(বিভিন্ন জায়গায় পড়েও যা বিশ্বাস করতে পারি নি)
ডগলাস মার্ক রুশকফ (Doglous mark Rushkoff) একজন বাষট্টি বছরের ইয়াঙ্কি মেডিয়া থিওরিস্ট- ইনি পৃথিবীর প্রথম দশজন ক্ষমতাশালী লোকের মধ্যে ছয় নম্বর; না আর্থিক সঙ্গতিতে নয়- উনি বর্তমান সমাজ, সামাজিক মাধ্যম, এবং এই মাধ্যমের রীতিনীতি সম্বন্ধে ওয়াকিফ হাল (সূত্র উইকিপিডিয়া,গুগল এবং আবাপসহ কিছু পত্র পত্রিকা, এবং এই ভদ্রলোকের লেখা Survival of the richest নামের একটা বই) এক জ্ঞানী ব্যক্তি, যাঁর মতামতকে সবাই গুরুত্ব দেয়।
এটা উপক্রমণিকা মাত্র এরপর গল্পে আসি। আবার উপসংহারে আবার এনাকে টানবো।
হেমন্তের সন্ধ্যায় একজন ভালো মানুষের গাড়ি করে’ বাড়ি ফিরছি। বাতাসে একটু গা শিরশিরানি ভাব। গায়ে একটা কিছু চাপালে আরাম লাগে। কিন্তু গাড়ির কাচ তোলা, বাতানুকুল যন্ত্র চালানো আছে,না- গরমের জন্য নয়। চারপাশে শিশুদের হাতের তারাবাতি, রংমশাল, বড়োদের রকেট, মিসাইল আর বোমার শব্দে ধোঁয়ায় অন্ধকার। শ্বাস নেওয়াই কঠিন। তার ওপরে চোখের কর্নিয়া পুড়িয়ে দেওয়া তীব্র সব এলইডি লাইট। রিলে রেসের ব্যাটনের মতো এক কিলোমিটার অন্তর অন্তর একেকটা পুজোর মাইকের বহমান শব্দতান্ডব। এই সব দূষণের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য কাচ তোলা, এসি চালানো। যতদূর চোখ যায় শুধু উৎসবমুখর মানুষের দল। সব পশু পাখিরা নিরুদ্দেশ-একটাও কুকুর নেই- অবশিষ্টপ্রায় একটা গাছেও পাখি নেই।
দূষণ? গাজায় কি হচ্চে? বাঞ্চু আমরা দুটো বাজি পোড়ালেই দূষণ? আমরা এসি চালালেই দূষণ? জানেন না এ্যাখন সরকারি আইনে কোনও এসি ওজন স্তরের ক্ষতি করে না?
-তাই? গোটা পৃথিবীতে (ইউকে, ইউরোপীয় দেশ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায়) নিষিদ্ধ হওয়া করোনা ভ্যাক্সিন আমাদের দেশে যে রং রংমিয়ে ব্যবসা করলো। প্রতি সপ্তাহে কম বয়সী মানুষেরা ডায়ালেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি নিয়ে আসছে- তার ব্যালা? ভারতে তৈরি শিশুদের ওষুধ খেয়ে আফ্রিকার যে হাজার শিশু মারা গ্যালো-তার ব্যালা?
আপনাদের ইউএসএতে এদেশে বিক্রি হওয়া অ্যাস্ট্রা জেনেকার কোভিড ভ্যাক্সিন নিয়ে কনজিউমার ফোরামে বেশ কয়েকটা মামলা চলছে। তার ব্যালা?
আইভারমেক্টিন একটা বাতিল ওষুধ- করোনাকালে ,আইসিএমআরের অনুমতিক্রমে, তার যে কালোবাজারি হলো-তার ব্যালা? এসব কী করে হয়?
মানুষের বর্তমান জীবন নিয়ে যারা ব্যবসা করে তারা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে?
