হঠাৎ করে কখনো কোনো মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান। আমরা অনেকেই এর সম্মুখীন হয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে হৈ চৈ ,তারপর দেখা যায় তিনি আবার ঠিক হয়ে গেছেন। মাঝখানে চোখে জলের ঝাপটা, জামা কাপড় আলগা করে দেওয়া, মুখে জল খাওয়ানোর চেষ্টা এসব চলে। আর তাতেও মানুষটির জ্ঞান না ফিরলে সেটা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া , যার গুরুত্ব অনেক বেশি।
একটু এই সাময়িক বেহুঁশ হয়ে যাওয়া যাকে syncope বলা হয় সেটার সম্বন্ধে জানি।
এটাও একদিকে যেমন সাধারণ কারণে হতে পারে, তেমন এর পিছনে গুরুতর রোগের পূর্বাভাসও থাকতে পারে।
সাধারণ ভাবে vasovagal syncope হলে ব্রেনে রক্ত সংবহন সাময়িক ব্যাহত হয়, ফলস্বরূপ রুগীকে ফ্যাকাশে লাগে, ত্বক ঠান্ডা হয়ে যায়, রুগী ঘামতে থাকে, চোখে ঝাপসা দেখে। সাধারণ ভাবে এই vasovagal syncope অনেকেরই অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলে, উপোস করে থাকলে, ইনজেকশন নেবার সময়, এমনকি বাথরুম করার সময়েও হতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে রুগীকে চিৎ করে শুয়ে দিয়ে পা দুটো উপরে তুলে ধরলে এবং টাইট জামাকাপড় পরে থাকলে সেটা আলগা করে দিলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
এই চিৎ হয়ে শোয়ার ব্যাপারে আবার একটু সমস্যা আছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। গর্ভবতী মহিলা হলে পাশ ফিরে শুয়ে দিয়ে পা দুটো তুলে ধরা, বুকে ব্যাথা বা শ্বাসকষ্ট থাকলে তাকে বসিয়ে রাখলে তার শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সুবিধা হয় চিৎ হয়ে শোয়ানোর চেয়ে।
অনেক ক্ষেত্রে এই বেহুঁশ হয়ে যাওয়া কারোর কারোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন সে হঠাৎ করে উপরে তাকায়, মাথা হঠাৎ করে এদিক ওদিক করে, এমনকি টাইট কলার পরে থাকলেও। একে carotid sinus hypersensitivity বলে। এসব ক্ষেত্রে না জেনে গলায় মেসেজ করা, টাইট কলার দেওয়া জামা না পরা, এসব বারণ করতে বলা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শুয়ে ব্লাড প্রেসার মাপার পরে দাঁড়িয়ে তার প্রেসার মাপলে প্রায় ২০ mm hg অবধি তার systolic প্রেসার কমে যাচ্ছে। এদের orthostatic হাইপোটেনশন থেকে syncope হয়। মূলত প্রেসারের জন্য diuretic ওষুধ খাবার ফলে এটা হতে পারে।
সবথেকে বড় সমস্যা syncope এর ক্ষেত্রে যেটা, সেটা হলো cardiac syncope। দুটো কারণে হতে পারে। একটা electrical (অর্থাৎ ইমপালস জনিত) আর একটা mechanical (অর্থাৎ কোনো অবস্ট্রাকশনের জন্য)।
রক্ত সংবহন বাধা প্রাপ্ত হলে ব্রেনে রক্ত সংবহন কমে গিয়ে সেরিব্রাল ischemia করে। যেমন হার্টের ভালভের সমস্যা থাকলে, পালমোনারি embolus হলে, বা cardiac টিউমার থাকলে।
ইমপালস ঘটিত সমস্যা হলে রুগীর পালস রেট মারাত্মক ভাবে কমে গেলে তাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে টেম্পোরারি পেসমেকার, পরে পার্মানেন্ট পেসমেকার বসাতে হতে পারে।
আর যদি পালস রেট অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেটাও সমান বিপজ্জনক, যাকে ventricular tacycardia বলে। এক্ষেত্রেও রুগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে defibrilator করে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক অ্যানিমিয়া, মারাত্মক dehydration, hypoglycemia (ব্লাড সুগার লেভেল পরে যাওয়া) কিছু কিছু ওষুধের জন্য, পারকিনসন্স জাতীয় নার্ভের রোগের জন্য রুগী হঠাৎ করে পরে যেতে পারে।
যাই হোক syncope ব্যাপারটা মামুলি নাও হতে পারে। ডাক্তার দেখিয়ে উপযুক্ত পরীক্ষা, রুগীর হিস্টরি এবং ক্লিনিক্যাল এক্সাম করে তবেই syncope এর নিদির্ষ্ট কারণ শনাক্ত করা সম্ভব এবং তার চিকিৎসা করা সম্ভব।
ভালো থাকবেন সবাই