার্ট, লাংস ৫০ বছর পর্যন্ত, প্যাংক্রিয়াস, ইন্টেস্টিন ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত, কর্নিয়া ও ত্বক ১০০ বছর পর্যন্ত, হাড় ৭০ বছর পর্যন্ত আর হার্ট ভালভ ৫০ বছর পর্যন্ত অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায়।
কারা অঙ্গ দান করতে পারেন?
অঙ্গদান করার জন্য বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে। যদিও মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ বা জাতি নির্বিশেষে যে কারও অঙ্গই অন্যের কাজে লাগানো যেতে পারে। ১৮ এর নীচে হলে তাঁর অভিভাবকের অন্যথায় সেই ব্যক্তির নিকটাত্মীয়ের অনুমতি দরকার।
মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয়, মৃত্যুর পরেও অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকা যায়। যেমন বেঁচে আছেন সুমিতা বসু, অমিত মুখোপাধ্যায় বা সম্রাট রা।আসুন অঙ্গ দানে আমরা সবাই এগিয়ে এসে মৃত্যুকে হারিয়ে দিই।সবচেয়ে বড় কথা organ donation registry তে নিজের নাম লিখিয়ে রাখা খুব সহজ। বিনা খরচে বাড়ি বসেই করা যায়।
https://organdonationbengal.in/about-sotto
খুব ভালো ও প্রয়োজনীয় লেখা । বহুল প্রচার দরকার ।
আমি আমার সব অঙ্গ দান করতে চাই..