এই অগ্নিময়, ধোঁয়াবৃত, দূষিত পৃথিবী দেখে হঠাৎ মনে পড়লো একটা ঘটনা। ঘটনাটা বলি। বাস্তব না কল্পকাহিনী নাকি পরাবাস্তব, জানি না।
গভীর সমুদ্রের মাঝে একটা দ্বীপ। কোনও সাধারণ মানুষের সেখানে যাওয়ার অধিকার নেই। বলা যেতে পারে পৃথিবীর চোখে এই দ্বীপের অস্তিত্ব নেই। পৃথিবীর সব থেকে ধনী পাঁচজন এখানে মানুষ সমবেত। সবুজ গাছের আচ্ছাদনে ঢাকা একটা প্রাসাদ। নিশ্ছিদ্র প্রহরায় মোড়ানো। তার মধ্যিখানে একটা কনফারেন্স হল। পাঁচ মহাধনী সেখানে বসে আছেন। প্রত্যেকেই কিছুটা বিরক্ত, কিছুটা অধৈর্য। হলের চারপাশে ঘিরে রয়েছে নতুন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রহরীর দল। একটা ঘরে বহু বহু ক্লোজ সার্কিট টিভির সামনে একদল বিশেষজ্ঞ। গোটা দ্বীপের সমস্ত ছবির বিশ্লেষণ চলছে। একটা গিরগিটিও নজর এড়িয়ে নড়াচড়া করতে পারবে না।
হঠাৎ দূর আকাশে একটা হেলিকপ্টারের আওয়াজ। দূরে ঘূর্ণায়মান ডানা সমেত একটা জলফড়িংএর মতো যন্ত্রপাখি দেখা গেল। আওয়াজটা কনফারেন্স রুমে উৎগ্রীব পাঁচ ধনকুবেরের মুখে স্বস্তির ছাপ ফেললো। কনফারেন্স হলের সামনে হেলিকপ্টার নামলো। ঋজু, তীক্ষ্ণনাসা,অল্প একটুখানি চওড়া হয়ে আসা কপাল- একজন মানুষ নামলেন।অস্ত্রধারী কিছু ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাঁকে নিয়ে গেল সেই হলঘরে- যেখানে অপেক্ষমাণ সেই পাঁচজন সেরা ধনী।
একজন দীর্ঘদেহী জ্ঞানী মানুষকে ঘিরে পাঁচ ধনকুবের শিল্পপতি।
সময় কেটে যায়।
১ম জন প্রশ্ন করেন “আচ্ছা ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ কি?”
“বিটকয়েন না এথেরিয়াম?”
”কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কে এগোবে-চীন না আমেরিকা?”
উত্তর আসে। নীরবে সময় কেটে যায়।
দ্বিতীয় জনের প্রশ্ন “আচ্ছা নিউজিল্যান্ড না আলাস্কা কোনটা বেশী নিরাপদ?মানে পরিবেশ দূষণে সব থেকে কম ক্ষতি কোথায় হবে?”
“মাটির তলায় বাঙ্কার কতোটা নিরাপদ?”
“বাঙ্কারে কতোদিনের অক্সিজেন আর খাবার রাখতে হবে?”
“কি কি মেডিক্যাল ব্যবস্থা রাখতে হবে?”
“কতোজন নেভি সীল আর রক্ষী রাখতে হবে?”
প্রতিবাদ আসে “আরে দু হাজার তিরিশের পরেই মেরুপ্রদেশের সব বরফ গলে যাবে। বাঙ্কার সব ডুবে যাবে জলের তলায়
”সমুদ্রের জলস্তর সত্তর মিটার(দুশো তিরিশ ফিট) ওপর দিয়ে বইবে।”
মশয়রা মেরুপ্রদেশের মূল বরফের ভেতরে রয়েছে মিথেনের (গ্রীন হাউস গ্যাস) সব থেকে বড়ো ভান্ডার। পৃথিবীর সমস্ত পরিবেশ ধ্বংস করার উপযোগী মিথেন। তখন সব পাখি থেমে যাবে, সব প্রাণী মরে যাবে, থেমে যাবে জীবনের সব লেনদেন। মনে পড়ে এ্যাক রেড ইন্ডিয়ান দলপতি চীফ সিয়াটেলের আগ্রাসী আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বলা সেই একশো সত্তর বছর আগের সেই ভবিষ্যৎ বাণী?
যদি সকল নদী, সকল জীবজন্তুদের,সকল বৃক্ষদের নিজের ভাইয়ের মতো, নিজের বুকের রক্তের মতো ভালো না বাসতে পারো- তাহলে হে সভ্যমানুষ,তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ভাবুন পরিবেশ দূষণ না জৈব যুদ্ধ কোনটা আমাদের ধ্বংস করবে? মনে রাখবেন – করোনা ভাইরাসটা গবেষণাগারে তৈরি এবং এই গবেষণায় আমেরিকার আর্থিক সহায়তা আছে।
আর আপনি তাৎক্ষণিক সুখের জন্য সন্তানের ভবিষ্যৎ, জীবন ধংস করতে চলেছেন?ওদের বাঁচতে দিন।
হয়তো আমরা নিও প্যালিওলিথিক যুগের পুরুষশাসিত সেই যুদ্ধের দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছি। তারপর ক্ষমতার অধিকারী হয় নারী। আসে এগ্রিলিলিক সভ্যতা, তৈরি হয় সমাজবদ্ধ মানুষ। হয়তো আমাদেরও ফিরতে হবে কিছুটা সামাজিক মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতায়।
বন্ধ করে দাও জানালা
হাওয়ায় বড্ড হলকা-
এসি নকল পরিবেশ
হাতছানি দোদুলবুকের-
অন্ধকার ঘরে
গন্ধতেলের
তারপর নেমে এলে
রাত্রি
আলিবাবার সম্পদ
গোল্ডরাশ
ঝগড়াকুটি ছাতারের দল,
সন্ধ্যায় গাছ ভরা বক,
প্রহর গোনা শেয়াল
নেই কেউ নেই।
অন্ধকার কেউ নেই।